তার লম্বা চুল

তার লম্বা চুল
পাত্রী দেখতে আসলাম , আমার ছোট বোনের বান্ধবী , তার সাথে নাকি হাই স্কুলে পড়াশুনা করছিলো , পাত্রীর নাম নিশি , সবাই তাকে নিশু বলে ডাকে । আমার পরিবারের সবার পছন্দ হয়েছে । এখন আমার পছন্দ হলেই বিয়ের কথা ফাইনাল হবে । আমার বাবা-মা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন । আমার পছন্দ হলেই আজ নিশু কে আংটি পরিয়ে দেবে । দশ মিনিট ধরে বসে আছি কিন্তু তার আসার খবর নাই । বাবা-মা নিশুর বাবা মায়ের সাথে কথা বলছে । ছোট বোন নিশুর কাছে গেছে, আমি একা সোফায় বসে আছি । আর অপেক্ষা করেছি কখন নিশু আসবে ।আমি তার দেখা পাবো , তাকে দেখার জন্য মন উতাল পাতাল হয়ে আছে ।
কিছুক্ষণ পরে নিশু আসলো , পরনে সালোয়ার কামিজ মাথায় ওড়না । হালকা সাজগোজ আর চুলে খোঁপা করে এসেছে । এসে আমার সামনেই বসে , আমি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকি । মনে মনে ভাবতে থাকি একটা মেয়ের চেহারায় এত মায়া থাকে কী করে । মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সব মায়া তার চেহারায় দিয়েছেন ।
সে দেখতে কোনো অপ্সরীর মত সুন্দর ছিল না , সে শ্যামলা বর্ণের ছিলো । তবে তার চেহারায় যে মায়া ভাবটা আছে সেটা আমাকে আকর্ষন করে আমাকে মুগ্ধ করে । নিশু কে দেখেই আমার খুব ভাল লাগে , আমি যেমনটা আশা করছিলাম , তার সব গুণ আমি নিশুর মাঝে খুঁজে পেয়েছিলাম । আমি মা কে ইশারা দিয়ে বললাম , নিশু কে আমার পছন্দ হয়েছে । এর পরেই মা নিশুকে আংটি পরিয়ে দেয় । তার বাবা-মায়ের সাথে কথাবার্তা বলে বিয়ের দিন তারিখ ফাইনাল করে ফেলে ।
আংটি পরানের কিছু সময় পর নিশি উঠে রুমে চলে যায় । এদিকে আমি মনে মনে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান ভাবতে লাগলাম । আমি যেমনটা আমার জীবন সঙ্গিনী আশা করেছিলাম । নিশু মোটেও তার ব্যতিক্রম না । আমি আমার মনের মতো জীবন সঙ্গিনী পেলাম । কথাবার্তা শেষ করে বিদায়ের সময় হয় ,আমরা চলে আসার জন্য উঠে দাড়ালাম । নিশুর মা , নিশু কে ডাকলেন । আমরা চলে যাব তাই বিদায় জানানোর জন্য । একটু পরে রুম থেকে বের হয়ে নিশু আসলো , আমি তার দিকে লক্ষ্য করলাম , দেখি তার চুলে খোঁপা নেই , চুলগুলো খোলা , তার এতো লম্বা চুল কোমর পর্যন্ত পৌঁছেছে । তা দেখে এক মুহূর্তে আমার মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ।
লম্বা চুলওয়ালা মেয়ে গুলোকে আমি একদম পছন্দ করি না । এদের লম্বা চুল দেখলেই কেমন যেন তাদের অসহ্য লাগে , অনেক রাগ হয় ‌। ইচ্ছে করে তাদেরকে বলতে চোখের সামনে থেকে দূর হতে । আমি সব মেয়েদের পছন্দ করলেও , লম্বা চুল ওয়ালা মেয়েদের একদম পছন্দ করি না । তাদের লম্বা চুল দেখলেই তাদের মাঝে বাকি গুণ গুলো আমার চোখে পড়ে না । । নিশুর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হল না , তার যে গুণগুলো আমার চোখে পড়ছিল । সেগুলো আমার এখন চোখে পড়ে না । তাকে এখন আমার পছন্দ হচ্ছে না । তাকে আমার অসহ্য লাগছে । তার চুলের কারণে তাকে বলতে ইচ্ছে করছে চোখের সামনে থেকে দূর হতে ।
এরপর বিদায় জানিয়ে আমরা চলে এলাম , পুরো রাস্তা বসে বসে ভাবতে লাগলাম । যে করে হোক এই বিয়েটা হতে দেওয়া যাবে না । আমাকে বিয়েটা ভাঙতে হবে । তাকে আমি কখনো বিয়ে করবো না । বাসায় এসে বাবা মাকে বললাম , আমি এই বিয়ে করব না । আমার কথা শুনে বাবা মা রেগে আগুন । উনারা বললেন , তোর সাথে আমরা কোন জবরদস্তি করি নাই ।আমাদের পছন্দ মত তোকে বিয়ে করতেই হবে তাও বলি নাই । তোকে সাথে নিয়ে গেলাম তুই দেখলি , দেখে শুনে বললি তোর মেয়ে পছন্দ হয়েছে । তুই এই বিয়েতে রাজি । তারপর আমরা বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল করেছি । সবকিছু ঠিকঠাক হবার পর এখন বলছিস এই বিয়ে করবি না । এক মুহূর্তে কি এমন হয়ে গেছে , তোর মত পাল্টে গেল । তুই এখন বিয়ে করতে রাজি না ।
আমি তখন বললাম , আমি এত কথা শুনতে চাই না , আমি এই বিয়ে করব না এটাই আমার শেষ কথা । আপনারা তাদের সাথে কথা বলে বিয়েটা যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করেন । এরপর বাবা-মায়ের সাথে অনেক তর্ক-বিতর্ক করলাম । বাবা মা কোনরকমে বিয়ে ভাঙতে রাজি হলো না । উনাদের একই কথা , নিশুকে আংটি পরিয়ে , তার বাবা-মাকে কথা দিয়েছেন । বিয়ের দিন তারিখ ফাইনাল করেছেন । এখন যত কিছু হোক না কেন , উনারা তাদের কথা বদলাবে না । বিয়ে নিয়ে ঘরে সবসময় সবার সাথে তর্ক বিতর্ক চলতে থাকে আমার । তাই একদিন পরিবারের সবাই একসাথে হয়ে আমাকে বললেন- আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম নিশুকে বিয়ে করবি না । কিন্তু তাকে কেন বিয়ে করবিনা তার কারণ কি ? এমন কোন কারন বল যাতে বিয়েটা ভাঙার প্রয়োজনবোধে মনে করবো । আর যদি কোনো কারণ না দেখি , তাহলে নিশুকে বিয়ে করতেই হবে তোকে । আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললাম, আপনারা কি সবাই চোখে কম দেখেন ।
আপনার তার চুল গুলো দেখছেন । কত লম্বা চুল , তার কোমড় পর্যন্ত পৌঁছেছে । মেয়েদের সাধারনত তাদের সাত আট ইঞ্চি লম্বা চুলে বেণী করতে, খোঁপা করতে, চুল ঠিক করতে এক-দেড় ঘণ্টা সময় নেয় । আর এই মেয়ের চুল তার কোমড় পর্যন্ত পৌঁছে । তার না জানি কত সময় লাগবে ,একটু ভেবে দেখছেন । তার সারাদিন মনে হয় চুলের পিছনে পড়ে থাকতে হবে । তাহলে ঘর-সংসারের কাজ করবে কখন । ঘর-সংসার সামলাবে কখন । আর তাকে নিয়ে কোথাও একটু ঘুরতে যাওয়া যাবে না । যদি বলি তিনটা বাজে ঘুরতে যাব । তার রেডি হতে তার চুল ঠিক করতে করতে সারাটা বিকেল পার করবে । একটানা কথাগুলো বলে থামলাম ।
আমার কথা শুনে মা-বাবা ভাই-বোন সবাই একসাথে হেসে উঠলো । এমনভাবে রিএক্ট করলো আমি মনে হয় কোন জোক বললাম। এরপর বাবা মা বলে – এটা কোন কারন হতে পারে না , তোর কাছে অন্য কারণ থাকলে বল । এদিকে আমি আর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না । ভাবছিলাম বলবো অনেক ছেলের সাথে তার সম্পর্ক আছে আমি শুনছিলাম । কিন্তু সেটাও পারলাম না , কারণ ছোট বোনের বান্ধবী । তার সম্পর্কে সব কিছু জানে ছোটবোন । আমি আর কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না , অবশেষে বাবা মা বললো – যখন তোর কাছে কোন কারণ জানা নেই , তাহলে তোকে এই বিয়ে করতেই হবে । এটাই হলো আমাদের শেষ কথা । আমি চুপচাপ বসে আছি , কি করব ভেবে পাচ্ছি না । ছোট বোন বলে- ভাইয়া আমি জানি ছেলেরা লম্বা চুল ওয়ালা মেয়েদের কে বেশি পছন্দ করে । তাদের চুলের প্রেমে পড়ে ।
আপনি জানেন কি নিশুর এই সুন্দর লম্বা চুল গুলো দেখে তাকে কত ছেলে প্রপোজ করছিলো । তার সাথে প্রেম করতে চাইছিলো । কিন্তু নিশু কখনো এসব প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে জড়াইনি । সে ইচ্ছে করলে আপনার চেয়ে হাজার গুন ভালো ছেলের সাথে প্রেম করতে পারে বিয়ে করতে পারে । আর আপনি দেখছি তার উল্টোটা , তার চুল বেশী লম্বা দেখে আপনি তাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেন না । তাকে পছন্দ করছেন না । দেখেন ভাইয়া এই ঘরে আমার ভাবী হয়ে শুধু নিশু আসবে । অন্য কোন মেয়েকে আমি ভাবি হিসেবে মেনে নিতে পারবো না । এই বলে সবাই সেখান থেকে উঠে চলে যায় ।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে, দুইদিন পর বিয়ে আমার । আমি কোনভাবেই বিয়েটা ভাঙতে পারলাম না ‌। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । তখন আমি আমার এক বন্ধুর কাছে গেলাম । সবকিছু তাকে খুলে বললাম । সে তখন অনেক ভেবেচিন্তে আমাকে একটা বুদ্ধি দিলো । সে আমাকে বললো , নিশুকে তোর পরিবারের সবার পছন্দ । তোর নিজেরও পছন্দ ছিলো । তুই যেমনটা আশা করলি , তার সব গুণ তার মাঝে খুজে পেয়েছিলি । সমস্যা শুধু একটাই তার চুল । তার চুলগুলো অতিরিক্ত লম্বা এটাই তো সমস্যা । তাহলে তার চুল গুলো কেটে ছোট করে দিলেই হয় । তোর যেমনটা পছন্দ ঠিক তেমন করে তার চুল কেটে দিবি । তাহলে সমস্যা সমাধান হয়ে যায় । আমি জিজ্ঞেস করলাম , তা কী করে সম্ভব ? সে তখন বললো , তাহলে শোন আমার কথা । তুই খুশি খুশি বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা ।
তারপর বিয়ের দুই-তিনদিন তাকে সহ্য করে থাক । এরপর যখন সব মেহমান আত্মীয়-স্বজন সবাই চলে যাবে । বাসা একদম ফাঁকা হবে । তখন একদিন চুরি করে তার চুল গুলো কেটে ছোট করে দিবি । সে তখন তোর স্ত্রী । তোর যেমন খুশি তেমন করতে পারবি । কেউ বাধা দেওয়ার থাকবেনা । আমি অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম , আসলে বুদ্ধিটা খারাপ না , বিয়ে হওয়ার পর নিজের বউয়ের চুল আমি কেটে দিতে পারি । আমাকে বাধা দেওয়ার কেউ থাকবেনা । তাই আমি অবশেষে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাই। এর দুইদিন পরে আমাদের বিয়ে হয়ে যায় । আমি একদম হাসি খুশি থেকে বিয়েটা করি । আমার বাবা-মাও খুব অবাক ছিলেন । যে আমি বিয়ে ভাঙতে কত কিছু করছিলাম , সেই আমি কিনা হাসিমুখে বিয়েটা করতে রাজি হয়ে গেছি । কিন্তু আমার মনে ছিল অন্য প্লান সেটাতো উনারা জানতো না।
তিনবার কবুল বলার পর থেকেই ভাবতে লাগলাম । কিভাবে নিশুর চুল গুলো কেটে ছোট করা যায় । আর অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই সুযোগের সেই সময়ের । বিয়ের পর থেকে আমি নিশুর সাথে তেমন কথাবার্তা বলতাম না, তার সামনে তেমন আসা-যাওয়া করতাম না । সব সময় তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম । কারণ তার লম্বা চুল । বিয়ের দুইদিন পর সকল মেহমান আত্মীয় স্বজন , এক এক করে সবাই বিদায় নেয় । সবাই যাওয়ার পর ,বাসা একদম ফাঁকা হয় । আর আমি রাতে জেগে জেগে ভাবতে লাগলাম , সব মেহমান আত্মীয়-স্বজন চলে গেছে । এখন প্ল্যান মোতাবেক যে করে হোক কাল আমাকে তার চুল কেটে ছোট করে দিতে হবে । এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
সকালে ভোরে যখন ঘুম ভাঙলো , চোখ খুলে দেখি নিশুর চুল গুলো আমার মুখের ওপরে এসে পড়েছে । আমি কিনা তার চুলগুলো না সরিয়ে , তার চুলের সুগন্ধ নিতে লাগলাম । তার চুলের সুগন্ধটা নিতে খুব ভালো লাগছিল । মাতাল করা সুগন্ধ । সকাল ভোরে আমার ঘুম ভেঙে যায় , কিন্তু আমি বিছানা থেকে না উঠে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকি । আর তার চুলের সুগন্ধ নিতে থাকি । আঙ্গুল দিয়ে তার চুল নিয়ে খেলা করতে থাকি । আমার ঘুম ভাঙ্গার বিশ মিনিট পর তার ঘুম ভাঙলো । যখন দেখলো আমার মুখের উপর তার চুল গুলো , তখন সে চুল গুলো আস্তে করে সরিয়ে নিলো। তারপর আমার কপালে একটা মিষ্টি চুমু একে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে চলে গেলো ।, আমি ঘুমের ভান করেই ছিলাম । সে ভাবছিলো আমি এখনো ঘুমিয়ে আছি।
সে রুম থেকে বের হলে আমি উঠে বসে মোবাইল হাতে নিলাম । তারপর ফেসবুকে লগইন করে নিউজফিড দেখতে লাগলাম । কিছুক্ষণ পর নিশু রুমে ঢুকে চুল মুছতে মুছতে । বুঝতে পারলাম গোসল করে এসেছে । আজ সে হলুদ শাড়ি পড়েছে ।আধো ভেজা চুল , এখনও একটু একটু পানি পড়ছে চুল থেকে। কি সুন্দর লাগছে নিশু কে । এ রূপের বর্ননা করা সম্ভব না।প্রকৃতি যেন তার অপার সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে তাকে । ভেঁজা চুলে নিশু কে যে ছেলে দেখবে সেই প্রেমে পড়বে।প্রেমে পড়তে বাধ্য সে ! আমি অনেক শুনছিলাম , অনেক গল্পে পড়ছিলাম , মেয়েদেরকে নাকি ভেজা চুলে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে । আজকে তার প্রমাণ পেলাম , আসলেই সত্যি ভেজা চুলে মেয়েদের কে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে । আমি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।
