বিআইডব্লিউটিএর থার্ড গ্রেডের অফিসার আবদুল কুদ্দুস জেটির ধারে একটা ঝুপড়িঘরে শুয়ে হাত নেড়ে নেড়ে মশা তাড়ায়। মশার কয়েল শেষ হয়ে গেছে, এতো রাতে আর আনার উপায় নেই। ভ্যাপসা গরমে সে হাঁসফাঁস করে, তার ঘুম আসে না। শেষ রাতে বৃষ্টি হয়, তার ঘরের চালে বৃষ্টির ফোঁটার শব্দ এক সম্মোহনী পরিবেশ সৃষ্টি করলে সে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে হাঁটার রোগ তার ছিল না, কিংবা নেই। কিন্তু সে স্বপ্ন দেখে যে, সে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। সে দরজা খোলে, টিন আর কাঠ জোড়া দিয়ে বানানো কবাট, ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তোলে, তার দরজার মুখে একটা কুকুর শুয়ে ছিল, কবাটের বাড়ি খেয়ে তা ঘেউ ঘেউ করে কাঁদে এবং উঠে পেছন ফিরে তাকিয়ে তাকে অভিসম্পাত করে। বাইরে চাঁদের আলো ঝকঝক করছে। আবদুল কুদ্দুস বলে, আইজকা না বৃষ্টি, এর মইদ্যে পুন্নিমা আইল কোত্থন। কুকুরটার চোখ জ্বলছে। কুকুরটা সরছে না, তার দিকে তাকিয়ে অভিশাপ দিয়েই চলেছে, তার মানে কুদ্দুস সরে গেলে সে কবাটের কাছটায় আবার শুয়ে পড়বে। কুদ্দুস হাঁটে।
আশপাশের দোকানপাট সব বন্ধ, রিকশাগুলো দোকানের সামনে একটার গায়ে আরেকটা চড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নাকি রিকশাগুলো সঙ্গম করছে। আবদুল কুদ্দুসের ধন্দ লাগে। চাঁদের আলো বিভ্রাস্তিময়, আবদুল কুদ্দুস জানে। সে তার কানের পাশে জুলফিটার কাছে তরল একটা কিছু অনুভব করে, সে গালে হাত দেয়, জুলফিতে হাত দেয়, হাত সামনে এনে চাঁদের আলোয় সে পরখ করতে থাকে গায়ে কী লেগেছে। তখন তার মনে হয় তার চুল বেয়ে চাঁদের আলো ঝরছে। আবদুল কুদ্দুস নিশ্চিত হয় যে, স্বপ্ন দেখছে। নদীর পচা গন্ধ নাকে এসে লাগে। এটা হওয়ার কথা নয়। আজ পনেরো বছর ধরে আবদুল কুদ্দুস বিআইডব্লিউটিএতে চাকরি করছে। নদীতে নদীতেই তার পোস্টিং। নদীর গন্ধ এখন আর তার নাকে আলাদা কোনো অনুভূতির সৃষ্টি করে না। তবে কোন গন্ধ যে নদীর, কোন গন্ধ পানির, কোন গন্ধ মাছের, কোন গন্ধ শুঁটকির, কোন গন্ধ কারখানার বর্জ্যের, কোন গন্ধ মানুষের মলমূত্রের, এই শীতলক্ষ্যার পাড়ে তা আলাদা করা মুশকিল। বরিশালের কীর্তিনাশার গন্ধটাই আবদুল কুদ্দুসের সবচেয়ে ভালো লাগে। ফেরিতে পোস্টিং হয়েছিল আবদুল কুদ্দুসের, মাওয়া ঘাটে, সেখানে সে নদীতে অনেক দিনরাত কাটিয়েছে, খাওয়া-দাওয়া, গোসল-ঘুম – সবই ছিল নদীতে; সেই নদীর গন্ধটাও তার কাছে আউশ চালের ভাতের গন্ধের মতো ভালো লাগত। কিন্তু এই নদীর পানি কুচকুচে কালো, এই নদীর বাতাস ভারি হয়ে আছে বর্জ্যের গন্ধে, কিন্তু নদীতে থাকতে থাকতে সেটা গা-সওয়া হয়ে গেছে। আবদুল কুদ্দুস এগোয়। বৃষ্টি খুব হচ্ছে ইদানীং, পথঘাট কাদায় থিকথিক করছে, রাস্তার ধারে পানি জমেও আছে কোথাও কোথাও। লুঙ্গিটা এক হাতে টেনে ধরে আবদুল কুদ্দুস সাবধানে পা ফেলে; কিন্তু কাদায় তার একটা স্যান্ডেল গেঁথে যায়। তার এক পায়ে স্যান্ডেল, আরেক পায়ের স্যান্ডেল পেছনের কাদায় আটকে গেছে। সে উপুড় হয়ে স্যান্ডেল তোলে। তখন দেখতে পায় কুকুরটা তার সঙ্গে সঙ্গে এসেছে। সে এগোয়, কুকুরও তার পেছন পেছন চলে। সে থামে, কুকুরও থেমে যায়।
সে বিআইডব্লিউটিএর পন্টুনে এসে দাঁড়ায়। আকাশে মেঘ, মেঘের ফাঁকে চাঁদ। এই চাঁদের এতো আলো যে, তাকে ভিজিয়ে দিয়েছে। নাকি বৃষ্টির গুঁড়ো আর চাঁদের আলোর গুঁড়ো একসঙ্গে ঝরছে! কালো পানিতে চাঁদের ছায়া পড়েছে। বর্ষাকালের নদী। স্রোত আছে। সোঁ-সোঁ শব্দও হচ্ছে। পানি ধেয়ে চলেছে ভাটির দিকে। কচুরিপানার দঙ্গল ভেসে যাচ্ছে।
তখন তার চোখ পড়ে জেলে-নৌকার দিকে। এখানে কোনোদিনও জেলে-নৌকা আসেনি, আসার কথাও নয়। কারখানার কালো নোংরা রাসায়নিকের কারণে পানি হয়ে আছে আলকাতরা, এখানে মাছ আসবেই বা কোত্থেকে। আর যদি কোনো মাছ আসেও সেই মাছ খাবেই বা কে। জেলে-নৌকা কী মাছ ধরে?
বিআইডব্লিউটিএর থার্ড অফিসার আবদুল কুদ্দুস হাঁক পাড়ে, ও মাঝি, মাছ কিবা?
জবর।
মাছ জবর? কী বলে? আবদুল কুদ্দুস পাসকোর্সে ডিগ্রি পাশ, ডিগ্রি কোর্সে তাকে বাংলা পড়তে হয়েছিল, তাদের হরগঙ্গা কলেজে আকলিমা খাতুন নামের একজন শিক্ষিকা তাদের পদ্মানদীর মাঝি পড়াতেন। ‘ও কুবের মাছ কিবা, জবর?’ – এই দুইটা লাইন আবদুল কুদ্দুসের মনে আছে। আর মনে আছে ম্যাডাম শাড়ি পরে আসতেন, শাড়ির ওপরে একটা চাদর জড়িয়ে রাখতেন, তার চোখে একটা চশমা থাকত, তার গালে ব্রণ হতো, সেই আকলিমা ম্যাডামের ছবি ছেলেরা হাইবেঞ্চে বলপেন দিয়ে এঁকে রাখত, বাথরুমেও সেই ম্যাডামের ছবি ছেলেরা আঁকত যথেষ্ট কল্পনাশক্তি মিশিয়ে।
আবদুল কুদ্দুস বিস্মিত, জেলেরাও কি পদ্মানদীর মাঝি বইটা পড়েছে? তা না হলে তারা এই প্রশ্নের এই জবাব দিলো কীভাবে?
আবদুল কুদ্দুস বলল, তোমরা কারা? কী করো?
ওরা বলল, আমরা মাঝি, মাছ ধরি।
এইহানে কুনদিন থাইকা মাছ আওয়া শুরু করল?
তা জানি না। আইজকা জাল ফেলতাছি আর খালি মাছ উঠতাছে। ইন্ডিয়াতে আসামের বাঁধ খুইলা দিছে তো। পানি আইতাছে পাহাড় ভাইঙ্গা। মাছও আইতাছে একেরে…
আবদুল কুদ্দুস কথাটা বিশ্বাস করতে পারে না। ব্যাপারটা স্বচক্ষে দেখে চক্ষু-কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করা দরকার।
সে পেছনে তাকায়। কুকুরটা তার পায়ে পায়ে লেগেই আছে। তার মুখে একটা স্যান্ডেল। কী কা-। তার স্যান্ডেল আবার কাদায় গেঁথে গিয়েছিল নাকি। সে খেয়ালও করেনি। আর তার দরজায় ঘুমুনো কুকুর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার স্যান্ডেল মুখে করে নিয়ে চলে এসেছে।
আবদুল কুদ্দুসের কান্না পায়। একটা কুকুরেরও কত মায়া! অথচ তার বউটা তার জন্য একটুখানি মায়া করল না। তিনটা ছেলেমেয়ে রেখে বউটা কেটে পড়ল। অবশ্য আবদুল কুদ্দুস নদীতে নদীতে থাকে, বউটা কাজ করত সিটি করপোরেশনে, একা একা থাকত, নিচতলার লজিং মাস্টারের সঙ্গে ভেগে গিয়ে সে যদি সুখী হয় তবে হোক। কিন্তু ছেলেমেয়ে তিনটাকে সে নিয়ে গেল না কেন? এখন তিনটা ছেলেমেয়েকে সে রেখেছে তার বোনের জিম্মায়, বোনটাও বিধবা, তারও থাকার জায়গা ছিল না, ভালোই হয়েছে, এসে উঠেছে মতিঝিল এজিবি কলোনিতে আবদুল কুদ্দুসের সরকারি কোয়ার্টারে। বড় ছেলেটা ম্যাট্রিক দেবে সামনের বছর। ছোট মেয়েটা ক্লাস থ্রিতে। সেইটার খুবই মায়া। আববা আববা করতে থাকে, লুঙ্গি ধরে, হাতের আঙুল ধরে ঝুলে পড়ে। আম্মা, পড়াশোনা ভালো লাগে? আবদুল কুদ্দুস মেয়েকে জিগ্যেস করে।
লাগে না আববা।
কী কও। পড়াশোনা ভালো লাগে না?
না আববা।
বড় হয়া কী হবা?
আমি বড় হব না আববা।
বড় হবা না ক্যান?
বড় হলে অনেক দুঃখ পাওয়া লাগবে আববা।
তোমাকে কে বলছে আম্মাজান?
আমি জানি আববা। আপনে তো বড়। আপনার মনে কত দুঃখ আমি বুঝি তো আববা।
আমার মনে কোনো দুঃখ নাই আম্মা।
তাও আমি বড় হব না আববা।
মাঝিরা কি ঠিক বলছে? শীতলক্ষ্যায় কি মাছ আছে? এই পানিতে কি মাছ থাকা সম্ভব?
একটা ইঞ্জিন নৌকা দরকার। জেলে-নৌকাগুলোর কাছে গিয়ে দেখতে হবে, ঘটনা কী।
আবদুল কুদ্দুস ইঞ্জিন নৌকা কোথায় পাবে?
ওই ওইখানে একটা হারিকেন জ্বলে নাকি? ওই হারিকেন কি এই দিকেই আসছে নাকি। আরে ভটভট শব্দও তো হয়। তাইলে ওইটা তো মনে হয় ইঞ্জিন নৌকাই। পার ঘেঁষে যাচ্ছে। ওই ইঞ্জিন, যাইবা নাকি?
কই যাইবেন?
ওই যে জাইলারা মাছ ধরে, ওইহানে যামু। যামু আর আমু।
না যামু না।
আরে যাইবা না। লাইসেন্স ক্যানসেল করুম।
আপনে কেডা?
চোউখে দেহো না। আমার শার্টে লেহা আছে না নাই যে আমি বিআইডব্লিউটিএ। লাইটপোস্টের আলোতে তো ব্যাবাক পড়া যায়। বিআইডব্লিউটিএ মানে বুঝো। মুরুক্ষো। বাংলাদেশ ইন্টারনাল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট…
ও কাগু। রাগ করেন ক্যা। আমরা কি লেহাপড়া জানি নাকি। উডেন।
আবদুল কুদ্দুস ট্রলারে উঠে পড়ে। ভালো ঢেউ। একটু একটু বাতাস। নৌকা দুলছে। কুকুরটাও স্যান্ডেল মুখে এসে পড়ে ট্রলারে।
কুত্তা কার?
আমার।
কী কুত্তা?
এইটা আবার কী ধরনের কোশ্চেন?
ও কাগু। ইংরাজি বইলেন না। লেহাপড়া জানি না।
তাইলে মুরুক্ষো কেন পুছ করস কী কুকুর? এইটা সরাইলের কুত্তা। গ্রে হাউন্ড। ল স্টার্ট ল।
কাগু। ওইহানে যাইবেন কিন্তু নিজ দায়িত্বে। এইটা কিন্তু কাগু আগেত্থন কইয়া থুইলাম।
মানে কী?
মানে হইল ওইহানে যাওনটা ভালা না।
ভালা না মানে?
বুঝেন না। রাইতবিরাত। চান্দে পাওয়া নিশুতি। কুত্তায় স্যান্ডেল মুখে আপনের লগে আয়া বইয়া রইছে। এই রহম রাইতে নদীর মাঝখানে জাইলারা কী করে এইটা দেখতে যাওন কি ঠিক?
কস কী? বিপদ-আপদ আছে নাকি?
আছে না কাগু। ধরেন আপনেরা তো বিশ্বাস করেন না, আমগো জাতে আমরা বিশ্বাস করি, নদীতে কাগু ভূত-প্রেত থাকে। মাছুয়া ভূত।
ভয় দেখাইস না কইয়া দিলাম। আমি নদীতে নদীতে আছি ১৫ বছর। শাহ আমানত উল্লাহর চিফ অফিসার আছিলাম। কোনোদিন দরিয়ার কোনো দানো দেহি নাই। চালু চালু। চল ওই জাইলা নৌকার দিকে চল।
নে গণেশ, দড়িতে টান দে। আমি হাল ধরি।
গণেশের বয়স ১৬-১৭ হবে। তার মুখ নিকষ কালো। চাঁদের আলোয় কালো মুখে একপাটি দাঁত ঝকঝক করছে।
নৌকা ছুটছে। ঢেউয়ের বাড়ি লাগছে সামনের দিকের পাটাতনে। নৌকা ঢেউয়ের ওপরে লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছে।
ওই মাঝি, তোরটা ট্রলার না ঘোড়া। লাফায় কেন?
ব্যাঙ কাগু। পানির জিনিস। ঘোড়া হইব কেমনে?
জেলে-নৌকার কাছে গিয়ে স্টার্ট বন্ধ করে দেয় ওরা। ধীরে ধীরে ওদের ট্রলার লাগে জেলে-নৌকায়।
মাছে নৌকার পাটাতন সাদা হয়ে আছে। এতো মাছ?
কী মাছ? আবদুল কুদ্দুস জিগ্যেস করে গলা উঁচিয়ে।
ইলিশ! একজন জেলে উত্তর দেয়।
এতো ইলিশ আইল কোত্থেইকা?
সরকারে ইলিশ মারা ব্যান করছে না। এরপর থাইকা।
তিনজন মাঝি। বৃষ্টিভেজা দেহ রোদে শুকিয়ে ওরা কাজ করে চলে। তাদের সবাইকে দেখতে তাই একই রকম লাগে। কারো সঙ্গে কারো চেহারার কোনো পার্থক্য নেই।
জাল টানছে তিনজনে। আরেকটা বড় মাছ ধরা পড়েছে জালে। উঠছে উঠছে। ওদের চোখেমুখে হাসি।
আবদুল কুদ্দুস স্তব্ধ হয়ে আছে।
একটা মানুষের সমান মাছ। নাকি এটা মানুষই?
দুর্গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসছে। প্রচণ্ড বমির দমক এসে লাগছে। নিজের পেট বের হয়ে আসবে।
আরেকটা পাইছি। এই নিয়া চারটা হইল।
লাশটার পেট কাটা নাকি? গণেশ শুধায়।
হ। পেট কাইটা পাথর বাইন্ধা পানিতে ডুবাইছিল। একজন মাঝি বলে।
ওরা ইলিশের নিচে লাশটাকে শুইয়ে দিলো। চারটা লাশ। তার ওপরে ইলিশ। ইলিশ আর মানুষ নৌকার পাটাতনে শুয়ে আছে।
আবদুল কুদ্দুসের নাড়িভুঁড়ি উলটে আসছে। সে ওয়াক ওয়াক করছে।
ট্রলারের মাঝি বলে, কাগু, ফিইরা যাইবেন? আগেই কইছিলাম, নদীতে দৈত্য-দানো থাকে। হুনলেন না। চলেন ফিইরা চলেন।
চলো।
আবদুল কুদ্দুস ট্রলারে শুয়ে পড়ে। বমি পাচ্ছে। বমি হয়ে গেলে ভালো লাগবে। ওয়াক ওয়াক।
ঘাটে এসে ট্রলার থামে। ধাক্কা লাগল কেন?
কারণ ট্রলারের দুই চালকও শুয়ে পড়েছে। তারাও বমি করছে। সঙ্গের কুকুরটা আরাম করে ভাত খাচ্ছে।
আবদুল কুদ্দুস ঘাটে পা রাখে।
পেছনে পেছনে নামে কুকুরটা।
এই সময় পেছন থেকে কে যেন মুখটা চেপে ধরে তার। হ্যান্ডসআপ।
একটা কথা বলবে না। একটাও না। চুপ করে থাকো।
তার হাত বাঁধে পিঠমোড়া করে। চোখ বাঁধে। মুখে স্কচটেপ মেরে দেয়।
কুকুরটাও কাঁই কাঁই করছিল। তাকে কি গুলি করল?
তাকে কোথায় নিয়ে চলেছে আবদুল কুদ্দুস জানে না।
তার মনে পড়ছে ছোট মেয়েটার কথা। ছোট মেয়েটার নাম লাকি। এরকম আনলাকি মেয়ে হয়? এক বছর বয়সে তার মা তাকে ছেড়ে অন্য লোকের হাত ধরে ভেগে গেছে। লাকি ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বলে, আববা, আমি বড় হব না। বড় হইলে অনেক দুঃখ। আপনে বড় হইছেন। আপনার অনেক দুঃখ না আববা!
আবদুল কুদ্দুসের চোখ বাঁধা। কিন্তু চোখের অশ্রু পড়তে সেই বাঁধন কোনো বাধা হয়ে উঠতে পারছে না। আবদুল কুদ্দুস অশ্রুপাত করছে।
তাকে বোধহয় একটা গাড়িতে তোলা হয়েছে। গাড়ি চলেছে। কোথায়, কেউ জানে না।
তাকে একটা ব্রিজের ওপরে তোলা হয়েছে। ব্রিজের রেলিংয়ের ওপরে দাঁড় করানো হয় তাকে। তার চোখ খুলে দেওয়া হয়। হাত খুলে দেওয়া হয়। চাঁদটা জ্বলজ্বল করছে। আকাশে মেঘ। একটু পরে বৃষ্টি হবে। তখন চাঁদটা কোথায় যাবে?
ফায়ার।
গুলির শব্দ। পানিতে পড়ে যায় আবদুল কুদ্দুস।
আবদুল কুদ্দুসের ঘুম ভেঙে যায়।
সে শুয়ে আছে পন্টুনের দোতলার ঘরে। পাশে শুয়ে আছে এমভি হাসানাতের সারেং মিজানুর রহমান। ভীষণ গরম। তার গা বেয়ে দরদর করে ঘাম বেরোচ্ছে।
ভোর হয়ে এসেছে। আবদুল কুদ্দুসের তলপেট ফেটে যাচ্ছে পেশাবের চাপে। তার এখন পেশাবখানায় যাওয়া দরকার। সে লোহার সিঁড়ি বেয়ে টয়লেটের দিকে রওনা দেয়।
এরপর থেকে আবদুল কুদ্দুস আর ইলিশ মাছ খায় না। লোকে বলে, আবদুল কুদ্দুস সাব, ইলিশ মাছ খান না ক্যান?
খাইতাম। এখন আর খাই না।
ক্যান খান না?
স্বপ্ন দেখছিলাম।
কন কী। স্বপ্নে কইল আর ইলিশ মাছ খাইবেন না। এরপর থাইকা খান না?
নারে ভাই। আছে ঘটনা।
কন না খুইলা।
না ভাই। কওন যাইব না।
আরে কন। কী হইব?
না না। কওন যাইব না। সব কথা কওন যায় নাকি মিয়া।
ও স্বপ্নের কথা কওন মানা। তাবিজটুবিজ পাইছিলেননি মিয়াভাই?
চুপ করো তো। বেশি কথা কও তোমরা। চুপ থাকো। কথা বেশি বলবা না। খবরদার। কথা বেশি বলবা না।