সাদমান খুব চিন্তিত মুখ করে অফিসে গেল।সহকর্মী সফী দেখে বলল,কি সাদমান ভাই খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে! সাদমান স্মিত হেসে বলল,ভাই আর বলবেন না,কি ঝামেলায় আছি বলেন তো।দুইমাস ধরে বাড়ি যাই না ত তো জানেন। সফী বলল, তা ত জানি ভাই।কিন্তু কী নিয়ে ঝামেলায় আছেন সেটা বলেন। আপনার ভাবী মানে নীলিমা গতকাল হোয়াটসঅ্যাপ করেছে “এবার না আসিলে বাড়িতে, আগুন লাগাইয়া দিমু আমার শাড়ীতে।বিঃদ্রঃ এটা গান ভেবে ভুল করনা,আমি সত্যি সত্যি করব।” ভাই ভাবী ত শরীরে আগুন লাগাবে বলেনী,বলেছে শাড়ীতে আগুন লাগাবে।তাহলে দুইটা শাড়ী কিনে পাঠিয়ে দিন। ভাই এটা নিয়ে মজা করবেন না,আপনে ওর রাগ সম্পর্কে জানেন না,ভীষণ জেদি। দেখা যাবে ফোন অফ করে দিবে, এক দেড় সপ্তাহের আগে খুলবে না।
আপনে ত জানেন বাড়িতে আমার অসুস্থ মা।আমার ছোট্ট আড়াই বছরের রাজকুমার নীল ওরা সবাই আছে।আমারও যে খুব ইচ্ছে করে বাড়ি যেতে,ওদের সাথে সময় কাটাতে।কিন্তু এটাও ত জানেন,মায়ের অসুস্থের সময় অনেক টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছিল,যা এখন ধীরে ধীরে শোধ করছি।আর এটাও জানেন এই কাজের ফলে আমি কত টাকা বেতন পাই।চাইলেই ওদের আমি ঢাকা এনে রাখতে পারছি না।তার উপর বাড়িতে গেলে বাড়তি খরচ হয়,এর থেকেও বড় কথা এখন ভরা বর্ষা! সফী বলল,ভাই সবই বুঝলাম, কিন্তু বর্ষার সাথে আপনার যাওয়া না যাওয়ার সম্পর্ক কী? সে কথা আর একদিন বলব। ঠিক আছে ভাই,আপনে চাইলে যাওয়া আসার ফলে যে খরচটা হবে সেটা আমার কাছ থেকে নিতে পারেন।যখন পারবেন তখন দিবেন।
সাদমান কিছু না বলে নিজের ডেক্সে গিয়ে বসল।তার ঠিক আধাঘন্টা পরে ফোনে ম্যাসেজ আসে।ম্যাসেজ ওপেন করে সাদমান অবাক।নীলিমা ম্যাসেজ করেছে,বোকার মত ভাবছো বাড়ি আসলে অতিরিক্ত টাকা লাগবে আর কোথায় টাকা পাবে?এত ভাবতে হবে না। ব্যাংক একাউন্টে ৩০০০০ হাজার টাকা ডিপোজিট করা হয়েছে।এখনই ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলে, রাতের আগে বাড়িতে আস।বিঃদ্রঃ কিভাবে,কোথা থেকে টাকা এলো জানতে চাইলে বাড়িতে আসা লাগবে। সাদমান ম্যাসেজ পেয়ে এক মুহূর্তেও দেরি করেনি,বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে সোজা ব্যাংকে চলে গেল।ব্যাংক থেকে টাকা তুলে, কিছু কেনাকাটা করে সোজা বাড়ি যাওয়ার বাস ধরে।বাড়ি আসতে আসতে প্রায় মাগরিবের পর হয়ে যায়।বাড়ি এসে দরজায় কড়া নাড়তেই নীলা এসে দরজা খুলে দিল। নীলিমা বলল,শেষ পর্যন্ত এলে! না এসে যে থাকা যায় না। নীলিমা ঠেস দিয়ে বলল,না এসে থাকা যায় না বলেই দুইমাস!আর থাকতে পারলে কি হত আল্লাহ জানে! আচ্ছা এসব কথা ছাড়ো এখন বল নীল আর আম্মু কোথায়? নীল আম্মুর সাথে খেলছে।
সাদমান ভিতরে গিয়ে নীল আর মায়ের সাথে দেখা করল।নীলকে কুলে নিল,আর মাকে জিজ্ঞেস করল, মা কেমন আছো?আছি বাবা ভাল।তুই কেমন আছিস?এইতো মা ভাল।মা তোমার ওষুধ ঠিকমত খাওয়া হচ্ছে? হে বাবা।যা আগে হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নে, পরে কথা হবে।ঠিক আছে মা। সাদমান ছেলের হাতে চকলেট দিল।ধন্যবাদ পাপা।পাপা আমাকে আরও চকলেট এনে দিবা?তোমার আরও চকলেট লাগবে?হে পাপা।আচ্ছা এগুলো শেষ কর,তারপর এনে দিব। নীলিমা এগুলো তোমার জন্য। কি এগুলো?খুলে দেখো।আর মায়ের জন্য একটা শাড়ী আছে। নীলিমা প্যাকেট খুলে অবাক সিল্কের মধ্যে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, লাল রেশমী চুড়ি,লাল টিপের পাতা,লিপস্টিক সেটাও লাল। নীলিমা বিষ্ময় কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলো,এসব কেন? আগামীকাল আমরা নৌকা করে রাতে জোছনা বিলাস করব। যেমনটা তুমি চেয়েছিলে,ঠিক তেমনটা ই হবে।সাথে আরও একজন সদস্য বেশি থাকবে,আমাদের ছোট্ট বাবাই থাকবে। তোমার এখনও সেসব কথা মনে আছে?
হে আছে,বিয়ের পরপর ই বলেছিলে,পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে।যদিও পাঁচ বছরে সে ইচ্ছে পূরণ করতে পারিনি।তোমার খুব ইচ্ছে ভরা বর্ষায়,ভরা পূর্ণিমায় তুমি নৌকা করে ঘুরবে।নৌকা খুব সুন্দর করে সাজানো থাকবে গাঁদা আর গোলাপ দিয়ে।তুমি লাল পেড়ে সিল্কের সাদা শাড়ী,খোঁপাতে বেলীফুলের মালা, হাতে লাল রেশমী চুড়ি, কপালে লাল টিপ,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পরবে।আর আমি নীল পাঞ্জাবির সাথে মিলিয়ে সাদা প্যান্ট।তুমি সবার মত নীল শাড়ী নীল পাঞ্জাবি চাও না।আমার সব মনে আছে। কিন্তু এই বুড়ো বয়সে এসবের কি দরকার শুনি? বুড়ো কখন হলাম,আমার তেত্রিশ, তোমার ২৪।বাজে কথা ছেড়ে বলতো নীলিমা তুমি এতগুলো টাকা পেলে কোথায়? আরেহ আমি যে টিউশনি করি, মানে ১০ জন ছেলেমেয়ে পড়াই।এই টাকা তো আমার খরচ হয়ে যায় না।সেই টা ই জমিয়ে জমিয়ে তোমায় পাঠিয়ে দিয়েছি। তুমি টিউশনি করাও?কই আমি ত জানি না!
জানবে কি করে,আস দুই মাস, দেড়মাস পর পর।বৃহস্পতিবার এসে শনিবার সকালেই চলে যাও।আমি ইচ্ছে করে জানাই নি।তাছাড়া তোমার ইন্টারমিডিয়েট পাস বউ গ্রামে বসে এর থেকে বেশি কিছু করার ক্ষমতা নাই।আর তোমার ঋণ মানে তো আমারও ঋণ,তাই টাকাটা তোমার হাতে তুলে দিলাম।যে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা এখনও দেয়া বাকি,সেটা পুরোটাই এ মাসে দিয়ে দাও। ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করতে চাই না।এভাবেই অর্ধাঙ্গিনী হয়ে সারাজীবন পাশে থেক।আমার পৃথিবীটাকে সুখের পৃথিবী করে দিয়ো। পরের দিন রাতে সাদমান,নীলিমা আর ওদের ছেলে নৌকা করে সারারাত জোছনা বিলাস করেছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প