প্রতিবাদ

প্রতিবাদ
আমার যখন সাত বছর বয়স তখন দেখতাম আমার বাবা মাঝে মাঝেই আমার দাদাকে অকারণে বকা দিতো। বাহিরে গেলেও তাকে জবাবদিহি করতে হতো। দাদা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘুরতে যেতো। সেটার জন্যও তাকে কথা শুনাতো আমার বাবা। বাবা একদিন মায়েে সাথে রাগ করে না খেয়েই অফিসে চলে গিয়েছিলেন। আমার দাদা খাবার নিয়ে অফিসে গিয়েছিলেন,তবে ফিরে ছিলেন অত্যন্ত বেদনাময় মুখ নিয়ে। রাতে যখন বাবা দাদাকে কথা শোনাতে লাগলেন। কোনো দোষ না করেও কথা গুলো সহ্য করে যাচ্ছেন।
তখন আমি বাবার মুখের ওপর কথা বলে ফেলি। এই প্রথম আমি আমার বাবার মুখের ওপর কথা বলি। বাবাকে অনেক বকা দেই। আমার বাবার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। আমি তোমাকে বকা দিয়েছি,এজন্য তোমার অনেক খারাপ লেগেছে? তোমার চোখ দিয়ে জল বের হচ্ছে। তুমি তো তোমার বাবাকে প্রতিদিনই বকা দাও অকারণে। তাহলে তাঁর কি খারাপ লাগেনা,সেও হয়তো অন্ধকার রাতে চোখ জলে ভেজায়। যেমনটা তুমি আজকে ভিজিয়েছো। সেদিনের পর থেকে আমার বাবা আমার দাদাকে আর কোনোদিন বকা দেয়নি,কথা শোনায়নি। বরং ভালোবাসায় ভরে দিয়েছিল তাঁর বাকি জীবনটা। মাঝে মাঝেই দেখতাম বাবা মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতো আমার সামনেই। আমি বুঝতাম মায়ের কোনো দোষ নেই তবুও তাকে গালি শুনতে হতো।
একদিন রুমে বসে বই পড়ছিলাম। এমন সময় বাবার চিল্লাচিল্লি শুনতে পাই। মাকে অকারণে গালি দিচ্ছে। তাঁর অপরাধ ছিল ভাত একটু বেশি দিয়েছেন। সেদিন আমি বাবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলেছিলাম। আপনার কি একটুও লজ্জা নেই?মান সম্মান নেই? আমি তো এখন বড় হয়েছি। আমার সামনে মাকে এতো জঘন্য ভাষায় কিভাবে গালি দিতে পারেন? আপনার কাছ থেকে কি শিখবো আমি? বড় হয়ে আমিও আপনার মতো আমার সন্তানের সামনে তাঁর মাকে গালি দিবো? সেদিন আমি বাবার মুখে পৃথিবীর সব থেকে বেশি লজ্জা দেখেছিলাম। ওইদিনের পর থেকে বাবা মাকে আর কোনোদিন অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেনি। অন্তত আমার সামনে কখনো মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। আমি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিবো। তখন দেখতাম বাবা সিগারেট খেতেন। যেটা আমার একদম ভালো লাগত না। কিন্তু কি করার ছিলো আমার?
মাকে বলতাম বাবাকে এসব খেতে না বলো। এসবে অনেক ক্ষতি। কিন্তু বাবা মায়ের কথা কানে নিতেন না।
একদিন সাহস করে আমি বাবার সামনে সিগারেট মুখে তুলে নেই। তখন বাবা আমার মুখ থেকে সিগারেট টা কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। আর আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। এই প্রথম বাবা আমার গায়ে হাত তুললেন।
তখন বাবা খুব দুঃখ নিয়ে বলেছিলেন। তোর জন্য কত কষ্ট করি। দিনরাত পরিশ্রম করি। তুই বড় হয়ে বাবার মুখ উজ্জ্বল করবি। আর তুই কিনা সিগারেট মুখে নিয়েছিস। এই জিনিসটা ভালো না রে বাবা। আমি কখনোই চাইবোনা আমার ছেলে এসবের সাথে জড়িত থাকুক। আমি আমার ছেলেকে খারাপ কোনো কিছুর সাথে যুক্ত হতে দিবোনা। তখন বাবার হাতে হাত রেখে বলেছিলাম। আমিও তো আমার বাবাকে এসবের সাথে দেখতে চাইনা। যেই জিনিসটা শুধু ক্ষতি করে যাবে সারাজীবন। সেদিনের পর থেকে বাবা আর কোনোদিন সিগারেট মুখে নেয়নি। আমার জন্য হলেও তিনি এই নেশাটা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
আমাদের এলাকায় একজন মানুষ ছিলেন। অকারণেই মানুষকে অপমান করতো,জ্ঞান দিতো। একদিন একজন অনার্স পাশ করা ছেলেকে তিনি একটা ইংরেজি শব্দের অর্থ ধরে ছিলেন। উত্তর দিতে না পাড়ায় তাকে অনেক মানুষের সামনে তিনি বলেছিলেন। তুমি অনার্স পাশ করা একটা ছেলে আর এই শব্দটার মানে বোঝোনা? কিভাবে তুমি অনার্স পাশ করলে? তখন ছেলেটির মুখের দিকে আমি তাকাতে পারিনি। অনেক বেশি অপমানিত হয়েছিল। অথচ ওই শব্দটা অনেকেই পারবেনা যারা অনার্স পাশ করেছে। আমিও পারিনা। দোকানে বসে একদিন খেলা দেখছিলাম। এমন সময় ওই জ্ঞানী লোকটা আমাকে বলে। আমিনুল তুমি অনেক খেলা দেখো,বুঝও ভালো। বলতো মেসির পুরো নাম কি?
আমি তখন তাঁর মুখের ওপর বলে দিয়েছিলাম। যদিও জানি সে আমাকে সবার সামনে অপমান করে নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। তারপরে আমি তাকে বলি। আপনি তো সবাইকে সবসময় প্রশ্ন করেন। আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। সে কিছু বলার আগেই তাকে বললাম। বলেনতো,আংকেল। রিয়াল মাদ্রিদ এ পর্যন্ত কতোবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে? তখন তাঁর মুখ থেকে কোন কথা বের হলোনা। আমি শুধু বললাম। রিয়াল মাদ্রিদ এতো পছন্দ করেন। আর সবসময় খেলা নিয়েই থাকেন। তবুও এই সাধারণ জিনিসটা জানেন না? সেদিনের পর থেকে লোকটা আর কোনোদিন কাউকে সবার সামনে অদ্ভূত কোনো প্রশ্ন করেনি। অনেক সময় বেয়াদবি হলেও প্রতিবাদ করতে হয়। কারণ সেই প্রতিবাদ গুলোই কাজে দেয়।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত