মেয়েটাকে অনেকদিন থেকেই ফলো করি। ফেসবুকে তার নতুন নতুন ফটো দেখে আমি রোজ তিনবেলা ক্রাশ খাই। আজকে মেয়েটা ঢং করে ছবি আপলোড দিয়েছে। ক্যাপশন দিয়েছে..’বন্ধুরা আজ আমার ভীষণ মন খারাপ। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা, সবাই আমার জন্য দোয়া করুন।’ আমি তৎক্ষনাৎ ললনাকে মেসেজ দিলাম….
-অ্যাই শুনোনা, কি হয়েছে তোমার?
–কিছুনা।
-বলোনা তোমার মন খারাপ কেন? তোমার মন খারাপ হলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।
–আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। কেউ আমায় বোঝেনা।
-আমি অনেক বুঝি৷ বলো কেন মন খারাপ?
–ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি খেতে গিয়ে দাঁতে ব্যাথা পেয়েছি তারপর থেকেই ভালো লাগছেনা।
আমি ললনার কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলাম। এটা কোন মন খারাপের কারণ হলো? জীবনে কত বাল দেখমু আরো৷ আমি আদর করে রিপ্লে দিলাম….
–গরম পানি খাও ঠিক হয়ে যাবে।
-প্লিজ আমায় একটু একা থাকতে দিনতো।
–আমি কি ডিস্টার্ব করলাম?
-ধ্যাত!
বলেই মেয়েটি আমায় মেসেজ ব্লক করে দিলো। এমন ঘটনা আমার জীবনে দেখিনি৷ নিজেকে বাংলা সিনেমার ছোটলোক মনে হচ্ছে। আমি এতটা নিচ? ছিঃ ধিক্কার রুপ্পেল। ক্রাশ ভেবে মনটা খারাপ করলামনা৷ কমেন্ট বক্সে গিয়ে দেখি অনেক ছেলে সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করেছে। কমেন্ট গুলোঃ- ‘থাক সোনা মন খারাপ করোনা, আমি আছি তোমার পাশে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তোমায় আগলে রাখব আমি।’ ‘ইসসসসস কেনগো তোমার আবার কি হলো বলোনা? তোমার জন্য আমি আকাশের চাঁদটাকে এনে দিব, সূর্য উত্তর দিক থেকে উঠাবো তবুও মন খারাপ করোনা।’ ‘খেতে বসে তোমার পোস্ট দেখলাম। এখন আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা। তোমার মন খারাপ থাকলে এই দুনিয়ার সব সুস্বাদু খাবারও আমার কাছে বিষ মনে হয়।’
‘নিজের হাত কেঁটে অঝোর ধারায় রক্ত পরলেও এতটা খারাপ লাগেনা যতটা তোমার মন খারাপ থাকলে লাগে৷ তাই ভাবছি তোমার মন ভালো না হওয়া পর্যন্ত আমি হাত কাঁটব।’ ‘আমি একজন ক্যান্সার রোগি, আজ তোমার মন খারাপ শুনে আমার ক্যান্সারও বেদনায় আক্রান্ত। নিজেকে প্যারালাইজড মনে হচ্ছে প্রিয়তমা।’ সবার এমন সুন্দর সুন্দর মন্তব্য দেখে ভাষা হারিয়ে ফেললাম। শেষে আমিও কমেন্ট করলাম..’নায়েস পিক।’ সেই মেয়েটাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও মন খারাপের পোস্ট করলাম। ক্যাপশন দিলাম..’বন্ধুরা আজ আমার ভীষণ মন খারাপ। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা, সবাই আমার জন্য দোয়া করুন।’ ইনবক্সে ১০ মিনিট যাবত পরে আছি কেউ মেসেজ দিচ্ছেনা। পরে উপায় না পেয়ে এক মেয়েকে ইনবক্সে বললাম….
-সুন্দরী আজ আমার ভীষণ মন খারাপ। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা, তুমি আমার জন্য দোয়া করো কেমন?
–আবাল পাবলিক!
মেয়েটাকে আর কিছু বলার সুযোগ পেলামনা। কালো ঘরে পাঠিয়ে দিলো আমায়। কমেন্ট বক্সে গিয়ে মনটা আরো খারাপ হলো। সবাই কমেন্ট করছে ‘হা হা হা ভাই এইসব ঢং বাদ দেন৷ মাইনষে পাগল কইব।’ ‘কিএক্টাবস্থা আজকাল ছেলেরাও মেয়েদের মতন ঢং করে। বলিকি শাড়ি পরে লাইভে এসে নাচুন অনেক হাত তালি পাবেন।’ ‘ধুর মিয়া ফাউল পোস্ট। এসব চুলের পোস্ট না দিয়ে গাঁজা খান তাও ভালো।’ ‘আজকাল সিমপ্যাথি পাওয়ার জন্য মানুষ কতকি করেরে বাবা। যত্তসব পাগলের কারখানা।’ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পোস্ট ডিলিট করে দিলাম। এর মধ্যে অনেকেই আমায় আনফ্রেন্ড করে দিছে। সেই মেয়েটাও আনফ্রেন্ড করে দিছে। আবার রিকু দিয়ে ঝুলে থাকলাম। কিছুদিন পর মেয়েটা আবার একটা পোস্ট করলো…’প্লিজ কেউ আমার হেল্প করুন। প্লিজ প্লিজ আর্জেন্ট। আমি একটু বাইরে আছি দয়া করে কেউ যদি আমার নাম্বারে রিচার্জ করে দিতেন।’
ভাইরে ভাই পোস্টে কমেন্টের ছড়াছড়ি। সবাই টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। অধিকাংশ ছেলেই বলতেছে ‘তোমার নাম্বারটা দাওতো এখনি কতটাকা লাগবে দেই।’ ‘পাগলি মেয়ে তোমার টাকা লাগবে আমায় ইনবক্স করলেই হতো। আচ্ছা নাম্বার দাও টাকা দিচ্ছি।’ ‘সেকি, এই কি হয়েছে তোমার আবার। কোন বড় ধরনের বিপদ নয়তো? ওয়েট নাম্বার দাও তুমি, যতটাকা লাগবে আমি দিচ্ছি।’ ‘এককাজ করুন, আপনার একাউন্ট নাম্বার টা দিন আমি এক্কেবারে আপনার রিচার্জের টাকা দিচ্ছি। যত ইচ্ছে টাকা তুলবেন।’ যাহ শ্লা জীবনে করলামডা কি। মেয়েদেরকে সবাই কত ভালোবাসে। কত দরদ সবার৷ এদিকে আমারো সত্যিই টাকার দরকার। কয়েকদিন থেকেই পকেট খালি৷ এক ভাইকে নক দিয়ে বললাম….
-ভাই আমার নাম্বারে টাকা দিতে পারবেন? পরে দিয়ে দিব।
ভাই কিছু না বলেই ব্লক করে দিলো। আমি হতাশ হলাম। সবশেষে সেই ক্রাশের মতন পোস্ট করলাম…’প্লিজ কেউ আমার হেল্প করুন। প্লিজ প্লিজ আর্জেন্ট। আমি একটু বাইরে আছি দয়া করে কেউ যদি আমার নাম্বারে রিচার্জ করে দিতেন।’ ইনবক্সে এসে অনেকেই বকা দিলো। অনেক আত্মীয় এসে নির্লজ্জ বলল। আজব পাবলিক আমি তো টাকা পরে দিতাম মেরে তো খেতাম না। কমেন্ট বক্সে গিয়ে বোকা বনে গেলাম। এসব কমেন্ট দেখার আগে অজ্ঞান হলেও ভালো ছিল৷ কমেন্টঃ- ‘কি ভাই এই লাইনে কতদিন? চিটারি বাদ দেন, এভাবে টাকা না চেয়ে টিকটক করে নাচুন, ভালো ইনকাম হবে।’ ‘আজকার ভণ্ডামি দেখি প্রকাশ্যে হচ্ছে। এইসব আসে কোথা থেকে হুট করে টাকা চেয়ে বসে। যত্তসব আকাডা!’ ‘আজ হাফিজুর রহমানের মতন বলতে ইচ্ছে করছে ওরে বাটপার। তা ভাই এ যাবত কত টাকা মারলেন মানুষের? যাইহোক ভণ্ডামি বাদ দিয়ে আলোর পথে আসুন।’ ‘আপনার মতন ছেলেদের কারণে সমগ্র ছেলেদের বদনাম হয়। বাসায় বোধহয় চুরি করতে পারছেন না তাইনা? সেজন্য ফেসবুকে টাকা চাচ্ছেন।’
আজ সেফুদা থাকলে বলতো..এই ছেলেকে কাঁচা কঞ্চি দিয়ে ট্রস ট্রস করে মারব। বেহায়ার দল, উগান্ডা। আর কমেন্ট পড়ার সাহস হলোনা। কেউ যদি একটা ভালো কমেন্ট করতো তবুও নিজেকে স্বান্তনা দিতে পারতাম। মেয়েরা পোস্ট করলেই কত গদগদা কমেন্ট আর আমরা করলেই চিটার বাটপার৷ আজ ছেলে বলে অবহেলিত। আর মেয়েরা সবজায়গায় জয়ী। ধিক্কার এই ফেসবুক সমাজ। সত্যি আমরা এতটা অবহেলিত আজ। ডিজেবল হোক সব আইডি, লকে পড়ুক জুকার।
গল্পের বিষয়:
গল্প