আগন্তুক

আগন্তুক
আামি কে? কোথা থেকে এসেছি? কেন এসেছি? যে তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে এসেছে মানুষ আজীবন। তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত, এই শতাব্দী থেকে ওই শতাব্দী। শত শত থিউরি, লক্ষ লক্ষ গবেষণা… ধর্মীয়, তত্ত্বীয়.. প্রাকৃতিক, দার্শনিক.. তবু এখনো মোস্ট কনফিউজিং কোয়েশ্চেনস। যদি কখনো প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যায় মানুষ- কী হবে? পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত একটা অঞ্চল পার্শ্ববর্তী গহীন জঙ্গলের ঠিক মাঝখানে একটা বিশাল কড়াইগাছ।
অবিনাশ তার কান দুটোর উপর হাতের তালু বিছিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে। কড়াইগাছের ঠিক নিচে মাটি ফুঁড়ে গজদন্তের মতোন বের হয়ে আসা একটা মোটা শেকড়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো সে। চিৎকার করলো,
‘বের হও আমার মাথা থেকে। এখুনি। বের হও।’ যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে সে অথবা ওই প্রাণীটি বিচিত্র। উদ্ভট। গায়ে পশম, বাদামী রঙা। চার পায়ে দাঁড়িয়ে। মুখমন্ডলের সাথে যদিও জন্তু জানোয়ারের মিল নেই। চোখ দুটো ছোট ছোট, থ্যাবড়া নাক আর উপরের মাড়ির সবগুলো দাঁত ঠোঁটের বাহিরে। বুক বরাবর দুটো উঁচু বড় ফোঁড়ার মতোন দেখতে স্তন। পেট ফোলা। অবিনাশ চিৎকার করলো পুনরায়, ‘এটা আমাদের পৃথিবী.. তোমার কোনো অধিকার নেই।’
প্রাণীটি হাসলো। মানুষ ছাড়া প্রাণীদের মধ্যে সম্ভবত শুধু হায়েনা হাসতে পারে। অবিনাশ স্পষ্ট টের পেলো তার মাথার ভেতর ঢুকে বসে আছে একটা বদখত জন্তু। ওই জন্তু ফিসফিস করে মেয়েলি স্বরে স্পষ্ট বাংলায় বললো, ‘এসো, আমার বাচ্চাটাকে দেখো।’ অবিনাশ ফোন হাতড়ে বের করলো পকেট থেকে। নেটওয়ার্ক নেই। আবদুল হাই বারবার সতর্ক করেছিলো। এলিয়েনটার টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা আছে। ক্ষতি করতে পারে। পাত্তা দেয়নি অবিনাশ। এলিয়েন অথবা জন্তুটি পেছনের দুই পা মুড়ে বসে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অবিনাশ চোখের দিকে তাকালো। একটা বোবা কড়াইগাছ স্বাক্ষী, অবিনাশ কাঁদলো। ঝরঝর করে কাঁদলো ওই চোখে তাকিয়ে থেকে। জন্তুটি মুচকি হাসলো। অবিনাশের কাছ থেকে আর কোনো ক্ষতির আশংকা নেই তার।
সাল দুই হাজার পনের। অবিনাশ কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে আবদুল হাই এর হাতের চৌকোনা আকৃতির যন্ত্রটার দিকে। অনেকটা ভিডিও গেইমের রিমোটের মতোন। ছোট্ট একটা স্ক্রিনও আছে। কিছু বাটন। ওয়্যারলেস ফোনের মতোন লম্বা এন্টেনা বের করা। আবদুল হাই যন্ত্রটা খুলে প্রতিটা অংশ আলাদা ভাবে চেক করছেন। অবিনাশ সাহায্য করছে। এন্টেনাটা হাতে নিয়ে সে বললো, ‘রেঞ্জের মধ্যে অপরিচিতি প্রাণী, ফসিল, উদ্ভিদের উপস্থিতি কি করে টের পাবে এটা?’ আবদুল হাই ঘাড় হালকা ফিরিয়ে চশমার উপরের খোলা অংশ দিয়ে ‘এ কেমন প্রশ্ন’ টাইপের একটা দৃষ্টি রাখলেন। অবিনাশ ক্লিয়ার করলো, ‘এটি অপরিচিত একটা প্রাণীর ডিএনএ এনালাইস করবে, বুঝলাম। কিন্তু পৃথিবীতেই বাস করে এমন অচেনা অপরিচিত প্রাণীও তো থাকতে পারে। এলিয়েনই হবে কি করে সিউর হবো?’
আবদুল হাই যন্ত্রটা টেবিলে রেখে অবিনাশের দিকে ফিরে তাকালেন। তারপর চশমা খুলে হাতে নিয়ে নরম স্বরে বললেন, ‘সিউর হবোনা। বিজ্ঞান অত দ্রুত সবকিছুতে সিউর হয়না। তবে খুঁচিয়ে দেখতে দোষ নেই। এ্যাসার্চ ভার্সন ফাইভ পয়েন্ট টু। নেহাত একটা যন্ত্র মনে করলে ভুল করবে, টক্কর দেয়ার চিন্তাও মাথায় এনোনা। আমি একে বিশ্বাস করি। এটি একদিন আমায় দাঁড় করাবে একটা এলিয়েনের সামনে। এন্ড দ্যাট ডে উইল বি দ্যা মোস্ট বিউটিফুল ডে অব মাই লাইফ।’ আবদুল হাই স্বপ্নাতুর চোখে তাকিয়ে আছেন সামনে। আধা পাগল এই মানুষটি কখনো নিজের খ্যাতি টাকা পয়সার কথা চিন্তা করেননি। এ্যাসার্চ- এর ফার্স্ট লেটার ‘এ।’ এলিয়েন।
সারাজীবন ছুটেছেন। একটা স্বপ্নের পেছনে। এ্যাসার্চ ভার্সন ফাইভ পয়েন্ট টু- যেটি প্রায় এক হাজার কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সমস্ত প্রাণীর আলাদা আলাদা ডিএনএ সেকেন্ডেই এনালাইস করে নিজস্ব মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকা প্রায় কয়েক কোটি প্রাণীর ডিএনএ স্যাম্পলের সাথে কম্পেয়ার করে অপরিচিত প্রাণীটিকে চিহ্নিত করতে পারে।
খ্যাতির কথা চিন্তা করলে মানুষটা এভারেস্টের চূড়োয় পৌছুতেন এতদিনে। ভালো মানুষদের সবকিছুই সংক্রামক। স্বপ্নটাও। অবিনাশকে আবৃত করে ফেলেছে পুরোপুরি। চট্টগ্রামের পাহাড়ি একটা নির্জন এলাকায় তুলনামুলক ছোট্ট একটা গবেষণাগারে নিরবে রাতদিন চলে তাদের গবেষণা। এলিয়েন।
আবদুল হাই ধারণা করেন, পৃথিবীতে এলিয়েন এসেছে ষাট থেকে সত্তর লক্ষ বৎসর আগে। যখন মানব আর শিম্পাঞ্জির একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া চলছিলো। বিংশ শতাব্দির শুরুতে জানা যায়, মানুষের প্রজাতি আসলে একটা নয়। বহু। ফসিলবিদেরা সাধারণত যেসব ফসিল আবিষ্কার করেন, তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিলো সম্ভবত ১৮৫৬ সালে। নিয়ান্ডারথাল ফসিল আবিষ্কার। তারা আমাদের প্রজাতি- এই ধারণা গুড়িয়ে দেওয়া হয় ১৯৯৭ সালে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে। বের হয় এই ফসিলের বয়স প্রায় ত্রিশ হাজার বৎসর। আমাদের সাথে অনেক মিল থাকার পরেও এটি আমাদের প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত নয়। ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে এক চমৎকার আবিষ্কার হয়েছিলো ১৯৯৪ সালে। অবিনাশ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়।
জীবাশ্ম নৃতত্ত্ববিদ টিম হোয়াইট একদল বিজ্ঞানী নিয়ে ২৯ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিভিন্ন ধরণের গাছ ও বীজ সহ আর্ডি (Ardipithecus Ramidus) নামক একটা ফসিল আবিষ্কার করেন। আশ্চর্য হলেও সত্য এটি ত্রিশ চল্লিশ লক্ষ বৎসর আগেকার মানুষের ট্রাঞ্জিশন্যাল বা মধ্যবর্তী ফসিল বলে যাকে ধরা হয়, লুসি(Australophicus afarensis).. তার চেয়েও আদিম, তার চেয়েও অদ্ভুতুড়ে, তার চেয়েও বিচিত্র। অবিনাশ টুকে দেয়, ‘ডারউইন কিন্তু তার অরিজিন অব স্পিসিজ এ মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে কিছু বলেন নি ‘তিনি কোনো হোমিনিড ফসিল দেখেও যেতে পারেন নি। তবে ডিসেন্ট অব ম্যান এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের আলোকে মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে বলেছেন। মানুষ এবং এপরা সাধারণ পূর্ব পুরুষ থেকেই উদ্ভুত হয়েছিলো।’ ‘কিন্তু এলিয়েনের সাথে এর সম্পর্ক?’ ‘সাহেলানথ্রোপাস চাদেনসিস’ অবিনাশ নড়েচড়ে বসে, ‘ওই যে মায়োসিন যুগে ছিলো যেটি?’
