সিনিয়র ভাইয়া

সিনিয়র ভাইয়া
‘হ্যালো ভাইয়া! আমি প্রেগন্যান্ট! তুমি বাবা হতে চলেছো। কংগ্রেচুলেশন!’ – শুনেই মেজাজ খারাপ করে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো আবীর। দু-বছর হলো বিয়ে হয়েছে কিন্তু ভাইয়া ডাকার বদ অভ্যাসটা গেলো না নীলার। আবীর নীলার চেয়ে ৫ বছরের বড়। নাহ! ৫.৫ বছর ইন ফ্যাক্ট। প্রতিবেশি ছিল তারা। স্কুলেরও সিনিয়র ছিল দেখে তাকে ভাইয়া বলেই ডেকে এসেছে। আবীরের মনে নীলার জন্য অঢেল ভালোবাসা থাকলেও তার লজ্জা কাটিয়ে নীলাকে প্রেমের কথা বলা হয়ে উঠেনি কখনো। তাই আর তাদের প্রেম করা হয়নি। বিয়ের আগ পর্যন্ত অগত্যা তাকে ভাইয়া হয়েই থাকতে হয়েছে। বিয়ে হয়েছে পরিবারের ইচ্ছেতে। কিন্তু আবীরের মনে যে কত হাজার লাড্ডু ফুটেছে তার হিসেব নেই।
বিয়ে শেষে যখন বাসর রাতের পালা তখন তার সকল আশা ভরসা ভেঙে দিলো নীলার সেই হাই তুলতে তুলতে বলা- ‘ভাইয়া, খুব ঘুম পাচ্ছে’ শুনে। ভাইয়া! কে ভাইয়া! ঘুম পাওয়া দোষের না, কিন্তু ভাই!!! বউ কখনো ভাই ডাকে!
এরপর সে হাজার চেষ্টা করেও নীলাকে ভাই বলা থেকে আটকাতে পারেনি। একবার আবীর নীল শাড়ি, নীল কাচের চুরি আর নীল টিপ এনে নীলাকে বলেছিল পরে যেন ছাদে আসে। ঠিক সন্ধ্যার একটু আগে নীলা এসেছিল। ঢলে যাওয়া সূর্যের আলোয় পরীর মতোন লাগছিল তাকে। আবীর অনেকক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এরপর শুনতে পেল নীলা বলছে- ‘ভাইয়া, দেখো! দেখো! আকাশটা কি সুন্দর! সূর্য ডুবে যাচ্ছে!’ আবীরের এত মেজাজ খারাপ হলো যে সে ছাদ থেকে উঠেই চলে গেল।
অফিসে একদিন খুব কাজের চাপ। আবীর খুব মনোযোগ দিয়ে তার টিম নিয়ে কাজ করছে। এমন সময়ে নীলার ফোন আসে। হাত খালি ছিল না বিধায় ফোন স্পিকারে দিয়ে হ্যালো বলতেই নীলা বলে উঠে – ‘হ্যালো ভাইয়া! আসার সময়ে চাল আর ডাল নিয়ে এসো তো! বাজার নেই ঘরে।’ একদম পুরো অফিস হোহো করে হেসে উঠে। লজ্জায় অপমানে আবীর ফোন কেটে দেয়। কিন্তু তাতে লাভ হয় না। কারণ এরপরে তাকে অফিসের সবাই মিলে হাসির পাত্র বানাতে কোন কমতি রাখেনি। আবীরের বস পর্যন্ত আবীরকে রেহাই দেয়নি- ‘কি বউয়ের ভাইয়া! বাজার করবেন না!’ বলেই কি বিশ্রী হাসি হাসতে থাকে সে। আবীরের মন চায় ফোন ছুড়ে মেরে ভেঙে ফেলে!
-এত বুঝানোর পরেও তার ভাইয়া ডাকতে হবে! তার নাকি লজ্জা লাগে! আর আজকে যে আমার মাথা কাটা গেলো! তার কি হবে! এরপর সে ঠিক করে যে বাচ্চা নিতে হবে। বাচ্চার নাম রাখবে অন্তরা আর নীলা তাকে অন্তরার আব্বু বলে ডাকবে। ভাবতেই মন খুশিতে ভরে যায়। একদিন অফিসে সবাই মিলে মধ্যান্হ ভোজন করছে তখন নীলার ফোন আসে। অফিসের সবাই জোর জবরদস্তি করে ফোন লাউড স্পিকারে রাখতে বাধ্য করে।
-‘হ্যালো ভাইয়া! আমি প্রেগন্যান্ট! তুমি বাবা হতে চলেছো। কংগ্রেচুলেশন!’ – শুনেই মেজাজ খারাপ করে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো সে। অফিসে কংগ্রেচুলেশনের সাথে সাথে কি মজাটাই না নিল সবাই। যাক গে! নয় মাস পর তাদের ফুটফুটে মেয়ে হলো। নাম রাখলো অন্তরা। কয়েক মাস পর মেয়ে তার মাকে খুব সুন্দর করে মা মা বলে ডাকতো। কিন্তু মেয়ে বাবা আর ডাকে না।
অন্তরার এক বছরের জন্মদিনের দিন অনেক ধুমধাম করে আয়োজন করা হলো। অফিসের লোকজনও আসলো। এসেই বস জিজ্ঞেস করলো যে বউ এখনও ভাইয়া ডাকে কিনা। এরই মধ্যে শুনতে পায় তাদের মেয়ে তাকে ডাকছে- ‘কি ভাইয়া! আসো কেক কাটতে!’ টাস্কি খাওয়া আবীর হতবাক হতে হতেই নীলা ডেকে বললো- ‘কই ভাইয়া! আসো!’
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত