ছেলে যখন গাঁয়ে পৌঁছায়, তখন বৈকালিক ভ্রমণের সময় একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। সবে পশ্চিমাকাশে থোক থোক লালিমা লেগেছে, গরু, বকরি রওনা দিয়েছে যার যার গোয়ালের উদ্দেশে।
ছেলের মরহুম বাবা বৈকালিক ভ্রমণে বেরোতেন বাদ আসর। গোল টুপি ফুঁ দিয়ে বলের মতো ফুলিয়ে মাথায় চেপে চেপে বসাতেন। তারপর দরজার পাল্লা থেকে টেনে নিতেন বেতের হাতছড়ি।
ব্যাগ হাতে ঘরে ঢুকতে পেতলের খুরাঅলা ডোরাকাটা ছড়িটা ছেলের নজরে পড়ে। এখনো বাবার রুমের দরজায় লটকানো রয়েছে। সাদা গোল টুপিটা তাঁর খাটের বাজুতে। বাড়ির কাজের মহিলা জানালার পর্দা সরিয়ে দিলে ওর চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে – দেয়ালের পেরেকে ঝোলা বাবার নকল পাথরের তসবিহ, কাবা শরিফের ছবিঅলা ক্যালেন্ডার, কাঠের আলনায় টাঙানো ধবধবা পাঞ্জাবি। জানালার মুখোমুখি টেবিলে রেহেলের ওপর কোরান শরিফটাও সেই একইভাবে রাখা আছে। ও হাত থেকে ব্যাগ নামিয়ে টেবিলের পাশে দাঁড়ায়। বুকে হাত ঠেকিয়ে ময়ূরের পালকগোঁজা পাতাটা খোলে। সুরা আস-সাফফাত। তাতে বলা আছে – যখন সে (ইসমাইল) তাঁর পিতার সঙ্গে চলাফেরার মতো বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম (আ.) বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি তোমাকে জবাই করছি। এখন তুমি ভেবে বলো, এ-ব্যাপারে তোমার মতামত কী।
কাজের মহিলা চায়ের কাপ হাতে এ-ঘরে আসছিল। দরজায় দাঁড়াতে তার শরীরটা ভূকম্পনের মতো থরথর করে কেঁপে ওঠে। কাপের চা খানিকটা ছলকে পড়ে পিরিচে। চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টি। ছেলে অজুহীন, নাঙা মাথায় পবিত্র কালাম ছুঁয়েছে বলে হয়তো। ছেলেটা ময়ূরের বর্ণিল পালক জায়গামতো গুঁজে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নেয়। মহিলাকে চা-উপচানো পিরিচটা ফেরত দিয়ে কাপ হাতে চেয়ার টেনে জানালার মুখোমুখি বসে। এখানে বসেই ওর বাবা ভোরের নরম আলোয় রোজ কোরান তেলাওয়াত করতেন। বৈকালিক ভ্রমণের তাড়া থাকায় এক বেলাতেই সারতেন তাঁর পবিত্র কালাম পাঠ।
ছেলে চকিতে ঘড়ি দেখে উঠে দাঁড়ায়। এখন কটায় আসর? জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মনে হয়, উঠানে যেমন গুটিগুটি অন্ধকার নামছে, মাগরিব আসন্ন। সে সুড়ুত সুড়ুত শব্দে তুরস্ত চায়ের কাপ খালি করে। বাড়ির বাইরে এসে সদরের দিকে চলে যাওয়া পাকা রাস্তাটার দিকে তাকায়। এ-পথেই ওর বোনের সবুজ সিএনজি-চালিত অটোরিকশা চড়ে বাড়ি ফেরার কথা। তবে ফোনেই বোন জানিয়েছে কলেজের কী অনুষ্ঠান, বাড়ি ফিরতে তাই দেরি হবে। কলেজের প্রিন্সিপাল তো, দায়িত্ব অনেক। তাঁর ছুটি মেলে সবার শেষে।
পাকা সড়কের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা একটুখানি ভাবে – বাবার বৈকালিক ভ্রমণ এ-রাস্তা ধরে কখনো হতো না। ব্যস্ত হাইওয়ে। কখন পেছন থেকে বাস বা ট্রাক চাপা দিয়ে যায়! তাই গাঁয়ের ভেতরের মাটির কাঁচা পথেই তিনি লাঠি ঠুকঠুকিয়ে হাঁটতেন। ক্ষেতের আইল, প্রতিবেশীর ফলের বাগান, বাড়ির পেছন, অন্দরের উঠান, পুকুরপাড় – সবখানেই ছিল তাঁর গতায়াত। লোকে চেয়ার বা মোড়া পেতে দিলেও কোথাও এক দণ্ড জিরোতেন না। লাঠিতে ভর দিয়ে সামান্য দাঁড়াতেন তাদের কুশল জানার জন্য।
ছেলেটা গাঁয়ের দিকের মেঠোপথ ধরতেই কাজের মহিলা ছুটে আসে। তার কপালটা কে যেন খামচে ধরেছে। চোখে ঢেলে দিয়েছে এক রাজ্যের বিভীষিকা। কাঁপা কাঁপা গলায় সে আরজ করে – ছেলে হাঁটতে চাইলে যেন পাকা সড়ক দিয়ে সদরের দিকে যায়। সন্ধ্যার পর গাঁয়ের ভেতরটা নিরাপদ নয়। খুন-ডাকাতি লেগেই আছে।
খুন শব্দটা শুনে ছেলেটা মুখ টিপে হাসে। চুরি-ডাকাতির স্থলে খুন-ডাকাতি শব্দবন্ধটি মনে হয় আজকাল সর্বত্র চালু হয়ে গেছে। ভূরি ভূরি অপরাধের সঙ্গে হালে যুক্ত হয়েছে ড্রাগের ব্যবসা। মহিলা ‘বাবা’ বলে এক প্রকার ড্রাগের উল্লেখ করলে সে আর কথা বাড়াতে চায় না। কদিন আগেও ছেলেটা ছিল সেই পথের রাহী। বাবার জানাজায় শরিক হতে পারে নাই মাদক সংশোধন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিল বলে।
ছেলের খেয়ালিপনায় বা মুখে-টেপা হাসিতে মহিলা গা করে না। নাছোড়বান্দার মতো বারবার একই কথা বলতে থাকে। তুমি যদি ছেলের মায়ের আমলের কাজের মহিলা হও, পুত্রসম আদরে তাকে লালনপালন করো, সেই ছেলেকে হুঁশিয়ার করা ছাড়া আর কী-ই বা তোমার করার আছে!
সবে তো কলির সন্ধ্যা, ছেলেটা মহিলার উৎকণ্ঠিত চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবে। না দিন না রাত। অদ্ভুত এক নীলাভ দ্যুতি যেন সরলরেখার মতো লম্বা হয়ে নেমে এসেছে আসমান থেকে। ছেলেটার মনে হয়, আলস্নাহর পয়গম্বরদের কাছে ওহি নাজেলের সময়, ধরিত্রী বুঝি দূর অতীতে এমনই থমথমে রং ধারণ করত! সে মোবাইল ফোনটা মহিলার হাতে দিয়ে প্যান্টের হিপ পকেটে মানিব্যাগটা রাখে। তারপর মেঠোপথ দিয়ে হাঁটতে শুরু করে।
বাড়ির পেছনের পুকুরপাড়ে পারিবারিক কবরস্থান। এ-সময় ছেলেটির বাবা বৈকালিক ভ্রমণশেষে কবর জিয়ারত করতেন। তাঁর পেছনে পিলপিলিয়ে হাজির হতো আশপাশের কিছু মৃত্যুভীত মানুষ। ওরা কাঁদত বিনবিনিয়ে, যখন ওর বাবা হাত তুলে মোনাজাত ধরতেন।
ছেলেটি কবরস্থানের কাছাকাছি যখন পৌঁছায়, তখনো নীলাভ দ্যুতি আসমান থেকে ঝুলে আছে। সেই আলোতে এক জোড়া চোখের মণি আচমকা জ্বলে ওঠে, ঠিক যেখানে বাউন্ডারি ওয়ালের ধারে ওর বাবার বাঁশের বেড়া দেওয়া নয়া কবরটা রয়েছে। ও এগিয়ে যেতে ছায়াটা দুলে ওঠে। ‘অহ্ বাবা’! বলে ডেকে ওঠে একমাথা আউলা চুলের এক বুড়ি। ‘অহ্ বাবা, তোমার আববায় আমারে দেখলে জিগাইত – ভাত খাইছ নি গো জান্নাতের মা? আইজ চল্লিশ দিন, এ-কতা আমারে কেউ জিগায় না’! বুড়ি হু-হু করে কেঁদে উঠলে ছেলেটি তড়িঘড়ি পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে। খানিকটা এগিয়ে পেছন ফিরে তাকায়। হাতে টাকা পেয়েও বুড়ি অতন্দ্র প্রহরীর মতো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটিও আগের মতো জ্বলছে ধকধক করে।
ছেলে হাঁটতে হাঁটতে ফসলের মাঠে পৌঁছালে নীল আলোটা সরে যায়। পাকা ধানের সোনালি আভায় ভরে ওঠে চারপাশ। তা ঝকঝকে নয়, চাপা উজ্জ্বল আলো। মাঠের বুকে পাখির নাচানাচি, মৌমাছির গুঞ্জন। সবারই তো এ-সময় যার যার আস্তানায় ফেরার কথা! হু, কথাটা সত্য বটে। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় কি ঘটে না? ছেলেটার তখন ছোটবেলায় পাশের গাঁয়ে ফুটবল ম্যাচ খেলতে যাওয়ার কথা মনে পড়ে। ওদের দল জিতেও ছিল। কিন্তু বল, পরনের জার্সি খুলে রেখে দেয় হেরে যাওয়া পার্টি। ভালো খেলতে না পারলে কি, মাঠটা ছিল তাদের গাঁয়ের সীমানায়। সেদিনই সে বুঝেছিল – মুল্লুক যার জোর তার। ছেলেটার শীতের রাতের অর্ধেকটা কাটে উঠানের কোণে বগলে হাত ঢুকিয়ে নাঙা শরীরে কাঁপতে কাঁপতে। বাবা বারান্দায় পায়চারি করছেন, ঘড়ি দেখছেন। ও উঠানের ঝোপের পাশ থেকে ঘরে ঢোকার ফন্দি আঁটছে। এর মওকা মেলে বাবা যখন কেবলামুখী হয়ে তাহাজ্জুতের নামাজে দাঁড়ান, তখন।
ছেলেটা হয়তো রাতনামা তক ফসলের মাঠেই ঘুরপাক খেত, কীভাবে যেন তার পেছনে জনাকতক লোক জুটে যায়। ধীরে ধীরে মিছিলটা লম্বা হয়। জমি বর্গাচাষ করতে চায় কেউ। বাড়ির পেছনের পুকুরটা লিজ নিতে পারলে মাছের চাষ করতে পারে একজন। লোকগুলির দলে ইটভাটার এক দালালও জুটে গেছে, যে পকেটভর্তি টাকা নিয়ে ধানিজমিতে ইট পোড়ানোর চুলা বসাবার প্রস্তাব দেয়। দূরসম্পর্কের আত্মীয় দাবি করে জমিজমা-বসতবাড়ির হিস্যা চায় একজন। ছেলেটির বাবা আচমকা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে এসবের বন্দোবস্ত করে যেতে পারেননি। বোন ফোনে আরো বলেছে – কোরান শরিফ পড়া অবস্থায় তিনি ভোরবেলায় বিছানায় গড়িয়ে পড়েন। তাঁর মুখে ছিল সুরা আস-সাফফাত, যেখানে পিতা পুত্রকে কোরবানি করতে বলছেন – ময়ূরের বর্ণিল পালক গোঁজা কোরান শরিফের পাতাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছেলেটার।
লোকগুলি সামনে-পিছে সাপটাতে থাকলে ছেলেটা বোনের কথা তাদের বিস্তারিত বলে, যে বাবার অনুপস্থিতিতে সয়-সম্পত্তির দেখভাল করবে। সে খুব পরিশ্রমী আর সৎ। চলনবলনেও সাদাসিধা। রোজ সাদা শাড়ি আর খাটো হাতার কালো ব্লাউজ পরে, পিঠে লম্বা বিনুনি দুলিয়ে কলেজে পড়াতে যায়। এটা গত শতকের ষাটের দশকের কোনো এক সময়ের ফ্যাশন। মাকে সম্ভবত অনুকরণ করে বোন, যে মায়ের যৌবনকাল দেখেছে, মারা যেতেও দেখেছে চোখের সামনে। বাবা-মায়ের ন্যাওটা ছিল বলে তাঁদের কাছছাড়া হতে চায় নাই কোনোদিন। মাঝখানের ক-বছর শহরের হোস্টেলে। তারপর পড়ালেখা শেষে মফস্বলের কলেজে চাকরি নিয়ে পাকাপাকিভাবে চলে আসে।
তার বোন আসলে কার মতো? পুস্তকে এমন কোনো কন্যার কথা কি লেখা আছে, যে পিতামাতার সঙ্গ ছাড়তে চায় নাই ইহকাল ও পরকালে? কিন্তু বাবা মনে হয় ছেলেকে কাছে চেয়েছেন ইহকাল আর পরকালে, যে-ছেলে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
চেল্লিশ দিনের দিন মৃতের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে – কোথায় শুনেছিল সে কথাটা? আজ সেই রাত!