‘হ্যাঁ। সাহেলানথ্রোপাস চাদেনসিস হয়তো দুই পায়ে হাঁটতো। অনেক জীবাশ্মবিদ এই অনুমান বাতিল করেছেন। যেহেতু খুলি ব্যাতিত অন্য কোনো হাড় পাওয়া যায়নি, সেহেতু এটি দ্বিপদী কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সমস্যাটা করেছেন এই ফসিলের আবিষ্কারক মাইকেল বার্নেট। খুলির কাছে পাওয়া একটি হাড়ের তথ্য গোপন করেছিলেন। ফিমার। সাহেলানথ্রোপাস চাদেনসিস দ্বিপদী প্রমাণিত হলে কি কোনোকিছু খোলাসা হয়ে যেত? কি সেটা? শুধু এটা নয়, আরো বহু ফসিলবিদ একই রহস্যময় আচরণ করেছেন কোনো না কোনো একসময়।’ অবিনাশ হা করে তাকিয়ে গিলে আবদুল হাইয়ের ভ্রুঁ কুঁচকানো চোখ দুটো। ‘এজন্য বলছি, বিজ্ঞান অত সহজে সিউর হয়না। প্রচুর সময় লাগে। তথ্য প্রমাণ লাগে। গবেষণা লাগে।’
অবিনাশ প্রসঙ্গ ধরে রাখে, ‘এই যে এত ভিন্ন ভিন্ন ফসিল, লুকোছাপা। আপনি বলতে চাচ্ছেন আর্ডি কিংবা এই উদ্ভট প্রাণীটির পূর্বপুরুষটি ভিন্ন পৃথিবী থেকে এসেছিলো?’ আবদুল হাই চশমা পরে যন্ত্রটায় মনোযোগ দেন। চটপট লাগিয়ে ফেলেন প্রতিটি অংশ। ছোট্ট করে বলেন, ‘পৃথিবীর পরিবেশটা অমন। এটা শুধুমাত্র তাদের গ্রহন করবে, যারা আপন। হাতিয়ার আবিষ্কারের আগেই পৃথিবীর প্রথম যুদ্ধ হয়েছিলো। এটির কোনো তথ্য প্রমাণ নেই, শুধুমাত্রই কিছু শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে ধারণা করা। ওই যুদ্ধে টেলিপ্যাথি ব্যবহার করেছিলো দুই পক্ষ। মানব এবং এলিয়েন। যারা সার্ভাইভ করেছে, মানব। টিকে আছে।
এলিয়েন নিশ্চিহ্ন হয়েছে পুরোপুরি, বলতে পারছিনা। পৃথিবীতে এলিয়েন এসেছিলো অসংখ্য। থেকে যেতেও পারে। পৃথিবী ভিন্নতাও আঁকড়ে ধরে নিজের করে ফেলে। হয়তো বিবর্তনও ঘটে গিয়েছে তাদের। তবে আছে। আমি একদিন ঠিক মুখোমুখি হবো। বুঝলে?’ আবদুল হাই স্বপ্নাতুর চোখে তাকিয়ে থাকেন পুনরায়। অবিনাশের ফোন বেজে উঠে। তনিমা। ‘হ্যালো অবিনাশ অনুভব করে তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একটা গুহা মতোন জায়গা। আবছা অন্ধকার। ছোট ছোট ফাঁক ফোকর দিয়ে দিনের মৃদু আলো ঢুকছে। ওই আলোয় চোখ খুলে অবিনাশ। ভেজা চোখ। কাঁদছিলো সে। অবিনাশকে বসানো হয় একটা মাটির ডিবির উপর। মাথা ভারী লাগছে ভীষণ। সামনে তাকায় সে। একটা ছোট্ট প্রাণী। উদ্ভট। ওই বড় জন্তুটার মতোনই। মুখটাই শুধু অন্যরকম। মুখটার জন্যই জন্তু ভাবতে দ্বিধা হচ্ছে। প্রাণীটি মাথার ভেতর ঢুকে কথা বলছে। বাচ্চা বাচ্চা স্বরে কথা বলছে,
‘তুমি কে?’
‘অবিনাশ। অবিনাশ চক্রবর্তী। তুমি কে? আমি কোথায় বলতে পারো?’ বাচ্চাটার ছোট্ট ছোট্ট চোখদুটো বড় হয়ে গেল। জিহ্বা বের করে রাখলো কিছুক্ষণ। সম্ভবত বিস্মিত হয়েছে। বললো,
‘রেভন। তুমি আমাদের বাসায়। মা খাবার খুঁজতে বের হয়েছেন।’
‘তুমি আমার ভাষায় কথা বলতে পারো?’
‘সব ভাষায় পারি। সব।’
ভীষণ আতংকিত হয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর আতংক কেটে গিয়ে ওইখানে জায়গা করে নেয় অবসাদ। ভয় কেটে যায়। অবিনাশ ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে মজা পেল। ঠোঁট নাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছেনা। টেলিপ্যাথিক সিস্টেম। একটু পর মা এলো। রেভনের মা। আপাতত অবিনাশ জানতে পেরেছে এই গুহামতোন জায়গায় বেশ লুকিয়ে আত্মগোপন করে আছে রেভন নামের অদ্ভুত প্রাণীটি এবং তার মা। মায়ের নাম জানা হয়নি। ‘এটা আমার বাসা।’ মায়ের কন্ঠস্বর বেজে উঠলো মাথার ভেতর। অবিনাশ মাথা চেপে ধরে রাখলো কিছুক্ষণ। হুট করে আওয়াজ সহ্য হয়না। জিজ্ঞেস করলো, ‘আমি কিছু মনে করতে পারছিনা। একটু আগে আপনার সাথে কথা হয়েছিলো। আপনার নাম কি?’
‘রেভান’ রেভান হাসলো। রেভান হাসলে জিহ্বা অর্ধেক বের হয়ে আসে মুখ থেকে। তাও সুন্দর লাগে। অবিনাশ বুঝতে পারছেনা, তাকে হিপনোটাইজ করে রাখা হলো কি-না। ‘তোমার একটু আগের স্মৃতি আমি মুছে দিয়েছি।’ ‘কেন?’ ‘ওটায় একটা তথ্য দিয়ে ফেলেছিলাম। যেটা জেনে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে আমাদের।’ ‘আপনাদের সংখ্যা কত?’ ‘অল্প। এই পুরো এলাকায় আমি আর আমার দুটো বাচ্চা।’ ‘একটা বাচ্চা।’ রেভান ফোলা পেটের দিকে ইশারা করলো। অবিনাশ জিজ্ঞেস করলো, ‘ওদের বাবা?’ রেভান অন্যদিকে তাকালো। এই প্রাণীর ইমোশনও আছে। অবিনাশ তাকিয়ে রইলো। রেভান কিছুক্ষণ চুপ থেকে আস্তে করে বললো, ‘ওর বাবাকে তোমরা মেরে ফেলেছো।’ ‘কেন এসেছেন পৃথিবী?’
রেভান অবিনাশের চোখের দিকে তাকালো এইবার। তারপর দৃঢ় স্বরেই বললো, ‘আমরা আসিনি। এটা আমাদের-ই পৃথিবী। তুমি এখন যেতে পারো।’ রেভানের চোখ লাল হয়ে আসলো দ্রুত। জল জমলো। এই প্রাণী কাঁদতেও পারে। আশ্চর্য। অবিনাশ সামনে থাকায় বিব্রত হচ্ছে। মানুষেরও এই স্বভাব আছে। কারো সামনে মন খুলে কাঁদতে পারেনা। বিব্রত হয়। অবিনাশ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো রেভান নামক উদ্ভট প্রাণীটার লাল হয়ে আসা ভেজা চোখ দুটোর দিকে। এই গুহা থেকে বের হওয়া দরকার। সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলো অবিনাশের। আবদুল হাই ফোন দিয়েছেন। ‘টিভি অন করো অবিনাশ।’
টিভি অন করে চমকালো। একটা নিউজ হচ্ছে। কক্সবাজারের অদূরে একটা গোপন গবেষেণাগার থেকে একটি উদ্ভট প্রাণী পালিয়েছে। প্রাণীটিকে আজ অবধি পাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে আজব এবং উদ্ভট প্রাণী বলে দাবী করা হচ্ছে। টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা রয়েছে এই প্রাণীর। গবেষণাগারের চারজন বিজ্ঞানীর একজন কোমায় আছেন, বাকিরা কথা বলছেন না। সহকর্মীদের চিনতে পারছেন না, তবে স্ত্রী বাচ্চাদের চিনতে পারছেন। আবোল তাবোল বকছেন।
জনসাধারণেরও ক্ষতি করতে পারে। চারোদিকে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। অবিনাশ ওই পোশাকেই রওনা দিলো।
আবদুল হাই হুইলচেয়ারে বসে আছেন যন্ত্র হাতে। গবেষণাগারের বাইরে। এটি মুলত চারোপাশে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। আশেপাশে বহুদূর অবধি লোকালয় নেই তেমন। অবিনাশ হাঁপাতে হাঁপাতে এসে পাশে বসলো তার। বললো,
‘এইরকম একটা বিপজ্জনক উদ্ভট অচেনা প্রাণী নিয়ে গোপনে গবেষণা করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে?’
আবদুল হাই অপরাধী চোখে অবিনাশের দিকে তাকালেন। ঠিক তখুনি অবিনাশ টের পেল, তারা নিজেরাও একিই কাজ করছে। গোপন গবেষণা। এটারও অনুমতি দেয়া হয়নি। ফোঁস করে একদলা নিঃশ্বাস ফেলে বললো, ‘এখন কি হবে?’ ‘জানা নেই। ওদের কাছে কিছু তথ্য পেলে উপকৃত হতাম। তবে পাওয়ার আশা করছিনা। গভর্মেন্ট এইসব বিষয়ে ভয়ানক কঠোর। এখন থেকে তুমি এটি রাখবে। ব্যবহার শিখিয়ে দেব। শুধু রেড লাইটের দিকে নজর রেখো। এটি জ্বলে উঠলেই দেরী কোরোনা।’ অবিনাশ হাত বাড়িয়ে যন্ত্রটি নেয়।
আবদুল হাই উদাস চোখে সামনে তাকিয়ে থাকে। নরম স্বরে বলে, ‘তনিমা কেমন আছে?’ ‘ভালো’ আবদুল হাই কিছুক্ষণ উদাস চোখে তাকিয়ে অবিনাশের কাঁধে হাত রাখেন, প্রায় অচেনা একটা স্বরে বলেন, ‘অবিনাশ, স্মৃতি হিসেবে ভালোবাসার স্মৃতি সবচেয়ে বেশী টেকসই। আঠালো ভাব আছে এটির। দুনিয়ার বাকি সব স্মৃতি ধীরে ধীরে টেনে চুষে নিয়ে গিলে ফেলতে পারে এটি।’ কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। বললেন না। অবিনাশ যন্ত্রটির বাটন গুলো চেক করতে করতে বললো, ‘এলিয়েনের যদি টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা থাকে, তবে এটি ব্যবহার করেই সে মানবদের হটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারতো।’
‘হয়তো। হয়তো ওরা মানুষদের মতোন হিংস্র নয়। তবু সাবধান থেকো। এই ক্ষমতা অগ্রাহ্য করতে হয়না।’ ‘এই প্রাণীটি এলিয়েন হওয়ার সম্ভাবনা কেমন?’ ‘জানিনা। তবে গোপনীয়তা দেখে কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে।’ অবিনাশ বাসার পথ ধরলো। মাঝপথে আসার পরই যন্ত্রটির রেড লাইট জ্বলে উঠলো। একবার জ্বলেই নিভে গেল। পুনরায় জ্বলে উঠলো। অবিনাশ ছুটলো ডানদিকে। ঘন জঙ্গলের ফাঁক ফোকর দিয়ে। সাথে একটা ক্যামেরা, একটা অত্যাধুনিক অস্ত্র- সেইফটির জন্য। অনেকটা পিস্তলের মতোন। নিশানায় রেখে ট্রিগার চাপলেই ব্যাস। দুই ঘন্টার জন্য যত হিংস্র জানোয়ারই হোক না কেন, বেহুশ।
অবিনাশ ছুটতে ছুটতে এসে পৌঁছালো একদম জঙ্গলের মাঝখানে। রেড লাইট অতিদ্রুত জ্বলছে আর নিভছে।
জঙ্গলের ঠিক মাঝখানে একটা বিশাল কড়াইগাছ ডালপালা মেলে বসত করছে একা একা। শেকড়ে একটা উদ্ভট প্রাণী বসে গাছের ছাল-বাকল খাচ্ছে। জন্তুর মতোন দেখতে হলেও মুখটা ভিন্ন, থ্যাবড়া নাক, ছোট ছোট চোখ। উপরের মাড়ির সবগুলো দাঁত ঠোঁটের বাইরে এসে উঁকি দিচ্ছে। অবিনাশ তাকিয়ে রইলো, পা নাড়াতে পারলো না। প্রাণীটি একবার তাকালো অবিনাশের দিকে। মাথা হালকা হয়ে এলো তার। অবিনাশ ধুপ করে নিচে পড়লো।
চারোপাশে অন্ধকার। অবিনাশ ঢুলতে ঢুলতে বের হয়ে এলো গুহা থেকে। ভেতরে রেভন এবং রেভান। গুহা থেকে বের হয়ে সামনে এক পা বাড়াতেই মাথা ঝিঁ ঝিঁ করে উঠলো। পেছন ফিরতেই দেখলো রেভান দাঁড়িয়ে চারপায়ে। তখনো চোখ লাল। সম্ভবত একটু মায়া মায়া স্বরেই বললো, ‘তাকে ভালোবাসো?’
তনিমার কথা বলছে রেভান। অবিনাশ তাকিয়ে থাকে। জবাব দেয়না। দেয়ার প্রয়োজন নেই। রেভান তার মাথায়-ই ঢুকে আছে। একটু হাসলো রেভান। কেন কে জানে। হেসে বললো, ‘তুমি অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছো এলিয়েন সম্পর্কে গবেষণা করে। তোমার স্যার। উনাকে কাছে পাচ্ছিনা। তোমায় পেলাম। তোমার সহযোগিতা ছাড়াও তিনি কাজটা সম্পূর্ণ করতে পারবেন। তবে সময় লাগবে। উনার সময় শেষ। আর কটা দিনই বা বাঁচবেন। সমস্যাটা তুমি। আমি তোমার সমস্ত স্মৃতি মুছে দিচ্ছি। তনিমার স্মৃতি ছাড়া।’ অবিনাশ কাতর চোখে তাকালো। ‘কেন এমন করছেন? প্লিজ রেভানও কাতর চোখে তাকালো, ‘আমি বাধ্য। তোমরা যখন জেনে যাবে এলিয়েন সম্পর্কে সব, আরো হিংস্র হয়ে পড়বে। আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। তবে ভেবোনা। পুরো পৃথিবীতে একমাত্র আমরাই জানি এলিয়েন সম্পর্কে। খুব ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন করবো ওদের। যাও এখন।’ অবিনাশ না না করে চিৎকার করে উঠার আগেই জ্ঞান হারালো। অন্ধকার একটা জগৎ।
অবিনাশ হাতড়ে গেল চারোপাশে। টলটলে পানির মতোন কোমল। একটা বিশাল মহাকাশ। অবিনাশ হাতড়েই গেলো। ওই যে দূরে সবুজ দেখা যায়। অবিনাশ দ্রুত সাঁতার কাটলো। সবুজের পাড়ে একটা মানুষ মতোন কিছু একটা বসে। অবিনাশ হাত বাড়ায় ওইদিকে। একটা লোমশ হাত তাকে টেনে তুলে। কি অসহ্য বাতাস। আহ! নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এত কষ্ট! এত রোদ! সাল দুই হাজার আঠার। আইসিইউ এর বেডে শুয়ে আছেন আবদুল হাই। পাশে স্যারের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে অবিনাশ। আবদুল হাই এর চোখ ভিজে এলো। হতে পারে সেটা শারীরিক কষ্টে অথবা মানসিক। অবিনাশ অসহায় স্বরে বললো, ‘আপনার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেলো স্যার আবদুল হাই মাথা নাড়ার চেষ্টা করলেন। অবিনাশের হাতের আঙুলে চাপ বাড়লো। হাতের উপর হাত রেখে সে বললো, ‘আমি আপনার হয়ে আপনার স্বপ্ন পুরণ করবো স্যার। কথা দিলাম। আপনি ঘুমোন।’
আবদুল হাই কথা বললেন, কাঁপা কাঁপা স্বরে, ‘না। আমি আমার স্বপ্নের সামনে দাঁড়িয়েছি। আমি আমার স্বপ্নের সামনেই দাঁড়িয়েছিলাম সারাজীবন। তুমিও দাঁড়িয়ে আছো। আমি আমার গবেষণা সেদিনই স্টপ করেছি। যেদিন তুমি জঙ্গলে কিছু একটা খুঁজতে গিয়েছিলে। আর ফিরে এলে শূন্য স্মৃতি নিয়ে।’ ‘অথচ আমি ভেবেছি আপনি গবেষণা স্টপ করেছেন ব্যর্থতার দায় নিয়ে নিজের প্রতি রাগ কিংবা অভিমান থেকে।’ আবদুল হাই হাসার চেষ্টা করলেন। অসুস্থ শরীরে হাসিটা ঠিক মুখের সাথে খাপ খেলো না। অবিনাশ জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি এলিয়েনের দেখা পেয়েছেন?’ আইসিইউ’র বেড থেকে ক্লান্ত একটা স্বর ভেসে এলো, ‘হ্যাঁ। এন্ড দিস ইজ দ্যা মোস্ট বিউটিফুল ডে অব মাই লাইফ।’ আবদুল হাই মারা গেলেন। তার হাতের আঙুল শক্ত হয়ে লেপ্টে বসে আছে তখনো অন্য কারো আঙুলের ফাঁকে। অবিনাশ ছাড়ানোর চেষ্টা করলোনা।
দশ দিন পরঃ
একটা চিঠি এলো অবিনাশের নামে। সঙ্গে একটা কুরিয়ার। ছোট্ট একটা বাক্স। ভেতরে একটা ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক চিপ। এ’তে ভয়েস রেকর্ড করা হয়। সঙ্গে একটা মেমোরি। চিঠি রেখে অবিনাশ আগে পিসি ওপেন করে মেমোরিটা কানেক্ট করলো। কিছু কন্ঠস্বর ভেসে এলো। কিছু না, দুইটা কন্ঠস্বর। একটা অবিনাশের নিজের। সে কান খাড়া করলো।
‘আমি অবিনাশ।’
‘রেভান।’
‘তুমি অথবা তোমরা কে?’
‘প্রকৃতির অংশ’
‘কেন এসেছো পৃথিবীতে?’ একটা খিক খিক হাসির শব্দ শুনা গেল। রেভানের আওয়াজ,
‘আমরা আসিনি অবিনাশ। পৃথিবী আমাদের।’
‘মিথ্যে বলোনা’
‘আমরা মিথ্যে বলিনা। দরকার পড়েনা। আমাদের জগৎ টেলিপ্যাথির জগৎ। এখানে মিথ্যের স্থান নেই।’
‘তাহলে আমার সাথে মুখে কথা বলছো কেন? মাথার ভেতর ঢুকে নিজে নিজেই জেনে নাও সব উত্তর।’
‘সেটা করবো, একটু পর। তোমার ভাষা, আচার আচরণ আয়ত্বে আনার চেষ্টা করছি। মুখে বলতে হচ্ছে। ভাষা এত কঠিন হয় তোমাদের। টেলিপ্যাথি চমৎকার একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা। পাওয়ারফুলও বটে।’
‘তাহলে এই ক্ষমতার সাহায্য নিয়ে এতদিন কেন দখল করে নাওনি পুরো পৃথিবী?’
‘আবার ভুল বলছো অবিনাশ। পৃথিবী আমাদের। আমরা দখল করবোনা। শুধু আমাদের বাসস্থান, আমাদের কোটি বৎসর পুরনো জীবন ফেরত নেব।’
‘একই কথা’
‘একই না। যেটা নিজেদের, সেটা দখল করার প্রয়োজন হয়না। পুনরায় নিজের করে নিতে হয়।’
‘এখনো কেন নাওনি?’
‘হয়তো তোমাদের মতোন অত হিংস্র নই বলে।’ অবিনাশ একটু থামে এই জায়গায়। তারপর জিজ্ঞেস করে, ‘তোমরা এলিয়েন না হলে তবে এলিয়েনরা কোথায়?’ রেভানের হাসির শব্দ ভেসে আসে পিসির চিকন সাউন্ড বক্স থেকে। যে প্রশ্নটা অবিনাশ করে এসেছে এতক্ষণ, এখন সেই প্রশ্নটিই রেভান করে বসলো ওকে, ‘তুমি কিংবা তোমরা কে? কোথা থেকে এসেছো? কেন এসেছো?’
অবিনাশ থতমত খায়। রেভানের হাসির শব্দ জোরালো হয়। অবিনাশ পিসির সামনে এখানে বসেই মাথায় তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করে। রেভানের কন্ঠস্বর ভেসে এলো, ‘কখনো ভেবে দেখেছো এই পৃথিবীর সবচেয়ে বেমানান, বেখাপ্পা, ভিন্ন প্রাণীটিকে কে?’ অবিনাশ কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’ ‘তোমরা। মানুষ। এই পৃথিবীর বৃষ্টি, রোদ, প্রকৃতি কোনোটাই তোমাদের সাথে খাপ খায়নি। সবচেয়ে দুর্বল, ক্লান্ত, অসহায় প্রাণীটিও তোমরা। একটা তেলাপোকারও সমান না। মস্তিষ্কের কিছু অংশ ছাড়া আর কোনোকিছুই এই পৃথিবীর সাথে খাপ খায়নি তোমাদের।’ অবিনাশ চিৎকার করে উঠে, ‘অসম্ভব। আমাদের উদ্ভব, বিবর্তনের ইতিহাস রয়েছে। মানুষ এবং এপরা সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়েছিলো।’
‘আর ওই সাধারণ পূর্ব পুরুষরা মানুষ ছিলো না। আফ্রিকায় নেমে এসেছিলো তারা। আমাদের প্রথম যুদ্ধ যেখানে হয়েছিলো। একদল এলিয়েনের সাথে। যারা আমাদের চমৎকার পৃথিবীতে হাঙ্গামা বাঁধাতে এসেছিলো। আমাদের জঙ্গল পুড়িয়ে ফেলেছিলো সূর্যের আগুন জমিয়ে, খাবার কেড়ে নিয়েছিলো। তারপর আমাদের সরিয়ে নিজেদের করে নিলো সব।’ রেভানের কান্নার আওয়াজ শুনা গেল। সঙ্গে ক্ষোভ মেশানো একটা কন্ঠস্বর, ‘আমরাও নেব শোধ। অল্প অল্প করে সফল হচ্ছি। কিছুদিন পর পুরোপুরি হবো। পৃথিবী আমাদের হবে। শুধুমাত্র আমাদের। বহিরাগতদের কোনো স্থান নেই এখানে। নাও.. এখন তাকাও আমার দিকে। ঠোঁট নাড়াতে হবে না। মনে মনে বলো। আমাদের জগৎ তোমাদের মতোন নরক নয়, শান্ত। নির্জন। চুপচাপ। শশশ!’
ভয়েস রেকর্ডে আর কিছু নেই। সব সুনশান। আর একটাও কথা নেই। মাঝে মাঝে পাখির কিচিরমিচির শুনা গেল। আর পায়ে হাঁটার শব্দ। অবিনাশ পিসি বন্ধ করে ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে। মাথা ভোঁ ভোঁ করছে তার।
চিঠি খুললো সে, আবদুল হাইয়ের লেখা, ‘অবিনাশ, যখন পড়ছো। তখন আমি হয়তো নেই। ভয়েস রেকর্ডটা শুনবে। ওটা তোমার ভয়েস। তুমি কথা বলেছিলে পৃথিবীর প্রথম, সবচেয়ে আদিম প্রাণীটির সাথে। নাহ। এলিয়েন নয়। এটা ওদের পৃথিবী। বরং আমরাই এখানে অতিথি। রেভান ঠিকই বলেছে, এই পৃথিবীর পরিবেশ আবহাওয়া জলবায়ুর সাথে সবচেয়ে বেমানান যে প্রাণীটি- ওটি মানুষ। প্রচণ্ড খাপছাড়া। হওয়ার-ই কথা। এটি আমাদের নয়। ছিলোই না কখনো।
অবিনাশ, আমাদের গবেষণা নিয়ে তুমি যতদূর এগিয়েছিলে রেভান তোমার ওই সমস্ত স্মৃতি মুছে দিয়েছে। যখন এ্যাসার্চ ভার্সন ফাইভ পয়েন্ট টু তোমার হাতে তুলে দিই, তখন লুকিয়ে তোমার জামায় একটা ভয়েস রেকর্ডার চিপও রেখে দিয়েছিলাম। কক্সবাজার গবেষণাগারের ওই চারজন বিজ্ঞানীর তাদের বৌ কিংবা পরিবারের স্মৃতি ছাড়া বাকি সমস্ত স্মৃতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। রেভান মাথা নিয়ে খেলতে জানে। তোমার স্মৃতি নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ছিলো। বারবার বলেছি, ভালোবাসা ব্যবহার কোরো স্মৃতি সংরক্ষনের জন্য। সম্ভবত বুঝোনি। রেভান তোমার ওই স্মৃতি মুছেনি, যেখানে তনিমা ছিলো। তনিমার স্মৃতির ভেতর রেভানের কিছু স্মৃতি ঢুকিয়ে দিতে পারতে। জটিল কাজ হলেও সম্ভব ছিলো। তোমায় এজন্য খুলে সব বলতে পারিনি। রেভান তোমার মাথায় ঢুকে সব জেনে ফেলতো। চিপ খুঁজে পায়নি রেভান, কেননা এটির কথা তুমি নিজেও জানতে না। তুমি বুদ্ধিমান, আমার যতদূর মনে হয়… তুমি কাজটি করেছো।
তনিমার স্মৃতিগুলির ফাঁক ফোকরে রেভান থেকে প্রাপ্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঢুকিয়েছো। এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এটা বের করতে পারলেই জানবে- মানুষদের জন্য রেভানরা কি পরিকল্পনা করছে। আমার জানার প্রচণ্ড ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও গবেষণা স্টপ করেছি। এলিয়েন গবেষণা বিষয়টা হাস্যকর। ভাবতে পারো? সারাজীবন ওই অদ্ভুত প্রাণীটির পেছনেই ছুটেছি- নিজের ভেতর যেটি পুষে রেখে। একদম ওই গানটার মতোন। বাড়ির কাছে আরশিনগর রেভানদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে সম্ভবত খুব বড় একট বিপর্যয় আসতে চলেছে। তুমি স্মৃতি গুলো ব্যবহার কোরো। প্রস্তুতি নিও। ভালো থেকো।
– আবদুল হাই’
সাল দুই হাজার বিশ। অবিনাশ সোফায় বসে আছে। দুই হাতের তর্জনী দিয়ে কপাল টিপে ধরে আছে। প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে। টিভিতে নিউজ হচ্ছে, ‘একটা অজ্ঞাত ভাইরাসে পুরো বিশ্বে মারা যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। এখনো কোনো ভ্যাক্সিন আবিষ্কারে সফলতার দেখা মিলেনি। মানুষের জীবনযাত্রা স্থির। কবে সুস্থ হবে পৃথিবী, জানা নেই।’ অবিনাশ চোখ বুজলো। তনিমার অসংখ্য স্মৃতি হাতড়ে ভীষণ গোপন একটা স্মৃতি খুঁজে বের করে নিতে হবে ওকে। একটা সবুজ স্মৃতি। টলটলে সবুজ। অবিনাশ সাঁতরায় ঘন অন্ধকারে। কিনারে কোনো একটা হাত টেনে তুলে নেবে হয়তো ওকে। পুনরায়।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত