“বিয়ে করবে আমায়? প্রশ্নটির উত্তরে একটা থাপ্পড়সহ এমন কিছু কথা শুনতে হয়েছিল যা আমি ওই প্রিয় মানুষটির কাছে আশা করিনি কখনও।আমাদের একবছরের রিলেশনশিপে ও আমার গায়ে সেই প্রথম হাত তুলেছিল।
ভার্সিটির অ্যানুয়াল ফাংশনে প্রথম দেখায় ওর প্রেমে পরে যাই। পরে খোজ নিয়ে জানতে পারি ও আমার জুনিয়র।অনেক চেষ্টা চালিয়ে ওর ডিটেইলস জোগাড় করি।ওর নাম প্রাপ্তি। কিছুদিন দূর থেকে ওকে ফলো করার পর ওকে প্রপোজ করি। ওর একটা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল তারিন। যে আমাকে এ বিষয়ে অনেক হেল্প করেছিল। এরপর রোজ ফোন করা।দেখা করা। খুনশুটি এসব শুরু হলো। রিলেশনে যাওয়ার পর জানতে পারি ও আমায় প্রথম থেকেই পছন্দ করতো। কিন্তু সিনিয়র ভাইয়া বলে কখনো সাহস পায়নি৷আমি ওইদিন খুব খুশি হয়েছিলাম। রিলেশনের প্রথম চারমাস অনেক ভালোকাটছিল। তারপর হঠাৎ ওর কি হলো জানিনা। রোজই ফোনে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিত। কোন কারন ছাড়াই রোজ এমন করায় আমারও খারাপ লাগতো। আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম কিন্তু বুঝতো না।তারিনকে এ ব্যাপারে বলায় ও বললো আমার সাথে নাকি ব্রেকআপ করতে চায়।
ওর এমন অস্বাভাবিক আচরন আমায় খুব ভাবাতো।ফোনেও বারবার ব্রেকআপ এর কথা বলতো। সে সময় আমি মাত্রই ভার্সিটি কমপ্লিট করেছি।নিম্মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হওয়ায় তেমন কিছু দিতেও পারতাম না ওকে।প্রাপ্তি ধনী গরের মেয়ে ছিল।ও আমায় অনেক কথা বলতো কিন্তু আমি কিছুই শুনতাম না। তবুও ওকে ভালোবাসিই বলতাম। ও দোষ করলেও সরি আমিই বলতাম। তবুও আমার ভালোবাসা টিকতে পারেনি। ওর জন্মদিনে সারপ্রাইজ প্লান করেছিলাম।আমার জমানো কিছু টাকা দিয়ে একটা দামী রেস্তোরাঁয় ওর জন্মদিনের জন্য অনেককিছুর অ্যারেন্জমেন্ট করেছিলাম। আগের দিন রাতে একটা মেসেজে বলেছিলাম ঠিক টাইমে পৌছে যেতে। তবুও প্রায় দেড় ঘন্টা লেইট করে প্রাপ্তি আসলো। অনেকটা সেজেগুজে এসেছিল ও।অনেক সুন্দর লাগছিল ওকে।তারপর আমরা দুজনে মিলে কেক কাটলাম। একটু পর ওকে অবাক করে দিয়ে একটি রিং হাতে হাঁটু গেড়ে বসে বললাম,
-আমার অগোছালো জীবন গুছিয়ে যাবে যদি তুমি আমার জীবনে আসো।ভালোবাসি তোমায়। তুমি কি বিয়ে করবে আমায়? অমনি ঠাসসস করে গালে একটা থাপ্পড় পড়লো। থাপ্পড়টা যে প্রাপ্তিই দিয়েছে তা বিশ্বাস হচ্ছিল না। এরপর প্রাপ্তি বলতে শুরু করলো,
-তোর সাহস কি করে হয় প্রাপ্তি চৌধুরীকে বিয়ের প্রোপোজাল দেওয়ার? আমি তো ভেবেছিলাম অনলি টাইমপাস পর্যন্তই থাকবি, বাট বিয়ে?হাহ।তোর কি মনে হয় আমি তোকে কখনো বিয়ে করবো?আরে তোর তো আমার বাড়ির ওয়াচম্যান হওয়ার যোগ্যতা নেই আর তো বিয়ে। শোন নিজে যে স্ট্যাটাস এ আছিস সেই স্ট্যাটাস এই থাক।আমার বরাবরি করার চেষ্টা করিস না। সর সামনে থেকে। কথাগুলো বলে প্রাপ্তি এক মূহুর্তও দেড়ি করলো না। চলে গেলো ওখান থেকে।
সেদিন অনেকটা কষ্ট পেলেও প্রচুর জিদ কাজ করছিল আমার মনে। তাই সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বড় কিছু হবো। তবে মনের মাঝে ওর জন্য ভালেবাসাটা কমাতে পেরেছিলাম না।ওর সাথে দু একবার যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওর বলা কথাগুলো আমায় ওর থেকে দূরে নিয়ে গেছিল। তাই আর যোগাযোগ করিনি এটুকু লিখেই শাওন থামলো। একটি পিচ্চি মেয়ে পাশ থেকে বললো, পাপ্পা দেখো মাম্মাম আমায় বকছে শাওন মেয়েটির কপালে একটা চুমো দিয়ে বললো, মামনী তুমি দুষ্টমি করলে তো মাম্মাম বকবেই তাইনা?চলো এখন সিটবেল্ট পরে নাও। প্লেইন ল্যান্ড করবে। কথাটি বলে মেয়েটির সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো। আজ সাত বছর পর শাওন আবারও বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছে। সেই কতো বছর আগে চাকরি পেয়ে বিদেশে চলে গেছিলো। প্রাপ্তির বলা কথাগুলো এখনো শাওনকে ভাবায়।এখন সে একটা বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিইও।
এয়ারপোর্টে আসার পথে একটা চেনামুখ তার দিকে এগিয়ে আসে। চোখ থেকে সানগ্লাসটি সরিয়ে মুখটি দেখার চেষ্টা করে সে। এটাতো সেই তারিন। তারিন শাওনকে দেখে অনেকটা খুশি হয়।শাওনও খুশি হয়। শাওন তার স্ত্রী ও মেয়েকে গিয়ে গাড়িতে বসতে বলে। তারিন ও শাওন হাটতে হাটতে কথা বলতে থাকে। শাওন একটিবারের জন্যও প্রাপ্তির কতা জিজ্ঞেস না করায় তারিনের অনেকটা খারাপ লাগে। এরপর তারিন শাওনের কাছ থেকে বিদায় নেয়। এবং যাওয়ার সময় একটি চিঠি শাওনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে যায়। নিজের একটি বাংলোতে শাওন ওর ফ্যামিলি নিয়ে ওঠে।রাতে তারিনের দেওয়া চিঠির কথা মনে পরে যায়।তাই চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করে দেয়,
“তোমায় জিজ্ঞেস করবোনা তুমি কেমন আছো। কারন আমি জানি তুমি অনেক ভালো আছো।কি দিয়ে শুরু করবো বুঝছিনা। তবে এটা ঠিকই বলবো, ভালোবাসি তোমায়। আমি এটা জানতাম তুমি আমায় প্রচুর ভালোবাসতে। আমিও তোমায় বাসতাম। প্রতিটা মুহুর্তে ভালোবাসতাম। তোমার প্রতিটা কথায় নতুন করে তোমার প্রেমে পরতাম আমি। আমি তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাইতাম না। কিন্তু কারনটাই এমন ছিলো যে করতেই হয়েছিল। অনেকদিন ধরেই আমার বুকের বা পাশে ব্যাথা হতো। কেন হতো বুঝতাম না।মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পরতাম । তোমার সাথে রিলেশনে যাওয়ার তিন কি চারমাসের মাথায় গিয়ে একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি ও তাতে জানতে পারি আমার হার্টের ট্রান্সপ্লান্ট লাগবে, তবুও ডক্টর বলেছিলো হার্ট ট্রান্সপ্লানট করলেও বাচবো কিনা সন্দেহ।
আমার নিজের এ অবস্থা নিয়ে কি করে তোমার জীবনে পা রাখতাম বলো?একসাথে হয়তো দুটো জীবন শেষ করে ফেলতে হতো। তাই তোমার কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার অনেক চেষ্টা করতাম। কিন্তু সবসময়ই তোমার ভালোবাসার কাছে আমি হেরে যেতাম।কিন্তু শেষমেশ আমি জিতে গিয়েছিলাম। তাই আমার জন্মদিনে তোমার সাথে ওই ব্যাবহার করায় আমি বাধ্য হই।নইলে যে কখনই তোমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারতাম না।ওইদিন যখন তুমি আমায় বিয়ের জন্য বলছিলে আমার মনে হচ্ছিলো তোমায় জরিয়ে ধরে বলতে, ভালোবাসি আমিও। কিন্তু কি বলোতো, তোমার জীবনের চেয়েও বেশি অগোছালো হয়ে পড়েছিল আমার জীবন।
যখন তুমি এই চিঠিটা পাবে তখন আমি হয়তো আর নেই। অনেক আগেই চলে গেছি। তারিনকে সবকিছু আগেই বলেছিলাম। যাতে ও তোমায় কিছু না জানায়। ও তেমনটিই করেছিল। আমি জানি তুমি আমায় এখনও ভালেবাসো,এবং আজীবন বাসবে এটাও জানি। আমিও বাসতে পারতাম। আমাদের গল্পটাও অন্যরকম হতে পারতো। কিন্তু সবকিছুই তো আর আমাদের ইচ্ছে মতো হয়না। আমি না হয় অপূর্নতায়ই থেকে গেলাম। ভালোবাসি শাওন খুব ভালোবাসি ইতি তোমারই প্রাপ্তি চিটিটা পড়ে শাওন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো,। আজ প্রাপ্তির না বলা কথাগুলো পড়ে চোখদুটো জলে ভরে উঠলো শাওনের।
গল্পের বিষয়:
গল্প