দিনের আলো পুরোপুরি মুছে গেলে শরীরের মরা চামড়ার মতো লোকগুলি নিঃশব্দে খসে পড়ে। ছেলেটা চলতে চলতে হোঁচট খায়। পাকা ধানের বর্ণের আভা বা স্বর্গীয় নীলাভ দ্যুতি হটিয়ে দিয়ে কে যেন চরাচরে কালি মাখিয়ে দিয়েছে। বা কালো কাপড়ের সাত পরতে ঢেকে দিয়েছে তার দুই চক্ষু; কিন্তু কান দুটি তার অসম্ভব সজাগ। গাঁয়ের এক পর্ণকুটির থেকেই সম্ভবত ভেসে আসে ছোটবেলায় শোনা গজলের করুণ সুর। কণ্ঠটা বৃদ্ধ না যুবার বোঝা যায় না। কেমন শ্লেষ্মা-জড়িত ফ্যাসফ্যাসে গলার বিলাপ। কাছে আসতে কথাগুলি স্পষ্ট হয় – ইব্রাহিমকে কহেন আলস্না রববানি, ইসমাইলকে দাও গো নবী কোরবানি।
ছেলেটা ঘরের বেড়ায় ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে কান পাতে। নিজের হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক ছাড়া আর কিছু শুনতে পায় না। এ গজল, না গায়েবি আওয়াজ? নাকি তার শ্রবণেন্দ্রিয় বর্তমান থেকে অতীতমুখে ধাবিত হয়েছে? ছেলেটার সমবয়সী এক মায়াবী চেহারার কিশোর প্রতিবছর স্কুলের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে গাইত গজলটা। যার পরের দুটি লাইন – ইব্রাহিম কন হেন পুত্র শুনছ নি, জবাই করতে কহেন তোমায় রববানি।
আমি রাজি! আমি রাজি! ছেলের নফস থেকে যেন উচ্চারিত হয় কথাটা। বাবা কি শুনতে পেলেন? শুনে খুশি হলেন? ছেলের জন্য সময় সময় জীবনটা বিষ মনে হতো যে বাবার?
সহসা চাপা দীর্ঘশ্বাসের মতো এক ঝলক মৃদু বাতাস বয়ে যায়। দুলে ওঠে অদূরের নলখাগড়ার বন। আকাশ থেকে একটি তারা চোখের জলের মতো টুপ করে ঝরে পড়ে।
শোনা কথাটা ফের মনে পড়ে ছেলেটার – চল্লিশ দিনের দিন মৃতের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে। আজ সেই রাত! আজ ক্ষমা চাওয়ার রাত। আজ সমপর্ণের রাত। পরের লাইন দুটি ছেলে মনে মনে নিবেদন করে মরহুম পিতার উদ্দেশে।
কোথাও সামান্য আলোর ইশারা নেই। চাঁদ-শূন্য আকাশের তারকাগুচ্ছ তো যোজন যোজন দূর। ছেলে ঘুরতে ঘুরতে চলে আসে গাঁয়ের শেষ সীমায়। তার সামনে যেন ঊষর মরুভূমি – মিনা উপত্যকা, যেখানে হজরত ইব্রাহিম পুত্রকে কোরবানি দিতে এনেছিলেন। তাঁর আস্তিনের তলায় ছিল গোছাখানেক দড়ি আর একটি ধারালো ছুরি। আর অন্তরজুড়ে ছিল আসন্ন পুত্র-বিচ্ছেদের বেদনা, যা ছিল সাময়িক। কেননা নবীর জন্য এটা ছিল পরীক্ষা, যে পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, মহান আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান পেয়েছিলেন।
বাবার দুঃখে এই প্রথম চোখ ফেটে কান্না আসে ছেলের। যদিও বোন ফোনে বলেছিল, তিনি ছিলেন পুত্রের প্রতি অশেষ ক্ষমাশীল। তাই হাসিমুখে সব কষ্ট সয়েছেন। তাঁর একটাই আরজু ছিল – ছেলের সঙ্গ।
‘ইহকাল আর পরকালে’, বলতে বলতে গাঁয়ের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে ছেলে।
ছেলের হাত দুটি যখন দড়ি দিয়ে পিঠমোড়া করে বেঁধে হিপ পকেট থেকে মানিব্যাগ হাতিয়ে নেওয়া হয়, তখনো সে বাবার দুঃখে আকুল হয়ে কাঁদে। ‘না না, তার দুঃখ সাময়িক ছিল না। এ অনন্তকালের’। কান্নাজড়ানো কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে সে। পরমুহূর্তে ধারালো ছুরিটা অন্ধকারে ঝিলিক মেরে তার গণ্ডদেশে নেমে এলে সে বুকে পাথরের মতো চাপ অনুভব করে। সেই সাথে তার কথা বলাও যায় বন্ধ হয়ে। এবার ছেলের চোখের কোল বেয়ে অন্য রকম অশ্রুধারা নেমে আসে – উত্তপ্ত, সান্ত্বনাহীন। কেননা এ-সময়ে মহিমান্বিত সেই নীলাভ আলোর অভাব তীব্রভাবে অনুভব করছে সে।