ছেলের বিয়ে

ছেলের বিয়ে
আফজাল সাহেব ছেলের রুমের দরজায় কয়েকবার টোকা দিলে আরিফ দরজা খুলে বললো,
– কি হয়েছে বাবা? আফজাল সাহেব বললো,
— তুই এই বিকাল বেলা কোথাও ঘুরতে না গিয়ে রুমের ভিতর দরজা আটকিয়ে বসে আছিস কেন? আরিফ কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
– কোথাও ঘুরতে যাবো না বাবা। সামনে আমার ভার্সিটি ভর্তি পরিক্ষা তাই এইসব নিয়ে চিন্তায় আছি। আর রুমে দরজা আটকিয়ে পড়ছিলাম এই কথা বলে আরিফ আবার রুমের দরজা আটকে দিলো। আফজাল সাহেব বেলকনিতে বসে উনার স্ত্রীকে ডেকে বললেন,
— আরিফ সারাদিন বাসায় করে কি? ইদানীং দেখছি সারাক্ষণ রুমেই দরজা আটকে বসে থাকে। কোথাও ঘুরতে যায় না বন্ধুদের সাথে আড্ডাতেও যায় না আফজাল সাহেবের স্ত্রী বললো,
~দরজা বন্ধ করে পড়াশোনায় তো করে আর কি করবে? আপনার সব কিছুতেই বেশি বেশি। আগে বাসার বাহিরে থাকলে বকাঝকা করতেন আর এখন বাসায় থাকে বলে চিন্তা করছেন স্ত্রী চলে গেলে আফজাল সাহেব ছেলেকে নিয়ে ভাবতে লাগলেন পরদিন সকালে আফজাল সাহেব লক্ষ্য করলেন উনার স্ত্রী আরিফকে একটু বাজারে যেতে বলছে অথচ আরিফ বিরক্ত হয়ে বললো, আমার পড়া আছে। এখন বাজারে যেতে পারবো না এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই আরিফ একটু অন্যরকম হয়ে গেছে। সারাক্ষণ একা থাকে। খাওয়া দাওয়া খুব একটা করে না। খাবার টেবিলে বসে অল্প খেয়েই উঠে যায়। আর মেজাজ অত্যধিক খিটখিটে হয়ে গেছে। আফজাল সাহেব ছেলেকে ডেকে বললেন,
— আমার শরীরটা আজ ভালো না। তাই বাজারে যেতে পারছি না। তুই একটু বাজারে যা না বাবা আরিফ রাগে বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলো। আফজাল সাহেব ছেলের রুমে আসলেন। রুমটা সুন্দর ভাবে গোছানো। বিছানার উপরে রাখা বইটা যখন সরিয়ে টেবিলের উপর রাখলেন তখন বইয়ের ভিতর আরেকটা বই দেখতে পেলেন। বইটা হাতে নিয়ে উনি দেখলেন একটা চটি ম্যাগাজিন। উনি বইটা আবার টেবিল থেকে বিছানার উপর রেখে দিলেন। পাশে থাকা ল্যাপটপটা অন করে কতক্ষণ ঘাটলেন তারপর ছেলের রুম থেকে চুপচাপ বের হয়ে আসলেন সন্ধ্যার দিকে আফজাল সাহেব নিজ হাতে দুইকাপ চা বানালেন। এককাপ নিজের জন্য আরেককাপ সন্তানের জন্য। সন্তানের দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
— চল ছাদে যাই। চা খেতে খেতে বাবা ছেলে গল্প করি আরিফ কিছুটা অবাক হলো কারণ বাবা কখনো এর আগে চা বানিয়ে আরিফকে দেয় নি। কিছুটা ভয়ে ভয়ে সে বাবার পিছন পিছন সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলো। ছাদে আসার পর আফজাল সাহেব সন্তানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম সত্যি কি বলতে পারিস? আরিফ কতক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– ঠিক বলতে পারছি না বাবা আফজাল সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
— জন্মালে মরতে হবে, হয় আজ নয়তো কাল আর মরার পর কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে। এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন সত্য। আমরা দিন দিন যত আধুনিক হচ্ছি ততই পরকালের প্রতি আমাদের বিশ্বাসটা কমে যাচ্ছে। দুনিয়ায় সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা আজ ভুলে গেছি আমরা মুসলিম আর আমাদের আখিরাত বলে একটা জিনিস আছে। চারদেয়ালের ভিতর তুই যদি কোন অন্যায় করিস সেটা পৃথিবীর কেউ না দেখলেও উপরওয়ালা ঠিকিই দেখছেন। আর এজন্য তোকে যেমন শাস্তি পেতে হবে তেমনি আমাকেও শাস্তি পেতে হবে কারণ আমি আমার সন্তানকে দ্বীনের শিক্ষা দিতে পারি নি বলে আরিফ কিছুটা বুঝতে পেরেছিলো ওর বাবা কেন ওকে এইসব কথা বলছে। হঠাৎ ওর বাবা ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,
— তোর কি পছন্দের কোন মেয়ে আছে? আরিফ মাথা নাড়িয়ে বললো,
– না আফজাল সাহেব চায়ে আরেকবার চুমুক দিয়ে বললো,
— তৈরি থাকিস। কাল তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো ১৫ দিন পর আফজাল সাহেব খুব ব্যস্ত। একদিন ওদিন ছোটাছুটি করছেন। নিজের একামাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। কোন কিছুর যেন কমতি না হয়। হঠাৎ আফজাল সাহেবকে দুইজন প্রতিবেশী জামাল সাহেব আর রতন সাহেব একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন,
