পাশের বাড়ির আন্টি অবশেষে আমাকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলল,
-তুমি কি এই বাড়িতে কাজ করো?
অনেকদিন ধরে আন্টির একমাত্র মেয়ে নাতাশাকে পছন্দ করি। কিন্তু সময় করে বলতে পারছি না। আন্টির সাথে বাড়ির নিচে রাস্তায় দেখা। পাশেই তার মেয়েও আছে। দেখতে সুন্দরী। প্রবাদ আছে না, লাখে একটা! নাতাশাও একই। কিন্তু মেয়েটা আমার দিকে তাকাচ্ছে না। মোবাইলে কি যেন করছে। এসব সুন্দরী মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড তো থাকবেই।
আমি প্রতরাণার হাসি দিয়ে আন্টিকে বললাম,
-কেন আন্টি?
-মানে, তোমাকে দেখি রোজ ছাদে এসে কাপড় রোদে দাও। মনে হয় কাপড়গুলো তুমিই ধৌত করো। আবার বিকেলে এসে কাপড় ভাজ করে নিয়ে যাও। বলে কি কাপড় ছাদে রোদ দেই বলে আমি চাকর!
-তারপর আন্টি? আন্টি হেসে বলল,
-কখনো দেখি ব্যাগ ভরে বাজার করো, কখনো বা তোমাদের বাড়ির সিড়ি ঝাড়ু দাও। আবার সেদিন তো দেখলাম রান্না করছো।
-হুম।
-তুমি গরীব মানুষ, অনেক কাজ করায় তোমাকে দিয়ে তাই না? তোমার জামাকাপড়ের অবস্থাও তো নাজেহাল। তোমার মালিক জামাকাপড় কিনে দেয় না?
-দেয় মাঝে মাঝে। এখন আমাকে কি করতে হবে? বলে নাতাশার দিকে তাকালাম। মেয়েটা আমার দিকে তাকালো,কিন্তু তার নজর মোবাইলেই পড়ে আছে।ইশ কত সুন্দর মেয়ে! আন্টি কেশে বলল,
-হ্যা, আমি চাচ্ছিলাম কি তুমি আমাদের বাজারটা করে দিবে! তারা কত দেয় জানি না,কিন্তু আমি তোমাকে তিন হাজার টাকা দিবো! দিনে শুধু একবার বাজার করে দিবে! ব্যস, আর কিছু না,চলবে? আমি ভাবলাম এই বাজার করে দেওয়ার ফলে নাতাশাকে দিনে অত্যন্ত দুইবার দেখা যাবে। বাসায় তো কখনো দেখা যায়,কখনোবা না! ছাদে সপ্তাহে একবার! কিন্তু মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে না! সম্ভবত আমি চাকর বলে! তাই আমি আন্টিকে আবার প্রতারণার হাসি দিয়ে বললাম,
-আসলে আন্টি, এই যে তিনতলা বাড়িটা দেখছেন। এটা আমার বাবার! আন্টি ও নাতাশা যেন আকাশ থেকে পড়ল। নাতাশা এখন ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আন্টির মুখটা হা হয়ে আছে,কিছুক্ষণের মাঝেই মশা বা মাছি ঢুকে পড়বে। আন্টি এক পলকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! নাতাশা নিজেকে সামলিয়ে কচি কন্ঠে বলল,
-মানে?
-মানে আর কি? এই বাড়িটা আমার বাবার। আমি বাবার একমাত্র সন্তান। তাই বাড়িটা আমার। যেহেতু আমাকে কাজ করতে দেখে বলেছেন,আমি চাকর! এর কারণ, আমাদের ফ্যামিলি কাজের লোক পছন্দ করে না। তাই নিজ নিজ কাজ নিজেরাই করি। আপনারা এসেছেন পাশের বাড়িতে কয়েক মাস হলো,তাই আমাকে একথা বলেছেন। ইটস ওকে! আন্টি আশ্চর্য মুখে এক পলকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! মনে হয় অবস্থা জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে! আমাকে বলল,
-সরি বাবা। বুঝতে পারি নি!
-আমি কিছু মনে করিনি আন্টি! নাতাশা একটু আফসোস নিয়ে বলল,
-সরি! আমি ভ্যাটকা হাসি দিয়ে বললাম,
-ইট’স ওকে!
গল্পের বিষয়:
গল্প