আজ সকালে মায়ের নাম্বারে একটা মেয়ে কল দিয়ে বললো , আন্টি আমি আপনার ছেলের প্রেমে পরে হাবুডুবু খেয়ে মারা যাচ্ছি ৷ আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি করে আমাদের বিয়ে দিয়ে আমাকে বাঁচার ব্যবস্থা করে দেন । নাহলে কিন্তু আমার মৃত্যুর জন্য আপনার সন্তানসহ আপনাদের সবাইকে আমার বাবা জেলের মধ্যে পাঠাবে । “
মা তৎক্ষনাৎ ভয়ে কল কেটে দিয়ে বন্ধ করে রেখে দিল । তারপর ছোটবোন মাহির কাছে প্রথমে বলে আর মাহি সে কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবার মত অবস্থা ৷ মা খানিকটা রাগান্বিত হয়ে গেল আর এক ঝাড়ি দিয়ে মাহিকে চোখের সামনে থেকে বিদায় হতে বললো । মাহি সেই সময় হাসতে হাসতে আমার রুমে এসে আমার কাছে বলছে আর হাসছে যেন তার আনন্দের সীমা নেই । আমিও মায়ের মতো একটা ঝাড়ি দিয়ে বললাম , এতে হাসির কি আছে বুঝতে পারছি না ? দেশের মেয়েদের যদি এমন অবস্থা হয়ে যায় তাহলে ভেবে দেখ কি হবে ভবিষ্যত প্রজন্ম ?
মাহি তখন আমার রুম থেকেও বের হয়ে গেল আর আমি পরলাম মহা ঝামেলায় কারণ মা যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে তো কিছু করার নেই ।
আর সত্যি বলতে আমি কারো সাথে প্রেম করি না যে সেই মেয়ে কল দিয়ে এমনটা বলতে পারে । কিন্তু সেই চিরন্তন সত্য কথা আমার মা’কে কিভাবে বিশ্বাস করাবো ? কারণ এমনিতেই আমি যদি মা’কে সকাল বেলা বলি যে মা পূর্ব দিকে সূর্য উঠেছে তখন মা ভালো করেই জানে যে সূর্য উঠেছে কিন্তু তবুও আমরা কথা বিশ্বাস করে না বলে নিজের চোখে দেখতে চায় । পাঠক পাঠিকা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমাকে আমার মা কতটা বিশ্বাস করে ? মোবাইলে ডাটা অন করা ছিল হঠাৎ করে মেসেঞ্জার টুং করে আওয়াজ দিয়ে মেসেজ আসলো । ফোন হাতে নিয়ে দেখি “ডেঞ্জারাস” নিকনেম সেট করা আইডি দিয়ে মেসেজ এসেছে । কি ভাবছেন আপনারা ? ডেঞ্জারাস কেন লেখা ? আচ্ছা মেসেজ দেখে আপনারাই বিচার করুন নামটা সঠিক হয়েছে কিনা ? তাহলে শুরু করি ! ডেঞ্জারাসের মেসেজঃ-
” ওই সজীব ! এক চড় মেরে মাথা ফাটিয়ে ঘিলু বের করে হাতে ধরিয়ে দেবো ? এত ভাব কিসের জানতে পারি ? মেসেজ করলে কি কিবোর্ডের অক্ষর কমে যাবে নাকি ? সবসময় একটা মেয়ে হয়ে আমিই শুধু আগে মেসেজ করবো ?”
” আমি বললাম , আমি সবসময় একটু বিজি আর তাছাড়া মেয়ে মানুষকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করে না তাই সবসময় চুপচাপ থাকি । আর কথা বলার সময় একটু ভেবে চিন্তে শব্দ প্রয়োগ করবে চড় মেরে মগজ বের করা যায় ? “
” আমি কি কখনো বলেছি যে আমার বিরক্ত লাগে ? এত বেশি বোঝা ভালো নি ঠিক আছে ? সবসময় একটু কম কম বুঝতে হবে নাহলে কিন্তু প্রতিদিন ভাত বন্ধ করে দেবো । “
” মানে কি ? ভাত বন্ধ করবা মানে ? “
” হিহিহি ভয় লাগে নাকি ? “
” আশ্চর্য ভয় কেন লাগবে ? “
” এখন থেকে অনলাইনে এসে সবার আগে আমাকে মেসেজ করবে , আমি যদি অনলাইনে না ও থাকি তবুও মেসেজ দিয়ে রাখবে । বুঝতে পেরেছো ? “
” আমার মনে থাকবে না হয়তো আর তাছাড়া তুমি করলেই তো হয় , আমি সাথে সাথে রিপ্লাই করি । “
” না হয়না , আমি চাই কেউ একজন আমাকে মেসেজ করে আমার সেই মেসেজ এর রিপ্লাই পেতে অপেক্ষা করুক। আর সেই ইচ্ছেটা আমি আমার হারামি লেখককে দিয়ে পুরণ করতে চাই । “
” হারামি লেখক মানে ? “
” তুমি একটা হারামি লেখক । “
” লে হালুয়া , আমি আবার কি হারামি করলাম ? “
” জানিনা তবে খুব আপনজনকে হারামি বলে ডাকা আমার খুব পছন্দ আর তুমি সেই আপনজনের মধ্যে একজন তাই তোমার জন্য এই পদবী । “
” ঠিক বুঝতে পারলাম না । “
” মাথা মোটা নাকি ? বলছি কাছের মানুষদের আমি হারামি বলে ডাকতে পছন্দ করি । “
” সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু যাদেরকে পছন্দ করো তারাই যদি হারামি হয়ে যায় তাহলে ভালো মানুষের অস্তিত্ব কোথায় ? “
” অস্তিত্ব মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্য কাপড় পরে তৈরি হয়ে গেছে আর আমি এখন আপেল খাচ্ছি । “
” কেমন প্রশ্নের কেমন উত্তর ? আচ্ছা পরে কথা হবে আমি অফলাইনে যাবো । “
” ঠিক আছে ‘আল্লাহ হাফেজ’ কিন্তু অনলাইনে এসে সাথে সাথে মেসেজ করতে মনে থাকে যেন , নাহলে কিন্তু ঠাপ দিয়ে ডাব গাছের মাথায় তুলে দেবো । “
” ভারি ডেঞ্জারাস মেয়ে তুমি । “
” আফসোস করে লাভ নেই কারণ একটা বিরক্ত করা মেশিনের সাথে তোমার পরিচয় হয়েছে । তাই সারাক্ষণ শুধু সেই মেশিনের বিরক্ত সহ্য করতে হবে তাছাড়া কিছুই করার নেই । ” আমি আর রিপ্লাই না করে ডাটা বন্ধ করে দিলাম ।
আজকে প্রচন্ড গরম লাগে তাই রুমের মধ্যে থাকতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমাদের গ্রামের মধ্যে সরকার বিদ্যুৎ এখনো পৌঁছাতে পারে নাই । খুব বেশি গরম পরলে দক্ষিণ দিকের বাগানের মধ্যে গিয়ে বাতাস উপভোগ করি , কি করবো ? নিরুপায় । এদিকে মা কখন যে হঠাৎ করে আদালতে হাজির করে অপরিচিত মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করে কে জানে ?
গামছা গলায় জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম সামনে সিড়ির উপর মা-বাবা আর মাহি বসে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারাও গরমে কুপোকাত । ” বের হবার জন্য পা বাড়ালাম তখন মা বললো , সজীব একটু এদিকে বস তো তোর বাবা জরুরি কথা বলবে । ” আমি নায়কের মতো ঘাড় ফিরিয়ে বললাম , খুব তাড়াতাড়ি বলে শেষ করতে হবে কারণ গরমে আমি শেষ তাই বাগানে যাচ্ছি । “
” বাবা বললো , ভেবেছিলাম আমি নিজেই নিয়ে যাব কিন্তু গরমে শরীরটা বেশি ভালো লাগে না । তাই তোকে গিয়ে দিয়ে আসতে হবে নাহলে পথে হঠাৎ করে যদি অসুস্থ হয়ে যাই তাহলে আবার তোকে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে । “
” কোথায় যেতে হবে ? “
” আমার বন্ধুর বাসায় পিরোজপুরে । আমার বন্ধু বিদেশ থেকে যে মালপত্র পাঠিয়েছে সেগুলো পৌঁছে দিতে হবে । “
” এটা কেমন কথা বাবা ? তুমি ইতালি থেকে কষ্ট করে এতকিছু নিয়ে আসলে আর তার পরিবারের লোকজন সামান্য পিরোজপুর থেকে এই বাগেরহাট এসে নিতে পারে না ? তুমি তাকে বলো যেন তাদের মধ্যে কেউ একজন এসে নিয়ে যায় ! “
” সেটা সম্ভব না বলেই তো তোকে যেতে হবে কারণ আমার বন্ধুর কোন ছেলে নেই । বাড়িতে শুধু বন্ধুর মা , স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে আছে তাই আমারই পৌঁছে দেবার কথা । “
” বললাম , ঠিক আছে কাল সকালে বাসে উঠে পিরোজপুর গিয়ে মাল পৌঁছে দিয়ে আবার সাথে সাথে চলে আসবো ।
” বাবা বললো , কাল সকালে কেন ? এখন গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দিবি । সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে কারণ ওদের বাসা পিরোজপুর থেকে অনেক ভিতরে ইন্দুরকানি উপজেলায় । তুই এখান থেকে আগে বাগেরহাট বাস স্টেশন যাবি তারপর সেখান থেকে পিরোজপুরের বাসে উঠে পিরোজপুর নামবি তারপর সেখান থেকে সন্ন্যাসীর বাসে উঠে ইন্দুরকানি নেমে যাবি । তারপর সেখান থেকে তোকে তারা এসে নিয়ে যাবে সমস্যা হবে না । আজকে রাতে সেখানে থাকবি আগামীকাল সকালে উঠে নাস্তা করে চলে আসবি । বাবার মুখের উপর কখনো কথা বলিনি কারণ আমার এই ২৫ বছরের জীবনে ২৩ বছর ধরে বাবা বিদেশি প্রবাসী । দু বছর পর পর দেশে আসে তাই সেই সামান্য কিছু মাস কাছে পেয়ে বাবার সাথে এমন কোন আচরণ করিনা যেটা বাবা কষ্ট পায় । বাবা যেন বুঝতে না পারেন যে তিনি দুর প্রবাসে বসে এত কষ্ট করে টাকা আয় করে আর আমি দেশে বসে তার যোগ্য সন্তান হতে পারি নাই । আমি মাথা নেড়ে জবাব দিয়ে বললাম , ঠিক আছে বাবা তাই হবে । “
” বাবা বললো , তাহলে বাগান থেকে ঘুরে এসে তাড়াতাড়ি গোসল করে খাবার খেয়ে রওনা দেও । “
” ঠিক আছে বাবা । “
বাগেরহাট থেকে পিরোজপুর যেতে ঘন্টা খানিকের বেশি সময় লেগে গেল । বাবার কথা অনুযায়ী সেখান থেকে সন্ন্যাসীর বাসে উঠে বসে আছি । আন্টির নাম্বারটা বাবার কাছ নিয়ে এসেছি কারণ ইন্দুরকানি নেমে কল দিতে হবে । বাবা বলেছিলেন পিরোজপুর থেকে বাসে উঠে আগে থেকে যেন জানিয়ে রাখি তাহলে তারা নাকি আনুমানিক সময় করে আমার জন্য বাস যেখানে নামাবে সেখানে অপেক্ষা করবে ।
আমি আন্টির নাম্বারে কয়েকবার কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করলো না । ৭/৮ বার কল দিয়ে তারপর বাবার কাছে কল দিয়ে সবকিছু বললাম । বাবা বললো যে আমি যেতে থাকি সমস্যা নেই আর বাবা কল দিয়ে ব্যাপার টা দেখবেন । তাই আর কল না দিয়ে মোবাইলের ডাটা অন করলাম । গতকালের গল্পের মাঝে কেমন কি লাইক কমেন্ট এসেছে সেগুলো চেক করে রিপ্লাই করবো ভেবেছিলাম । কিন্তু ডাটা অন করার পাঁচ মিনিট পরেই ডেঞ্জারাস এর মেসেজ চলে এসেছে । লেখা ছিল , মিঃ হারামি লেখক তুমি যেখানেই থাকোনা কেন জরুরি ভিত্তিতে আমার সাথে কথা বলো । “
” আমি লিখলাম , কি হইছে ? “
” ওই ছ্যাড়া ? কি হইছে মানে কি ? এটা কোন ধরনের কথা বললে তুমি ? “
” আজব তো , আমি কি করলাম আবার ? কিসের জরুরি কথা সেটা বলো আগে । “
” কি করো ? “
” বাসের ভিতরে বসে আছি । “
” কোথায় যাচ্ছো ? “
” পিরোজপুর এসেছি বাবার বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি । “
” পিরোজপুর তো বরিশালের মধ্যে তাই না ? “
” হ্যাঁ । “
” বরিশালের মেয়ে কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস তাই আগে থেকে সাবধান হারামি লেখক । “
” বরিশালের মেয়ে ডেঞ্জারাস কিনা জানিনা কিন্তু তুমি হচ্ছ বড় ডেঞ্জারাস । “
” হিহিহি কেন কি করছি আমি ? “
” কিছু না । “
” আচ্ছা ঠিক আছে যেহেতু বাসের ভিতরে আছো তাই বেশি বিরক্ত করতে চাই না । এবার জলদি বলো “সরি দীপান্বিতা” গল্পের পরবর্তী পর্ব কখন পোস্ট করবে ? “
” আগামীকাল ! “
” কেন কেন কেন ? আজকে কি হইছে ? “
” আমি প্রতিদিন বিকেলে গল্প লিখি কিন্তু আজকে তো দুপুরে খাবার খেয়ে রওনা দিয়েছি তাই লেখার সুযোগ পেলাম
না । “
” এতকিছু বুঝতে চাই না , রাত আটটার মধ্যে গল্প পোস্ট করতে হবে নাহলে সকাল বেলার ডায়লগ মনে আছে তো ? ” হুম মনে আছে ! “
” বলো তো কি ডায়লগ ? “
” ঠাপ দিয়ে ডাব গাছের মাথায় তুলে দেবো । “
” ভেরি গুড , এখন ভদ্রলোকের মতো সেই বাসায় গিয়ে লেখা শুরু করবে । “
” আচ্ছা ঠিক আছে চেষ্টা করবো ! “
” ধন্যবাদ হারামি লেখক , এখন তাহলে রাখি ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ । “
আমিও মোবাইলের ডাটা বন্ধ করে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম । পারেরহাট নামক যায়গা পার হয়ে গেল ঠিক সেই মুহূর্তে আমার ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো । রিসিভ করে বুঝতে পারছি যে একটা মেয়ে কলে দিয়েছে ।
” মেয়ে বললো , হ্যালো আসসালামু আলাইকুম । “
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম , কে আপনি ? “
” জ্বি আমার নাম বৃষ্টি , আপনি নিশ্চয়ই আমাদের বাসায় বাবার পাঠানো মালামাল নিয়ে আসতেছেন তাই না ? “
” জ্বি , আপনি কি আঙ্কেলের মেয়ে ? “
” হ্যাঁ , আপনি আম্মুর নাম্বারে কল দিয়েছেন কিন্তু আম্মু একটু বাসার বাইরে ছিল তাই রিসিভ করতে পারে নাই । আর আম্মুর মোবাইলে টাকা নেই তাই কলব্যাক করতে পারে নাই । আপনার বাবা মানে আঙ্কেল কল দিয়ে বললো তারপর আম্মু আমার মোবাইলে ইমোতে কল দিয়ে বললো । বাবার সাথে কথা বলার জন্য আম্মুর মোবাইলে এমবি থাকে সবসময় । তাই আম্মু আপনার নাম্বারটা আমার কাছে দিয়েছেন কারণ আমি বাড়িতে নেই একটা বান্ধবীর বাসায় এসেছি । “
” ওহহ আচ্ছা । “
” হ্যাঁ , আপনি এখন কোথায় আছেন ? “
” কিছুক্ষণ আগে পারেরহাট স্টেশন পার হলাম । “
” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আর বেশিক্ষণ লাগবে না আসতে , আপনি ড্রাইভারকে বলবেন কলেজ মোড় নামিয়ে দিতে । আমি ইন্দুরকানি ডিগ্রি কলেজ মোড় আপনার জন্য অপেক্ষা করবো । “
” বললাম , আচ্ছা ঠিক আছে । “
” ওকে তাহলে সাবধানে আসুন , আল্লাহ হাফেজ । “
” বাস থেকে নেমে মোবাইল বের করেছি কল করার জন্য কিন্তু তার আগেই আকাশী কালারের বোরকা পরা একটা মেয়ে আমার সামনে এসে বললো , আপনার নাম সজীব তাই না ? “
” জ্বি আমি সজীব , আপনি কি বৃষ্টি ? “
” হ্যাঁ আমিই বৃষ্টি , নাজমা আক্তার বৃষ্টি । “
” আমি মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব । “
” আচ্ছা চলুন আমি ইজিবাইক ঠিক করে রেখেছি এখান থেকে আমাদের বাসায় যেতে আধা ঘণ্টার মতো লাগবে । “
” ঠিক আছে চলুন । “
মালপত্র ইজিবাইকের মধ্যে তুলে দুজনেই রওনা দিলাম কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বাসায় যাওয়ার মধ্যে এতটা সময়ে মেয়েটি আমার সাথে কোন কথা বললো না । আমিও আগ বাড়িয়ে গায়ে পরে কোন কিছু বলতে যাই নাই । কিন্তু মেয়েটির চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর , হাতের কব্জি যতটুকু দেখা গেল সেটুকুও সাদা ধবধবে । মনে মনে ভাবলাম বাসায় গিয়ে আরেকটু ভালো করে দেখতে হবে ।
রাস্তার পাশে ইাটের পাকা দোতলা বাড়ি । আমরা ইজিবাইক থেকে নেমে মালপত্র নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম । বাড়িতে প্রবেশ করে একটা আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে কারণ বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে । আমি মনে মনে ভাবলাম , ওহে আব্বাজান তোমার বন্ধুর বাসায় যতদিন থাকতে বলবে আমি রাজি কারণ এখানে বিদ্যুৎ আছে । বৃষ্টি বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে কোথায় হারিয়ে গেছে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না । ভেবেছিলাম ভিতরে গিয়ে বোরকা খুলে সামনে আসবে কিন্তু আমার আশা পুরন হলো না । ড্রইং রুমে বসে আছি মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে , আন্টি ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের নাস্তা নিয়ে এলো যেমনঃ- নুডলস , সেমাই , আপেল ইত্যাদি ইত্যাদি ।
” আমি সামান্য কিছু খেয়ে আন্টিকে বললাম , আমি দেড় ঘন্টার মতো একটু মোবাইলে কাজ করবো বিছানা হলে খুব ভালো হতো । “
” আন্টি বললো , ঠিক আছে ঠিক আছে । তার ড্রইং রুমের মধ্যে কর্নারে খাট দেখিয়ে দেয় বললেন , তুমি ওখানে গিয়ে শুয়ে শুয়ে কাজ করতে পারো তোমাকে কেউ বিরক্ত করবে না । “
” ঠিক আছে আন্টি ধন্যবাদ । “
” আচ্ছা ঠিক আছে আর যদি কিছু লাগে তাহলে ডাক দিও । “
” ঠিক আছে আন্টি । “
ড্রইং রুমের বিছানায় শুয়ে শুয়ে সরি দীপান্বিতা গল্প টার পরবর্তী পর্ব লিখলাম । প্রায় দুই ঘন্টার মতো সময় লেগেছে , কিন্তু এর মধ্যে বৃষ্টি একবারও রুমে আসলো না । মাগরিবের আজান দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে আন্টি এসে বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে । চা খাব কিনা জিজ্ঞেস করে গেল কিন্তু বৃষ্টির কোন দেখা মিলছে না । মনে মনে ভাবলাম মেয়েটা হয়তো পর্দা করে তাই বোরকা খুলে বাহিরের ছেলেদের সামনে আসবে না । ৭ঃ৩১ মিনিটে ডাটা অন করে পর্ব পোস্ট করলাম । এরপর বিছানা থেকে উঠে কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম আর তারমধ্যে আন্টি এসে একবার চা দিয়ে গেল ।
রাতের খাবার খেতে আমার ডাক পরলো সাড়ে নয়টার দিকে । ইলিশ মাছ , চিংড়ি মাছ , আলাদা আলাদা করে ভাজি করা হয়েছে । গরুর মাংস ঝোল না রেখে মশলা দিয়ে ভুনা করা হয়েছে । আমি একা খেতে বসেছি আর আন্টি এক এক করে সবকিছু আমার প্লেটে তুলে দিচ্ছে । বললাম , বাহহ দারুণ চমৎকার লাগছে আন্ট আপনার হাতের রান্না এত সুন্দর ? সত্যি বলছি খুব মজা হয়েছে । ” ( কথাটা বলে নিজেকে বোকা মনে হচ্ছে কারণ রান্নার বেশি প্রশংসা করা মানে হচ্ছে “আমাকে আরো খাবার দেন” এটা বোঝানো )
দেখলাম , সত্যি সত্যি আন্টি আমার প্লেটের মধ্যে গরুর মাংস দিচ্ছেন । বললেন , এগুলো একটাও আমি রান্না করিনি বাবা , সবকিছু আমার মেয়ে বৃষ্টি রান্না করেছে । বললাম , বাহহ সত্যি সত্যি অনেক ভালো রান্না করতে পারে । তাহলে বাবা আরো কিছু ভাত নিয়ে মাংসটা শেষ করে ফেলো , রান্না ঘরে আরো আছে সমস্যা নেই তুমি খেতে থাকো । মনে মনে যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই আন্টি এখন আমাকে খাদক বাঙালি মনে করবে ইসস কি লজ্জা কি লজ্জা । ভাগ্য ভালো যে বৃষ্টি এখানে নেই নাহলে হয়তো আমার মতো খাদক বাঙালি দেখে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে হাসতো । আমি খেতে খেতে যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি তখন হাত ধোয়ার জন্য উঠতে যাবো এমন সময় আন্টি বললো , বাবা দই আছে কিন্তু । “
বললাম , তাহলে ভালো হয় আন্টি কারণ দই খেলে হজম হবে তাড়াতাড়ি । তাছাড়া এত পরিমাণে বেশি করে অনেক দিন খাওয়া হয়নি । মা তো সবসময় চেচামেচি করে না খেয়ে খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছি তাই । আন্টি এবার ডাক দিল , কোইরে বৃষ্টি ? ফ্রিজ খুলে দই বের করে নিয়ে আয় তো মা । ” আমি দই এবং দই আনা মালিকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম ৷ একটু পরে দইয়ের বাটি হাতে করে মাথা নিচু করে বৃষ্টি প্রবেশ করলো । আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কারণ বৃষ্টির চেহারা যতটা সুন্দর মনে করেছি , বাস্তবে তারচেয়ে বেশি সুন্দরী । দইয়ের বাটি আন্টির হাতে দিয়ে দাড়িয়ে রইলো , আমিও আড় চোখে তাকিয়ে আছি । আন্টি আমার সামনে দই দিতে দিতে বললেন , দোতলায় দক্ষিণের রুমের বিছানাটা ভালো করে ঠিক করে দিয়ে আয় , সজীব সেখানেই থাকবে । বৃষ্টি আচ্ছা বলে পিছনে সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল । আর আমি দই খাওয়া শেষ করে সোফায় গিয়ে টিভির সামনে বসলাম ।
কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি দোতলা থেকে নেমে এসে বললো , ” আপনার বিছানা ঠিক করা হয়েছে চলেন আপনাকে আপনার রুমে দিয়ে আসি । বিকেলে অনেক দুর থেকে এসেছেন তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলে ভালো হবে । “
” আন্টি বললো , বৃষ্টি ঠিকই বলেছে তুমি বরং উপরে গিয়ে রুমের মধ্যে শুয়ে পরো । আগামীকাল সকালে আমাদের গ্রাম ঘুরে ঘুরে দেখবে ” আমি বৃষ্টির পিছনে পিছনে দোতলায় উঠে গেলাম । একটা রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বললো , এটা আপনার রুম দরজা লাগিয়ে দিয়ে সুয় পরেন । আর যদি অপরিচিত যায়গা বলে কিছু মনে হয় তাহলে বাতি জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পরবেন । আমি রুমের মধ্যে প্রবেশ করে চারিদিকে তাকিয়ে দেখি রুমটা অনেক সুন্দর । বিছানার চাদর বালিশ কাভার সবকিছু ঝকমক করছে । হঠাৎ করে দেখি বিছানার মাঝখানে একটা ভাজ করা কাগজে কলম দিয়ে চাপা দেয়া ।
আমি কাগজটা হাতে নিয়ে ভাজ খুলে দেখি সেখানে লেখা আছেঃ- এতটা পথ ভ্রমণ করে এসেও ঠাপ খেয়ে ডাব গাছে উঠে যাবার ভয়ে কষ্ট করে গল্পটা লিখে পোস্ট করার জন্য মেলা মেলা মেলা ধন্যবাদ । সত্যি আমি অনেক অনেক খুশি হয়েছি হারামি লেখক আর আজকের পর্বটা দারুণ চমৎকার ৷ আমি অবাক হয়ে দরজা দিকে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে । আমার চোখে চোখ পরা মাত্রই হাজার রাজপুত্র পাগল করার মতো একটা মুক্ত ঝড়া হাসি দিয়ে বললো , শুভ রাত্রি আমার প্রিয় হারামি লেখক , আল্লাহ হাফেজ । এ কথা বলেই বৃষ্টি দরজার সামনে থেকে উধাও হয়ে গেল আর আমি দৌড়ে দরজার সামনে এসে দেখি বৃষ্টি শব্দ করে করে সিঁড়ি বেয়ে নামছে ।
বিছানায় শুয়ে বাড়িতে ছোট বোনের কাছে কল দিয়ে বললাম সকাল বেলা যে নাম্বার দিয়ে মায়ের কাছে কল করা হয়েছে সেই নাম্বারটা দিতে হবে । মাহি তাড়াতাড়ি করে মায়ের মোবাইল থেকে নাম্বার বের করে আমাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিল । আমি নাম্বার চেক করে দেখলাম কারণ আমার সন্দেহ হচ্ছে বৃষ্টিই নিশ্চয়ই মায়ের কাছে কল করেছিল । কিন্তু বৃষ্টির সাথে বিকেলে যে নাম্বারে কল দিয়ে কথা হয়েছে এটা সেই নাম্বার না । তবে এমনও তো হতে পারে যে বৃষ্টি অন্য নাম্বার দিয়ে মায়ের কাছে কল করেছে ? আমিও আমার অন্য একটা নাম্বার দিয়ে সকালে মায়ের কাছে কল দেওয়া নাম্বার কল দিছি কিন্তু রিসিভ করলো না । দুতিনবার কল দিয়ে বিরক্ত হয়ে ডাটা অন করে ফেসবুকে গেলাম । ডেঞ্জারাস আইডির পাশে সবুজ বাতি জ্বলে না মনে হয় ডিনার করে তারপর অনলাইনে আসবে । আমি বাসা থেকে আসার সময় ইয়ারফোন নিয়ে এসেছি তাই কানের মধ্যে গুঁজে দিয়ে গান শুনতে লাগলাম আর তার পাশাপাশি ফেসবুকে হাঁটাহাঁটি করছি । ঘুমিয়ে পরেছিলাম কিন্তু মোবাইলের শব্দে ঘুম বিদায় নিয়ে চলে গেল হাতে নিয়ে দেখি মায়ের কাছে কল করা সেই নাম্বার থেকে কল এসেছে ।
” রিসিভ করে বললাম , আসসালামু আলাইকুম । “
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম , কি করতেছেন মিঃ হারামি লেখক ? আর এই নাম্বারটা কি আন্টির কাছ থেকে নিয়েছেন ? “
” বললাম , এটাও তোমার কাজ ? আচ্ছা একটা কথা বুঝতে পারছি না তাই তুমি কি আমাকে বুঝাতে সাহায্য করবে ?
” ছাঁদে যাবেন ? “
” এত রাতে ? “
” ভয় লাগে নাকি ? সমস্যা নেই আমি আছি তো । “
” না আসলে আন্টি কি মনে করবে ? “
” মা ঘুমিয়ে গেছে আর এই ঘুম আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আগামীকাল সকালে ভাঙ্গবে । কারণ আম্মু সবসময় ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমায় নাহলে সমস্যা দেখা দেয় । “
” ওহহ আচ্ছা তবুও …..! “
” আপনি দরজা খুলে দাঁড়ান আমি আসতেছি । “
” আচ্ছা ঠিক আছে । “
বৃষ্টি মনে হয় দোতলার মধ্যে অন্য রুমের মধ্যে ছিল কারণ আমি দরজা খোলার সাথে সাথে দেখি বৃষ্টি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে বললো , চলুন । আমি বৃষ্টি পিছনে পিছনে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে চলে আসলাম । চাঁদ এখনো ভালো করে বড় হতে পারে নাই তবুও তার ক্ষীণ আবছা আলোয় চকচক করছে বৃষ্টির সাদা রঙের ড্রেস ।
” বৃষ্টি বললো , চুপ করে আছেন কেন ? “
” আসলে কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না কারণ প্রথম পরিচয় সরাসরি গভীর রাতে ছাঁদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছি ৷ তাই এই মুহূর্তে আমার নিজ অনুভূতি কেমন সেটা বোঝাতে পারবো না । “
” প্রথম পরিচয় মানে ? আমাদের তো অনলাইনে কত কথা হয়েছে সেগুলো ভুল গেছেন ? “
” অনলাইনে কথা বলা আর সামনাসামনি কথা বলা আলাদা বিষয় তাছাড়া এর আগে এভাবে কারো সাথে পরিচয় হয়নি । “
” আর কারো সাথে পরিচয় হতেও হবে না কারণ এই বৃষ্টি আপনার জন্য পারফেক্ট । “
” মানে কি ? “
” আমাকে পছন্দ হয়না আপনার ? “
” তুমি দেখতে অনেক সুন্দর আর তোমাকে দেখে যেকোন ছেলে পছন্দ করবে । “
” আপনি আপনার নিজের মন্তব্য প্রকাশ করুন । “
” হ্যাঁ পছন্দ হয় ! “
” এবার আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে চাই , আপনার আইডিতে মেসেজ করে এতদিন কথা বলা আর মায়ের সঙ্গে কথা বলা এগুলো সম্বন্ধে ধারণা পেতে চান । তাই না ? “
” হ্যাঁ । “
” আমি আপনার লেখা গল্প পড়া শুরু করেছিলাম “বিশ্বাস করো আজও ভালবাসি” এই গল্পের মাধ্যমে কিন্তু তখন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট বা মেসেজ কিছুই করতাম না । শুধুমাত্র আইডি সার্চ করে গল্প পড়ে চলে আসতাম কখনো মন্তব্য করিনি । বাবার আইডি পাসওয়ার্ড আমার জানা ছিল কারণ বাবার একবার একটা সমস্যা হয়েছিল তখন বাবা পাসওয়ার্ড দেবার আমি মাঝে মাঝে লগইন করতাম । সরি দীপান্বিতা গল্পটা যেদিন পর্ব পোস্ট করছি সেদিন ভাবলাম আমার আইডি দিয়ে বের হয়ে ওই আইডিতে গিয়ে কমেন্ট করে আসি । ফেসবুক লাইট দিয়ে বাবার আইডিতে ঢুকলাম কিন্তু মেসেজ চেক করতে গিয়ে দেখি অবস্থা খারাপ । কারণ আপনার আইডিতে বাবা অনেক মেসেজ করেছে , আপনি সবসময় মেসেজ দিয়ে আঙ্কেল আঙ্কেল বলে কথা বলেছেন আর আপনার বাবার কথা ইত্যাদি ইত্যাদি । পরে আমি সেদিনই বাবার কাছে কল দিয়ে আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম । বাবা যখন বললো আপনি বাবার বন্ধুর ছেলে তখন তো আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । তারপর থেকে আপনার সাথে খুব যত্ন সহকারে মেসেজ করে কথা শুরু হয়েছে ৷ আর আন্টির নাম্বার আগেই ছিল আমার কাছে তাই সকাল বেলা কল দিয়ে মজা করেছি । “
” ওহহ আচ্ছা এবার বুঝতে পারছি । “
” এরপরে বাবার আইডি দিয়েই একদিন আপনাকে মেসেঞ্জারে আপনার কিছু ছবি পাঠাতে বললাম । আর আপনিও আমাকে আপনার আঙ্কেল মনে করে অনেক গুলো ছিল দিয়েছেন । আমার মায়ের সঙ্গে আমি সবসময় ফ্রী হয়ে কথা বলি তাই আপনার বিষয় মা’কে বললাম । বাবার আইডি দিয়ে আমি অনেকবার আপনার সাথে কথা বলেছি কিন্তু আপনি তো মাথা মোটা তাই ধরতে পারেন নাই । “
” কি বলছো তুমি তোমার মা’কে ? “
” বলেছি যে , আমি এই ছেলেটার সাথে আমার জীবন পার করতে চাই । “
” আন্টি কি বললেন ? “
” মা তখন বাবার কাছে সবকিছু বললো তারপর বাবা আপনার বাবার সাথে কি কি বলেছে কে জানে ? মনে হয় দুই বন্ধু বেয়াই হবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । “
” বললেই হবে নাকি ? আমার যদি পাত্রী পছন্দ না হয় তাহলে তো বিয়ে হপ্পে না । “
” আপনার যে পাত্রী পছন্দ হয়ে গেছে সেটা তো জানি আমি । দই নিয়ে যখন খাবার টেবিলে গেলাম তখন তো হা করে তাকিয়ে মুখের মধ্যে মশা মাছি সবকিছুর যাবার ব্যবস্থা করে দিলেন । “
” সে তো আমরা কত মানুষের দিকেই তাকিয়ে থাকি তাই বলে কি বিয়ে করতে হবে ? “
” একশো বার করবে , হাজার বার করবে । “
” তাহলে আমি রাজি ? “
” মানে ? “
” একশোটা বিয়ে করতে রাজি আমি । “
” সকাল বেলার ডায়লগ মনে আছে ? “
” হুম “
” ভেরি গুড ভেরি গুড , এবার প্রপোজ করেন । “
” তুমি করো । “
” গাধা নাকি ? তাড়াতাড়ি প্রপোজ করো । “
করবো না , বলেই আমি পিছনে ফিরে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলাম আর বৃষ্টিও আমার পিছন পিছন আসছে । আমি আমার জন্য বরাদ্দ রাখা রুম এর মধ্যে এসে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে রইলাম ।
বৃষ্টি এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো ” প্রপোজ করলে না কেন ? “
” প্রপোজটা বাসর ঘরের জন্য তোলা রইল , বাসর ঘরে বসে রোমান্টিক স্টাইলে প্রপোজ করবো । এখন যাও তাহলে , নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরো আর সকাল বেলা উঠেই কিন্তু আমি বাড়ি যাবো । আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই যেন সকালের নাস্তা রেডি থাকে ৷ “
” বিয়ের আগেই হুকুম শুরু হয়ে গেছে ? বাহহ দারুণ চমৎকার । আচ্ছা কালকেই যেতে হবে ? দু একদিন থাকবে না? “
” নাহহ আন্টি সবকিছু জানে এ কথা ভেবে আমার এখনই লজ্জা লাগছে । তার সামনে থেকে উধাও হতে পারলেই বেঁচে যাবো ভাই । “
” ঠিক আছে আপনার যা খুশি তাই করেন , থাকেন আপনি আপনার লজ্জা নিয়ে । সকাল বেলা নাস্তা তো দুরের কথা , যাবার সময় আমার সাথে দেখাও করতে পারবেন না কারণ আমি আপনার সামনেই আসবো না আর । “
” রাগ করলা ? “
” কিসের রাগ ? “
” তাহলে একটু হাসো । “
” আমি হাসতে পারি না , এ কথা বলে বৃষ্টি পিছনে ফিরে হাঁটা শুরু করলো । “
” আমি পিছন থেকে বললাম , বিয়ের আগে কোন প্রেম করতে পারবো না । তাই কালকেই বাড়িতে গিয়ে বলবো একা একা ঘুমাতে বড্ড ভয় লাগে তাই আমার একটা সঙ্গী দরকার । “
” বৃষ্টি পিছনে ফিরে তাকিয়ে বললো , ডেঞ্জারাস মেয়েকে বিয়ে করে নিলে জীবনটা পুড়তে পুড়তে তামাতামা করে দেবো । “
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো বৃষ্টির ডাকে , আমি উঠে বিছানায় বসে রইলাম । বৃষ্টিকে গতকাল প্রথম স্পষ্ট দেখেছি রাতে ডিনারের শেষ পর্যায়ে আর দ্বিতীয় দেখেছি ছাঁদে । কিন্তু পুরোটাই রাতে দেখা হয়েছে কিন্তু এখন অনেক বেলা হয়ে গেছে । আমার এই রুমের জানালা বৃষ্টি নিশ্চয়ই একটু আগে খুলে দিয়েছে । সকালের মিষ্টি রোদে রুম ভর্তি হয়ে গেছে আর সেই মিষ্টি আলোর আবছা আলোয় বৃষ্টিকে দেখে অবাক হলাম ।
” বৃষ্টি বললো , তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন টেবিলে নাস্তা দেয়া হয়েছে । “
” বললাম , তুমি কি আমার পাশে একটু বসবে ? দু চোখ ভরে তোমাকে দেখতে চাই । “
” জ্বি না সাহেব , আপনি এখন তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে নাস্তা করবেন নাহলে সবকিছু ঠান্ডা হয়ে যাবে ৷
” নাস্তা তুমি বানিয়েছো ? “
” হ্যাঁ , বাড়িতে রান্নার কাজ সব আমিই করি কারণ মা একটু অসুস্থ আর তাছাড়া রান্না করতে আমার মেলা মেলা মেলা ভালো লাগে । ” ডাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখি বৃষ্টি সবকিছু সাজিয়ে রেখে নাড়াচাড়া করছে কিন্তু আন্টিকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না । আমি টেবিলে বসতে বসতে বললাম ” আন্টি কোথায় ? “
” মা ছাঁদে গেছে , অনেকগুলো কাপড় ময়লা জমে গেছে তাই সেগুলো ধুয়ে শুকাতে দিয়ে আসবে । “
” আমি কি খেতে শুরু করবো ? “
” হ্যাঁ করেন । “
” তুমি খাবে না ? “
” আগে আপনি শেষ করেন তারপর আমি আর মা একসাথে খাবো অবশ্য মা সকালে একবার হালকা নাস্তা করেছে । ” তাহলে বসো দুজনেই একসাথে খাই , নাহলে আমি কিন্তু শুরু করবো না ৷ “
” আচ্ছা ঠিক আছে আপনি শুরু করেন আমিও বসতেছি ।
আমি যে চলে যাবো সে কথা বৃষ্টি আন্টির সাথে বলেছে । আমার মনে হয় আমি যে লজ্জা পেলাম সে কথা নিয়ে তারা মা-মেয়ে দুজনেই হাসাহাসি করেছে ইসসস কি লজ্জা কি লজ্জা ? যখন বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম তখন সাড়ে দশটার বেশি বেজে গেছে । আন্টি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বললো , আবার এসো বাবা বাড়ি তো চিনে গেলে তাই মাঝে মাঝে আসবে কিন্তু !
” ঠিক আছে আন্টি অবশ্যই আসবো । “
” ভালো থেকো সবসময় আর তোমার মা-বাবার কাছে আমার সালাম দিও । “
” জ্বি আচ্ছা ঠিক আছে ।
হাঁটতে হাঁটতে বৃষ্টি আর আমি ইন্দুরকানি বাজার পর্যন্ত আসলাম তারপর সেখান থেকে নদীর পার দিয়ে হেঁটে হেঁটে ব্রীজের কাছে গেলাম । ব্রীজের গোড়ায় বাস স্টপেজ , এখান থেকে বাসে করে পিরোজপুরের ভাড়া ২০ টাকা কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সিট পাওয়া মুস্কিল । বৃষ্টি গতকাল বিকেলের মতো করে বোরকা পরে হিজাব দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা আর মিষ্টি কালারের ওড়না দিয়ে শরীর জড়ানো ।
” বললাম, তুমি কি সবসময় এমন করে বোরকা পরে চলাফেরা করো ? “
” হ্যাঁ , কেন ? “
” ভালো লাগলো তাই জিজ্ঞেস করলাম । “
” আমি আমাদের কলেজের ক্লাসের সময়ও মুখের হিজাব পরিধান করে থাকি । ছোটবেলা থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে তাই এখন বড় হয়ে বোরকা ছাড়া কিংবা মুখমণ্ডল খোলা রেখে চলতে লজ্জা করে । “
” তুমি কিসে পড়ো জানা হলো না কিন্তু । “
” গতকাল বিকেলে যেই ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে বাসায় গেলাম সেই কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আমি ” বাহহ খুব ভালো । “
” বাস এসে গেছে তাই বৃষ্টি আমাকে বললো , তুমি তাড়াতাড়ি করে উঠে সিটে বসার চেষ্টা করো । “
” বললাম , ভালো থেকো তুমি । “
” আর একটা কথা । “
” বলো । “
” যার সাথে সারাজীবন একই ছাঁদের নিচে, একই ঘরে, একই বিছানায়, হাতে হাত রেখে, চোখে চোখ রেখে, পার করবো ৷ সেই মানুষটাকে যে কোনদিন ঠকাতে না হয় তাই কখনো কারো সাথে প্রেম নামক সম্পর্কে জড়াইনি । মাত্র কয়েকটা দিন আগে তোমার দেখা পেয়ে মনের মধ্যে অজান্তেই স্বপ্ন বাসা বেঁধেছে । তোমাকে নিয়েই আমার সকল বুক ভর্তি স্বপ্ন দেখা তাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি তোমার সাথে তোমার শরীরের পোশাকের মতো জড়িয়ে থাকতে চাই । “
” কথা দিচ্ছি এক আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ আলাদা করতে পারবে না । যদি বিশ্বাস করতে না পারো তাহলে একটি বার এই *মন ছুয়ে দেখো* । “
” ফেসবুকে মেয়েদের সাথে কথা কম বলবা , আর কমেন্টে এতো সুন্দর সুন্দর কথা বলার কি দরকার ?
” কেন খারাপ লাগে ? “
” খুব জ্বলে আমার , হিংসা লাগে , মনে চায় রিপ্লাই করে তাদের সাথে ঝগড়া করি । “
” আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে শুধু ধন্যবাদ দেবো ।
” ওকে গাড়ি ছেড়ে দেবে উঠে পরো তাড়াতাড়ি । “
” আল্লাহ হাফেজ । “
” আল্লাহ হাফেজ । “
বাড়িতে পৌঁছাতে প্রায় দুইটা বেজে গেছে , মা-বাবা আর মাহি সবাই খেতে বসেছে । আমি ঘরের মধ্যে ঢুকে অসহ্য গরমের মধ্যে বলে উঠলাম ।
” উহু এত গরমের মধ্যে কিভাবে বাঁচবো ? “
” বাবা বললো , কিরে শশুর বাড়ি থেকে এত সকাল সকাল চলে আসলি কেন ? শশুর বাড়িতে তো বিদ্যুৎ আছে তাহলে ? “
” মা বললো , আহহ খাবার সময় কি সব ফাজলামো করো ? সজীব তুই তাড়াতাড়ি গোসল করে খেতে আয় । “
” বাবা বললো , বৌমাকে কেমন পছন্দ হলো ? “
” বললাম , মানে কি বাবা ? “
” তোকে তো মেয়ে দেখতে পাঠালাম তা কেমন দেখে আসলি তা বলবি না ? “
” আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে ‘ধুর’ বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম । পিছন থেকে মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন , দেখছো তোমার ছেলে লজ্জা পাচ্ছে তারপরও ঠাট্টা করছ কেন ? “
” উত্তরে বাবা কি বললো তার আর শোনা গেল না । ” বিকেলে ছোট বোন আমার কাছে এসে বললো , ভাই আমি কিন্তু তোমার বিয়েতে খুলনা শহরে গিয়ে শপিং করবো । আমাদের বাগেরহাট থেকে কিন্তু আমার জন্য কিছু কিনতে পারবে না । “
” আমার বিয়ে মানে কি ? “
” বৃষ্টি আপুর সঙ্গে তো তোমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে সেই সময়ের কথা বলছি । “
” বৃষ্টির সাথে বিয়ে মানে ? “
” তোমাকে বাবা ইচ্ছে করে আঙ্কেলের বাড়িতে যেতে বলেছে কারণ বাবার ইচ্ছে ছিল তুমি নিজে গিয়ে ভাবিকে দেখে আসো । তবে আঙ্কেল আর বাবা মিলে তোমাদের বিষয় অনেক আগেই কথা বলে রেখেছে ।
” বলিস কি ? এতকিছু জানলি কিভাবে ? “
” আমি তো ঘরের একজন সদস্য তাই সবকিছুই জানার অধিকার আছে । তবে ভাইয়া , সত্যি সত্যি কিন্তু বৃষ্টি ভাবি অনেক সুন্দরী , তোমার পছন্দ হয়েছে অনেক তাই না ? “
” হ্যাঁ হয়েছে , মেলা মেলা মেলা পছন্দ হয়েছে এবার তুই যা আমি ঘুমাবো । “
” এত গরমের মধ্যে কিভাবে ঘুমাবে ? “
” সেটা তোর জানতে হবে নাকি ? যা ভাগ । “
” যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি । ” মাহি চলে গেল আর আমি দরকার বন্ধ করে দিয়ে বৃষ্টির নাম্বারে কল দিলাম , হোকনা জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু , ক্ষতি কি ?
গল্পের বিষয়:
গল্প