গন্তব্যহীন

গন্তব্যহীন
“পৃথিবীর এতো মানুষ মরে তুই মরিস না কেন ” মামীর কথাটা শুনে চোখ থেকে টপ টপ করে পানি খাবারের থালায় পড়ছে।।।চোখ ব্যস্ত পানি ঝড়াতে আর আমি ব্যস্ত খাবার খেতে।।এছাড়া আর কী করব?? কার উপর অভিমান দেখাবো? খাবার রেখে উঠে গেলে ঠিক কখন আবার খাবার পাবো জানা নাই তার থেকে বরং খেয়ে নি।
আমি অপু। ছোট বেলায় মা মারা যাওয়াতে মামা বাড়িতে থাকি।নানা নিয়ে আসে তার সাথে করে।নানা যতদিন বেচে ছিল অনেক আদরে ছিলাম।নানীর গায়ে আাগের মতো শক্তি নাই কিন্ত আগের মতো ভালোবাসা আছে।কিন্তু সেই ভালোবাসা এখন আর আগলে রাখতে পারেনা।নানা বেঁচে থাকতে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়তে পারছি তারপর আর পারি নাই। এতে মামার অন্ন ধ্বংস করছি তার উপর লেখা পড়া অনেক বেশি হয়ে যায়।এখন মামার সাথে জমিতে কাজ করি তার বিনিময়ে কপালে খাবার জোটে। সবাই বলে মা মরলে মামা বাড়ি থাকেনা কিন্ত আমি তো মামা বাড়িতে আছি এতেই আমি খুশি। মা মরলে যে নিজের বাড়ি,নিজের বাবা পর হয়ে যায় এটা মানতে সত্যি কস্ট হয়।
মা মারা যাবার এক মাসের মাথায় বাবা আবার বিয়ে করে।সৎ মা আমাকে একটুও পছন্দ করে না।মাঝে মাঝে বাড়িতে বাবার সাথে দে খা করতে গেলে না খেয়েই আাবার ফিরতে হয়।
“অপু যদি আজ বাড়ি না ছাড়ি তাহলে আমি আর তোমার সংসার করবোনা” মামী কথা গুলো জোরে জোরেই বলছে।। মামা কোনো কথাই বলছেনা।মামা সব সময়ই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।। তবে মামা আজ মুখ খুলেছে। ” শোন অপু প্রতি দিন এক ঝামেলা, ঝগড়া ভালো লাগেনা।তুই এখন আর ছোট নাই তোকে আর কত দিন টানবো এাবার তুই তোর বাড়িতে চলে যা আর আমাদের জ্বালাস না” কথা গুলো বলে গড় গড় করে বলে মামা চলে গেল। তাই তো আর কতোদিন বা পরের অন্ন ধ্বংস করব। আজ রাত টা থেকে কাল চলে যাবো এ বাড়ি থেকে।টুক টাক জামা কাপড় গুছিয়ে একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছি সকাল হলে বেরিয়ে পরবো। অনেকটা পথ চলে এসেছি বাড়ির আার অল্প সময়ের মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে যাবো।।মামা বাড়ি থেকে বের হবার সময় মামা,মামীকে বলে আসছি। আসার সময় মামী আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে বিদায় হতে বললো।আর মামা যেনো হাপ ছেড়ে বাঁচে। যখন আসি তখন দেখি নানী ঘুমাচ্ছে তাই আর ডাকি নাই তাহলে আমাকে যেতে দিবেনা।
বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি। আজ যেনো পা কাপছে বাড়িতে ঢুকতে।। বাড়িতে ঢুকেই দেখি ছোট ভাই টা খেলছে।এবার ক্লাস থ্রিতে পড়ে। আমাকে খুব একটা পছন্দ করেনা।।।আমাকে দেখেই বললো মা মা অপু ভাই আমার খেলায় ভাগ বসাতে এসেছে।।মা,বাবা দু’জনে বারান্দায় বসা ছিলো।বাবার চোখ দে মনে হলো বাবা খুশি হয়েছেন আমাকে দেখে কিন্তু সেই খুশিটা প্রকাশ করতে পারেনি।।আর মা দেখার সাথেই বললো”, কখন যাবো”।বলতে সাহস পাচ্ছিনা যে আজ থেকে আমি এখানে থাকবো। দুপুর হয়ে গেছে, বাড়ির সবাই খেতে বসেছে, বাবা প্রথম বার ডাকলেও দ্বিতীয় বার তার ডাকার সাহস হয় নি।। না খেয়েই বসে আছি।খুব খিদা লাগছে কিন্তু খাবার চেয়ে খাবার সাহস টুকু নেই।।।
বাবাকে বললাম আজ থেকে আমি বাড়িতে থাকবো।কথাটা শুনে বাবার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল।। আমি জানি বাবার মুখটা কেনো ফ্যকাশে হলো।।।আমার থাকার কথা শুনে মা বাড়িতে লঙ্কা কান্ড বাধিয়ে দিল।।আর বাবা তাকে বোঝাবার চেষ্টা করছে আর আমি দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে যাচ্ছি।
মা ঘরে রান্না করা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি আমার চাকরনা যে আমাকে রান্না করে খাওয়াবে।বাবা অনেক বোঝালেন কিন্তু কোনো কিছুতে তিনি রাজিনা। আমি যদি থাকি এখানে থাকি তাহলে মা বাপের বাড়ি চলে যাবে।একথাটা শোনার পর বাবা কিছুটা দমে গেলো।আমি বাবাকে কখনো দোষ দিনা।তিনি তার সংসার টা বাচাতে চায়। কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্যহীন পথে জানিনা কোথা যাবো।এদিকে খিদাতে হাটতে ও কস্ট হচ্ছে। পনেরো বছর বয়সে অনেক অবিজ্ঞাতা অর্জন করলাম।আর এটুকু বুঝলাম এ পৃথিবী স্বার্থের পৃথিবী। সবাই নিজ খুশি নিয়ে ব্যস্ত।।আমিও এর বাইরে না।আমি নিজের সুখ খুজতে গন্তব্যহীন পথে হাটছি
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত