অনুর গল্প

অনুর গল্প
অনুর কথায় সাহেদ কিছু বলে না।চুপ করে থাকে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে অনুর দিকে তাকায়। শান্ত, স্বচ্ছ,এক কোমলতায় ভরা চোখে অনু তাকিয়ে থাকে,সাহেদের দিকে। অফিস থেকে বের হয়ে সাহেদ এদিক ওদিক তাকায়।এসময় এখানে খুব একটা খালি রিক্সা দেখা যায় না।সে হিসেবে আজও দেখা যাচ্ছে না। অপেক্ষা,দাড়িয়ে থাকা। অন্যদিন হলে সাহেদ রিক্সার জন্যে দাড়িয়ে থাকতো তবে আজ হাটতে ইচ্ছে করছে।বসে থাকতে থাকতে শরীরে বেশ মেদ জমে গেছে।এতে করে শরীর ও ভাল থাকবে, রিক্সা ভাড়াটাও বেচে যাবে। অনু কিছুটা চুপ থেকে আবারও জিজ্ঞেস করে,
-কোরবানি নিয়ে কিছু ভাবলে? সাহেদের চুপ থাকা দেখে অনু চেপে বসে।সাহেদের দিকে।হাতটা ধরে আস্তে করে বলে,
-কিছু বলছো না যে? সাহেদ অনুর দিকে তাকায়।শান্ত চোখে।শক্ত করে ধরা হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বলে,
-ভাবছি,দেখি কি করা যায়।
কথাটি বলেই সাহেদ উঠে দাড়ায়।অফিস থেকে এসে এখনও ফ্রেশ হওয়া হয়নি।মুখে কেমন যেন তেল চিটচিটে ভাব দেখা দিয়েছে।বেশি গরমে সাহেদের এমন হয়।সাহেদ আর দাড়ায় না।ওয়াশরুমের দিকে যায়।বেসিনের আয়নায় নিজের চেহারাটা আরও একবার দেখে।আয়নাতে চোখ ভেজা পানি স্পষ্ট দেখা যায়।সাহেদ চোখে মুখে পানি নিয়ে ভাবতে থাকে,অনু ও কি এ জল ভরা চোখ দেখে ফেলেছে।সাহেদ ভাবতে পারে না।ভাবতে চায় না। খাবার টেবিলে বসতে বসতে সাহেদ অনুর দিকে একবার তাকায়।শান্ত গলায় বলে,
-তুমি খেয়েছো? অনুর সরল উত্তর,
-না।
-বসো এখানে।
-তুমি খাও,আমি পরে খাব। অনুর কথায় সাহেদ কিছু বলে না।চেয়ার টেনে অনুকে বসিয়ে দিতে দিতে বলে,
-এতদিনের বন্ধ অফিস চালু হয়েছে।বেতন তো আটকে আছে।যেটা পাবো সেটাতে হয়তো অন্য সবকিছুতে খরচ হয়ে যাবে।মনে হচ্ছে না এবার কোরবানিটা দেওয়া হবে। সাহেদের কথায় অনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।প্লেটে ভাত দিতে দিতে বলে,
-এই কথাটা বলতে এতক্ষন লাগলো?তোমার কি মনে হয় আমি কিছু বুঝিনা।আমার থেকে সবসময় সবকিছু লুকাও কেন?নিজে নিজে চেপে রেখে নিজেই কষ্ট পাও।আমি শুধু তোমার সুখের ভাগ নিতে চাই না,খারাপ লাগা কষ্টে থাকার মূহুর্তগুলাও আমি তোমার বুকে মাথা রেখে থাকতে চাই।শুনতে চাই, না বলা কষ্টগুলার কথা। ভেজা চোখটা সাহেদের আরও ভিজে ওঠে।অনুর হাতটা ধরে বলে,
আর হবে না।এখন থেকে বলবো,সব বলবো।
-হু,আর যদি লুকাও কখনও তাহলে কিন্তু আমি একদম চলে যাব বলে দিলাম।হারিয়ে যাব। অনুর কথায় সাহেদ কিছু বলতে পারে না।ওর গলা ধরে আসে।কাপা গলায় বলে,
-আমার আবার হারানো।সবকিছুই তো হারিয়েছি।এখন তুমিও হারিয়ে যেতে চাচ্ছ অনু।তুমিও।
সাহেদের কথায় অনু আর কিছু বলে না।শক্ত হাতে সাহেদকে জড়িয়ে ধরে।আকড়ে ধরে।যার মানে হচ্ছে,আমি ছাড়ছি না আপনাকে সাহেদ সাহেব,ছাড়ছি না। হাটতে ইচ্ছে হলেও সাহেদ হাটতে পারে না।অফিস ছুটি হয়েছে পাচটায়।এখন পাচটা বেজে পচিশ মিনিট।বাসাটা খুব একটা দূরে নয়।তবে আজ মনে হচ্ছে খুব একটা কাছেও নয়।সাহেদ আর ভাবতে পারে না।পা বাড়ায়। রিক্সার টুং টাং আওয়াজে হাটতে এখন আর খুব একটা খারাপ লাগে না।চারিদিকে মানুষের ব্যাস্ততাও সাহেদের চোখ এড়ায় না।যে যার যার গন্তব্যে পা বাড়ায়।এত কিছুর মাঝেও সাহেদের চোখ আটকে যায়।শপিংমলে ঝুলানো কালো শাড়িটা যেন সাহেদকে এই মাঝ রাস্তায় আটকে ফেলে।শাড়িটা যেন বলতে থাকে, শাহেদ ভাই এই শাড়িটা আপনার জন্যেই।কি ভাবছেন,আপনার জন্যেই।শাড়িটা নিয়ে যান।এ শাড়িটাতে অনুকে বেশ মানাবে।বেশ মানাবে। “ঘড়িতে সময় রাত এগারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট।সাহেদ চায়ের কাপে আরও একবার চুমুক দেয়।আকাশে আজ চাদ দেখা যায় না।মেঘে ঢাকা অন্ধকার।সাহেদ নরম গলায় ডাকে,
-অনু,চা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সাহেদের ডাকে অনু সাহেদের পাশে এসে দাড়ায়।অনুর নিশ্বাসের শব্দ সাহেদ স্পষ্ট শুনতে পারে।চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনু জিজ্ঞেস করে, ঘুমাবে না?
-হু,শাড়িটা পছন্দ হয়েছে?
-হ্যা। কিন্তু আমি তো শড়ি পড়ি না।
-এবার পড়বে।কি পড়বে না?
-হু পড়বো।তোমার জন্যে একটা পাঞ্জাবি এনেছিলাম।চলো দেখাই।
-অনু।
-হু বলো।
-পাঞ্জাবিটা আমি দেখেছি।
-দেখেছো!বলোতো কোথায়?
-ওয়ারড্রবের তিন নাম্বার ড্রয়ারে তোমার দুটো কাপড়ের নিচে সাদা শপিং ব্যাগটায়।
-এত খুটে খুটে দেখেছো?
-সরি।
সাহেদের কথায় অনু আর কিছু বলে না।চুপ করে থাকে।অনুকে জড়িয়ে ধরে সাহেদের বলতে ইচ্ছে করে,অনু আমাদের সকল ইচ্ছে একদিন পূরন হবে।খুব দ্রুতই হবে।শুধু তুমি পাশে থেকো।আমি চাই তোমার নিশ্বাসটা আমার কাধে সবসময় পড়ুক।সবসময়। ইচ্ছে হলেও সাহেদ বলতে পারে না।অনু চায়ের কাপ রেখে সাহেদের দিকে তাকায়।এ তাকানোয় যেন সাহেদের পুরোটা বুঝতে পারে অনু।নরম গলায় বলে,
-ঈদে তোমার কালো পাঞ্জাবির সাথে আমার কালো শাড়ি।সাথে তোমার পছন্দের বিরিয়ানি।চলবে না? অনুর কথায় সাহেদ হাসে।মুচকি হাসে।এ হাসিতে যেন অনু প্রান ফিরে পায়।নতুন করে।নতুনের শুরুটাও হোক নতুন ভাবে।সাহেদ মুচকি হেসে অনুর কপালে চুমু একে দিতে দিতে বলে, চলবে,অবশ্যই চলবে,সমসময় চলবে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত