মেয়েটি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। পড়নে একটা সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ আর লাল রঙের পায়জামা। বয়স ষোল সতেরো।শরীর রোগা। গাত্রবর্ণ ফর্সা। তবে অযত্নের অভাবে ক্রমে ক্রমে মনে হয় রঙ ফিকে হয়ে আসছে।
মেয়েটি আসছে দেখে আমি তার দিক হতে চোখ সরিয়ে নিলাম।এমন একটা ভাব নিলাম যে তার দিকে আমি তাকাই নি। এই যে লাল গুঞ্জি, আমার দিকে তাকান ” আমি ভাব ভেঙে মোটা গ্লাসের চশমা দিয়ে গ্রামের এই লাস্যময়ী বালিকাকে দেখলাম।তার চোখ রক্তবর্ণ। তবে এটা দেখার কোনো কারণ নেই।এই গ্রাম্য বালিকাকে আমি আগে কখনো দেখি নি। আমার দিকে রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে তাকানোরও কোনো অধিকার তার নেই। আমি আশ্চর্য স্বরে বললাম,” এই বালিকা, তুমি আমাকে লাল গেঞ্জি বলছ কেনো? আমার নাম আশফাক। তাছাড়া আমি তোমার কমপক্ষে হলেও ৬-৭ বছরের বড়। লাল গেঞ্জি বলাতে আমি খুবই আহত হয়েছি। আচ্ছা কি তোমার বড় ভাই বোনকে তুই করে বলো?
মেয়েটি অদ্ভূত একটি ভঙ্গি করে জবাব দিল হ্যাঁ। মেয়েটির হাতে তিনটি ফুল। মনে হচ্ছে তিনটাই গোলাপ। তবে রঙে ভিন্ন।একটা লাল,একটা সাদা, আর শেষেরটা কালো। আমাকে মেয়েটি অবাক করে দিয়ে বলল,” আমি কারো কাছে মাফটাফ চাই না। তার উপর আপনে ভালা মানুষ না।এতক্ষণ আমার সম্পর্কে কি ভাবছেন আমি সব জানি? আপনে আমারে চুম্মা দেওয়ার কথা ভাবছেন না কন? আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।বলে কি মেয়ে! আমি কিছু বললাম না। এখন কথার জবাব দেয়া অর্থহীন।পায়ে ধরে বললেও বিশ্বাস করবে না। ” আপনে সকালেও আমার দিকে তাকাইয়া আছিলেন।আমি সব বুঝতাম পারি।আপনে যা যা ভাবছেন আমি এক এক করে সব কইতে পারমু? শুনবেন?
– হুঁ,বলো শুনি। আপনে আমার সৌন্দর্যে ডুব দিয়েছেন।কন তো দিছেন না?” কথাটা মেয়েটি পুরোপুরি ভুল বলে নি। খানিকটা যে লাগে লাগে নি তা বলব না। মাঝামাঝি ধরণের ভালো লেগেছে।
আমি তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললাম,” তোমার সৌন্দর্য! হা হা হা!! মেয়েটির চেহারায় বিষন্নতার ছাপ দেখতে পেলাম। আগে জশ এখন ফিকে হয়ে গেছে। ” আপনে ফাঁসবেন, খুব তাড়াতাড়িই ফাঁসবেন কোনো মাইয়া খপ্পরে। খুব তাড়াতাড়ি ” বলে বিড়বিড় করতে করতে মেয়েটি চলে গেল।
আমি এসেছি ইটালি থেকে ৪-৫ দিনের জন্য বেড়াতে। আজ ২য় দিন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এসেছি। ৭ বছর বয়সে একবার এসেছিলাম। তখনখার কথা খুব বেশি মনে হয়। এখানে আমার দাদা থাকেন। আমার দাদা তিন পুরুষের জমিদার।তবে জমিদারী এখন আর নেই।আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে দাদাকে নিয়ে যাব ইটালিতে। রাতে খাবার টেবিলে খেতে বসেছি। ব্যাপক আয়োজন। বড় রুই মাছের মাথা,খাসির গোশত, দেশি মুরগির গোশত,গরুর গোশত, রোস্ট,পায়েস, দধি আরো অনেক কিছু। সবগুলোর নাম আমি নিজেও জানি না। আমি রীতিমতো মুগ্ধ। দাদাকে বললাম,” এত কিছু কিভাবে করলে?” দাদাজান আশ্চর্য হয়ে বললেন,” আরে,এত কিছু কই করলাম।এত সামান্য! ” আমি হা করে খানিক্ষণ দাদাজানের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
তখন একটা অদ্ভূত ঘটনা ঘটল। দাদাজানের চশমা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাজের লোক মতি মিয়া এসে বলল,” দাদাজান, চশমা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।সারাবাড়ি চষে ফেলেছি কোথাও আপনার চশমা নাই। দাদাজান হুঙ্কার দিয়ে বললেন,” চশমার কি ডানা গজিয়েছে যে উড়ে চলে যাবে। যা আবার গিয়ে খোঁজ। ” মতি মিয়া বলল, ” জ্বে দাদাজান। খুঁজতাছি।” দাদাজান চশমা ছাড়া কাঁটা বেছে খেতে পারেন না। চশমা ছাড়া পাংগাশ মাছ খাচ্ছিলেন। যা হওয়ার তাই হলো। একটা কাটা বিধে গেল।এক হুলস্থুল কান্ড।আমার বাবা ইতালি থেকে বড়ই টেনশন করছে। টেলিফোনে বাবা বললেন, “দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নেওয়ার জন্য”
বাবা মা টেনশনে পড়ে গেলেন। বাংলাদেশে আসার জন্য টিকেটও কেটে ফেলেছে বাবা। সেদিন কেয়ারটেকার জসিমউদদীন টেলিফোনে বললেন,” কাটা সারানো হয়েছে। গ্রামের মস্তু ডাক্তার চিমটা দিয়ে কাটাটা এনেছেন।”
বাবা বললেন,” এখন তিনি কি করছেন?” তিনি শোকরানার নামাজ পড়তাছেন।পরে মসজিদে সিন্নির ব্যবস্থা করবেন। বুট, মুড়ি আর বাতাসা।” বাবা পরিকল্পনা করলেন ইটালিতে দাদাজানকে নিয়ে আসবেন।বুড়ো হয়েছে, জমিদারিও নাই।একা একটা মানুষ গ্রামে থাকবেন কিভাবে? সেটা জন্য বাবা আমাকে তাগাদাদিতে থাকলেন দাদাজানকে নিয়ে আসার জন্য।আমিও সময় খুজে পাচ্ছিলাম না।ভার্সিটি পড়াশুনা,একটা কফিশপ চালাই।তোয় এবার সামারে ভার্সিটি অফ। সময়ও পেয়ে গেলাম।একটা যান্ত্রিক পাখিতে চড়ে দেশের উদ্দেশ্য উড়াল দিলাম।
আমি খাবারটা রেখে চলে গেলাম আমার রুমে। ব্যাগ থেকে একটা ডেন ব্রাউন সাহেবের একটা বই বের করলাম।বইটার নাম ” দ্য লস্ট সিম্বল”।বেশ থ্রিলার আর সাসপেন্স জনরার বই।বইটা নিয়ে জমিদার বাড়ির সামনে নিরিবিলি জায়গায় একটা গাছের নিচে বসলাম। গভীর মনযোগে বই পড়ছি।মূল কাহিনীর দিকে ইতিমধ্যেই ঢুকে গিয়েছি।
” আপনারা দাদজানের চশমা পাচ্ছেন না তো?” আমি আশেপাশে ঘুরে থাকলাম। মেয়েলি কন্ঠটা কোথেকে আসল বুঝতে পারলাম না।ভাবলাম ভুল শুনেছি। আবারও বইয়ে মনযোগ দিলাম।তখন বইয়ের উপর একটা কালোগোলাপ পড়ল।আমি উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে। হ্যাঁ এর সঙ্গেই তো সকালে আজ কথা বলেছিলাম। আমি বললাম,” ভরদুপুরে গাছে বসে আছো কেনো?
– আমার ইচ্ছা।আপনার কোনো সমস্যা? মেয়েটি তো বেশ বিরক্তিকর। সামান্য মেনারও জানে না। ” আপনার দাদাজানের চশমা কই আছে আমি জানি।” আমি খানিকটা হকচকিয়ে গেলাম।এর তো কিছু জানার কথা না।জানলো কিভাবে? আমি বললাম,” আগে নিচে নেমে আসো?” মেয়েটি বেশ সহজে গাছ থেকে নেমে এল।মনে হয় গাছে উঠানামা তার অভ্যস্ত। ” আগে বল তোমার নাম কি?”
– ক্যান, আমার নাম আপনারে বলতে যামু ক্যান?আপনি তো আমার কেউ না। ” আচ্ছা তাহলে বল দাদাজানের চশমা কোথায়?
– আগে আমার কালা গোলাপটা দেন। ৩০ সেকেন্ডের মতো সে লাল, সাদা ও কালো গোলাপে নাক দিয়ে শুকলো। ” আপনার দাদাজানের চশমা আপনার ব্যাগের মধ্যেই আছে।”
– হা হা হা।আমার ব্যাগে দাদাজানের চশমা আসবে কেমনে? আমি তো গতকালই এখানে এলাম। ” আছে কইছি আছে।এখন আর জিজ্ঞেস কইরে আর ত্যক্ত করবেন না।আমার ত্যক্ত জিনিসটা খুবই খারাপ লাগে”
– আচ্ছা আমাকে একটা জিনিস বলো তো।তুমি কিভাবে জানলে দাদাজানের চশমা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ” কইলাম না।আমারে প্রশ্ন কইরা ত্যক্ত করবেনা। সকালে তো আমার উত্তর দেন নাই? আপনি আমারে পছন্দ করেছেন না?”
– হ্যাঁ খানিকটা করেছি। ” আপনে মনে মনে চিন্তা করছিলেন, ইশ এই মেয়েটাকে যদি একটা চুম্মা দিতে পারতাম। কি করতেছিলেন না।” বলে মেয়েটি একরাশি হেসে দ্রুতই চলে গেল।
মেয়েটির কথাটা ভুল নয়। বাংলা বলে চুম্মা বা চুম্মন।এর থেকে ইংরেজি শব্দটা আমার কাছে শোভন মনে হয়।ইংরেজিতে শব্দটার অর্থ হল কিস।আর ইটালিতে হয় Bacio।আমার এক প্রফেসর ক্লাসে বলছিলেন,কিস হচ্ছে সৌন্দর্যের প্রতি ভালবাসার এক প্রতীক। তুমি তোমার সন্তানদের যদি আদর করে কিস দিতে পারো।তাহলে তুমি একটি অচেনা সুন্দরী তরুণীকে কেন দিতে পারো না।যেহেতু তুমি তার রূপকে ভালবেসেছ। সেই প্রফেসরের নাম রবার্ট বব।তিনি ব্রিটিশ ভদ্রলোক।মিলান ইউনিভার্সিটিতে গেস্ট টিচার হিসাবে আছেন।আমার সঙ্গে বেশ খাতির। ক্লাসে রোজই ডার্টিজোক করেন। তার এই যুক্তি ইটালির মতো পাশ্চাত্যের দেশে মানায়।এই বঙ্গদেশে তা মানায় না। আমার রুমে গিয়ে ব্যাগ খুলে দেখি।আসলেই একটা চশমা।আমি দাদাজানের কাছে নিয়ে বললাম,” দেখো তো এটা নাকি?” দাদাজান বললেন, “হ্যাঁ এটাইতো,কোথায় পেলি?” আমি কিছু বললাম না।আমার রুমের চলে আসলাম। মতি মিয়ার উপর দাদাজানের ঝড় চলছে।কষে দুয়েকটা থাপ্পড়ের আওয়াজও ভেসে আসল।
দুদিন রুম থেকে বের হলাম না।একটাই চিন্তা মেয়েটি শুধু ফুলের ঘ্রান নিয়ে কিভাবে বলল যে দাদাজানের চশমাটি আমার ব্যাগে? আর কিভাবেই বা বলল আমি তাকে কিস করার জন্য ভাবছি? মেয়েটি আমার মনের কথাও বুঝতে পারে? তার কি টেলিপ্যাথি ক্ষমতা আছে।থাকতে পারে।তবে আমি এটা বিশ্বাস করিনা।কিছু বই পুস্তকে পড়েছি মায়েদের মাঝে নাকি এই ক্ষমতা প্রবল। অবশ্য আমিও এটার কিছুটা প্রমাণ পেয়েছি। দাদাজানকে কোনো ভাবেই রাজি করাতে পারলাম না।তিনি এই বাড়ি ছেড়ে ইটালিতে যাবেন না।যাওয়ার আগে অদ্ভূত মেয়েটির সঙ্গে শেষবার দেখা হওয়ার দরকার। কিন্তু মেয়েটির নাম ঠিকানাতো আমি আমি জানি না। অবশেষে পেলাম। মতি মিয়া আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে। মেয়েটির মা শরবতের ব্যাবস্থা করলেন। আমি বললাম তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম। চলো পুকুর পাড়ের দিকে যাই। মতি মিয়াকে জমিদার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম।এখন আমি আর ঐ মেয়েটি পুকুরপাড়ে দাড়িয়ে আছি। ” কন কি কইতে চান। আমার আবার তাড়া আছে?
– আমি ইটালি থেকে দাদাজানকে নিতে এসেছিলাম।তিনি মেয়েটি আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,” তিনি এখান থেকে যাবেন না। তাইতো? ” হ্যাঁ। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।তুমি এত কিছু জানছ কিভাবে।দাদার চশমা কোথায় আছে,তিনি গ্রাম ছেড়ে যাবেন না? তুমি এতকিছু জানো কিভাবে? আবার মানুষের মনের কথাও তুমি পড়তে পারো।?
– কাউরে কইবেন না।আসলে আমার মৃত দাদী আমারে কইয়া দেয়। আমি ফুলের গন্ধ শুকি।তখন তিনি আমারে কইয়া দেয়। ” এটা কোন ধরণের কথা। মৃত মানুষ কথা তুমি ফুলের গন্দ শুকার মাধ্যমে বুঝতে পারো। প্ল্যানচেট করে আত্নাদের সাথে যোগাযোগের কথা শুনেছি। যদিও প্ল্যানচেটে আমি বিশ্বাসী নই।”
– আপনার বিশ্বাস আপনার কাছে।কাহিনীডা কই আপ্নেরে।আমরা তখন খুবই গরিব অবস্থা।দিনে একবেলা খাই সংসারের ঝগড়া লাইগ্গা থাকে।এক বিকালে ঘুমে স্বপ্নে আমার দাদীরে দেখি।তিনি আমারে কইতাছে, “ঐ ফুলেছা, তুই তিনডা গোলাপ আইনা ঘ্রাণ নিবি তখন তুই আমার লগে যোগাযোগ করতে পারবি।সাথে যেকোনো সমস্যারও তুই সমাধান করতে পারবি।তরে আমি সব কইয়া দিমু।পরেরদিন আমাদের লগের বাড়ির সুবোল ভাইয়ের ছোট পোলাডা হারাইয়া গেছে। আমার মাথায় তখন বুদ্ধি আইলো এডাতো আমি সমাধান করতে পারমু।লাল,সাদা, কালো গোলাপ সংগ্রহ করলাম।তখন কিছুক্ষণ ঘ্রাণ নিলাম। “
– পরে? পরে কি হলো? ” নাহ্, আর কমু না।আমার বড় তাড়া আছে। বাড়িত যাইতে হবো।আমার মামাবাড়িতে থেকে মামা আইছে। আপনে আমার নাম জিগাইছিলেন না? আমার নাম ফুলেছা।ভালা নাম কুলসুম।” আমি তার কাছে গিয়ে তার কপালে চুমু দিয়ে বললাম, ” তোমাকে আমি ভালবাসি কুলসুম। আমি খুব দ্রুতই বাবা মাকে তোমার কথা বলব।”
– এইডা কি করলেন? আপনার বড়ই বিপদ। আপনার আমারে চুম্মা দেওয়া ঠিক হয় নাই। বলে মেয়েটি চলে গেল।
আমি মিলানে এসে পড়েছি।ভার্সটির ক্লাসও করছি। প্রফেসরের রসকসহীন ক্লাসও আমার ভাল লাগে না।মন শুধু পড়ে থাকে কুলসুমের কাছের। কোনো যোগাযোগের ব্যাবস্থাও নাই যে যোগাযোগ করব।দাদাজানকে ফোনে বলেছি তাদেরকে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করতে। প্রফেসর বব আমাকে তার চেম্বারে ডেকে নিয়ে বলল ,My Boy Ashfaq, I see you very depressed in my class. what is the reason?
– Nothing Mr.Bob. ” you better go for travelling. I think you will overcome this problem very soon.’ আমি cafe olimpia তে বসে পাস্তা খাচ্ছি। আমার সামনে একটা মেয়ে এসে বসল। আমাকে বলল,” Hey, I’m Cristina.
– I’m Ashfaq.Nice to You.
সে আমাকে তিনটা ফুল দিল।লাল সাদা ও কালো রঙের তিনটি গোলাপ।সাথে একটা চিরকুট। ক্রিস্টিনা আমাকে ইংরেজিতে বলল।যার বঙ্গানুবাদ হল,” একটি অতি রূপসী মেয়ে তোমাকে এটি দিতে বলেছে।মেয়েটি বাহিরে দাড়িয়ে আছে।” আমি সঙ্গে সঙ্গে ক্যাফে থেকে বের হয়ে দেখলাম,বাইরে কেউ নেই।একটা মেয়ে পুবদিকে যাচ্ছে।পেছন থেকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটি কুলসুম।আমি কুলসুম বলে ডাক দিলাম। সে পেছনে ফিরে তাকিয়ে হাসল। আমি বললাম দাড়াও।আমি তার দিকে যেতেই সে দ্রুত হেটে ভীড়ের মধ্য কোথায় মিলিয়ে গেল। আর খু্ঁজে পেলাম না। আর ক্যাফেতে ঢুকতেই ক্রিস্টিনা বলল,” মেয়েটিকে তুমি চেনো? সে কি তোমার গার্লফ্রেন্ড?
– না
আমি চিরকুট টা খুলে দেখলাম ইংরেজিতে লেখা ” You are in a Danger.Try to get married Kulsum.Otherwise You have to die in a daze.” বাংলাতে অনুবাদ করলে, তুমি মারাত্মক বিপদের মধ্যে আছো।চেষ্টা করো কুলসুমকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে। অন্যতায় তোমাকে ধুঁকেধুঁকে মরতে হবে। ক্রিস্টিনা বলল,”কি লিখা?” আমি চিরকুটটা তাকে দিলাম। পড়ে সে বলল,” কি ভয়ানক মেয়েটা দেখলে? তোমাকে হুমকি দিয়ে গেল? তবে মেয়েটির নাম কি কুলসুম?
– না।কুলসুম বাংলাদেশে।
ক্রিস্টিনা বেশ আশ্চর্য হল।কুলসুমের কাহিনী শুনে।সে আমাকে ধার্মিকভাবে চলার জন্য উপদেশ দিলো।আমি তখন থেকে ধার্মিক হতে শুরু করলাম।কিন্তু লাভ হলো না। একদিন একটা বৃদ্ধা আমাকে স্বপ্নে বলল, সময় বেশি নেই। বাংলাদেশে গিয়ে কুলসুমকে বিয়ে করতে।না হলে আমার কপালে নাকি মৃত্যু। আমি ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। ইতিমধ্যে বাবাকে কুলসুমের কথা বলেছি। তারা সেভাবে আমলে নেয় নি। আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকল।ঘুমালে সেই বৃদ্ধাকে স্বপ্নে দেখি।এখন ঘুমাতেও ভয় লাগে। মা সারারাত আমার পাশে বসে থাকে। আমি যখন ঘুমাই আমার চোখের পাতার দিকে তাকিয়ে থাকে।যখন চোখের পাতা কাঁপে তখন আমাকে জাগিয়ে দেয়। মা বাবাকে চাপ দিচ্ছে যেন মেয়েটির সাথে আমার বিয়ে দেওয়া হয়। বাবা বললেন ” মেয়েটি গরীব। আমাদের সাথে যায় বলো?”
– আগে তো আমার ছেলের জীবন। তাই না? তুমি বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য ব্যাবস্থা করো।আমি আশফাকের এই অবস্থা আর দেখতে পারছি না। বাবা তখনো বিষয়টা আমলে নেয় নি।বাবা ভাবলেন মেয়েটির প্রতি আমার গভীর চিন্তার কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে।আর এই চিরকুট আমি নাকি নিজেই লিখেছি।তিনি আমাকে সময় দেয়া শুরু করলেন। আমার সাথে রাতে ঘুমান,আমাকে বই পড়ে শুনান।তার ধারণা আমি সম্পূর্ণ আমার নিজের জগতে বসবাস করছি।যে জগতটি আমার নিজের বানানো।
সেদিন আমাকে নিয়ে পার্কে গেলেন। সঙ্গে আম্মুও। তখন ছোটোবেলার কথা মনে গেল।ভাবলাম।প্রকৃতি আবারও সেই সময়টাকে আমার সামনে এসে হাজির করল।মনে হল বাবা মা র বয়সটা কমে গিয়েছে।তারা তাদের ছোট্ট খোকাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে। আহা প্রকৃতি কিভাবে অতীত স্মৃতিগুলোকে আবারও আমাদের কাছে এসে ধরা দিচ্ছে।প্রকৃতি বেশ রহস্যময়। তখন একটা ছোট একটা ছেলে আমাকে একটা বক্স দিল।রেপিং পেপারে মোড়ানো। একটা মেয়ে নাকি আমাকে দিতে বলেছে। বাবা বক্সটা নিয়ে খুলে দেখল। লাল সাদা ও কালো বর্ণের তিনটি গোলাপ সঙ্গে একটা চিটকুট। বাবা চিরকুট টা পড়ে মাকে দিল। মায়ের চেহারায় একটা ভয়ের আবহাওয়া লক্ষ্য করলাম। মা বললেন,” আর দেরি করা যাবে না। ৩ দিনের মধ্য বিয়ে না করালে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।তুমি আজই টিকেট কাটো।”
চিরকুটে লিখা ছিল,” You have only three days.Just go to Bangladesh & get Married.Otherwise you have to die.” বাবা আর দেরী করলেন না।তার চোখের সামনেই অদ্ভূত ব্যাপারটা ঘটে গেল। দুদিনের মাথায় বাংলাদেশে আসলাম। সেদিন পূর্ণিমার রাতেই আমাদের বিয়ে হল।হালকা পাতলা জিনিস ঢাকা থেকে মা আর আমার বড় বোন কিনেছে।মোটামুটি আয়োজনের একটি বিয়ে হল। বাসর রাতে আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বলি নি।এইরাতে এসব বলাও ঠিক না।স্বাভাবিক ভাবেই চলল সেই রাত। তারপর তাকে নিয়ে একমাস পর গ্রাম থেকে ইটালিতে ফিরলাম।নতুন পরিবেশে এসে সে আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে।পরিবারের সবকাজে সাহায্য করছে।এককথায় ভালোই চলছে।বেশ শুদ্ধভাবে বাংলা বলাও রপ্ত করেছে। একদিন তাকে নিয়ে পার্কে গেলাম ঘুরতে। একটা জায়গায় বসে তাকে বললাম। আমি বললাম,” জানো তোমাকে তখন প্রথম দেখে ইটালিতে আসি।একদিন একটা ক্যাফেতে একটা ঘটনা ঘটল।”
– আমি জানি সেটা।সেদিন তুমি আমাকে সেই ক্যাফের রাস্তার পুবদিকটায় যেতে দেখেছিলে তাই না?আর একটা কথা শুনো তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করতে তাহলে তোমার অবশ্যই মৃত্যু হত। আমি অবাক হলাম না।প্রকৃতিতে অদ্ভূত ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু অদ্ভূতের সঙ্গে রহস্যময় ঘটনা খুব কম ঘটে। ” আচ্ছা এতটুকু বল। সেদিনের মেয়েটা কি তুমি ছিলে? নাকি অন্য কেউ?”
– তোমাকে কে তিনটে ফুল আর চিরকুট দিয়েছিল আমি জানি।আর সে মেয়েটি কে ছিল আমি তা জানি।কিন্তু আমি বলব না।তুমি জীবনে আর সেটা জানতেও চেও না।একটা জিনিস বলতে পারি। আমার মৃত দাদীর সম্পর্কে পূর্বে যে কথাটা আমি তোমাকে বলেছিলাম সেটা ভুল।আমার দাদী জীবিত। তিনি আমাকে ফুলের ঘ্রাণের মাধ্যমে কিছু বলেনও না। আমি কিছু বললাম না।কিছু জিনিস গোপন রাখার অধিকার কুলসুমের আছে।প্রকৃতি কিছু জিনিস গোপন রাখতে পছন্দ করে। তবে দীর্ঘকাল লুকিয়ে রাখতে সে পছন্দ করেনা।একদিন না একদিন সে সবই উন্মুক্ত করে।
গল্পের বিষয়:
গল্প