বিয়ের পর বুঝতে পারলাম, আমার বউ রান্নাবাড়া পাড়েনা বললেই চলে। রান্না করার সাধারণ ধারণাটুকু তার নেই। কত ইচ্ছে ছিল বউ এর হাতের রান্না তৃপ্তি সহকারে খাব। সবই কপাল। সকালে নাস্তার জন্য টেবিলে বসে আছি, আমি আর বাবা। এদিকে আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন মা জুলিকে রান্নার কাজে হেল্প করে। কয়দিন ধরে মায়ের শরীর তেমন ভালো না, তাই জুলিকে একা একা রান্না করতে হচ্ছে। ঝাল বেশি তো লবন কম, লবন বেশি তো ঝাল কম। কিছুক্ষন পর জুলি, রুটি আর সবজি নিয়ে এসেছে। আমাদের প্লেটে রুটি দেওয়া মাত্রই, বাবা প্লেটের দিকে চেয়ে আছে। আমি বললাম, কি হয়েছে বাবা? বাবা বলল, ‘রুটি দেখতে ঠিক মানচিত্রের মতো হয়েছে।’ আমি আর কোন কথা বললাম না। রুটি দিয়ে সবজি মুখে দিতেই, আমার মুখ হা হয়ে রইল। আমার মতো বাবারও একই অবস্থা। সবজি লবনে পুরা আর ঝালে একাকার।
আমি জুলিকে বললাম, ‘দ্রুত ডিম ভাজি করে নিয়ে আসো। সবজি দিয়ে খাওয়া যাবে না, প্রচন্ড ঝাল আর লবনে পোড়া হয়ে গেছে।” জুলি গোমরা মুখ করে ডিম ভাজি করতে গেল। আমি আর বাবা টেবিলে বসে আছি। প্রায় ২০ মিনিট হয়ে গেল জুলি আসছে না। প্রায় ৩০ মিনিট পর ডিম ভাজি করে নিয়ে আসছে জুলি। ডিম ভাজি দিয়ে রুটি মুখে দিতেই কেমন যেন গন্ধ গন্ধ লাগছে। আমি বললাম, ‘ডিম ভাজি দিয়ে গন্ধ কিসের?” জুলি গোমরা মুখ করে বলল, “ডিম ভাজিতে হলুদ দিতে গিয়ে বেশি পড়ে গেছে। তাই হলুদের গন্ধ লাগছে।” মনের দুঃখে বনে যেতে ইচ্ছে করছে। ডিম ভাজিতে হলুদ দেয়, এই প্রথম শুনলাম। কোন রকমে খেয়ে অফিস চলে গেলাম।
রাতে অফিস থেকে বাড়িতে এসে দেখি, জুলি মন খারাপ করে বসে আছে। আমি বললাম, ‘কি হয়েছে, মন খারাপ কেন?’ জুলি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, মা রাগ করছে, রান্না পারিনা বলে। আমি জুলিকে সান্তনা দিয়ে বললাম, “মা তো পুরানা দিনের মানুষ। তার কথায় মন খারাপ করো না।” জুলি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “আমাকে রান্নার বই কিনে দিবা। বই দেখে দেখে আমি রান্না শিখব। আমি কেকা ফেরদৌসির চেয়ে ভালো রাঁধুনী হবো।” আমি বললাম, “ঠিক আছে, কালকেই তোমাকে বই এনে দিব। এখন একটু মিষ্টি করে হাসো।” পরদিন নীলক্ষেত থেকে রান্নার উপর অসাধারণ তিনটি বই কিনলাম।
* চোখ বন্ধ করে বিরিয়ানি রান্না
* তিন দিনে নাম্বার ওয়ান রাঁধুনী
* এক আঙ্গুলে নুডুলস রান্না
বই তিনটা জুলিকে দিতেই, জুলি খুব খুশি হলো। প্রতিদিন রাতে খুব মনোযোগ দিয়ে রান্নার বই নিয়ে পড়তে বসে জুলি। সেদিন জুলিকে বললাম, এত মনোযোগ দিয়ে কি রান্না শিখতেছ? জুলি বলল, “নুডুলস রান্না শিখছি” আমি বললাম, ‘কয়েকটা নুডুলস আইটেমের নাম বলো তো?
জুলি আগ্রহ নিয়ে বলতে থাকল, নুডুলস এর আচার নুডুলসের স্যালাইন সরিষা নুডুলস নুডুলসের ফুচকা নুডুলসের সন্দেস নুডুলসের বাতাসা গ্রীল নুডুলস নুডুলসের রোস্ট নুডুলসের জিলাপি নুডুলস দিয়া কচুর লতি আমি বললাম, বাহ্ দারুন। আইটেম গুলো আন কমন। অনেককিছু শিখছ। এইবার কেউ তোমাকে বলতে পারবে না, তুমি রান্না জাননা। দেখতে দেখতে বিয়ের একমাস হয়ে গেল। এই উপলক্ষে বাড়িতে স্পেশাল রান্না হচ্ছে। জুলি একা একা বিরিয়ানি রান্না করছে। অনেকদিন হলো বিরিয়ানি খাইনা, জিভে জল টুপ টুপ করছে। রান্না ঘরে গিয়ে কয়েকবার উকি দিলাম। দেখলাম জুলি খুব বিজি আছে। মনোযোগ দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করছে।
খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি। এরই মধ্যে জুলি ঘরে আসল। বুঝতে পারলাম রান্না শেষ। কারেন্ট ছিলনা, তাই আমি জুলিকে পাখা দিয়ে বাতাস দিতে লাগলাম। বউটা আমার রান্না করতে করতে ঘেমে গেছে। আমি আদুরে গলায় বললাম, জানু তোমার খুব কষ্ট হইছে রান্না করতে তাইনা। জুলি শুকনো মুখে বলল, তোমার জন্য সব কষ্ট সহ্য করতে পারব। আচ্ছা চাল ভাজা খেতে তোমার কেমন লাগে? আমি বললাম, ‘বৃষ্টির সময়, চাল ভাজা খেতে ভালই লাগে, খুবই টেস্ট।’ জুলি শুকনো মুখে বলল, বিরিয়ানি পুড়ে গিয়ে চাল ভাজা হয়ে গেছে। জুলির কথা শুনে ছকেট হয়ে গেলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প