ভাই এইডা কি মাইয়া আমগো সামনে হাজির করাইলেন?না আছে রূপ না আছে কিছু.. রহিম সাহেব, কামড়া আমনের ঠিক করলেন না! ঘটক সাহেবের মুখে রিমা যখন তার রূপের বর্ণনা শুনছিল পাত্র পক্ষের সামনে তখন সে শুধু মিটিমিটি হাসছিল। কারণ সে যানে ষষ্ঠবারের মতো এবারেও তার বিয়েটা আর হবেনা।পাত্র পক্ষের সবাই চলে গিয়েছে, রিমার পাশে শুধু তার বাবা বসে আছে কপালে হাত দিয়ে ।
-আমাকে ক্ষমা করে দিস মা… আমিও এবারেও ব্যর্থ হলাম। (রিমার বাবা)
-কি যে বল বাবা। আমি কালো এটা তো আর নতুন কিছু নয়। আমার আরো দুইবোন ছোট হয়েও বিয়ে করে সংসার করছে দিব্যি …তাতেও আমার আপত্তি নেই। আমি ঠিক আছি বাবা।
-অনেক বড় হো মা।মা মরা মেয়ে তুই।জানিস তোর মা আমাকে বলেছিল তুই আমার কলিজার টুকরা। আসলেই তাই…. তুই ঠিক তোর মায়ের মতো হয়েছিস। রিমার পাশে থেকে রিমার বাবাও চলে গেলেন। কিন্তু এখনও রিমার মিটিমিটি হাসি যেন কমছেই না….সে ভাবে পৃথিবী খুব সুন্দর,আর তারজন্য সেই সুন্দর।
১সপ্তাহের পর…..
-ভাই মেয়েতো কালো, ঠিকাছে দেখি পাত্রের পছন্দ করেন কিনা!(ঘটক)
-ভাই আমার মেয়েটা খুব ভালো ভদ্র,নম্র নরম স্বভাবের।
এবার দেখেন না একটু পাত্র যা যা আবদার করবে আমি তাই তাই দিব। (রিমার বাবা) তিন দিন পর আলহামদুলিল্লাহ।পাত্র বলেছে আপনার মেয়েকে দেখতে আসবে না। তবে সে আপনার মেয়ের সমস্ত বিবরণ শুনে , আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়।(ঘটক)
-কি বলেন ভাই? মিথ্যা বলছেন না তো?
-না ভাই একটুও মিথ্যা বলছিনা। আপনি আপনার মেয়ের মতামত নিন,আর জলদি বিয়ের আয়োজন করেন।
-রিমা মা তোমার এ বিয়েতে মত আছে তো?
-কি যে বল বাবা, অবশ্যই আছে।
তুমি যা চাইবে তা তো আমার ভালোর জন্যই চাইবে ৫দিন পর রিমার বিয়ে হলো একজন কর্মজীবি সাধারণ মানুষ, সৌরভের সাথে। তিনি রূপেও যেমন কথাবার্তাতেও তেমন। কেমন জেন রিমার সঙ্গে সৌরভের একদম মিলছেনা। কোথায় সৌরভ আর কোথায় রিমা,এ যেন আকাশ পাতাল পার্থক্য। বিয়ের দিন রাতে….
-আপনি আমাকে না দেখা বিয়ে করেছেন,কাজটা কি ঠিক হলো?(রিমা)
-কেন বল তো। আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি?(সৌরভ)
-আমি এমন কিছু বলতে চাইনি.. আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমাকে পছন্দ করেনি তাই!
-তাই কি?বিয়ে আমি করেছি সংসারও আমি করবো তাতে কার কি আসে যায়?
-কখনও এমন ভালো কথা তো শুনিনি তাই সব যেন স্বপ্নের মতো লাগছে।
-স্বপ্ন না, আমি তোমার বাস্তব। আমি তোমাকে কেন বিয়ে করেছি জান?
-না।
-তোমাকে বিয়ে করেছি, তোমার কারণে।
-মানে?
-তোমার রূপের জন্য। চারপাশের সবকিছুই তো আলো কিন্তু আলোর শুরুটা কিন্তু অন্ধকার থেকে।
সৌরভের মুখে এমন কথা শুনে রিমা আবারো মিটিমিটি করে হাসলো আজ রিয়া আর সৌরভের সপ্তমতম বিবাহবার্ষিকী। ছাদের উপর বেশ আলোকসজ্জা দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো আঙ্গিনা। দুই মেয়ে আলো আর নিশি নিজের হাতে একটা ছবি গিফট করলো রিমাকে।আর সৌরভ মানে তাদের বাবাকে দিল একটা চকলেট। আহা এ যেন অন্যরকম ভালোবাসা।
-দেখলে রিমা আমাদের বিয়ের সাত বছর হয়ে গেল।(সৌরভ)
-আচ্ছা , তুমি কি আমাকে এভাবে সারাজীবন ধরে আগলে রাখবে?(রিমা)
-কি বলছো এইসব, আমাকে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তোমার?
-না নেই।
-জানো তো রিমা, রূপ-সৌন্দর্য হারিয়ে যায় সময় স্রোতের বিবর্তনে। আর আমি সবসময় সেই ভালোবাসা চেয়েছি যে ভালবাসায় বিশ্বাসের মূল্য থাকে। আর তা তুমি আমাকে দিয়েছে।
-আমাকে নিয়ে কোন অভিযোগ আছে?
-হা আছে
-কি সেটা?
-তোমাকে নিয়ে অজানা বিলে হাঁটার। আর অনেক অনেক স্বপ্ন বুনার।
-আমিতো কালো আমায় নিয়ে এতো স্বপ্ন কি করে দেখ?
-কালোই তো আমার আলো।আর এসব ঘিরেই তো আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক। সৌরভের এমন কথা শুনে রিমা আজো রহস্যময় মিটিমিটি হাসি দিল।
গল্পের বিষয়:
গল্প