বিয়ের প্রথম প্রথম শ্বশুর বাড়ির কান্ড কারখানা দেখে অবাক হয়ে যেত দিশা। তার শাশুড়ি মা উকিল,শ্বশুর মশাই ব্যাংকে চাকরি করতেন অবসর নিয়েছেন।সকালে উঠেই শ্বশুর মশাই সোজা রান্না ঘরে, রান্নার লোক থাকলেও সে সকালে আসতো না তাই তিনিই সকালের নাস্তা বানাতেন।দিশাও একটা স্কুলে চাকরি করে,প্রথম দিন শ্বশুর মশাইকে রান্না ঘরে দেখে দিশা তাড়াতাড়ি তাকে সাহায্য করতে গিয়েছিল কিন্তু তিনি বললেন
-আরে তোমার স্কুল আছে না,যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও,আমি এদিকটা সামলে নেব।
– কিন্তু বাবা আপনি একা??
-দেখো যখন চাকরি করতাম তখন আমি আর তোমার মা একসঙ্গে নাস্তা বানাতাম,এখন তো আমার অবসর তাই এই কাজটা থেকে তোমার মাকে অবসর দিয়েছি,বলে হেসে উঠলেন তিনি।
দিশা অবাক হয়ে গিয়েছিল,ছোটবেলা থেকে সে দেখে আসছে অন্যরকম,বাবা বাইরের কাজ করবে আর মা বাইরের এবং ঘরের।তার বাড়িতে বাবা,দাদা কাউকে সে দেখেনি এইসব কাজ করতে।মাকে দেখেছে সব ঘরের কাজকর্ম করে বাবাকে সব গুছিয়ে দিয়ে কোনো রকমে নাকে মুখে গুঁজে অফিসে ছুটতে।ছুটির দিন মায়ের ছুটি নেই,মাকে সেদিন স্পেশাল ডিশ বানাতে হবে,এছাড়াও ঘরের বাকি কাজ গুলো তো আছেই। দিশা বড় হওয়ার পর মাকে সাহায্য করত,মাও তাকে এটা সেটা করতে বলত কিন্তু দাদাকে কোনদিন বলত না,দিশাও ভেবেছিল এটাই স্বাভাবিক। এ বাড়িতে আসার পর দেখল এখানে কাজের কোনো ভাগ নেই,দিশা তার স্বামী আবিরের অফিস বেরোনোর আগে রুমাল,ফোন,গাড়ির চাবি সব গুছিয়ে রাখত যেমন তার মাকে দেখতো বাবাকে সব গুছিয়ে দিতে।নিজে বেরোনোর আগে দেখতো তার জিনিস গুলোও আবির সব গুছিয়ে দিয়ে গেছে।
এবাড়িতে ছুটির দিনে কোনোদিন দিশা,কখনও আবির কখনও মা স্পেশাল রান্না করতেন।কাজের মেয়ে না এলে সবাই হাতে হাতে কাজ করে নিতেন,ধীরে ধীরে দিশাও এতে অভ্যস্ত হয়ে গেলো আর দিশার খুব ভালোও লাগতো এগুলো। দিশার শাশুড়ি মা একদিন বললেন-সেই বিয়ের পর থেকে তো বেয়াই,বেয়ানের সাথে সেরকম দেখাসাক্ষাৎ হলো না,এককাজ করনা দিশা এই রবিবার ওনাদের নিমন্ত্রণ কর। সেইমতো দিশার মা,বাবা,দাদা সবাই এলেন রবিবার,দিশা একটা কথা ভেবে খুব মজা পাচ্ছিল যে এবাড়িতে এসে তার মা-বাবার প্রতিক্রিয়া কি হবে?? যা ভেবেছিল তাই,হাঁ হয়ে গেলো ওরা,দিশার মা দিশাকে একা পেয়ে বলে বসলেন-এসব কি রে,তুই তো আগে বলিসনি??
-বললে বিশ্বাস করতে??তার থেকে ভালো নিজের চোখে দেখো। খাবার সময় দিশার মা বললেন- রান্না গুলো খুব ভালো হয়েছে।
-তার জন্য বাবাকে আর মাকে ক্রেডিট দাও সব রান্না ওনারাই করেছেন,দিশা বলল।
-যাই বলুন বেয়ান কিন্তু খুব ভালো ট্রেনিং দিয়েছে,দিশার বাবা হাসতে হাসতে বললেন।
-তা আপনিও ট্রেনিং নিন না,বিয়েনের একটু সুবিধা হয়।
-পাগল নাকি একবার শিখলে আর নিস্তার নেই।
-একটা কথা বলি বেয়াই কিছু মনে করবেন না,সংসারটা যখন দুজনার তখন কাজগুলোও দুজনে মিলে করলে ভালো হয় না বলুন,এই যে দিশার কাছে মাঝেমাঝেই শুনি বেয়ানের হাতে,কোমরে ব্যথা তখন আপনার মনে হয় না যে একটু সাহায্য করে দিই। চুপ করে থাকেন দিশার বাবা, সত্যি যখন দিশার মা ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে কাজ করেন তখন মন হয় যদি একটু কাজ এগিয়ে রাখেন কিন্তু পারেন না,কোথায় যে আটকায়।
-আসলে কি বলুনতো আমরা নিজেরাই এমন কাজ গুলোকে ভাগ করে দিয়েছি না যে নিজেরাই আর সেই গন্ডি পেরোতে পারছি না, কিন্তু একবার গন্ডি পেরিয়ে দেখবেন আপন জনদের মুখের হাসির থেকে প্রিয় আর কিছু নেই।
শ্বশুর মশায়ের কথা শুনে দিশা তার বাবার মুখের দিকে একবার তাকাল,বাবা রেগে গেছেন কিনা বুঝতে পারল না।
কিছুদিন পর মার বাতের ব্যথা আবার বেড়েছে শুনে দিশা ফোন করল মাকে
-মা খুব কষ্ট হচ্ছে??
-না রে একটু কমেছে।
-জমিলা খালাকে বলো একটু গরম পানি করে দিতে।
-কাজে আসেনি রে ছেলের শরীর খারাপ।
-সে কি মা তুমি আগে কেন বলোনি,আমি যাই তাহলে??
-কোন দরকার নেই,তোর দাদা আর বাবা মিলে ভাতে ভাত করছে ওতেই হয়ে যাবে।
-কি বলছো মা?? বাবা..দাদা.
– হ্যাঁ রে দিশা ওরা গন্ডি টা পেরোতে পেরেছে,অনেক সময় লাগল তবুও পেরেছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প