মা মারা যাবার একুশ দিনের মাথায় বাবা বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে তুললেন। হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে মাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিলেন, ‘ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ’। এক ঘন্টার মধ্যেই মা চলে গেলেন। সেই দিনের আগের দিন পর্যন্ত অবশ্য তিনি একেবারেই সুস্থ সবল কর্মঠ মহিলা ছিলেন। সুতরাং ঘরে অসুস্থ স্ত্রী দেখে দেখে অরুচি হবার মত ঘটনা পিতৃদেবের সাথে ঘটেনি। আমি এক তেইশ বছরের যুবক।
বাবা বিয়ে করে সৎমা ঘরে নিয়ে আসলে সেই সময়টায় এ বয়সী যুবকেরা ঠিক কি করে আমার জানা নেই, তবে আমি কয়েক ঘন্টা যাবৎ ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে বসে রয়েছি আর অসম্ভব রকম ঘামছি। মাথার ওপর ফ্যান ফুল স্পিডেই চলছে,তবু মাথার চুল ভিজে উঠছে। রাত বারোটা। দমবন্ধ লাগছে। বের হতে হবে আমাকে। বাইরের দরজাটা খোলার সময় কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। বুঝতে দেরি হলো না, আমার তেরো বছর বয়সী একমাত্র বোন তিন্নি কাঁদছে। ওর রুমে গেলাম। ও সাধারণত এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু আজ বালিশে মুখ গুজে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে । ওর মাথায় হাত রেখে কিছু বলতে গিয়ে টের পেলাম আমার গলা কাঁপছে। আমি থেমে গেলাম। বুঝলাম প্রবল বেগে আমার কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে ।
তিন্নিকে বুকে জড়িয়ে সে কান্নাটা কাঁদতে পারলে শান্তি পেতাম অবশ্য, কিন্তু তিন্নির কারণেই ওটাকে থামাতে হবে। ঢোঁক গিলতে লাগলাম বার বার। কিছু সময় চুপচাপ বসে থেকে এরপর তিন্নিকে উঠিয়ে বললাম, ‘ আমি দুটো নতুন ম্যাজিক শিখেছি।দেখবি? ও একটু নড়েচড়ে স্বাভাবিক হয়ে বসে বলল, ‘ ভাইয়া তুমি আজ সারারাত এঘরে থাকতে পারবে?’ আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালাম। তারপর ম্যাজিকের উপকরণগুলো আনতে নিজের ঘরে চলে গেলাম পরদিন ঝুম বৃষ্টির মধ্যে একটি ক্যাফেতে দুঘন্টা কাটিয়ে দিলাম। জেবার আসার কথা ছিল,আসেনি। তার ফোন ও বন্ধ। ওদের বাসায় ঢোকার চেষ্টা করাটা ঝুঁকিপূর্ণ,কিন্ তু এই মুহুর্তে জেবাকে আমার খুব প্রয়োজন। জেবার বাবা দরজা খুলে দিলেন। কিছুক্ষন মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘কাকে চাই?’
– জেবার সাথে একটু দেখা করা দরকার।
– কেন?
– ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছিল। আমি ওর সহপাঠী ছিলাম।
– দেখা হবে না। এবার আসতে পারো।
বেরিয়ে যাচ্ছিলাম,এমন সময় ভদ্রলোক পেছন থেকে ডাকলেন, ‘দাঁড়াও, তোমার এড্রেস বলো।’ ঠিকানা বলে বেরিয়ে এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরে রাশেদের বাসায় চলে এলাম। দুদিন রয়ে গেলাম ওর ওখানে। বাসায় ফেরার কথা মনে হতেই সেটাকে নরক মনে হচ্ছিল। তাতে অবশ্য ভালো কিছু হলো না।
তিন্নির চিন্তায় দু’রাত ঘুম তো হলোই না, নতুন জায়গায় থাকার অস্বস্তি তার সাথে যোগ হয়েছিল। এ দুদিন সকালের দিকে জেবাদের বাসার উল্টোদিকের রাস্তায় অনেকক্ষণ থেকেছি, আমাকে দেখে সে নেমে আসবে, অথবা ফোন করবে – সে আশায়। তার ফোন এখন পর্যন্ত বন্ধ। দুদিন পর বাসায় ফিরে তিন্নির সাথে নিজের রুমেই ছিলাম। সেসময় কাজের বুয়া এসে খবর দিল, পিতৃদেব আমায় ডাকছেন।’ তৎক্ষনাৎ ভাবলাম,উনি ডাকলেই যেতে হবে কেন! কিন্তু এরপর কৌতুহল জাগল। লোকটা কি কথা বলবে? কিভাবে বলবে? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবে তো? দরজা খোলাই ছিল। তবুও নক করলাম। পিতৃদেব আমাকে ভেতরে ডাকলেন আর বসতে বললেন। পাশে একটি চেয়ারে এ বাড়ির বর্তমান কর্ত্রী বসে। তার দিকে যেন আমার চোখ না পড়ে,সে ব্যাপারে সতর্ক থাকলাম। আমি দাঁড়িয়েই বললাম, ‘একটু সংক্ষেপে বলুন,যা বলবেন। আমার শরীর খারাপ লাগছে।’
– শরীর খারাপ? কেন কি হয়েছে? ‘একটা ঘেন্না জড়ানো গা গোলানো অনুভূতি হচ্ছে দু’দিন থেকে ‘ – এই কথাটুকু বলে লোকটির প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তার মুখের দিকে তাকালাম। তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছে, ‘এ দুদিন কোথায় ছিলে?’
– বন্ধুর বাড়িতে।
– জানানোর প্রয়োজন মনে হয়নি?
– আপনি কি সবাইকে সব কিছু জানিয়ে করেন?
– শোনো, তোমাকে স্পষ্ট একটা কথা বলি।নিজের ইচ্ছেমত চলতে হলে,অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতে হবে তোমাকে। এ বাড়িতে এসব চলবে না।
– তিন্নির জন্য আপাতত বেরিয়ে যেতে পারছি না। তবে ভাববেন না আপনি, যত দ্রুত সম্ভব একটা কাজ জোগাড় করে ওকে নিয়ে চলে যাবো।
– ইডিয়ট! ওর চিন্তা তোমাকে কে করতে বলেছে? কি যোগ্যতা আছে তোমার বোনকে নিয়ে ভাবার? দুদিন তো হাওয়া হয়ে ছিলে! তখন মনে হয়নি বোনের কথা! বাহাদুরি দেখোনো হচ্ছে আমার সাথে!
– আমি গেলাম। আমার বমি আসছে।
– দাঁড়াও। আমার কথা শেষ হয়নি।
শরীফ সাহেব এসেছিলেন এ বাড়িতে আজ। তার বাড়িতে গিয়ে তার মেয়েকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করছো নাকি ? বাড়ির সামনেও নাকি রোজ গুন্ডাপান্ডার মতো দাঁড়িয়ে থাকো? স্ট্রেঞ্জ! লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে গেছে ভদ্রলোকের সামনে। আমার ছেলে আজ এমন বাউন্ডুলে হয়েছে যে, বাসায় লোকজন আসতে শুরু করেছে! যাহোক,নেক্সট টাইম আমি আর এসব শুনতে চাই না। এবার তো তোমার মা ভদ্রলোককে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করেছেন। এরপর এমন কিছু ঘটলে এই লোক তোমাকে কিন্তু জেলের ভাত খাওয়াবে। আমি চমকে উঠে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আপনি যাকে তাকে আমার মা বলছেন কেন?আমার মা মারা গেছেন।’ এ কথার পর মহিলা উঠে ঘরের বাইরে চলে গেলেন। এরপর বাবা লোকটি অগ্নিদৃষ্টি দিলেন আমার দিকে, ‘বড়দের সাথে বেয়াদবির একটা সীমা থাকা দরকার। বেরিয়ে যাও এ ঘর থেকে।’
নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি। ঘুম ভাঙল যখন,বাইরে অন্ধকার।
বের হয়ে দেখি সুনসান নীরবতা চারদিকে। তিন্নির ঘরে গেলাম। ও অসময়ে শুয়ে আছে দেখে অবাক হয়ে ডাক দিলাম। তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল,ভাইয়া আমার খুব জ্বর এসছে।’ ওর কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। দিশেহারা হয়ে বললাম,’বাড়ির আর সবাই কোথায়। ‘ তিন্নি অস্ফুট স্বরে জবাব দিল, ‘জানিনা।’ তিন্নির ঘর থেকে বের হয়ে কৌতুহলবশত একবার ও ঘরটির দিকে তাকালাম। দেখি এই ভর সন্ধ্যায় ও নব দম্পত্তির দরজা বন্ধ। আমার আবার গা টা গুলিয়ে উঠল। নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে রেডি হচ্ছিলাম ডাক্তার আনব বলে। হঠাৎ আমার ঘরে ল্যাপটপের ওপর একটা লাল রঙের দাওয়াত কার্ড ধরনের কিছু দেখে সেটা হাতে নিয়ে খুললাম। চোখ বিস্ফারিত হলো আমার। কার্ডটি বিয়ের নিমন্ত্রণের। পাত্রীর নাম জেবা। বাবার নাম শরীফ খন্দকার। বসে পড়লাম বিছানায়। কিছুক্ষণ বসে রইলাম। তারপর বের হলাম।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ খেয়াল হলো,আমি ভুল রাস্তায় হাঁটছি। খানিক পেছনে এসে আবার বামের রাস্তা ধরলাম।
আমার পা চলছিল না। নিজেকে এতটা অসহায় কখনো লাগেনি আমার। মানুষের জীবন থেকে কোনো সুন্দর জিনিস অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হারিয়ে গেলে সে মুহূর্তে সেই জিনিসটিকে আরো সুন্দর মনে হতে থাকে। বার বার বিড় বিড় করে বলতে লাগলাম, জেবার মতো চমৎকার মেয়ে এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই রাত ভোরের দিকে তিন্নির জ্বরটা একদম কমে গেলো। তখন একটু ঘুমের চেষ্টা করলাম আমি! চেষ্টা সফল হলো না। সকাল আটটার দিকে একটু ঘুম ভাব আসছিল, এমন সময় বাবার দু নম্বর স্ত্রী আমার রুমের সামনে এসে আমাকে ডাকল। অবাক হলাম। সে মাথা নীচু করে মৃদুস্বরে বলল, ‘অয়ন, আমি চলে যাচ্ছি। তুমি তিনদিন থেকে এ বাড়িতে কিছুই খাওনি। এবার খেয়ে নিও প্লিজ।’
আমি তার কথার কোনো উত্তর দিলাম না। প্রয়োজন ও মনে করলাম না। সে চলে গেল। জানি পিতৃদেব আরো চড়াও হবেন আমার ওপর।কিন্তু সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা হলো না।এই মুহূর্তে আমার মায়ের ছবি ছুঁয়ে দেখতে খুব ইচ্ছে হলো।ছবিতে মার হাত গুলোর ওপর হাত রাখলাম। কেউ যেন বুকের পাঁজর দুমড়ে মুচড়ে ফেলল আমার। কয়েকদিন আগেই এই হাত দুটো দিয়ে মা আমার কপালে গালে হাত বুলিয়ে আদর করে বলেছিল, ‘আমার ছেলের মতো এত ভালো ছেলে কারো হয়না।’ বেলা বাড়তেই তিন্নির আবার জ্বর এলো। আজ সারাদিন বাসায় থাকব ঠিক করলাম। জলপট্টি দিচ্ছিলাম ওর কপালে,এমন সময় ও আমাকে বলল, ‘ ভাইয়া তুমি দুরাত বাসায় ছিলে না। জিজ্ঞেসও করলে না,আমি রাতে ঘুমাতে পারলাম কি না!’
– তোর খুব কষ্ট হয়েছিল? না রে?
– না, কষ্ট হয়নি। কারণ ঐ দুরাত নতুন মা আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিল। মানা করেছিলাম আমি, শুনেনি।
আমি কোনো কথা না বলে বাটির জল বদলাতে বাইরে এলাম কাজের বুয়ার কাছে জানলাম,বাবার ও খুব জ্বর। বিকেল পর্যন্ত সে ঘর থেকে বের হয়নি।চিন্তিত হলাম। তার ঘরে গিয়ে দেখি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। হাতের ঠিক নীচে মার দেয়ালে টানানো ছবিটা। কপালে হাত দিয়ে দেখি ভীষণ জ্বর। ওদিকে তিন্নির ও জ্বর। কি করব, কোন দিক সামলাবো, বুঝতে পারছিলাম না। এরকম পরিস্থিতি আগে আসেনি। নাহ,হয়তো এসেছে,তখন মা সামলে নিয়েছে,টের পাইনি। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আজ মায়া হলো। সঙ্গীহীন জীবন অনেক কষ্টের। আমরা মা হারিয়েও হয়তো একসময় একাকীত্ব কাটিয়ে উঠব,কিন্তু বাবার একাকীত্ব তো আমৃত্যু থাকবে বিকল্প ব্যবস্থা না করলে।
সেদিক দিয়ে তার বিয়ের সিদ্ধান্ত খুব অন্যায় ছিল কি? কথা বলতেও তো একজন মানুষের দরকার হয়।আর এরকম অসুখ বিসুখে তার কখনো সেবা আমি করেছি বলে আমার মনে পড়েনা। আর ভবিষ্যতেও কি তাকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে সেবাদান আমার বা তিন্নির পক্ষে সম্ভব হবে? এসব ভাবনার মধ্যে কলিংবেলের শব্দ হলো। বিস্ময়ে আমার চোখ বেরিয়ে আসতে চাইছে! জেবা আমার সামনে দাঁড়িয়ে। ও আমার বিস্ময় বুঝতে পেরে আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, ‘তৈরি হয়ে নাও! কাজী অফিসে যেতে হবে। আমাদের বিয়ে । আজকের তারিখটা দেখে নিলাম। কার্ডের লেখা অনুযায়ী আজ দুপুরে জেবার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ সে এখানে। এবং নাটকীয় সব কথাবার্তা বলছে। কি সব ঘটছে,আমি বুঝতে পারছিলাম না একদম! জেবার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুমি এত সুন্দর করে সেজেছো কেন? লাল শাড়ী আর হাত ভর্তি লাল চুড়ি পরেছ কেন? এসব কি হচ্ছে জেবা?’
– হচ্ছে না। হবে। তোমার আমার বিয়ে!
– জেবা এই মুহূর্তে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। সবে মাস্টার্স শেষ করেছি। এখনো কর্মজীবন শুরু হয়নি। তোমার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাটুকু ও করতে পারব না।
– আমি করব খাওয়ার ব্যবস্থা,থাকার ব্যবস্থা ও করতে পারব,তবে আমি এ বাড়িতেই থাকতে চাই।
– তুমি কি সব বলছ? তুমি কিভাবে ব্যবস্থা করবে?আর আমি নিজেই তো এ বাড়িতে থাকব না,তুমি কিভাবে থাকবে?
– অয়ন, গতকাল আমার একটা চাকরি হয়েছে বলেই আজ বেরিয়ে এসেছি বাসা থেকে। এই চাকরি টা না হলে তোমাকে বাদ দিয়ে আরেকজনের গলা ধরে ঝুলে পড়তে হতো এতক্ষণে। আর শোনো,মা কোথায়?
– কার মা? তুমি জানো না আমার মা মারা গেছেন?
– জানি। আমি তোমার নতুন মায়ের কথা বলছি, যিনি আমাকে চাকরিটা পাইয়ে দিয়েছেন,যেন আমি আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে না করে তোমার কাছে চলে আসতে পারি। কোথায় উনি?
– চলে গেছেন।
– চলে গেছেন মানে? অয়ন, তুমি না বড্ড অবুঝ!
যেতে দিলে কেন উনাকে! তুমি কি জানো উনি অনেক বলে কয়ে তোমার বাবাকে বিয়েতে রাজী করিয়েছেন। দুসম্পর্কের আত্মীয়া উনি তোমার বাবার। স্টুডেন্ট লাইফে তোমার বাবার টাকায় উনি লেখাপড়া করেছেন। এসময় তোমাদের সংসারের বেহাল অবস্থা দেখে সেই ঋণ শোধ করতে চলে এলেন। তবে শুধু ঋণ শোধের কারণে কেউ এমন করেনা, উনার কথাবার্তা শুনে আমার মনে হয়েছে,সে সময়টায় উনি তোমার বাবাকে ভালোও বেসে ফেলেছিলেন,যা আগে প্রকাশ করতে পারেননি। তুমি আরো অনেক কিছুই জানো না। বাবা উনাকে বিয়ে করলেও প্রতিদিন রাতে তোমার মায়ের জন্য কাঁদেন। আর তুমি এটাও জানো না, তুমি কয়েকদিন থেকে বাড়িতে খাওনি বলে তোমার বাবাও খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন! বুদ্ধু তুমি একটা। তুমি থাকো তোমার ইগো নিয়ে। আমি যাচ্ছি ঐ মহান মানুষটির কাছে।
– নাহ,তুমি যাবে না। তুমি একটু বাবা ও তিন্নির খেয়াল রাখো। ওদের দুজনেরই খুব জ্বর। আমি যাচ্ছি উনার কাছে। আমি না গেলে উনি আসবেন না। সন্ধ্যে হলো আমার পৌঁছোতে। ঠিকানাটা তিন্নির কাছে ছিল। উনি সাবলীল ভাবেই আমাকে ভেতরে বসতে দিয়ে পাশে বসলেন। এই প্রথম আমি উনার মুখের দিকে তাকালাম। আমার মায়ের বয়সীই হবেন উনি। চেহারায় একটা আভিজাত্য এবং এক ধরনের দৃঢ়তা রয়েছে। ধীর স্থির ভাবে উনি বললেন,’ কি খাবে বলো? তুমি তো স্ন্যাকস আর কফি খুব পছন্দ করো। একটু বোসো আমি নিয়ে আসছি।’
– আমি কিছু খাবো না। আমি আপনাকে নিতে এসেছি। আপনি একটু আমার পাশে বসুন।
– আচ্ছা বলো।
– আমি আমার মায়ের জায়গাটা কাউকে দিতে পারব না এটা ঠিক,কিন্তু আরেকজন মায়ের জন্য মনে আরেকটা জায়গা বানানো কঠিন নয়।
– হুম,কঠিন হতে দিব না আমি।
– আমি কি আপনার পা ছুঁয়ে একটু সালাম করতে পারি?
– না পারো না। পা ছুঁতে নেই।
আমি উনার বারণ অমান্য করে উনার পা ছুঁতে নীচু হলাম। উনি বাধা দিলেন না। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আমি অবিকল আমার মায়ের সেই স্পর্শ অনুভব করলাম। এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল, পৃথিবীটা হঠাৎ সুন্দর হয়ে উঠছে ! জ্বরে অচেতন বাবার মুখটা খুব মনে এলো। সে মুখে কোনো কালিমা নেই,আছে শুধু সন্তানের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা!
গল্পের বিষয়:
গল্প