~আপনার ছেলে কি মেয়ে নিয়ে পালিয়েছিলো? আফজাল সাহেব মুচকি হেসে বললেন,
— না রতন সাহেব আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন কেউ আছে কি না। তারপর আস্তে আস্তে বললেন,
~তাহলে কি আপনার ছেলে উল্টো পাল্টা কাজ করেছিলো নাকি ফলে মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে গিয়েছিলো আর আপনি ইজ্জতের ভয়ে বিয়ে করিয়ে দিলেন? আফজাল সাহেব বললো,
— ও রকম কিছুই না। আমি আমার পছন্দের মেয়ের সাথেই ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি রতন সাহেব অবাক হয়ে বললো,
~কোন কেলেংকারী হয় নি তাহলে শুধু শুধু এই অল্প বয়সে ছেলেটাকে বিয়ে করিয়ে ছেলের জীবনটা কেন নষ্ট করলেন? এইটুকু একটা ছেলে বউকে কি খাওয়াবে? ছেলেটা যদি পড়াশোনা শেষ করে জব করতো তাহলে ভালো একটা পরিবারে বিয়ে করতে পারতো আফজাল সাহেব তখন বললো,
— আপনার চোখে আমার ছেলে ছোট থাকলেও আমার চোখে আমার ছেলে যথেষ্ট বড় হয়েছে আর আমি আমার ছেলের জীবন নষ্ট করি নি বরং নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে আমার ছেলেকে রক্ষা করেছি। আমাদের দেশে একটা নিয়ম হলো কোন ছেলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বিয়ে করতে পারবে না। আর একটা ছেলে লেখাপড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগে প্রায় ২৮-৩০ বছর অথচ ১৬ -১৭ বছর পর থেকেই একটা ছেলে যৌনতার চাহিদা অনুভব করে। কষ্ট করে আরো দুইএক বছর নিজেকে কন্ট্রোল করলেও পরে আর নিজেকে আটকাতে পারে না। তখনি প্রেম নামক একটা সম্পর্ক করে হয় ছেলে মেয়ে রুমডেট করে নয়তো ফোন সেক্স করে হস্তমৈথুন করে নিজের চাহিদা মেটায়।
আবার কেউ কেউ পতিতালয়ে চলে যায়। এভাবেই সে বিয়ের আগ পর্যন্ত নিজের যৌন চাহিদা মেটাতে থাকে অথচ ঘরে বউ থাকলে হয়তো এই কাজটা করতো না আর আমাদের বাবা মায়ের একটা ধারণা হলো ছেলে বেকার থাকলে বউকে কি খাওয়াবে? আরে বউ রাক্ষসী নাকি যে দুনিয়ায় সমস্ত খাবার খাওয়াতে হবে নয়তো সমস্যা হবে? আমরা যা খাই ছেলের বউ সেটাই খাবে। আজ আমার ছেলে বেকার কিন্তু কাল সে বেকার থাকবে না। যখন সে দেখবে তার অর্ধাঙ্গিনী আছে তখন সে এমনিতেই দ্বায়িত্ববান আর কর্মট হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ছেলে যদি কোন পতিতালয়ে কিংবা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কোন হোটেলে ধরা খেতো তাহলে সেই দাগ কখনোই মুছতো না
আমাদের সমাজের বাবা মায়েরা মেয়েদের কখনোই বেকার ছেলেদের সাথে বিয়ে দিতে চায় না। সবাই চায় মেয়েকে একটা প্রতিষ্ঠিত ছেলের হাতে তুলে দিতে। সবাই খোঁজ নেয় ছেলে ভালো চাকরি কিংবা ব্যবসা করে কিনা, ছেলের মাসে কত টাকা ইনকাম হয়। কেউ খোঁজ নেয় না ছেলে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরে কিনা। ছেলে ইসলামিক নিয়মে চলাচল করে কিনা আমরা বাবা মা চাই আগে ছেলেমেয়ে প্রতিষ্ঠিত হোক তারপর বিয়ে । অথচ আমরা এটা ভেবে দেখি না ছেলে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে আমাদের চোখের আড়ালে নিজেদের যৌনতা মেটানোর জন্য কত কি না করছে আফজাল সাহেবের কথা শুনে জামাল সাহেব আর রতন সাহেব দুইজনেই চুপ হয়ে আছে। আফজাল সাহেব তখন রতন সাহেবের কাঁধে হাত রেখে বললো,
— ছেলে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে করালেও সমস্যা। আপনাদের মত কিছু মানুষজন সেটা ভালো চোখে দেখে না। ওরা ভাবে নিশ্চয়ই ছেলে মেয়ে কোন অঘটন করেছে তাই বিয়ে দিচ্ছে কিংবা করাচ্ছে। আরে ভাই একটা কথা মনে রাখবেন, ছেলে-মেয়ে সাবালক হলে বাবা মা যদি বিয়ে না কারায় তাহলে ছেলে মেয়ের যৌনতার অপর্কমের দায়ভার বাবা মাকেও ভোগ করতে হবে যায়হোক আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন আর বোরহানিটা খুব মজা হয়েছে। বাসায় যাওয়ার সময় পরিবারের জন্য একটু নিয়ে যাবেন আফজাল সাহেব মুচকি হেসে চলে গেলো। প্রতিবেশীর এইসব ফালতু কথায় কান দিলে চলবে না। তার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা কোন কিছুর যেন কমতি না হয়
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত