আমার বন্ধু মামুন আর ওর স্ত্রী ফারিয়ার প্রথম এনিভার্সারি অনুষ্ঠানে এসে খুব অবাক হয়ে গেলাম। এত আলোকসজ্জা আর দামী সুট কোটের ভিড়ে সাধারণ পাঞ্জাবি পরা আমাকে খুব বেমানান লাগছিলো। তাই আমি সবার থেকে একটু দূরে আলাদা ভাবেই বসে ছিলাম। হঠাৎ মামুন এসে বললো,
~কিরে, তুই কখন আসলি? আমরা সবাই ঐখানে আড্ডা দিচ্ছি আর তুই একা এইখানে কি করছিস? আমি মুচকি হেসে বললাম,
— কেক কখন কাটবি? আমার একটু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে মামুন তখন বললো,
~বাসায় যেতে হবে মানে! সালা আজ সারারাত পার্টি করবো। তা ভাবীকে কেন নিয়ে আসিস নি? আমি মাথা নিচু করে বললাম,
— এমনিতেই আনি নি
মামুনের জোরাজোরিতে বন্ধু মহলের আড্ডায় আমিও সামিল হলাম। আমার সব বন্ধু বান্ধব ওদের স্ত্রীদের নিয়ে এসেছে। এক বন্ধু আরেক বন্ধুর স্ত্রীদের সৌন্দর্য্যের প্রশংসায় খুব ব্যস্ত। রাকিব মামুনের স্ত্রীকে দেখে বললো,
“ভাবী, আপনাকে খুব হট লাগছে ” তেমনি রাকিবের স্ত্রীকে মামুন বলছে, “ভাবী, এই শাড়িতে আপনাকে জোশ লাগছে ” বন্ধু রিয়াদ আবার সবার চেয়ে একধাপ এগিয়ে। ও মামুনের স্ত্রী ফারিয়াকে দেখে বললো, “ভাবী, আপনাকে দেখে তো আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন তো আমার স্ত্রীকে আর ভালো লাগবে না। মনে প্রাণে শুধু আপনাকেই চাইবো।” এমন কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। আর ফারিয়া লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বললো, “ভাইয়া আপনি একটু বেশি বেশিই বলেন। আর ভাইয়া আমার আগের ফেইসবুক আইডিতে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। নতুন আইডি দিয়ে আপনাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি” আমি চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলাম। এমন সময় ফারিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না মামুন হেসে বললো,
~ও আমার ভার্সিটি লাইফের রুমমেট পিয়াস ফারিয়া অবাক হয়ে বললো,
– উনিই তোমার সেই লাভার বয় রুমমেট? যে একটার পর শুধু প্রেম করতো? মামুন মুচকি হেসে ওর স্ত্রীকে বললো,
~এখন সে আর লাভার বয় নেই। বিয়ের পর একদম ফেসে গেছে। বাবা মা জোর করে গ্রামের কোন মেয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে দিয়েছে। বিয়ের পর থেকেই বন্ধু আমার এমন মনমরা হয়ে গেছে রিয়াদ তখন আমায় বললো,
~ তোকে কতবার বলেছি ডিভোর্স দিয়ে দে। যে মেয়েকে নিয়ে সমাজে চলতে পারিস না। বন্ধুদের কোন পার্টিতে নিয়ে যেতে পারিস না এমন মেয়ের সাথে তো থাকার কোন মানেই হয় না মামুনের স্ত্রী ফারিয়া তখন বললো,
– রিয়াদ ভাইয়া ঠিকিই বলেছে। এমন আনস্মার্ট মেয়ের সাথে থাকার কোন মানেই হয় না। আপনি বরং ডিভোর্স দিয়ে দেন জবাবে আমি কিছু না বলে শুধু মামুনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। কেকটা এখন কেটে ফেল। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে মামুন কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
~আরে তুই এত যাই যাই করছিস কেন? বাসায় গিয়ে এই অশিক্ষিত আনস্মার্ট বউয়ের থেকে কি এমন পাবি যে যেতে পাগল হয়ে গেছিস আমি মুচকি হেসে তখন মামুনকে বললাম,
— বাসায় গিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী একসাথে ভাত খাবো। আমার স্ত্রী আমার জন্য না খেয়ে বসে আছে। বিয়ের পরের দিন সকালে আমার স্ত্রী ফজরের সময় আমায় ডেকে বলেছিলো, আপনি সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ান আমি পিছনের কাতারে আছি। স্ত্রীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বলেছিলাম,
আমি নামাজ শুদ্ধ ভাবে পড়তে পারি না আমার স্ত্রী আমার হাতটা ধরে মুচকি হেসে বলেছিলো, সমস্যা নেই আমি আপনাকে শিখিয়ে দিবো টেবিলের উপর ধূলোপড়া কোরআন শরীফটা মুছতে মুছতে আমার স্ত্রী আমায় বলেছিলো, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী জিনিসটা এইভাবে অযত্নে রেখেছেন কেন? নিশ্চয়ই এটা চর্চা করেন না জবাবে আমি মাথা নিচু করে বলেছিলাম, আমি কোরআন পড়তে পারি না আমার স্ত্রী মুচকি হেসে আমার হাতটা ধরে বলেছিলো,সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দিবো এখন তুই বল, আমার স্ত্রী কি অশিক্ষিত? মামুন আমার কথা শুনে চুপ করে আছে। আমি তখন রিয়াদকে বললাম,
— তোকে কে বলেছে আমার স্ত্রী আনস্মার্ট? তুই তো আমার স্ত্রীকে কখনোই দেখিস নি। আমার স্ত্রী হলো দুনিয়ার সবচেয়ে স্মার্ট মেয়ে। আর তার স্মার্টনেস শুধু আমিই দেখি অন্য কোন পরপুরুষ না। মেয়েদের স্মার্টনেস মানে এই না যে হাইহিল জুতা, পাতলা শাড়ি, চুলে রঙ আর মুখে অকৃত্রিম কিছু জিনিস মেখে অনুষ্ঠানে যাওয়া। নিজের শালীনতা বজায় রেখেও স্মার্ট হওয়া যায় মামুনের স্ত্রী ফারিয়াকে বললাম,
–আপনার চোখে স্মার্টনেস মানে হলো নিজেকে কামিনীরুমে পরপুরুষের সামনে উপস্থাপন করা আর আমার স্ত্রীর চোখে স্মার্টনেস হলো পরপুরুষের কামনার চোখ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবার আগে মামুনের কাঁধে হাত রেখে বললাম,
–তুই হয়তো ভাবছিস আমি আনস্মার্ট মেয়েকে বিয়ে করেছি দেখে এমন মনমরা হয়ে গেছি। কিন্তু তোর এটা ভুল ধারণা । আমি এমন হয়েছি আমার অতীত জীবনের কর্মকান্ডের জন্য। আমি সত্যি আজ খুব অনুতপ্ত আমার আগের কর্ম কান্ডের জন্য ৷ এত পাপের মাঝেও নিশ্চয়ই কোন ভালো কাজ করেছিলাম যার জন্য আল্লাহ আমায় এমন একজন স্ত্রী দিয়েছেন। যদি পারিস নিজের স্ত্রীকে আর অন্যের স্ত্রীকে সম্মান দিতে শিখ। তোর স্ত্রীকে দেখলে অন্য একটা পুরুষের মাথা ঠিক থাকে না। এখন বুঝতে পারছিস তুই তোর স্ত্রীকে কামিনী রূপে মানুষের সামনে প্রদর্শন করছিস কলিংবেল বাজাতেই আমার স্ত্রী শ্রাবণী দরজা খুললো। আমায় দেখে মুচকি হেসে বললো,
– আসতে এত দেরি হলো যে? আমি ওরজন্য আনা কেকটা ওর মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বললাম,
— অর্ধেকটা আমি খেয়েছি আর বাকি অর্ধেকটা তোমার জন্য নিয়ে এসেছি
গল্পের বিষয়:
গল্প