সন্ধ্যার দিকে ছোট বোন জান্নাত ফোন করে বললো, ওকে শপিংমল থেকে বাসায় নিয়ে আসতে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখন সে একা একা বাসায় ফিরতে পারবে না। কথাটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো৷ শপিং করতে গেছে সেই দুপুরে আর এখন সন্ধ্যা। মেয়েদের এই একটা সমস্যা ওরা শপিংমলে ঢুকলে দিন দুনিয়ায় হিসাব থাকে না। শপিংমলের সামনে এসে জান্নাতকে ফোন দিলাম। ও ফোনটা রিসিভ করে বললো,
– ভাইয়া, একটু কষ্ট করে ৩য় তলায় এসে পরো। আমার একটা জিনিস খুব পছন্দ হয়ছে। অল্প কিছু টাকার জন্য কিনতে পারছি না ফোনটা রেখে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আজকেও আমার কিছু টাকা জলে যাবে সিড়ি দিয়ে যখন উঠতে যাবো তখন খেয়াল করি সিড়ির সামনের দোকানে একটা মেয়ে টুলে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। আর দোকানের লোকটা মেয়েটাকে বলছে,
~”আপা, আপনার যদি কিছু কিনার ইচ্ছে থাকে তাহলে কিনেন আর যদি ইচ্ছে না হয় তাহলে চলে যান। শুধু শুধু বসে থেকে দোকানে ভিড় করবেন না” মেয়েটা দোকানদারের কথা শুনে তবুও উঠলো না।আগের থেকে আরো বেশি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। মেয়েটার চোখে মুখে এক ধরনের আতংক।বার বার কাকে যেন ফোন দিচ্ছে কিন্তু মনে হয় ফোনটা কেউ রসিভ করছে না। ভালো করে মেয়েটার দিকে খেয়াল করলাম। বয়স ১৬-১৭ হবে। সাদা সালোয়ার কামিজে মেয়েটাকে খুব অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগছে। হঠাৎ আমার একটা জিনিস মনে হলো। জান্নাতকে ফোন দিয়ে বললাম,
— তোর জিনিস আমি পরে কিনে দিচ্ছি তুই এখন একটু তাড়াতাড়ি নিচে আয় নিচে নেমে জান্নাত বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-তোকে উপরে যেতে বললাম আর তুই আমাকে নিচে নামালি আমি জান্নাতকে টুলে বসা মেয়েটাকে দেখিয়ে বললাম,
— মেয়েটার মনে হয় একটু সমস্যা হচ্ছে। তুই একটু হেল্প কর গিয়ে জান্নাত যখন মেয়েটার সাথে কথা বলছিলো আমি তখন দোকানদারকে একটা জামা দেখাতে বললাম। একটু পর যখন মেয়েটা টুল থেকে উঠলো আমি সাথে সাথে সেই টুলে বসে জামাটার দামাদামি করতে লাগলাম। মেয়েটার চলে যাওয়া দেখে দোকানদার আমাকে বললো,
~ কি অদ্ভুত মেয়েরে ভাই। কোন কিছু না কিনে দুই ঘন্টা ধরে এইখানে শুধু শুধু বসে ছিলো। কতক্ষণ ধরে বলছি উঠে যান উঠে যান কিন্তু যাবার নাম নেই আমি কিছু না বলে জামাটা ভালোভাবে দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর জান্নাত যখন আসলো তখন ওর কানে আস্তে আস্তে বললাম,
— যেটা ধারণা করেছিলাম সেটাই হয়েছে কি? জান্নাত বললো,
– হ্যাঁ, জিনিস কেনাকাটা করছিলো তাই বুঝতে পারে নি কখন ব্লিডিং হচ্ছে। যখন বুঝতে পারে তখন ভয় পেয়ে যায়। তাছাড়া সাদা সালোয়ার পড়া ছিলো । এক বান্ধবীকে বারবার ফোন দিচ্ছিলো আসার জন্য কিন্তু সে ফোটটা রিসিভ করে নি দোকান থেকে বের হবার সময় দোকানদার লোকটাকে বললাম,
— প্রজাপতির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা যেমন ফুলের বাগান তেমনি মেয়েদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো শপিংমল। প্রজাপতি যেমন দ্রুত একফুল থেকে আরেক ফুলে উড়ে বেড়ায় তেমনি মেয়েরাও এক দোকানে বেশিক্ষণ না থেকে অন্য দোকানে ছুটে বেড়ায়। একটা মেয়ে আপনার দোকানে এতক্ষণ ধরে চুপচাপ বসে আসে তারমানে নিশ্চয়ই ওর কোন সমস্যা হচ্ছে। আপনার বিষয়টা বুঝা উচিত ছিলো কারণ আপনার বাসাতেও মা বোন আছে রিকশায় করে আমি আর জান্নাত বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ জান্নাত বললো,
– ভাইয়া তুই খুব ভালো রে। আজকে তো এমন অবস্থায় আমিও পরতে পারতাম আমি মুচকি হেসে বললাম,
— এমন অবস্থায় পরলে আমার মত তোকেও কোন না কোন ভাই হেল্প করতো জান্নাত তখন বললো,
– বাসায় গিয়ে তোর প্যান্টটা পাল্টে আমাকে দিস। আমি ধুঁয়ে দিবো নে। পিছনে রক্তের দাগ লেগে আছে সোফায় বসে সবাই টিভি দেখছি। এমন সময় পর পর দুইবার হাঁচি দিলাম। আমার হাঁচি দেওয়া দেখে জান্নাত একদিকে চলে গেলো আর মা আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকলো। জান্নাত বললো,
– তোর মনে হয় করোনা হয়ছে। তোর কাছে যাওয়া যাবে না। এমনিতেই আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে
আমি তখন বললাম,
— যখন শপিং করতে যাস তখন করোনার কথা মনে থাকে না? আর মাকে বললাম,
— আমি তোমার ভাসুর না যে লজ্জা পেয়ে মুখ ঢেকে রাখতে হবে। আমি তোমার ছেলে। লজ্জার কিছু নেই
আমার কথা শুনে মা রাগে রিমোটটা আমার দিকে ছুড়ে মারলো। আর আমি তাড়াতাড়ি হাসতে হাসতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। আমার এলার্জির সমস্যা আছে তাই বারবার হাঁচি আসছে। ফার্মেসিতে গেলাম এলার্জির ঔষধ আনতে। যখন ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনছিলাম তখন ফার্মেসীতে একটা মেয়ে আসলো। দোকানে বেশি লোক থাকার কারনে মেয়েটা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছিলো না। শুধু বারবার দোকানদান লোকটাকে ইশারা করছিলো জিনিসটা দেওয়ার জন্য। দোকানদার লোকটা ইশারাটা বুঝেও না বুঝার অভিনয় করছিলো আর মিটমিট করে হাসছিলো। আমি তখন মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বললাম,
— তুমি কি এইখানে ড্রাগস নিতে এসেছো না কি; যে এইভাবে ইশারা করছো? যেহেতু দেখতেই পাচ্ছো দোকানের লোকটা তোমার ইশারা বুঝেও না বুঝার অভিনয় করছে তখন মুখ ফুটে বলতে পারো না, আপনার মা বোনের পিরিয়ড হলে যে জিনিসটা ব্যবহার করে আমি সেই জিনিসটাই চাইছি আমার কথা শুনে মেয়েটা চুপ হয়ে রইলো। আমি দোকানদার লোকটাকে বললাম,
–এই মেয়ে নিশ্চয়ই আপনার দোকানে কনডম কিনতে আসে নি, যে আপনি মিটিমিটি হাসবেন। সেনোরা কিনতে এসেছে। সময় সুযোগ হলে বউয়ের কাছে জানতে চাইবেন পিরিয়ডের যন্ত্রণা কেমন হয়। জানার পর নিশ্চয়ই মুখে এই হাসিটা আর থাকবে না দোকানদার লোকটা মাথা নিচু করে রইলো আর আমি দোকান থেকে বের হয়ে বাসার দিকে হাটতে শুরু করলাম। এমন সময় মেয়েটা আমায় পিছন থেকে ডাকলো। আমি দাঁড়াতেই মেয়েটা আমার কাছে এসে বললো,
– ধন্যবাদ ভাইয়া। আসলে আমি মুখ ফোটেই বলতাম কিন্তু অনেক লোক ছিলো দেখে লজ্জা পাচ্ছিলাম।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
— মেয়ে মানুষ একটু লজ্জা পাবে এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু যখন দেখবে তোমার লজ্জাকে অন্য একজন পুরুষ দূর্বলতা ভাবছে তখন মুখ ফুটেই বলবে রুমে শুয়ে ফোনে গেইম খেলছি। এমন সময় শ্রাবণী( আমার গার্লফ্রেন্ড) ফোন দিয়ে বললো,
-পিয়াস, একটু বাসার নিচে আসো তো বাসার নিচে এসে দেখি শ্রাবণী সুবজ রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। খোলা চুল, কপালে ছোট একটা টিপ, চোখে কাজল, হাতে সবুজ কাঁচের চুড়ি আর সবুজ শাড়িতে শ্রাবণীকে ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগছে। আমি অবাক হয়ে শ্রাবণীকে বললাম,
— তুই এইখানে শ্রাবণী মিষ্টি হেসে বললো,
– তোমার পছন্দের সবুজ শাড়ি পরেছি আজ। এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে এসো ঘুরতে যাবো এমন সময় এলাকার এক বড় ভাই আমায় ডাকলো। আমি উনার কাছে গিয়ে সালাম দিতেই উনি মুচকি হেসে বললো,
~কে হয় তোমার? আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম,
— গার্লফ্রেন্ড হয় আমার বড়ভাই শ্রাবণীকে ভালোকরে দেখে বললো,
~এক নাম্বার জিনিস পাইছো দেখছি আমি অবাক হয়ে বললাম,
— এক নাম্বার জিনিস মানে? বড় ভাই তখন বললো,
~মানে তোমার গার্লফ্রেন্ড পুরাই আগুন। যে কোন পুরুষের দেখলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি আবার খারাপ কিছু ভেবো না। আমি তোমার গার্লফ্রেন্ডের সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করলাম আমি মুচকি হেসে ভাইয়াকে বললাম,
— আপনার ছোট রিমি ওরে দেখলেও আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। পুরা এক নাম্বার জিনিস আমার কথা শুনে বড়ভাই আমার কলার চেপে ধরলো। আমি তখন বললাম,
— আরে ভাই, আপনি রেগে গেছেন কেন? আমি তো আপনার বোনের সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করছিলাম। যেমনটা আপনি আমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখে করলেন বড়ভাই তখন আমার শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে রইলো আর আমি তখন বললাম,
— নারীকে মানুষ দুই চোখে দেখে।এক হলো ভালো চোখ আর দুই হলো কুৎসিত চোখ। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলেও এটাই সত্যি বেশিভাগ মানুষ নারীকে কুৎসিত চোখেই দেখে পশ্চিমা আকাশ তখন হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। শ্রাবণী আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
– পিয়াস, আমি এখন পর্যন্ত তোমার চোখে আমার প্রতি কুৎসিত কিছু দেখি নি আমি হেসে বললাম,
— তাহলে কি দেখেছো? শ্রাবণীর গাল বেয়ে তখন একফোঁটা কৃষ্ণবর্ণ জল গড়িয়ে পরলো আর ও বললো,
-দেখেছি শুধুই ভালোবাসা
গল্পের বিষয়:
গল্প