চার দিনের সংসার

চার দিনের সংসার
১২ বছর আগের ঘটনা, বাংলাদেশ ত্যাগ করেছি।। আর ত্যাগের কারন আমি নষ্ট হয়ে যাওয়া।।। সময়টা ছিলো ২০০৬ এর।। তখন আমি ইন্টারে ভর্তি হয়েছি সবে মাত্র। কলেজের প্রথম দিন থেকেই একটা মেয়ে ফলো করতে থাকে, নাম মীম।। দেখতে বেশ সাদা মাটাই ছিলাম, অন্য কারও দৃষ্টি এড়াতে না পারলেও একটা মেয়ের দৃষ্টিতে ছিলাম প্রতিদিন।। বাবা হাজী মানুষ, সমাজে সম্মান আছে আর ২০০৬ এ প্রেম টেম ছিলো কঠিন সাধ্য বৈ নিষিদ্ধ।।
বন্ধুদের সাথে কলেজে গেলেও মীম প্রচুর ফলো করতো, একদিন সরাসরি আর সব বন্ধু থেকে আমাকেই ডাকে।। জীবনের প্রথম কোন মেয়ের হাতে থেকে চিঠি পাওয়াটা যতটা আনন্দের ছিলো ততটাই ছিলো ভয়ের।। তার উপর মেয়ে জাতিটাকে কেন জানি বিশ্বাস করতে পারতাম না, মা বলতো মেয়েরা সব পারে, কিছু না পারলেও নিজে মরে ফাঁসিয়ে দিতে পারবে।।
সেদিনের পর থেকেই কেমন যেন পরিবর্তন আসতে থাকে নিজের ভেতর।। ২য় বার সরাসরি প্রেমের প্রস্তাবই দেয়, প্রায় ৫ মাস পেছনে ঘুড়াতে বেশ খারাপই লাগে।। তাই একসেপ্ট করে নিই।। রিলেশন থাকা কালীন ও বন্ধুদের সাথে মেশাটা মোটেও পছন্দ করতো না, বন্ধু বাদ দিলাম সব।। প্রেমের গভীরতা বাড়তে থাকে প্রচুর।। রাগ অভিমান ভালবাসা সবই ছিলো, দুষ্টোমির ছলেও যখন বলতাম ছেড়ে চলে যাবো তখনও চোখ ভাসিয়ে ফেলতো।। ভালই চলছিলো প্রেম, HSC রেজাল্টের আগেই ওর দাবী ওকে নিয়ে পালাতে হবে।। তাই করলাম, বিয়ে করে সরাসরি বাড়িতে নিয়ে তুল্লাম, বাবা সম্মানের খাতিরে, বা আরও বেশি দূর্নামের ভয়ে মেনে নেয় বিয়েটা।। কিন্তু বাবার ইচ্ছে একমাত্র ছেলের বিয়ে, একটু হলেও অনুষ্ঠান করবে এবং তার আগে একসাথে থাকতে দিবে না।।
মিমের বাবা ইতিমধ্যে থানা পুলিশ করে ফেলেছে, কিন্তু মিম আমার কাছে থাকায় তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি, তাছাড়া যত ক্ষমতাধরই থাকুক উনি ছিলো অন্য থানার।। ৩য় দিনে ওর বাবা আমার সাথে যোগাযোগ করে, আমার বাবার সাথেও কথা বলে।। বলে “যা হওয়ার হইছে, আমারতো মেয়ে, তয় আমি এমনে মাইয়া দিমুনা।। আমি মেয়েরে আমার বাড়ি থেকে তুইলে দিমু বেয়াই সাহেব”। আরও মিষ্টি আর ভাল কথায় বাবাও রাজি হয়, আমিও রাজি হয়ে যাই।। ৫ দিনের মাথায় ওর বাবা এসে ওকে নিয়ে যায়।।। ওকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওর বাবার কথার ধরন পালটাতে থাকে। ফোন দিতেই বলে…
–আমার মেয়ে ওর ভুল বুঝতে পারছে, তয় আমার মেয়ে রে তুমি ১০ দিন ফোন দিতে পারবা না।। দেখি তোমারে মনে রাখে কি না।।। ভালবাসার জোর থেকেই রাজি হয়ে যাই, কারন আমি জানতাম ও কখনোই আমায় ভুলবে না।। তাই বিশ্বাস নিয়েই বল্লাম।।
— ঠিক আছে, ১০ দিন পর আমি আপনার বাড়ির সামনে আসুম, যদি আমার কাছে আসে তবে বাধা দিতে পারবেন না।।
–ঠিক আছে, তোমার বউ যদি তোমার কাছে যাইতে চায় তাইলে আমার কোন বাধা নাই।। কিন্তু যদি যাইতে না চায় তবে আমার মেয়েরে আমি নিয়া যাইতে দিমু না।।
ওনার কথায় রাজি হয়ে যাই।। ১০ টা দিন ১০ বছরের মত গেলেও পার করি।। ১১ তম দিনে আমি আর আমার ৪ বন্ধু মিলে মিমের বাসার সামনে যাই ৩ বাইক নিয়ে, সকাল ১০ টা থেকে অপেক্ষা করতে করতে বেলা ২ টা সময় ২য় তলার বারান্দায় আমাদের দেখে কিছু বলার আগেই আবার ভেতরে চলে যায়।। টানা ৩ ঘন্টা ডাকি, কোন উত্তর আসেনা।। একপর্যায়ে ওর বাবা এসে চলে যেতে বলে। বলে ও নাকি যাবে না।। আমি বেশ জোরাজুরি করি মিমের মুখে শুনতে চাই বলে দেই।। সন্ধার একটু আগে এসে মিম বলে দেয়, “জীবনে ভুল করেছি, কিন্তু তার মাশুল সারা জীবন দিতে পারবো না” জাস্ট এতটুকু কথা বলেই চলে যায়, কথাটা শুনে আর দেরী করিনি, কিন্তু বন্ধুরা বলে আর একটু দেখি,, সারাদিন না খেয়ে দাড়িয়ে থাকার পরও বন্ধুরা রাত ৮ পর্যন্ত অপেক্ষা করে।। পরে আর কেও কোন কথা না বলেই চলে আসি।।
যে ছেলেটা সিগারেটের ধোয়া সইতে পারতো না সে ছেলেটার গাজা না হলে রাত পার হয় না।। মাস চারেক এভাবেই চলতে থাকে, একদিন ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেয় কাওকে দিয়ে।। লজ্জার হলেও সত্য বাবা ডিভোর্স পেপার আর এক বোতল মদ দিয়ে যায়।।। কেননা নেশা -টেশা করে রাস্তায় পড়ে থাকার চেয়ে ঘরে বসে পঁচা ভাল।। মা খালি ধরে কাঁদতো, কিন্তু তখন তেমনটা বুঝতাম না।।।
এখন সৌদিতে আছি ৯ বছর, ওমরা সহ বড় হজ্জ করেছি।।। সব পাপ কাজ থেকে বেরিয়ে এসেছি, আল্লাহ বের করে এনেছে কিন্তু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করেনা।। লজ্জায় আর ভাল লাগেনা, কোন মুখ নিয়ে বাড়ি ফিরবো, কিভাবে বাবার সামনে দাঁড়াবো যে বাবা রাস্তায় পড়ে থাকার ভয়ে সন্তানকে নিজে মদ কিনে দিতো প্রতিদিন।।
বাবার সামনে দাড়ানোর সাহস নেই বলেই আর বাড়ি যাই না।। শুনেছি পাশানিটার বিয়ে হয়ে গেছে, ৬ বছরের এক মেয়েও আছে।। বাড়ি না ফেরার আর একটা প্রধান কারন, বাড়ি গেলেই বিয়ের জন্য চাপ দিবে, আর বিয়ে আমি করে ফেলেছি, মানুষ জীবনে বিয়ে একবারই করে, আমি করে ফেলেছি।। সংসারও করেছি ৪ দিন।। ইদানিং বাবার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না বয়স হয়েছে বলে।। বাড়ি ফিরতে বলে কিন্তু কি করবো জানিনা।।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত