যোগ্যতা

যোগ্যতা
-তা ফেয়ারনেস ক্রিম গুলো মাখছো তো?
হবু শাশুড়ির কথা শুনে অপমানে মুখটা লাল হয়ে গেল দিয়ার,একটা কড়া উত্তর মুখে এসেছিলো, কিন্তু ও কিছু বলার আগেই পাশ থেকে নিরব বললো,
– হ্যাঁ মা,মাখছে তো,আমি দেখেছি..
কড়া চোখে নিরবের দিকে তাকালো দিয়া,নিরব মুখটা নামিয়ে নিল। দিয়া ডাক্তার,নিরবের সাথে দিয়ার আলাপ হাসপাতালেই, ব্যাংকে চাকরি করে নিরব, রাস্তায় গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল,সেখানেই দিয়ার সাথে আলাপ আর তারপর প্রেম,এই অবধি ঠিকই ছিল কিন্তু বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই নিরবের মায়ের,দিয়ার গায়ের রঙ নিয়ে এই সমস্ত কথা বলা দিয়ার একদম পছন্দ হচ্ছিল না,কথায় কথায় নিরবের মা এইরকম বলছেন,দিয়ার মা-বাবাও অত্যন্ত বিরক্ত হচ্ছেন,বাবা তো একবার বলেই দিলেন
-মাম,আর একবার ভাব,বিয়েটা করবি কি না? কিন্তু দিয়া শুধু নিরবের মুখ চেয়ে চুপ করে আছে।নিরবকে ও খুব ভালোবাসে,ভাবে হয় তো নিরব প্রতিবাদ করবে কিন্তু না সেটা ও করেনা;চুপ করেই থাকে।দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এল,দিয়া একটা নীল রঙের শাড়ি পরেছিল,নীল দিয়ার খুব প্রিয় রঙ..
-একি তুমি এটা কি রঙের শাড়ি পরেছ? প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন নিরবের মা,ঘরভর্তি লোকের মাঝখানে,না তিনি এখানেই থামলেন না বলেই চললেন
-একটা কথা শোননা তুমি দিয়া,কতবার বলেছি এত গাঢ় রঙ পড়বে না,একে তো এই গায়ের রঙ,আমার ছেলে জোর করল তাই, না হলে কোথায় আমার ছেলে আর কোথায় তুমি দিয়া নিরবের দিকে তাকাল,না তার কোনো হেলদোল নেই,যেমন চুপ করে থাকে ঠিক সেইভাবেই চুপ করে মোবাইল দেখছে, নিরবের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর মা’র চোখে চোখ রেখে ঠাণ্ডা গলায় দিয়া বলল
-ঠিকই বলেছেন,কোথায় আমি আর কোথায় আপনার ছেলে,কোথায় আমি MBBS,MD আর কোথায় আপনার ছেলে সাধারণ গ্র্যাজুয়েট,কোনো তুলনা হয়..
-এসব তুমি কি বলছ দিয়া? নিরব মুখ লাল করে বলল,মনে মনে হাসলো দিয়া যাক ছেলের মুখ ফুটেছে..
-কেন নিরব,আমার মেয়ে ভুল কি বলেছে,দিয়ার বাবা বললেন
-আসলে কি বলোতো নিরব,তোমার মা যোগ্যতার কথা বললেন তো তাই বললাম যে যোগ্যতা গায়ের রঙ দিয়ে হয় না,এই দেখোনা তুমি আমার থেকে কত কম যোগ্য তাও আমরা একবারের জন্যও বলিনি কিন্তু তোমার মা প্রথম দিন থেকে যোগ্যতার কথা বলে যাচ্ছে,আর তুমিও চুপচাপ শুনে যাচ্ছগোটা ঘরে পিন পড়লেও শব্দ হবে,দিয়া আবার বললো
-তা যোগ্যতার কথা যখন উঠলো তখন বলেই দিই,নিরব তুমি কোনো দিক থেকেই আমার যোগ্য নও তাই এই বিয়েটা হচ্ছে না,আপনারা আসতে পারেন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ঘরে চলে গেল দিয়া। আলো ঝলমলে বাড়িটা অন্ধকার হয়ে গেছে,দিয়ার মা-বাবা এলেন
-কিছু বলবে..
-তোর জন্য সত্যিই খুব গর্ব হচ্ছে রে….
-তবে..
-তবে কি মা??
-নিরবের ডিগ্রীর কথা বলা তোর ঠিক হয় নি মা,দেখ ডিগ্রী দিয়ে যোগ্যতা মাপাও কিন্তু ভুল দিয়ার বাবাও কথাটা সমর্থন করলেন। দিয়া বলল,
-আচ্ছা মা তোমাদের কি মনে হয়,আমি যদি ডিগ্রী দিয়ে যোগ্যতা বিচার করতাম তাহলে কি কখনও নিরবকে বিয়ে করতে চাইতাম??আমি শুধু ইঁটের জবাব পাটকেলে দিয়েছি,যোগ্যতা না তো গায়ের রঙ দিয়ে হয় আর না ডিগ্রী দিয়ে।
হেসে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরল দিয়া,এই দুটো মানুষ তাকে অনেক দিন আগে একটা কথা শিখিয়েছিল;নিজে নিজের সম্মান করলে তবেই বাকিরা করবে দিয়া আজ শুধু সেই শিক্ষার মান রেখেছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত