বিয়ে

বিয়ে
“মাশাল্লাহ,মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে ,” কথাটা শুনে বাসার সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠল ! তবে বাসায় যতো লোক আছে তার মধ্যে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছি আমি নিজেই ! খুশির জন্য ইচ্ছে করছে নাগিন ড্যান্স করতে ! যেই ভাবা সেই কাজ ,আমি ড্যান্স করার জন্য উঠতে যাব দেখি মা আর বাবা আমার হাত,পা চেয়ারের সাথে চেপে ধরেছে যেন আমি উঠতে না পারি ! নিজের বিয়ের প্রস্তাব বলে কথা ! পরে যদি ছেলেপক্ষ ভাবে যে মেয়ের মনে হয় রোগ আছে তাই মা,বাবার এই সিদ্ধান্ত যে ,যাই হোক না কেন পাত্রপক্ষের সামনে আমাকে নড়তে দেওয়া যাবে না !
যাই হোক পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর আমি উঠে মনের সুখে নাগিন ড্যান্স দিলাম পুরো আধঘন্টা ! আর ড্যান্স করব নাই বা কেন বলুন? এই নিয়ে সাত,সাতবার আমার বিয়েটা ভেঙে গেছে ! এখন যদি বিয়েটা হয় আর কি ! ছোট বেলা থেকেই আমার বিয়ে করার খুব শখ ! সবাই যেখানে ১ টা বিয়ের স্বপ্ন দেখত আমি সেখানে ৪,৫ টা বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতাম! ছোট বেলায় আমার জন্য অন্য কেউ বউ হতে পারত না খেলার সময় ! এ নিয়ে কয়েক দফা মারামারিও করেছি ! আমাদের বাসার পাশের আবিরকে খুব ভাল লাগত ! রাসেদের বউ হওয়ার শখ ছিল ! হাবিবের মা কে শ্বাশুড়ি বানাতে চাইতাম ! আসিফের বোনকে ননদ ডাকতাম ! এদের সবার বউ হবার শখ ছিল আমার ছোট বেলায় ! কেউ জিঙ্গেস করলে ,যে এতো ছেলেকে বিয়ে করে সংসার কেমনে করব?
আমার সোজা উত্তর ১ বছরের জন্য বিয়ে করব ! ক্লাশ ৩ এর ছাত্রীর মুখে এমন কথা শুনে সবাই মা,বাবাকে বলত,” মেয়ে তোমার বিয়ে পাগলি ! ” আমার তাতে ভালই লাগত ! একবার পাশের বাসার পারুলের চুল টেনে ছিড়ে ছিলাম ও বউ হতে চেয়েছিল বলে ! আমার জন্য শেষমেশ মা,বাবা গ্রামের বাসা ছেড়ে শহরে চলে আসে ! ভেবেছিল বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে ,কিন্তু আমি তো আমি এই বদলাবার নয় !
এস এস সি পরীক্ষার সময় ছেলেদের দিক তাকিয়ে রইতাম কাকে কাকে বিয়ে করা যায়! বাবা বলেছিল ফেল করলে বিয়ে দিয়ে দেবে ! ব্যাস আমার খুশি কে দেখে দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি কি করে ফেল করব ! দুংখের বিষয় প্রতি বিষয়ে ৩৩ পেয়ে পাশ করে গেলাম! আমার আর বিয়ে করাটা হলো না ! এইচ এস সিও কোনরকমে টেনেটুনে পাশ করলাম ! আমার তো একটাই শখ বিয়ে করা ! জামাইকে নিয়ে ঘুরব ,শপিং করব ,ছবি তুলব ! আহা কতো মজা হবে ! ভাবতেই চোখদুটো রসগোল্লার মতো হয়ে ওঠে !
এইচ এস সি তে তো কোনরকম এ পাশ করলাম ,আমি জানি কোন কলেজ তো দূরের কথা কলেজের বারান্দায় ও আমার চান্স হবে না ! যাক তবে এবার বিয়েটা ঠ্যাকায় কে ? মা,বাবা ও বিয়ে দেবার জন্য রাজী হলো ,কি আর করবে এমন গরুকে তো কোন কলেজে ভর্তি নেবে না ! অবশ্য আমি ইচ্ছে করে এমন করেছি যাতে বিয়েটা জলদি হয় ! আমার জন্য তাই পাত্র খোঁজা হলো ! আমি বলে দিয়েছি ছেলে হলেই হলো কোন বাছ বিচার নেই ! আমার শখ তো বিয়ে করা ,বলির পাঠা কে হলো তাতে কি যায় আসে !
প্রথম যে প্রস্তাবটা আসে সেটা ভেস্তে যায় ! যখন শুনলাম পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে খুশিতে সাজতে গিয়ে বাধালাম ঝামেলা ,শাড়ি ,ব্লাউজ সব উল্টো পড়েছি ,খুশির ঠ্যালায় চোখে পরে নি ! চোখে কাজল দিতে গিয়ে যে চোখটা ভুতের চোখ করেছি তা তো মনেই ছিল না ! পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে দাড়ানোর সাথে সাথেই ভূত ভূত বলে সব কয়টা অঙ্গান হয়ে গেল ! আমার আর বিয়েটা হলো না ! ২য় বার ভাবলাম খুব সুন্দর করে সাজতে হবে যাতে দেখা মাত্রই বিয়ে করে ফেলে ,কিন্তু পোড়া কপাল সাজতে সাজতে রাত ১১ টা বেজে গেলো ,বাইরে এসে দেখি তারা চলে গেছে ! খুব কষ্ট পেয়েছিলাম ! মনটা ভেঙে কয়েকশ টুকরা হয়েছিল !
আমি হাল ছাড়ার পাত্রী নই ! ৩য় বার আর কোন ভুল করিনি ! ঠিকমতো সেজে ঠিক সময় চলে এলাম ! পাত্রপক্ষের পছন্দ হলো ! আমি খুশিতে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে লাগলাম ! বিধিব্যাম পাত্রপক্ষের সামনে রাখা সেমাই এর পিরিচ সহ সেমাই গিয়ে পড়ল পাত্রের মুখের উপর ! ব্যাস বিয়েটা গেল ভেস্তে ! শুনেছিলাম পাত্রের নাকি কপাল ফুলে উঠেছিল ! ৪র্থ বার ও নাচতে গিয়ে শাড়ি খুলে পড়লাম পাত্রের মামার কোলে ,কে জানত বিয়েটা যাবে ভেঙে !
এই ভাবে সাতটা হওয়া বিয়ে ভেস্তে গেল আমার ! এবার আর কোন ভুল করলাম না ! এবার বিয়েটা আটকায় কোন শালায় দেখি ! কি যে খুশি লাগছে কি করে বোঝাবো ! এমন সময় পাত্রের ফোন এলো জলদি ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললাম ! ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে হ্যালো বলল ! আমি ফোনটা বিছানার উপর রেখে দিলবার ড্যান্স দিলাম,খুশিতে মনেই ছিল না হবু বর লাইনে আছে ! ২০ মিনিট ড্যান্স করার পর মনে পড়ল হবু জামাই মোর লাইনে আছে ! খুশিতে ফোন ধরে দেখি সে এখনো লাইনে ! এবার তো আমি হেব্বি খুশি ,খুশির ঠ্যালায় ফোন ধরে বললাম” হ্যালো আব্বা !”
পরেরদিন শুনলাম বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে ! আমার কি দোষ বলুন তো ? খুশির ঠ্যালায় মনে ছিল না কি বলতে কি বলেছি তাই বলে এভাবে মন ভাঙা উচিত হয় নি ! আমি ও নিরাশ হই নি ,৮ টা গেছে তো কি হইছে আরও তো পোলা আছে! আমার ইচ্ছে একটাই , ” বিয়ে করা ! ” আমি দমার পাত্রী নই !
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত