ওনার সাথে আমার পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়ছে।উনি আমাকে পছন্দ করতো,তারপর বাসায় বলে দুই ফ্যামিলির ইচ্ছাতেই আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ের আগে ওনার সাথে যখন মাঝে মধ্য কথা হতো, তখন বুঝেছিলাম উনি অনেক ভালো মনের মানুষ, আর সাদামাটা একটা ছেলে, আর সাদামাটা ছেলেদের ই ভাল লাগে আমার।একটু বোকা বোকা টাইপ হবে,কেয়ার নিবে আর অনেক বেশি ভালোবাসবে আর কি চাই বলুন?
একটা জিনিস খুব ভাল লাগতো, সে টা হলো আমি যখন যেটা, যে রকম বলতাম কখনো না করতো না,আমার চাওয়াটা কে গুরুত্ব দিতো, সম্মান করতো। আর আমাকে না জানিয়ে কোন ডিসিশন ই নিতো না,এটাতে বুঝতাম তার কাছে আমার গুরুত্ব আছে কিনা।ওর কথা টা এইরকম ছিল,কোন ডিসিশন দুইজন মিলে ডিসাইড করলে কোন কিছু বিফলে যাবে না ইনশাআল্লাহ , আর অশান্তিটাও কম হবে।আর এই পয়েন্ট টা ভাল লাগার কারন টা বলি, অনেকে আছে পুরুষ মানুষ মানেই মনে করে সেই সব কিছু,কোন কিছু করার আগে একবার জানানোর ও প্রয়োজন মনে করে না, আবার ও আসে পারসোনালিটির কথা, অনেকে শুধু নিজের ডিসিশন টাই বড় মনে করে। মোট কথা তিনাদের স্ত্রীদের কোন পাত্তাপুত্তাই দেয় না।এই কারনে ওর বিহেব টা বেশ ভালো লেগেছিল।
বিয়ের আগে নামাজে অনেক অমনোযোগী ছিলেন পড়তো আবার পড়তো না।যদি আগেই বলেছিলাম, নিয়মিত নামাজ পড়তেই হবে।উনি এটা জানে নামাজে ফাকি দেওয়া আমি একদম পছন্দ করিনা,আর এটা ভালোর জন্যই যেহেতু বলি,তাই রাগ করলে ও কিছু মনেও করতো না,দ্যান আর নিয়মিত পড়ে কিছুদিন পর আবার ও অফ যায়।আবার ২/৩ ওয়াক্ত পড়বে,আর বাকি গুলা পড়বে না এমন অবস্থা।শুধু মজা করে বলতো, তুমি তো আছো,আর তুমি যেহেতু পড়ো,তাহলে আমার হয়েও একটু পড়ে দিও তাহলেই হবে ,আর যখন রেগে যেতাম তখন কাজে বিজি থাকার ভান করা শুরু করতো।
রোজ অফিস যাওয়ার আগে রুটিন ছিল,সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আর আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফু দিয়ে তারপর বাহির হওয়া।আর যেদিন তাড়াহুড়া করে বাহির হবে ওইদিন কল করে বলে দিতাম যেন এগুলা পড়ে নেয়,নয়তো বিপদ আপদ কখন আসে বলা যায় না।যেদিন পড়তো না,ওই দিন বলতো তুমি ওখান থেকে পড়ে ফু দিয়ে দাও,তাহলেই হয়ে যাবে পাগল একটা। রোজ মাঝ রাতে যখন তাহাজ্জদ নামাজ পড়তাম,তখন উনি বিঘোরে ঘুমাতেন।মাঝে মাঝে যখন জেগে যেতো,তখন বলতাম আসেন একসাথে নামাজ পড়ি।তখন আলসেমি করে বলতো তুমি পড়ো , আর আমার জন্য দোয়া করো।মাঝে মাঝে উনি জেগেও থাকতো তবুও পড়তো না।একদিন রাতে উনি আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, যখন জেগে থাকি, তখন দেখি তাহাজ্জদ নামাজে কান্না করো। নামাজে আল্লাহ কাছে কি চাও বলো তো।
তারপর বলি কিছু না।মোনাজাতে যা চাই সে টা বলতে হয় না।কিন্তু উনি তো শুনবেই।তারপর বললাম, আপনার জন্য দোয়া করি,যেন আপনি ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন,বিপদ আপদ যেন আপনার ধারের কাছেও না আসতে পারে, নিয়মিত নামাজ টা পড়ার তৌফিক দান করুক আপনার। আমাকে যেন এমন ভাবে সারাজীবন ভালোবেসে যান। আর যতোদিন আছি এমন ভাবে যেন একসাথে থাকতে পারি,আর কিচ্ছু চাইনা।আপনার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়।
এইগুলা শুনে বেলকুনিতে চলে গেলেন উনি।আমিও পিছু পিছু যেয়ে জিজ্ঞাস করলাম, কি হয়েছে,কিছু কি ভুল বললাম? তারপর বলে নাহ,কিছু হয় নি।এর পর থেকে একটা দিন ও নামাজ মিস দেয় নি।পরের দিন থেকে খেয়াল করলাম উনিও তাহাজ্জত নামাজের জন্য ঠিক সময় উঠে পড়তো।তারপর বলে চলো একসাথে নামাজ পড়ি।
নামাজের পর যখন জিজ্ঞাস করলাম,আপনি কি চাইলেন?তখন উনি বললেন, আমার স্ত্রী যদি আমার ভালোর জন্য রোজ নামাজ পড়ে দোয়া চাইতে পারে, তাহলে আমি কেন আমার স্ত্রীর ভালো থাকার জন্য, তার মনে আশা,পুরন করার জন্য দোয়া করতে পারবো না আর এটাও আল্লাহর কাছে চাই, বাঁচলে যেন একসাথে বেঁচে থাকি আর মরলে যেন একসাথেই মরি। নিশ্চয় কোন ভালো কাজ করেছি,যার জন্য তোমার মতো একজন কে পেয়েছি,আর আমরা যতোদিন বেঁচে থাকি, ঠিক এই ভাবেই যেন একে অপরের ভালোবাসা হয়েই থাকি। ওর কথা গুলা শুনে আমার কিছু বলার ভাষা ছিল না।
এই জন্যই বলে, যে যেমন মানুষ ঠিক তেমনি একজন সঙ্গী পাবে।আপনি সৎ হয়লে আপনার স্ত্রী ও সৎ পাবেন,ইভেন মেয়েদের ক্ষেত্রেও,আপনি ভালো হয়লে আপনার জীবন সঙ্গীও ভালো হবে ইনশাআল্লাহ
গল্পের বিষয়:
গল্প