আলিয়ার বিয়ের এক বছর চলে।বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি মার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক তার,কোনদিন মনোমালিন্য হয়নি। শ্বশুর নেই,স্বামী রিহান,ওর মা আর আলিয়া এই তিনজনের পরিবার এখনো। অবশ্য তার এক বড় ননদ আছে,বিয়ে হয়ে গেছে। আলিয়া একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলেও তার সাহিত্য ভীষণ ভালো লাগে।তার শাশুড়ি মাও নাকি বাংলার ছাত্রী ছিলেন তাই বিয়ের পরো সাহিত্যচর্চাটা এখন জমে উঠেছে দুজনের।চাকরি করে বলে শ্বাশুড়ি কোনদিন বাঁধা দেয়নি।বরং সন্ধ্যার সময় ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফিরলে মেয়ের মতোই কাছে টেনে নিয়েছে।মাঝেমধ্যে অসুস্থ বোধ করলে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়েছে।নিজেই রান্না করে খাইয়েছে।
আলিয়ার মা এখন মাঝে মাঝে অভিমান করে বলেন,’আর একটা মা পেয়ে,এই মাকে ভুলে গেলি’।রিহানও মজা করে বলে,’কত ভাবলাম শাশুড়ি ভার্সেস বৌমা দেখব,সে তো আর দেখতে দিলে না তোমরা’। তখন বৌ-শ্বাশুড়ি হেঁসেই একাকার। এভাবে ভালোই চলছিল তাদের সুখের সংসার।হঠাৎ করেই শাশুড়ি মা একদিন মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন।ভাগ্যক্রমে আলিয়া বাড়ি ছিল সেদিন শুক্রবার বলে।তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। প্রায় দিনপনেরো পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন শাশুড়ি মা।হিপবোন ভেঙেছিল,অপারেশন করতে হয়েছিল,এখন একদম রেস্টে থাকতে হবে।আলিয়া কদিন ছুটি নিল,তারপর রিহান কদিন ছুটি নিল,শেষে একদিন শাশুড়ি মা বললেন
-তোরা এভাবে কদিন ছুটি নিয়ে কাটাবি,একটা আয়া রাখ
– কিন্তু মা,তোমাকে একা একদম আয়ার হাতে ছেড়ে দেব??
-দেখ অালিয়া,এখন আমি অনেকটা সুস্থ,একটা আয়া হলেই চলে যাবে,অত চিন্তা করিস না।
শেষমেশ একটা আয়ার ব্যবস্থায় করা হল,ঠিকই তো কদিন আর ছুটি নেবে?? একদিন অফিস চলাকালীন আলিয়ার ননদের ফোন পেল,মায়ের অসু্স্থতার সময় দেশে ছিলো না ননদ। স্বামীর সাথে নপালে বেড়াতে গিয়েছিল সে, এই ফিরেছে কিছুদিন হলো।মনে হয় মাকে দেখতে আসবে বলে ফোন করছে,আলিয়া ফোনটা ধরল।
-ভাবি তাড়াতাড়ি বাড়ি এস??
-কি হয়েছে??
-তুমি তাড়াতাড়ি এস। ফোনটা রেখে তড়িঘড়ি দৌড়াল অালিয়া,কে জানে কি হয়েছে?? হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ফিরল। আলিয়া দেখল ননদ গম্ভীর মুখে বসে আছে
-মা…মা ঠিক আছে??
-মা ঘুমাচ্ছে,আমার সাথে এখনো দেখা হয় নি
-তাহলে ডাকলে কেন??
-তোমাদের আক্কেল টা কি ভাবি?তোমাদের কাছে মায়ের চেয়ে চাকরির কদর বেশি।চাকরি যাবে তাই মাকে আয়ার হাতে ফেলে চলে যাচ্ছ,একটুও বিবেকে বাঁধছে না। মাথা গরম হয়ে গেল অালিয়ার। এটা বলবে বলে এইরুপ ছুটিয়ে নিয়ে এল।ননদ তখনও বলে যাচ্ছে
-নিজের মা হলে পারতে এইরকম করতে??
-তা তুই নিজের মার জন্য কি করলি,আমার এই অবস্থা শুনেও তো তোর বেড়ানো শেষ হলনা?? শাশুড়ি মা হুইলচেয়ার ঠেলে কখন এসেছেন আলিয়া এবং তার ননদ খেয়ালই করেনি…
-এভাবে কেন বলছ মা,আমরা ফেরার টিকিট পাচ্ছিলাম না তাই মেয়ে মায়ের কথার উত্তর দিল।
-ফিরেছিস তো এক সপ্তাহ হল,এতদিনে আসার কথা মনে পড়ল, না কি আয়া রেখেছে এই খবরটা পেয়ে কথা শোনাবার সুযোগ টা ছাড়তে পারবি না বলে এলি??
-তুমি তো বলবেই মা,তোমাকে ভাবি ন্যাকা কথাই অন্ধ বানিয়ে রেখেছে। তাই কিছু দেখতেও পাবেনা
-তা আমার চোখ খোলার দায়িত্ব আমি তোকে দিইনি??
-তুমি না দিলেও মেয়ে হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে…
– সেই তো মেয়ে হিসাবে তোর দায়িত্ব আছে,তা এক কাজ কর ছেলে একা কেন আমার দেখাশোনা করবে??
তোর ভাইকে যেমন আমি জন্ম দিয়েছি তোকেও দিয়েছি।দায়িত্ব নিয়ে দুজনকে সমভাবে বড় করেছি। আমাকে আজই তোর বাড়ি নিয়ে চল,তোরও একটা কর্তব্য আছে.এবার মেয়ে চুপ করল।শাশুড়ি মা বললেন,
-অন্যকে কিছু বলার আগে নিজের দিকে একবার দেখিস কি করছিস?তোর শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে আজ ঝগড়া করে এলি নিশ্চয়,তাই আমার ঘরেও এলি সুখ ছিন্ন করে আগুন লাগিয়ে দিতে। ননদ আর কোন কথা বললো না। শাশুড়ি মা এবার হুইলচেয়ার টা নিয়ে আলিয়ার পাশে গেল ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল
-ঘরে চল,কাল রাতে রিহান একটা নতুন বই খুজে এনেছে।আজ সেটা পড়ব। ওদের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল আলিয়ার ননদ,এ সম্পর্ক নষ্ট করা যে সহজ না সেটা সে আজ হাড়ে হাড়ে টের পেল।
[সমাজে কিছু মানুষ সত্যিই আছে।যারা বিয়ের পর নিজে অসুখী হলে অন্যকেও সেই অসুখে টেনে আনতে চাই।কিন্তু একজন যদি দায়িত্ব নিয়ে সেটা সামলান, তাহলে সংসার টা সোনার সংসারী হয়।]
গল্পের বিষয়:
গল্প