খুব সকালে ফোনের শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। মুখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা তুললাম
আমি:কে?
ওপাশ থেকে:আমারে চিনো না? ওহ চিনবা কেমনে,রিলেশন এর অনেকদিন হইয়া গেছে না,এখনতো আমারে ভুলেই যাবি
আমি:ওহহ সরি বাবুহ দেখি নাই নাম্বারটা
নিলা:আচ্ছা তারাতারি উঠ, আমি পার্কে বসে আছি
আমিঃআচ্ছা আমি এখনি আসতাছি ওহহহ আপনাদের তো পরিচয় দেওয়া হয়নি,আমি আকাশ,বাবা মায়ের দুই মাত্র সন্তান,দুই মাত্র মানে বুজলেন নাহ,আমার একটা ছোট্ট বোন আছে তাই বললাম দুই মাত্র।আমি এইবার ইন্টার ১ম বর্ষে।আর যার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম সে আমার দুনিয়া,ওর নাম জেনেই গেছেন।ও আর আমি একি ক্লাস এ পরি। ওহহ আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে দেরি হইয়া গেছে,ও আবার ফোন দিছে
আমি:বাবুহ এইযে আইসা পরছি,আর ২মিনিট।
নিলা:তোমার আর আসা লাগবে না,আমি চলে যাচ্ছি
আমি:সরি বাবুহ,আইসা পরছি একটু বসো
নিলা:আচ্ছা রাস্তায় জ্যাম থাকায় দৌড়ে চলে আসছি,নাহলে আবার রাগ করে চলে যাবে। ওর কাছে গিয়ে বসে পড়ি আর অনেক হাপাইতাছি।
নিলা:কি হইছে,এমন করতাছো কেন?
আমি:কিছু না এমনি।
নিলা:কিভাবে আসছো?
আমি:রিক্সায় আর দৌড়ে
নিলাঃদৌড়াইয়া আসছো কেন
আমি:অনেকক্ষন ধরে তুমি বসে আছো,দৌড়ে না আসলে তো আরও দেরি হতো,তাই আসলাম
নিলা:কই আমার চকলেট?
আমি:সরি বাবুহ,আজকে তাড়াহুড়ো করে চলে আসছি তো তাই মনে নাই
নিলা:ওহহ আচ্ছা(অভিমানী স্বরে)
আমি:রাগ করছো?
নিলা:নাহ(কিন্তু কষ্ট পাইছে)
আমি:এই নেও তোমার চকলেট
নিলা:থ্যাংকস বাবুহ(অনেক খুশি হইছে)
আমিঃচলো ওই দিকটায় যাই
নিলা:চলো
আমরা হাটছি,আমি শুধু ওর দিকেই তাকাইয়ে আছি,আল্লাহ এতো সুন্দর মানুষ আমার জীবনে উপহার দিবে ভাবতেই পারিনি,
নিলা:ওই চুপচাপ কেন এতো হুম?
আমি:কই?
নিলা:বাবুহ আমার জন্মদিন কবে মনে আছে?
আমি:নাতো(মজে করে বললাম)
নিলা:কিহ,(বলেই দিলো একটা ঘুসি আমার বুকে)
আমি:আরে মনে আছে, মজে করলাম
নিলা:এইবার আমার জন্মদিনে আমাকে একটা কালো শাড়ি দিবা ওকে?আমি ওইদিন শাড়িটা পড়ে সারাদিন তোমার সাথে ঘুরতে চাই
আমি:আচ্ছা মহারানি
নিলা:আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?(আমার হাতটা শক্ত করে দরে)
আমি:হুম বলো।
নিলা:আমি যদি কখনো না থাকি তুমি কি অনেক কষ্ট পাবা?
আমি:এই কি বলো হুম?তুমি থাকবা না মানে কি?
নিলা:আরে বলো না?
আমি:তুমি কি বলতাছো?বাদ দিবা এই বিষয় নাকি আমি চলে যাবো?
নিলা:আচ্ছা আর বলবো না
আমি:…….(আমার চোখ দিয়ে শুধু শুধুই পানি বের হইতাছে)
নিলা:এই পাগল এই দিকে তাকাও?
আমি:……..
নিলা:তাকাও না? ওরদিকে তাকাম আর ও আমার কপালে অলতো করে একটা চুমু খেল
আমি:আর কখনো এই কথা বলবা না,না হলে আমি আর আসবো তোমার সাথে দেখা করতে
নিলা:আচ্ছা বাবা আর বলবো না,এখনতো একটু হাসো
আমি:হুম
নিলা:আচ্ছা চলো এখন বাসায় যাই?
আমি:আচ্ছা চলো। তারপর আমি আর নিলা পার্ক থেকে বেড় হয়ে একটা রিক্সায় উঠলাম,আমি ওর উড়ে যাওয়া এলোমেলো চুল গুলা দেখতেছিলাম।।
নিলা:এই যে মিষ্টার কি দেখতেছেন হুম?
আমি:কোনো একটা ডানা কাটা পরি,,
নিলা:হইছে আর পাম দিতে হবে না,,,(কিছুটা লজ্জা পেয়ে)
আমি:(অনেক ইচ্ছে করছে ওর চুল গুলা ঠিক করে দিতে,তাই ওর এলোমেলো চুল গুলা ওর কানে গুঁজে দিলাম)
নিলা:এই কি করতাছো?
আমি:আমি যাতে পাগল না হই সেই ব্যাবস্থা করলাম।
নিলা:(মাথা নিচু করে বসে আছে) কিছুক্ষণ পরে ওর বাসার সামনে এসে পরলাম,তারপর ও চলে গেলো। আমিও আমার বাসার সামনে এসে নেমে পরলাম। রাত্রে যখন খাবার খেতে ছিলাম তখন নিলা ফোন দিলো,,,
নিলা:কি করে আমার বাবুটা?
আমি:খাইতাছি,তুমি কি করো?
নিলা: শুয়ে আছি,আচ্ছা খেয়ে ফোন দিও?
আমি:ওকে।
এই ভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর ১৩ এপ্রিল চলে আসলো, ১৪ এপ্রিল ওর জন্মদিন,তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার খেয়ে ওরে ফোন দিয়ে বললাম আমি আসতেছি। তারপর গেলাম ওর বাসার সামনে,তারপর ও আসলো,
নিলা:এতো সকালে কেন?
আমি:শপিং এ যাবো।
নিলা:আমার কালো শাড়িটার জন্য
আমি:নাহ আমার অ্যান্ডারওয়ার কিনতে হবে,(মজা করে বললাম)
নিলা:শয়তান, আজকে তোমারে যে কি করমু,(বলেই দিল একটা ঘুসি)
আমি:আওচ ব্যাথা পাইছি
নিলা:চাপা ছাইড়া লাভ নাই, আদর করমু না হুম
আমি:আচ্ছা করা লাগবে না চলো
নিলা:হুম শয়তান চলো একটা রিক্সা নিলাম,তারপর গেলাম শপিংমল এ
নিলা:ওই নামো,এসে পরছি
আমি:হুম তারপর অনেকক্ষণ ঘুরবার পরেও ওর শাড়ি পছন্দ হলো না,
আমি:এই শাড়িটা দেখো
নিলা:মাশাল্লাহ আমার বাবুটার চয়েজ আছে দেখি
আমি:আমার কাছে ভালই লাগতাছে,তোমারে না মানাইলেও আমার বাবুটাকে খুব ভালো মানাবে।
নিলা:আপনার বাবুটাকেই মানালে চলবে বুজছেন
আমি:হুম তারপর শপিং করলাম ওর জন্য আর আমার জন্য,তারপর বাসায় চলে আসলাম। রাত্রে নিলার নাম্বার থেকে ফোন আসলো,আমি অনেকটা হাসি মুখে ফোনটা তুললাম।
আমি:হুম বাবুহ বলো
ওপাশ থেকে: আপনি কি আকাশ ভাইয়া(কান্না জড়িত কন্ঠে)
আমি:হুম কিন্তু আপনি কে?
ওপাশ থেকে:আমি রিয়াদ নিলা আপুর ছোট্ট ভাই,আপনি এক্ষুনি লাইফলাইন হসপিটালে চলে আসেন ভাইয়া
আমি:কেন বলার আগেই ফোনটা কেটে দিলো আমি তারাতারি বাইকটা নিয়ে বের হলাম,হসপিটাল এ গিয়ে আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম,
আমি:নিলার কি হইছে(কান্না করতে করতে)
নিলার আম্মু:ও কিছুক্ষন আগে কি যেন কিনতে রাস্তায় গিয়েছিল তখনি একটা গাড়ি ওরে,,,,,
আমি:(কিছু বলার শক্তি পেলাম নাহ) হঠাৎ অজ্ঞন হয়ে গেলাম যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি হসপিটাল এর বেডে শুয়ে আছি আমি তারাতারি উঠে নিলারে খুজতে লাগলাম,
আমি:নিলা, নিলা এই নিলা
রিয়াদ:ভাইয়া আপু আর নেই(কান্না করে দিলো)
আমি:(আমার উপর যেন আকাশ ভেঙে পরলো)কিহ??(বলেই নিলার বেডে গেলাম
আমি:নিলা তুমি আমারে ছেড়ে যাবা না বলছিলা না,তাহলে আজকে কেন আমারে ছেড়ে চলে গিয়েছ?আমি কেমন করে থাকবো তোমারে ছাড়া(কান্না করতে করতে বললাম) তারপর অনেকক্ষন পাগল এর মতো কান্না করলাম,কারন আমি জানি আমি আমার জীবন থেকে কি হারিয়ে ফেলেছি।তারপর ওরে বাসায় আনা হলো,তারপর গোসল,তারপর কবর দেওয়ার পালা,তখন আমি ওরে দেখে পাগল প্রায় হয়ে গেছিলাম,অনেক চিৎকার করে কান্না করলাম,কিন্তু ও ফিরে এলো নাহ,তারপর আস্তে আস্তে সবাই সবার বাসায় চলে গেলো,শুধু আমিই বসে রইলাম আম্র পাগলীটার পাশে
আমি:এই নিলা তুমি তো বলছিলা কালকে কালো শাড়িটা পরে আমার সাথে সারাদিন কাটাবা,এখন কে পরবে তোমার এই শাড়ি? আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি পেলাম নাহ।।।।। আজ প্রায় ৫বছর হয়ে গেছে ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি এখনো ওর ওই কালো শাড়িটা নিয়েই রাত্রে ঘুমাই,যখনি ওই শাড়িটা আমার কাছে থাকে মনে হয় নিলা আমার পাশেই আছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প