সে আমার কাছে এসেই চুলের পানি ঝাড়তে লাগলো।রুমে এত জায়গা থাকতে বিছানার কাছে এসেই সে চুল ঝাড়তে লাগল । চুলের ছোট পানির ফোঁটাগুলো আমার মুখে এসে পড়ছে । আমার রাগ করার কথা , তাকে বারণ করার কথা। কিন্তু আমি রাগ করলাম না , তাকে বারণ করলাম না , তাকে সরে যেতে বললাম না । বরং অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছিলো । প্রতি টা পানির ফোঁটা আমাকে মুগ্ধ করছিলো । হঠাৎ সে লক্ষ্য করল আমাকে , অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি । সে বলে – এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন ? আমার মুখ দিয়ে তখন তার চুলের প্রশংসা বের হয় ।
আমি বললাম – ভেজা চুলে তোমাকে অপূর্ব সুন্দর লাগছে । কথা শুনে সে লজ্জা পেয়ে যায় । লজ্জা পেয়ে হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে যায় । আমার যে কি হলো । কিছুই বুঝতে পারলাম না । যার চুল দেখলে আমার অসহ্য লাগতো । যার চুল আমি দেখতে চাইতাম না । আর সেই আমি কিনা তার চুলের সুগন্ধ নিলাম , তাঁর চুল নিয়ে খেলা করলাম । তার চুলের সৌন্দর্যের তারিফ করলাম । আমার সাথে কি হচ্ছে এসব , আমি পাল্টে যেতে লাগলাম কেন । না না আমাকে দুর্বল হলে চলবে না , এসব নিয়ে আমাকে ভাবতে হবেনা । আমার ভাবতে হবে তার চুল কিভাবে কেটে ছোট করা যায় । এরপর আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম । দুপুরে বাসায় ফিরতে ফিরতে তিনটা বাজে । আমি এসে রুমে ঢুকলাম । রুমে ঢুকে দেখি নিশু ঘুমিয়ে আছে ।
আমি তাকে দেখে ভাবলাম , এই সুযোগ তার চুল গুলো কেটে ছোট করার । আমি তাড়াতাড়ি করে ড্রয়ার থেকে একটা কাঁচি বের করলাম । তারপর ধীরে ধীরে বিছানায় উঠে বসলাম । নিশু এখনো ঘুমিয়ে আছে । আমি খুব আস্তে আস্তে তার চুল হাতের মুঠোয় নিলাম । একহাতের মুঠোয় তার চুল , অন্য হাতে আমার কাঁচি । একহাতে কেচি আমার অন্য হাতে চুল , কেটে দিবো কি না তার পাইনা কোনো কূল । তার চুলগুলো হাতে নিয়ে বসে আছি । কিন্তু কাটতে পারছিনা । যখনই কাটতে চাই , বারবার সকালে দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে । আমার মুখের উপর তার চুল উপরে পড়ার দৃশ্য , ভেজা চুলে তাকে দেখার দৃশ্য , চুল থেকে পানির ফোটা পরার দৃশ্য । তার চুলের পানি ঝরার দৃশ্য । আমি কোনোভাবেই তার চুল কাটতে পারেনি ।
আমি মুহূর্তেই বুঝে গেলাম , যে চুল দেখলে আমার অসহ্য লাগতো , একটা বিরক্ত বোধ করতাম । এখন সেই চুল গুলো দেখতে আমার ভালো লাগে । চুল গুলো নিয়ে খেলা করতে ভালো লাগে , চুলের সুগন্ধটা নিতে ভালো লাগে ।
আমি প্রেমে পড়েছি , তার লম্বা চুলের প্রেমে পড়েছি । আমি এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারিনা । আমি তার সৌন্দর্যের প্রতীক টা কে কেটে ফেলতে পারিনা কক্ষনো না । হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেল । আমার এক হাতের মুঠোয় তার চুল অন্য হাতে কাঁচি দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসলো । আমার হাত থেকে তার চুল গুলো সরিয়ে নিলো । সে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে । আপনার হাতে কাঁচি কেন , আপনি কি আমার চুলগুলো কাটতে চেয়েছিলেন । আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম – ইয়ে মানে আসলে হয়েছে কি !
আমার কথা ধারণ দেখে , সে বুঝতে পারল তার ধারণা ঠিক , আমি তার চুল কাটতে চেয়েছিলাম । তার কাঁদো-কাঁদো অবস্থা । তার চোখে জল টলমল করছে । নিশু বলে – জানেন আমি যখন ছোট ছিলাম , তখন থেকে সবাই আমার চুল দেখে আমার চুলের অনেক প্রশংসা করত । সবাই বলত আমার চুল নাকি অনেক সুন্দর । তাই ছোটকাল থেকেই আমি আমার চুলগুলোকে অনেক যত্ন নেয়া শুরু করি । যতটা না নিজের শরীরের যত্ন নিতাম , তার চেয়ে বেশি আমি আমার চুলের যত্ন নিতাম । আমার এই চুলের সাথে মিশে আছে আমার অনেক স্বপ্ন । আমি ভাবছিলাম যে আমার জীবন সঙ্গী হবে । সেও ঠিক আমার মতো আমার চুল কে ভালবাসবে । আমার চুলের যত্ন নেবে । কিন্তু আপনার কাছে আমার লম্বা চুল গুলো ভালো লাগেনা । আমার চুল আপনার সহ্য হয়না , আমার লম্বা চুল আপনি দেখতে চান না ।
আমার চুল গুলো আপনার খুবই অপছন্দ । ঠিক আছে আপনি যদি চান তাহলে কেটে ফেলতে পারেন । আমি কোনো বাধা দেব না । এই বলে সে তার চুলগুলো আমার হাতের মুঠোয় ধরিয়ে দিলো । তারপর কাঁন্না করতে লাগলো , তার দু চোখ দিয়ে টপটপ করে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে । আমি তখন আমার হাত থেকে কাঁচি টা নিচে ফেলে দিয়ে দুই হাতে তার চোখের জল মুছে দিলাম । তারপর আমি বললাম , দেখো এটা সত্যি যে লম্বা চুলওয়ালা মেয়েদেরকে কেন যেন আমার পছন্দ হতো না । তাদের দেখলেই বিরক্ত বোধ করতাম ।এমন কেন ছিলাম আমি জানিনা । তোমার চুলগুলো যখন দেখছিলাম তখনো তার ব্যতিক্রম হয়নি । তোমাকে আমার অসহ্য লাগতো । তুমি চোখের সামনে আসলেই বিরক্ত বোধ করতাম । আর আজকে আমি তোমার চুল কেটে ছোট করে দিতে চাইছিলাম , এসব কিছু সত্য ।
কিন্তু তুমি আরেকটা সত্য জাননা – আমি তোমার চুল কাটতে চেয়েছিলাম ঠিকই , কিন্তু আমি পারিনি কাটতে । কারন কি জানো , তোমার এই লম্বা চুলের প্রেমে পড়েছি আমি । হ্যাঁ একদম সত্য ,আজ সকালেই আমি তোমার চুলের প্রেমে পড়েছি । ভালোবাসি তোমায় , ভালোবাসি তোমার চুল, ভালোবেসে এঁকে দিব কপালে মিষ্টি চুম । এই বলে তার কপালে একটা মিষ্টি চুমু এঁকে দিলাম । । এরপর থেকেই তার চুলকে আমি অনেক ভালবেসে ফেলি । এখনতো আমি মাঝে মাঝে তার চুলে তৈল লাগিয়ে দিই । তার চুলে খোঁপা করে দিই , তার চুলে বেণী করে দেই । আর কখনো যদি দেখি সে চুলের অযত্ন নিতে তাহলে ইচ্ছে মত বকা শুনিয়ে দেই ।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত