কথোপকথন

কথোপকথন
– প্রেম করতে যাচ্ছেন? প্রতিউত্তরে ছেলেটি কঠিন গলায় বলে,
– ভদ্রভাবে কথা বলুন।
– ঠিক আছে৷ ভদ্রভাবে প্রেম করতে যাচ্ছেন?
– আপনার সমস্যাটা কোথায় বলুন তো? মেয়েটি এবার দেয়ালে হেলান দিয়ে বাঁকা হয়ে দাঁড়ায়,
– আপনি আমার উপরে থাকেন, এটাই আমার সমস্যা?
– হোয়াট?
– আরে রেগে যাচ্ছেন কেন! আমি থাকি তিনতলায় আর আপনি চারতলায়। মানেটা কি দাঁড়ায় তাহলে?
– তো এখানে সমস্যা হওয়ার কি আছে?
– কাছের মানুষদের সবসময় মাথায় তুলে রাখতে হয়, জানেন না? আপনি উল্টো কাজ করছেন।
– আপনি কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই আমার বিরক্তের কারণ হচ্ছেন।
– আর প্রতিবেশী হিসেবে আপনি আপনার গুরুত্ব হারাচ্ছেন।
– এটার মানে কি?
– খুব সহজ। প্রতিবেশী হিসেবে আমার কাছে আপনার এখন আর কোনো গুরুত্ব নেই। যা আছে তা হচ্ছে…
– থামুন। শেষবারের মত বলছি, আপনি আমাকে আর বিরক্ত করবেন না প্লিজ।
– কিন্তু আমি বিরক্ত না করলে আপনার চলবে কি করে?
– আপনি তো জানেন আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। তারপরও কেন…
– উঁহু, লোক দেখানো গার্লফ্রেন্ডদের আমি কখনো পাত্তা দিই না।
– আপনার সাথে তর্কে যাওয়াই বেকার।
– একদম৷ চলুন না তাহলে রুমে যাই।
– ছিঃ।
– আরে ফেসবুকের রুমের কথা বলছি। আপনার মাথায় কি সবসময় এসব উল্টাপাল্টা জিনিসই ঘুরে?
– আমি চললাম। ছেলেটি চলে যেতে নিলে মেয়েটি আবার পিছু ডাকে,
– যাওয়ার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান।
– কি?
– আপনি কখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন না কেন? প্রেমে পড়ে যাবেন, এ ভয়ে?
ছেলেটি নির্বাক দৃষ্টি নিয়ে মেয়েটির দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে। তারপর কোনো উত্তর না দিয়েই তাড়াতাড়ি করে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আজ দেরি করলে ইরা তার ১২টা বাজিয়ে দেবে। সাতদিন পরের কোনো এক সাদাকালো বিষন্ন বিকেলে…
– আজ হঠাৎ ছাদে উঠেছেন যে? আর সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করছেন কেন?
– বাড়িওয়ালা কি আপনি না আমি বুঝতে পারছি না।
– আপনি মোটেও বাড়িওয়ালা নন।
বাড়িওয়ালার ছেলে। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি আবার ভেবে বসবেন না আপনি বাড়িওয়ালার ছেলে বলে আমি আপনার পিছু নিয়েছি। উত্তরার এদিকে আমাদেরও বাড়ির কাজ চলছে।কাজ কমপ্লিট হয়ে গেলেই আমরা ওখানে শিফট হয়ে যাব। কি আশ্চর্য, সিগারেটটা ফেলে দিলেন কেন?
– এমনিই।
– বসি একটু?
– আপনার ইচ্ছে।
– কিছু হয়েছে? হঠাৎ এত ভদ্র ব্যবহার করছেন! কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে ছেলেটি উত্তর দেয়,
– আমার গার্লফ্রেন্ডকে আজ দেখতে এসেছে?
– এমনভাবে বলছেন যেন বিয়ে হয়ে গেছে।
– পরিস্থিতি তেমনই।
– আপনার গার্লফ্রেন্ড রাজি হয়ে গেল?
– হুম।
– কেন?
– এছাড়া নাকি আর কোনো উপায় ছিল না।
– আপনি জোর করেন নি? এটলিস্ট বুঝাতে তো পারতেন।
– দরকার মনে করিনি।
– আপনার এখনো মনে হয়, আপনি ওকে ভালোবাসতেন? ছেলেটি ভ্রু কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকায়,
– এসব খামখেয়ালি কথাবার্তা আমার একদম পছন্দ না।
– খামখেয়ালি না। আমি সিরিয়াস। আপনি যদি সত্যিই ওকে ভালোবাসতেন তাহলে এভাবে ছেড়ে যেতে দিতেন না। অন্তত চেষ্টা করতেন তাকে ফেরাবার। তাছাড়া সত্যিকারের ভালোবাসায় ইগো কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না।
– আপনি কি কখনোই কারো মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করেন না? যখন যা ইচ্ছে হয়, বলে যান?
মেয়েটি তার স্বভাবসুলভ হাসি হাসে,
– এ মুহূর্তে আপনার মনের অবস্থা এতটুকুও বিধ্বস্ত না। প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে প্রেমিকেরা জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে মনে মনে নিজেদের দেবদাস ভাবতে পছন্দ করে৷ আপনিও তাই করছেন। ভেতরে ভেতরে ছেলেটিও একথার সত্যতা অনুভব করতে পারছে কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করতে চাইছে না। নীরবতা ভেঙে মেয়েটি আবার বলে,
– একসাথে অনেকগুলো জ্ঞানের কথা বলে ফেললাম। যাই, বাসায় গিয়ে মধু দিয়ে একগ্লাস হরলিক্স খেয়ে নিই। আর হ্যাঁ, যাওয়ার আগে আরেকটা কথা বলে যাই। আপনার আসলে আমি ছাড়া কোনো গতি নেই। সে আপনি মানুন বা না মানুন। “Love me, love me, love me now Touch me, touch me, touch me now…” ডার্ক রুমের এ লিরিক্সগুলো গুনগুন করতে করতে মেয়েটি ছেলেটির সামনে থেকে উঠে চলে যায়। আর এদিকে ছেলেটি মনে মনে ভাবতে থাকে, “এই মেয়ে কি কোনো ছ্যাঁকা খেয়ে এমন অসভ্য হয়েছে নাকি প্রেমে পড়ে?”
– একটা রিক্সা ডেকে দিবেন?
– নিজে ডেকে নিন। আমার অফিসের লেইট হয়ে যাচ্ছে এমনিতেই।
– তাহলে লিফট দিন।
– সম্ভব না। আমার এ বাইকটা মেয়েমানুষের ছোঁয়া পেলে নিজেকে কবির সিং ভাবতে শুরু করে। যার ফলাফল খুব ভয়াবহ হয়। মেয়েটি আরেকটু এগিয়ে আসে,
– আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন দেখছি।
– বিষন্ন মেজাজে থাকার কথা ছিল নাকি?
– আপনি যান। আমি পাঠাও কল করে নিচ্ছি।
– ঠিক আছে।
– শুনুন, বিশেষ একটা মাধ্যমের কল্যাণে খবর পেয়েছি, আপনার গার্লফ্রেন্ড নিরুপায় হয়ে নয়, বরং স্বেচ্ছায় বিয়েতে রাজি হয়েছে।
– বিশেষ মাধ্যম?
– আপনার না অফিসের লেইট হয়ে যাচ্ছে? যান যান। আমিও গেলাম। তার ঠিক ১২দিন পর…
– আপনি? এই অসময়ে? তাও আবার শাড়ি পরে!
– আপনি আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন মনে হচ্ছে।
– আজ না আপনাকে দেখতে আসার কথা?
– হুম। দেখে চলেও গিয়েছে।
– তাহলে?
– তাহলে আবার কি? বাবা আমার মতামত জানতে চেয়েছেন। সেজন্য আমি প্রকৃতির সাথে পরামর্শ করতে এসেছি।
– বুঝলাম না। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমি সবসময় ছাদে এসে প্রকৃতির সাথে পরামর্শ করে নিই।
– ভালো তো৷ আমি যাচ্ছি তাহলে।
– সমস্যা নেই, থাকুন। আমার পরামর্শ করা হয়ে গেছে।
– সিদ্ধান্ত নেয়াও হয়ে গেছে?
– হ্যাঁ। প্রকৃতি বলেছে, এত ভালো একটা পাত্র হাতছাড়া করাটা ঠিক হবে না। যাই, বাবাকে গিয়ে বলে দিই আমি এ বিয়েতে রাজি। মেয়েটি চলে যেতে নিলে আচমকা ছেলেটি তার ডান হাতটা টেনে পেছনে মচকে ধরে।
– আমার ৩০০টাকার পাস্তা খাইয়ে পটানো গার্লফ্রেন্ডটাকে ভাগিয়ে দিয়ে এখন আবার নিজের রাস্তা মাপা হচ্ছে?
– আহ্ লাগছে তো। আর কি বলছেন এসব?
– ও, কিছুই বুঝতে পারছো না, না? আমি সব জেনে গেছি। ঘটককে টাকা খাইয়ে নিজের জন্যে আসা বড়লোক পাত্রের সম্বন্ধটা আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায় পাঠানো হয়েছে। এরকম নিখুঁত একটা প্ল্যান যা কিনা আমিও ধরতে পারলাম না।
– আপনাকে এসব কে বলেছে? ছেলেটি এবার মেয়েটির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,
– ওই যে বিশেষ মাধ্যম। মানে আমার হবু শালিকা।
– এরমধ্যেই আমার বোন আপনার হবু শালিকা হয়ে গেল কি করে?
– আমি যে তোমার বোনকেই আমার হবু শালিকা বলেছি সেটাই বা তুমি বুঝে নিলে কি করে?
– উফফফ, বাজে কথা ছাড়ুন। কাজের কথা বলুন। আপনার কি আরো কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?
– মানে?
– থাকলে এ সম্বন্ধটাও তার বাসায় ট্রান্সফার করে দিতাম। সাথে সাথে দুজনেই হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে মেয়েটি বললো,
– তারপর?
– তারপর আর কি৷ মেনে নিলাম, তুমি ছাড়া সত্যিই আমার আর কোনো গতি নেই।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত