নিজেকে বুদ্ধিমান বিশ্বাসে যতই আমি আত্মবিশ্বাসী হই না কেন আমাকে বোকা বানিয়ে এক বাঘিনীর অবিশ্বাস্য কাণ্ডকীর্তির তথ্যটা আমাকে প্রথম দেয় ঈশানা –
বাঘ প্রজাতির বিপন্নতার দিনে এই বাঘিনী শুধু অন্য প্রাণীর রক্ত-মাংস-হাড়গোড় নয়, নিজের গায়ে তেমন কোনো আঁচড় না লাগিয়ে খেয়ে চলছে ঘাস-খড়-কাগজ – কাগজ বলতে দলিলপত্রও। উপকথার বাঘ ঘাস, খড়, দলিলপত্র খেতেই পারে কিন্তু এই বদ্বীপের বিশালতম বনের এমন এক ভয়াল সুন্দর প্রাণীর বাস্তব ঘটনাপঞ্জি যে কিনা এই বনাঞ্চলের পটভূমিতেই বোর্হেজেরও এক গল্পের অনুষঙ্গ হওয়ার তাৎপর্য রাখে। এ অঞ্চলের ব্যবহারিক আধুনিক অভিধানে উঠে আসা এক শব্দে এখন তাকে এমন এক সুস্পষ্ট প্রতীকে মেলে যার স্বভাব সুধীমহলে অনুচ্চার্য – এই ইনোভেশন অবশ্য আমার এবং তা তার দ্বারা সংঘটিত চূড়ান্ত ট্র্যাজেডিটি ঘটে যাওয়ার পর।
এই উদ্ভাবন আমার নিজের হলেও ঈশা যেন গ্রিক ট্র্যাজেডির দেবতার মতো আমাদের ঘটনা পরম্পরার নিয়তি-নির্ধারক দেবী, যে আমার দুর্ভাগ্যকে আমার ললাটে লিখে পড়ে শোনায়।
ঈশানা চৌধুরী আমার প্রজেক্ট অফিসার, সে ফাঁদা সোনার ফাঁদের মতো বেকায়দা সুন্দরী। প্রথম দেখাতেই সিরিয়াসলি আকৃষ্ট করার ক্ষমতা তার মধ্যে অন্তর্লীন। প্রতিযোগিতায় ও ফরেন সার্ভিস পেয়ে গেলেও এ-কারণেই তার স্বামী তাকে তা নিতে দেয়নি। এই কানাঘুষা আমি সঠিক বলে বিবেচনাও করি – যদি তার বিদেশে পোস্টিং হয় তবে তাকে বেচারার নিয়ন্ত্রণে রাখা ঝুঁকিময় হয়ে উঠবে। অতঃপর ক্যাডার বদল করে তার এই বনে আসা – অভয়ারণ্যে – অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজারভেটর অব ফরেস্ট।
চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্টও নাকি কন, তার স্বামীধন নিঃসন্দেহে দূরদর্শী।
কিন্তু তাতেই কি ঈশানা ঝুঁকিমুক্ত! তার জন্য বিপদ পদে পদে – প্রেম ও যৌনতার ফাঁদ পাতা ভুবনময়।
আমি সূচনাতেই মনস্থির করি যা কিছুই ঘটুক এমন একসময় আমি ওই ফাঁদে পড়ব না। পেশাগত জেলাসি, ষড়যন্ত্র, অনিয়ম, নারীর মধ্যে ভেসে যেতে যেতে, ডুবে যেতে যেতে, ডুবে মরে যেতে যেতে শেষে শুধু টিকে থাকা নয়, আমি এ পর্যন্ত এসে গেছি। আর একটা পদোন্নতি পেলে দেশে-বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদের কোনো একটা আমি লবিং করে পেয়ে যেতে পারি। কিংবা কেউ আমায় চয়ন করতে পারে। আমার যেমন উচ্চতর পদ, সম্মান, অর্থের প্রয়োজন আছে, সরকারও তার প্রয়োজনে আমায় প্লাক করতে পারে। নানা ডেসিং-ডুশিং-চেষ্টাচরিত্র করে এখন যখন পদোন্নতি কমিটিকে গ্রেডেশন এবং সার্বিক যোগ্যতা বিবেচনায় আমাকে প্রথম স্থানে রাখার একটা অবস্থানে আনা হয়েছে তখন আমিই আত্মঘাতী হই কী করে!
এখন যদি কিছু করি, করতেই হয়, করার সুযোগ আসে তা আমি করব আমার ক্যারিয়ারের অধিক্ষেত্রের বাইরে। তাছাড়া প্রস্ফুটিত গোলাপের চেয়ে আমার পছন্দ স্ফুটনোন্মুখ গোলাপ – টিনএজার। উঠতি বয়সী বা যুবতীর শরীর আমাকে সেই কৈশোর-যৌবনের মতোই আকুল করে, তারাও যেখানে আমার ডাকে সাড়া দেয়, দেয় হয়তো কারণ এমন ভাটির বেলায়ও আমার ডাক, আমার চেহারার আশ্চর্য তারুণ্য তাদের মোহে ফেলে – এটা আমার কবিবন্ধু দিলীপ দে-র ব্যাখ্যা। কিংবা উঠতি বয়সের হরমোন তাদের এমন আঁধিতে ফেলে কিংবা তাদের উদ্ভিন্ন শরীরের পুরুষ চাই, বাছ-বিচারের ঊর্ধ্বে। এদিকে বয়সের ভার কিংবা অভিজ্ঞতার কারণে নারীর সামান্য বয়সের খুঁতও আমার চোখে বেশ ধরা পড়ে। তবে টিনএজারদের আমার প্রশ্নে আকুল আগ্রহ তৈরি হওয়া সত্ত্বেও পারিপার্শ্বিক কারণে তাদের বাগে আনা প্রায় সব সময়ই আমার ভারি কঠিন, এমনকি অসম্ভবই হয়।
কিন্তু কেন যে ঈশা আমাকে ভয়ংকর সুন্দর এক বাঘিনীর গল্প বলে যার মরাল দিকটা আসলে তার বিপক্ষে যায় এবং তার গ্রাস আমিও তেমনি উড়নচণ্ডী এক সওদাগরের কেচ্ছা তাকে শোনাই যার দুর্ভাগ্য, কর্মফল, অনুশোচনা একদা একান্ত আমার হবে। এক ধনাঢ্য সওদাগরের সাত-সাতটা জাহাজ ছিল। সাত জাহাজ নিয়ে বাণিজ্যে এসে বিদেশ-বিভুঁইয়ে ও এক সুন্দরীতে মজে। সুন্দরী ভারি বিলাসী, তার বিলাসিতা প্রশ্নে সওদাগরও অকৃপণ – সুন্দরীকে তার জাহির করতে হবে না যে সে কত ঐশ্বর্যশালী যুগপৎ তার জন্য কত সে দেওয়ানা, কী করতে পারে!
সাত-সাতটা জাহাজ ভরে ভরে ধন এনে দিতে দিতে সুন্দরীতে তার সাতখানা জাহাজও খোয়াতে হলো এবং এর মধ্য দিয়ে ও ফতুর হয়ে গেল। সুন্দরী আর তাকে ভালোবাসা দূরে থাক পাত্তাই দেয় না।
অতঃপর ও ধারদেনাসহ নানাভাবে কিছু জোগাড়যন্ত্র করে সুন্দরীর দরবারে হাজির।
কিন্তু সুন্দরী তো তাকে দেখা দিতেই নারাজ। সে তখন তার আনীত হিরে-রুবি-সোনাদানা উপহারের বদলে আর কিছু নয় শুধু একবার তাকে দেখাদানের প্রার্থনা জানায়।
সুন্দরী এবার সামনে এলো তার – বলো, কী দেখতে চাও!
সে সুন্দরীতে খোঁজে আর খোঁজে, দেহের গুপ্ত ভাঁজে খোঁজে শুধু খোঁজে!
সুন্দরী মহাবিরক্ত, এত কী খোঁজ!
তবু ও খোঁজে – খুঁজে খুঁজে হতাশ, তবু দেখার-খোঁজার তার শেষ নেই।
পরিবেশ বিপর্যয়, প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষার তত্ত্ব, ডাটায় নানা রসালো গল্প, মহানগর পেরিয়ে শালবনে পিডি হিসেবে আমার অভয়ারণ্যের প্রকল্প পরিদর্শনে রোমান্টিকতা – এমনসব সংক্রমণ ঈশানার-আমার পদসোপানের দূরত্বকে জিরোর দিকে গতিময় করে।
তবে জিরো ক্রস করে তা যাতে মাইনাসে না গড়ায় সে-ব্যাপারে আমি সতর্ক হয়ে উঠি, হয়তো ঈশাও।
তবে ঈশাকে যখন আমার প্রজেক্টে সংযুক্ত ফরেস্টার মাঈনুল হকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দেখি তখন কেমন অযাচিত ঈর্ষা আমাকে আছর করে। সরাসরি কোনো প্রমাণ না পেলেও লক্ষণ পাই দুজনাতে অন্তত দুই-একবার ক্রস হয়েছে – অসহ্য!
আজ শালবন থেকে ঢাকায় ফেরার সময় আমি গাড়িতে উঠে বসার অনেক পরও যখন তারা আসে না তখন আমি আবারো রেঞ্জ অফিসে যাওয়ার জন্য একটু এগোতেই সামনে দুজন। মাঈনুলের অজুহাত, সে মারখাওয়া বাগডাশকে একবার শেষ দেখতে আবারো অভয়ারণ্যে ঢুকেছিল আর ঈশা বাথরুম।
কিন্তু এই অবস্থাকেই পুঁজি করে ঈশা যতই তার অপার সৌন্দর্যের জটিলতায় আমাকে জড়িয়ে ফেলতে থাকে তাকে পাল্লা দেয় ততধিক কুৎসিত নূরে মায়মোনা এক নোংরা চালবাজিতে। একদা এক সামরিক শাসক মায়মোনার মতো এতটাই কদাকার হয়ে ওঠে যে জেল-জুলুম-রক্তপাত তুচ্ছ করে পাবলিক তার গদি ওলটাতে লাগে। নিরুপায় স্বৈরশাসক পত্রিকায় খবর করে মৌলবাদীরা মন্দির-মঠ ভাঙায় নেমেছে, তা পড়ে হিন্দুরা প্রতিরোধে নামে, নেমে মুসলমানের গায়ে লাগে, মুসলমান রুখে দাঁড়ায় – শাসকবিরোধী আন্দোলন পালটে যায় দাঙ্গায়। আগাম রটনা দিয়ে কীভাবে ঘটনাটা ঘটানো যায় তা নিশ্চয়ই না জেনে পুরুষের কাছে আকর্ষণহীন কদাকার মোনা তার সেক্সক্রাইসিস কিংবা শুধু ঈশানার প্রতি সৌন্দর্যের ঈর্ষা বা আমার সঙ্গে ঈশার সম্পর্কের সন্দেহের জ্বলুনি থেকে এক স্ক্যান্ডাল তৈরি এবং তার গোপন প্রচারে মাতে। তবে শুধু ঈশা বা আমার প্রশ্নেই নয়, এ ক্ষেত্রে অন্য কেউ হলেও নিশ্চয়ই সে একই আচরণ করত। তার বিশ্বাসও জন্মেছিল, আমরা এরই মধ্যে প্রেম ও যৌনতায় মত্ত। আর এটাই আমার কাল হলো!
স্যার, ওয়াল্ডিংয়ের স্পার্কের মতো ওই স্ক্যান্ডালের ছিটেফোঁটা যখন ঈশানার শরীরে এসে লাগছে ও যেন গর্বে ঝলসে উঠছে – পুলকিত কণ্ঠ, মোনা ম্যাডাম আপনাকে জড়িয়ে আমার বিষয়ে নানা আপত্তিকর কথা নাঈমাকে বলছে আর নাঈমা তার গোপন প্রচার-সম্পাদকের দায়িত্বে লিপ্ত হয়েছে।
ঈশা যখন এমন বলছে তখন একটা কোকিল ঢেউয়া গাছে অবিরাম ডেকে চলছে। এই ডাক এখন তুলনামূলক সাহিত্যবিচারের মধ্যে দিয়ে আমাকে এক উপসংহারে পৌঁছে দেয় – ওয়ার্ডসওয়ার্থ থেকে বঙ্কিম পর্যন্ত কোকিলের এই গান নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে নানা ক্লাসিক অনুষঙ্গ আছে। কিন্তু এ নিয়ে যে যাই লিখুক কৃষ্ণকান্তের উইলে বঙ্কিম যা করেছেন তাই সেরা। কোকিল কিনা তাঁর নায়িকা রোহিনীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে গলায় কলসি বাঁধিয়ে পুকুরের জলে ডুবিয়ে দিলো! এমনটি কি পেরেছে কেউ! অথচ এই মধুর ডাক যে কামের! এই ডাকের ঘোরে আমার কঠিন হাঁটু আমাদের মধ্যকার সংকীর্ণ টেবিল অতিক্রম করে ঈশার ঊরুতে ঠেকায় আর তার ঊরু কঠিন হাঁটুকে ক্রমশ কোমলতায় জায়গা করে দিতে থাকে।
কোকিলের কামডাক আমার কঠিন প্রতিজ্ঞা কী করে যে তছনছ করে দিতে থাকে।
ফরেস্ট বাংলোয় আমি ঈশানাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করি – একত্রিশ বছরে পূর্ণ প্রস্ফুটিত এই গোলাপ সত্যি অনন্য। হাতে রেখে পাঁচ আঙুলে পাঞ্চ করার সুঢৌল বল মেডিক্যাল সায়েন্সের আলোকে যে কোমলতার আদর্শকে সামনে রেখে তৈরি তা ঈশার স্তন, যা স্বামীর দেহচর্চা ও সন্তানের দুগ্ধদানের মধ্য দিয়ে লুজ হয়ে যেতে পারত তা কিনা তারই মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ এক কুমারীর সম্পন্ন দেহের পরিপূরক হয়ে উঠেছে।
এই কোমলতারই বিচিত্র বিন্যাস তার দেহ।
তার গালের তিলের জন্য নয় শুধু বুকের এই কোমলতার জন্যই কবি হাফিজ তুমি নিশ্চয়ই বোখারা-সমরখন্দ বিলিয়ে দিতে পারতে – আমি তো কোন ছাড়। তো আমি তার মধ্যে এক অপার অর্গাজমে পৌঁছতে পৌঁছতে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছি তার অধরোষ্ঠের জন্য, ভ্রুকুটির জন্য, ঊরুর জন্য, পরম-রস-কুম্ভের জন্য কে কী না ত্যাগ করতে পারে! ও তার পরম-রস-কুম্ভের পেশি সংকুচিত-প্রসারিত করে ওই মুদ্রায় অপূর্ব এক পুলক আমাতে ছড়িয়ে দিতে থাকে। পূর্বসূরির হারানো চরিত্রের পুনরাবির্ভাব ঘটিয়ে শুধু গুটিকয় মানুষই যেমন তার কান নাড়াতে পারে এটা হয়তো তেমন কোনো বৈশিষ্ট্য।
তো বিগত জীবনে আমি পরিপূর্ণ কামে গুটি যে কয়কে পেয়েছি তার মধ্যে ঈশা, শি ইজ নট এ ভার্জিন বাট প্যারাগন, পরম-রস-কুম্ভের পেশিলীলার এই বৈচিত্র্যে যে ও সবাইকে ছাড়িয়ে।
আমাদের এমন প্রথম অভিজ্ঞতার শেষে আমরা যখন ঢাকায় ফিরছি তখন আমার যেমন মনে হয় ঈশানাকে দেখে বুঝি তারও – আমরা অস্বাভাবিক কিছু করিনি আর এটা আমাদের চলমান অফিসিয়াল, পারিবারিক জীবনে কোনো প্রভাবই ফেলবে না। তো এটা চলবে, চললে কার কী ক্ষতি!
এরপর থেকে প্রায় নিয়মিত আমার অপ্রতিরোধ্য কামনার মুখে ঈশা তার অবাধ স্রোতে আমায় ভাসিয়ে নেয়।
তো আমি ঈশার প্রাপ্য মূল্যের কাছে তুচ্ছ, আমার যা কিছু আছে তা যেন তার তুল্যে-মূল্যে তেমন কিছু নয়, ঈশানা অমূল্য!
আমি ঈশাকে নিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে যাই, কিছু স্পেসিমেন, পশুপাখি, গাছগাছড়া সংগ্রহে। সঙ্গে ফরেস্টার মাঈনুল হক, এজন্য মাঈন যে, তাতে তার বেড়ানো হলো, পয়সাও পেল আর লোকের কাছে আমার উদ্দেশ্য থাকল ট্রান্সপারেন্ট – ঈশানা চৌধুরী নিছক বন বিভাগের অভয়ারণ্য প্রকল্পেরই এক উদ্দেশ্য।
ভয়ংকর সুন্দর এই বাঘ বদ্বীপের এই সুন্দরতম বনকে যথার্থ অর্থই দেয়নি, তার নামকে ভয়ংকর সৌন্দর্যে আরো মহিমান্বিত করে তুলেছে।
আমার বিশ্বাসে ঈশাও সায় দেয়, সুন্দরবন সুন্দরী গাছের জন্য তার ডাকনামটি পেয়ে থাকলেও আসলে তা বাঘের ভয়াল সৌন্দর্যেই সার্থক – বাঘহীন সুন্দরবন কি সত্যি সুন্দর!
এই অরণ্য, আমি বলি, ঈশানা, তোমার সৌন্দর্যে নতুন মহিমা পেল।
বাঘ দেখতে যাওয়ার প্রস্তুতির মধ্যে ঈশানা রহস্যময় কণ্ঠে বলে, বাঘ বিপন্ন এ যেমন ঠিক, তেমনি বিপন্ন বাঘ যে তার চিরায়ত স্বভাবে ভয়ংকর তাও।
ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার জাফর-উদ্-দৌলা তার কথাকে সমর্থন করে এক পরিহাসময় কণ্ঠে আমাদের বাঘযাত্রার নিরাপত্তা বেষ্টনী যথেষ্ট জোরদার করার আশ্বাস দেয়।
সশস্ত্র ফরেস্ট গার্ডদের নিয়ে আমরা যখন রওনা দিলাম তখন হঠাৎ ঈশার ডায়রিয়া।
স্যালাইন-ট্যালাইন আর যা যা দরকার রহিমাকে দিয়ে সব ব্যবস্থা করছি আপনারা রণে ভঙ্গ দেবেন না – যখন দেখি বয়স্ক, পেটকোয়া, বেঢপ ডিএফও জাফর যে কিনা আর কয়েক মাস পরে অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছে এমন কথা বলছে আর ঈশার প্রশ্নে সন্দেহভাজন মাঈন যাচ্ছে আমার সঙ্গেই তখন ফরেস্ট বাংলোতে ঈশাকে রেখেই আমি গভীর বনে গেলাম যেখানে ঈশার ভারি সাধ ছিল সুন্দরবনের বুনো পরিবেশে সরাসরি বাঘ দেখার।
বাংলো থেকে বেরোনোর মুহূর্তে আমার কেন যেন মনে হয় আজ প্রকাশিত সেই সর্বখেকো বাঘিনীর দেখা আমি পাব।
পর্যটনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে আমরা ঘন বনের পর্যটন টাওয়ারে উঠি। টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দেখি এক বাঘের সঙ্গে তার বাঘিনী। প্রকৃতি কিংবা সৌন্দর্য বোধে শ্রেষ্ঠ স্রষ্টার সৃষ্টি বিরাট স্তনসমেত ভয়ংকর সুন্দর এই বাঘিনীর পক্ষে তেমন স্থূল সর্বভুক হওয়া যে অসম্ভব! পারস্পরিক আদর-সোহাগের মধ্যে তারা সঙ্গমে মিলিত হওয়ার আগমুহূর্তে অধিকতর শক্তিধর এক বাঘ এসে তাদের মধ্যে হামলে পড়ে। বাঘিনীকে নিয়ে চলে দুই বাঘের লড়াই। জোড়ার বাঘটিকে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে হারিয়ে নবাগত তার বাঘিনীটিকে ধর্ষণ, না ধর্ষণ নয় সঙ্গম করল – কারণ বাঘিনী যেন সাদরেই বীরকে বরণ করে! যে বাঘিনী এমন ভয়ংকর সুন্দর সেই আবার এমন কুৎসিত! এবার বাঘিনীর স্তনকে মনে হলো তা নূরের অতিকায় বেঢপ কুৎসিত স্তন!
ওদিকে ঈশানা! তাকে ঘিরে দুর্বাই আমায় বেচেইন করে তুললে আমি বাংলোমুখী।
ফিরে ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সে দিব্যি তরতাজা, শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে বুঝলাম সে যৌনতৃপ্তও।
ঠিকঠিক কও, যে কয় টাকার নোটে রহিমা গোপন তথ্য ফাঁস করতে পারে তেমন কটি তার দিকে বাড়িয়ে প্রশ্ন করি, আমরা বাইরে যাওয়ার পর ম্যাডাম, ডিএফও সাহেব কে কোথায় ছিল?
এক ঘরে!
ঈশার ওপর বিশ্বাস হারাতে আমার কষ্ট হয়। চাকরিসূত্রে সাগর-মহাসাগর পাড়ের নারীদের শরীর দাপিয়ে বেড়ানো তার মেরিন ইঞ্জিনিয়ার স্বামী তার ওপর শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস হারাতে পারে না! অথচ ঈশা তো আমার সঙ্গেই … চোরাচালান যেমন অর্থনীতিকে ব্যালেন্স করে, পরকীয়া তেমনি চাপে পড়া দেহোত্তাপ।
কিন্তু রহিমা কি টিপস হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই জবাব দিলো!
এবারের বর্ষায় প্রচুর কেয়া ফুটেছে – অঢেল কেয়ার অসহ্য দমফাটা ম-ম গন্ধে নদীর দূষিত পানির দুর্গন্ধ মিশেই যায় আর আমি এসবের ফাঁক গলিয়ে বারবার স্বাভাবিক হাওয়া বুকে নিতে চাই।
কিন্তু আমি বুঝি পারফেকশনিস্ট! বউ বলে, শুচিবাই।
আমাকে বারবার হাত ধুতে হয়।
নারীর প্রশ্নেও আমি শুচিবাইগ্রস্ত কিংবা পারফেকশনিস্ট। সেই কৈশোর থেকে আমি যে সে মেয়েকে ভালোবাসতে পারি না, ওটা করার ব্যাপারটিও তাই, কলেজের সুন্দরী সহপাঠিনী দিয়াকে পাওয়ার জন্য আমরা সহপাঠীরা যখন কঠিন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছি তখন একদিন নাক ঝাড়তে ঝাড়তে দিয়া বলে, আমার সর্দির অ্যালার্জি আছে।
আর সহসাই ছিঃ! চুমো খাওয়া বা সেক্স করার সময় যদি নাকের সর্দি …
দিয়ার জন্য আমার সমস্ত প্রেমই টুটে যায়। আমার কবিবন্ধু দিলীপ দে কয়, এ তোর শুচিবাই মনোরোগের এক কুদিক। সে যাই হোক, আমার একদিকে যেমন সুপরিচ্ছন্ন ভার্জিন, নিখুঁত, নিটোল রমণী চাই অন্যদিকে তাকে পেয়ে গেলে হারাতে পারি না, অন্তত মানসিকভাবে নয়, ইমপালসিভ ক্রনিক ডিজঅর্ডার, তাকে কোনোভাবেই আর মুছে ফেলতে পারি না।
ঈশাও আমার এক ইমপালসিভ ক্রনিক ডিজঅর্ডার!
চাকরি ক্ষেত্রে যদি কাউকে ডুবাতে চাও নারী বা টাকা কিংবা নারী ও টাকাতে ডুবাও। বিশেষত নারী, ট্রয় – সব পতনের মূলে – তলে তলে এই তত্ত্বকে যখন আমার শত্রুরা পুঁজি করে তৎপর আমি তখন ঈশানার ঘোরে!
সারাদেশে আমাদের প্রতিষ্ঠানের যে-সব শাখায় আমি চাকরি করেছি সে-সব শাখায় আমার জন্য যাদের ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি আটকেছে, পানিশমেন্ট ট্রান্সফার হয়েছে আর যারা পদোন্নতির ক্ষেত্রে আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ডিজিটাল সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তারা প্রায় সব আমার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ঐক্যবদ্ধ। এটা আমি টের পেতে থাকি যখন ওইসব অফিসে করে আসা ভুলভ্রান্তি বা সত্যি না হলেও যেসব পয়েন্ট তুলে আনার সুযোগ আছে কিংবা রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় স্পর্শকাতর সেসব দিয়ে নামে কী বেনামে আমার নামে আমাদের মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, গোয়েন্দা সংস্থায় অভিযোগ দায়ের হতে থাকে।
একটা অভিযোগে লেখা হলো, তিনি প্রজেক্টের ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে জঙ্গি তরিকত মিশনকে দেন। তার মধ্যে সাক্ষী ঠিকাদার জামাল খানের নাম, যাকে নাকি ফাঁদে ফেলে চাঁদা নেওয়া হয়। এ-ব্যাটা সাক্ষ্য দিতেও পারে কারণ অনেক ঘুরঘুর করেও সে বিপন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ অভয়ারণ্যে কোনো ওয়ার্ক অর্ডার পায়নি। এর মধ্যে ঈশার সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গ কথাবার্তা, আচরণের অডিও, ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে ওইসব অফিসের নারী সহকর্মীদের স্ক্যান্ডাল যোগ করে শত্রুরা হালে বেশ অনুকূল ধারা পেয়ে গেছে।
এরই মধ্যে সিসিএফের ফোন, আপনি কিন্তু রাষ্ট্রীয় একটা গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে আছেন –
আমি এমন কে যে তেমন নজরদারিতে থাকব!
আপনার বিষয়ে যেসব বিষয় তারা আমলে নিয়েছে তাতে এটা সম্ভব। তিনি বলেন, আমার কাছে তারা আপনার পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা, দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে আমি স্পষ্ট কিছু বলতে পারি নাই।
এটা ষড়যন্ত্র। আমার বিষয়ে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করে আপনাকে বিরক্ত করছে কেন! আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে …
যাক, আপনার ফোনও ট্র্যাক করেছে নিশ্চয়ই – বি অ্যালার্ট।
এরই মধ্যে পূর্বে আমার অফিস লাইব্রেরিতে বই সরবরাহ দেওয়ার ধান্ধায় আসা মনোয়ার জাহেদী নামে একজন আমাকে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয় দিলে আমি যখন তাকে প্রশ্ন করি, আমি কি আপনাকে চিনি?
আমাকে আপনি চিনলে এভাবে প্রশ্ন করার সাহস পেতেন না!
একটু বিব্রত হলেও যেহেতু সাংবাদিক পরিচয়ে টাউটরা আমাকে আগেও বহুবার ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছে তাই সহসাই আমি তাকে পরিহাস করি, আপনি কোন পত্রিকার?
ক্রাইম রিপোর্টার মনোয়ার জাহেদী কারো চাকরি করে না।
তো আপনি সাংবাদিক ইউনিয়ন বা প্রেসক্লাবের সদস্য তো?
আপনি আমাকে এত প্রশ্ন করার দুঃসাহস না দেখিয়ে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতা, পার্কির সমুদ্রসৈকত বৃক্ষায়নে দুর্নীতি, ঈশানা চৌধুরীসহ অনেক নারীকে হয়রানির অভিযোগ আছে – এসব যে সত্যি নয় তার কি কোনো প্রমাণ আপনার কাছে আছে?
তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে! পত্রিকায় প্রকাশের জন্য তথ্য পেতে হলে আপনাকে বিধি অনুযায়ী আবেদন করে তা পেতে হবে।
পত্রিকা নয়, এটা হবে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট।
গোয়েন্দা বিভাগের অনেক কর্মচারীও নানা সময় আমার কাছে এসেছে – দুর্নীতি, মাদক ব্যবসায়ী বা জঙ্গিবাদীর খোঁজে – নানা ইস্যুতে। সিনিয়র দুই-তিন কর্মকর্তা আমার বন্ধু বা পরিচিত। আমি গোয়েন্দা থ্রেডেও আতঙ্কিত না হলে এরপর জাহেদী আমাকে সরকার ও শীর্ষ আমলা মহলে তার প্রভাবের ভয় দেখায়।
থানা, পাসপোর্ট, ভূমি – সরকারের নানা অফিসে টাউট, সোর্স, ফড়িয়া থাকে কিন্তু গোয়েন্দা অফিসে এমন থাকে বলে আমার জানা নেই। হয়তো এই জানোয়ার জাহেদী ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টু-পাইস কামানোর ধান্ধায়।
কদিন পর সত্যি এক গোয়েন্দা রিপোর্ট। গোয়েন্দা বিভাগ আমার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিপোর্টটি মন্ত্রণালয়ে সচিবের কাছে পাঠিয়েছে। সচিব তা পাঠিয়েছে চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্ট – সিসিএফের কাছে।
এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ যখন বিব্রত যে আমাকে কী করা যেহেতু আগেও এত জোরালো না হলেও অনেক অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে উঠলেও তা প্রমাণে টেকেনি, এমনকি আমার বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে আমাকে উচ্চমানের কর্মকর্তাসহ নানা সময় নানা বিরল প্রশংসা করা হয়েছে, সর্বোপরি আমার বর্তমান কর্তৃপক্ষ যেখানে আমার ইনোভেশন, দায়িত্বশীলতা, কর্মতৎপরতায় বিশেষভাবে সন্তুষ্ট সেখানে যখন আমার রুচিহীন নারীলিপ্সা, দুর্নীতি, অনিয়ম, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা, গর্হিত, দুঃসাহসী বক্তব্য সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠায় তখন আমার কর্তৃপক্ষই বিব্রত, আতঙ্কিত, নিরুপায় – দিশাহীন।
অথচ এটা কী বিশ্বাসযোগ্য, ভোঁজবাজিকে পুঁজি করে মনোয়ার জাহেদী এমন এক সুপারটাউট হয়ে উঠেছে যে তার হাতে এখন এমন এক জাদুকাঠি!
এই জাদুকাঠির কেরামতিতে আমার পরিবারের সদস্যরাও অক্টোপাসের ট্রেনটাকলে আমাকে জড়িয়ে-পেঁচিয়ে ফেলতে লাগে। আমার স্ক্যান্ডাল আমার রাজপুত্তুরের মতো মেয়েজামাইয়ের কানে পৌঁছালে জামাই যখন মেয়েকে বলে, তুমি তো বাপকা বেটিই – তখন তার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করলে সে বাপের সরকারি বাসায় আশ্রিতা হয়। আমার বউকে ফোনে যখন কেউ এসব জানায় আর সে যখন বলে, তাই তো বলি নারীশরীরের প্রতি তোমার এত টান তবে গেল কোথায় – তখন আমি আর আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো উপায় খুঁজে পাই না।
আর আমার কলেজপড়ুয়া ছেলে বিশ্ব বাবা দিবসের মতো এক আদিখ্যেতামূলক দিবসকে এবার ভারি ডিজগাস্টিং করে তোলে সেকেলে একটা বস্তু একটা স্বর্ণকলম উপহার হিসেবে আমাকে দিয়ে, কবিতা লেখে – আব্বা … আমি যখন কিনা ঈশাকে নিয়ে নিছক কবিতা লেখা নয়, তার জন্য সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আর সব কিছুর জন্যও তাকে নয়!
ঈশানার অন্তর্লীন ক্লাসিক সৌন্দর্য এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে তার প্রেমে আর সবকিছুই তাদের যথাযথ গুরুত্ব নিয়েই তুলনামূলকভাবে এমন তুচ্ছ হয়ে পড়ে যে আমি উপলব্ধি করি ঈশাই যথার্থ প্রেম।
এমন অঙ্গীকারের মধ্যে আবার আতঙ্কও তাড়া করে ফিরছে – যে কোনো সময় আমার হাতে সাময়িক বরখাস্তপত্র এলো বলে।
একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে খোদ মন্ত্রণালয় ঈশানা চৌধুরী স্ক্যান্ডালসহ অন্যান্য অভিযোগের সত্যাসত্য বের করার জন্য চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে। সিসিএফ, এমনকি সচিবের বিশ্বাস অভিযোগগুলো বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আমি যে সজ্জন ব্যক্তি তাই প্রমাণিত হবে তাই তারা সাময়িক বরখাস্তের মতো কোনো পদক্ষেপে না নিয়ে যেন ঝুঁকিই নেন।
আমার ভাগ্য, চার সদস্যের কমিটির সদস্য সচিব নূরে মায়মোনা। এর মধ্যে আবার এক সদস্য মনিরুল হুদার দাবি মোনার সঙ্গে তার দেহসংশ্লিষ্ট প্রেম, এতে অবশ্য মোনা নাকি গর্বই বোধ করে।
মোনা তার বাবার চাকরির সুবাদে হাইস্কুল ও কলেজে পড়ার সময়টা কাটিয়েছে আমাদের পাড়ায়। আমার কৈশোর-যৌবনে আমাদের তল্লাটে এমন কোনো কিশোরী-যুবতী ছিল না যারা আমায় নামে চিনত না কিংবা যাদের অন্তত আমি চেহারায় চিনতাম না, এদের কাউকে একটুখানি ভালো লাগলেই আমি চোখ টিপ মারতাম, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ফ্লাইং কিস। মেয়েরা তখন আমাকে দেখলে একজন অন্যজনার কানে কানে বলত, ওই দেখ বিশ্বপ্রেমিক। কিন্তু মায়মোনাকে আমার স্মৃতির মধ্যে শনাক্ত করতে দুরূহ ঠেকে।
তবে মোনা যখন তাকে চিনতে বলতে গেলে ইনসিস্ট করে – বলে, তারা সুজাদের বাড়িতে ভাড়া থাকত, তার বাবা অমুক, তমুক ডিপার্টমেন্টে চাকরি করত আর … তখন আমার মনে পড়ে মোটাতাজা এক পেশকারের কথা যে ঘুসখোর হিসেবে পাড়ায় কুখ্যাত ছিল, পাড়ার ছেলেরা তার ফ্যাটি মেয়েকে ভাবত বাবার ঘুসের ফসল। নিশ্চয়ই তারই উত্তরাধিকার এই নূরে মায়মোনা – তার অর্থ আত্মসাতের নানা চাতুর্য মুখে মুখে আখ্যান হয়ে ফেরে, যার জন্য একবার ও সাময়িক বরখাস্তও হয়; কিন্তু সবই অপ্রমাণিত।
অপ্রমাণিত হলেও জলহস্তির মতো অস্বাভাবিক মোটা নূরে আরো আরো আগ্লি হয়ে ইতোমধ্যে বর্ণনাতীত রূপ ধারণ করায় তার প্রশ্নে আমাকে আছর করে ‘লাঞ্চনে’র লেখিকার সেই নিয়তিবাদী আত্মা যে কি না এক নারীর পাল্লায় পড়ে তাকে বেশ টাকা খরচ করে লাঞ্চ করানোর বহু বছর পর তাকে দেখে চিনতেই পারে না যতক্ষণ না ওভাবে খাদ্যগ্রাস করে মুটিয়ে যাওয়া নারী তাকে তার পরিচয় দেয়! আর এও নূরের জন্য বিরল অভিশাপ যে অবিরাম সে পুরুষ খোঁজে আর পুরুষেরা তার কাছ থেকে এসকেপ করে বেড়ায়। যেন চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ এই ভার নিতে নারাজ। সে গার্ড, পিয়ন, সুইপার তথা ম্যানুয়াল স্টাফ হলে পালিয়েও আতঙ্ক – না জানি কোন ফাঁদে ফেলে তার ওপর উঠতে বাধ্য করে, চাকরি খায়! তেমন হয়রানির উদাহরণও মুখে মুখে সরস গল্প হয়ে ফেরে।
তদন্ত কমিটি-টমিটি ফেস করা দূরে আমার পক্ষে ঈশার মতো এক সৌন্দর্যের খনিতে মজে নূরের মতো এক কুৎসিত নারী মোকাবিলা স্বর্গের অপ্সরীর সঙ্গ থেকে নরকের সেই শাস্তিতে পতিত হওয়া যেখানে লম্পটেরা কদাকার অগ্নিনারী দ্বারা উপর্যুপরি ধর্ষিত হয়।
আপনার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা একটি রিপোর্ট করেছে –
রিপোর্টটি সর্বৈব মিথ্যা।
আপনার এত দুঃসাহস এমন একটি রিপোর্টকে বলছেন মিথ্যা!
শুধু মিথ্যা, বানোয়াটই নয়, অরুচিকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও।
আমার সাহস দেখে নূরে মায়মোনা থ হয়ে গেলে তার কদর্যতায় কিঞ্চিৎ ভাটা পড়ে।
আমার চ্যালেঞ্জ, এমন মিথ্যা, রুচিবর্জিত রিপোর্ট কোনো সংস্থা করতে পারে না।
কেউ যদি অরুচিকর কাজ করে তার রিপোর্ট করা তার দায়িত্ব।
যদি কোনো শ্রমিক প্রসটিটিউশনে যায় তার রিপোর্ট করা নয়।
কিন্তু আপনার জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা, দুর্নীতি, নারী …
সর্বৈব মিথ্যা।
আবারো বলছেন মিথ্যা – হাউ ডেয়ার!
সত্য বলার অধিকার সবারই আছে, তাতে সাহসী হওয়া দোষের নয় নিশ্চয়ই। ওইসব অভিযোগের কোনো প্রমাণ কি ওই রিপোর্টে বা আপনাদের আছে?
আপনার নারী কেলেঙ্কারি?
সেসব আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার রাষ্ট্রীয় বা অফিসিয়াল নয়।
কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর নৈতিক স্খলন অফিস ইগনোর করতে পারে না। আর তা যদি তারই অফিসের নারীকে নিয়ে হয় তবে তা নিশ্চয়ই অফিসকে আমলে নিতে হয়!
আর তা যদি সেই নারীই করে। নূরের পাশ থেকে মনিরুল হুদার দাবি।
কিন্তু তার প্রমাণ কই!
আপনি কি মূর্খের স্বর্গে বাস করেন যে এমন উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি আপনার বিরুদ্ধে নারীঘটিত অপরাধের অভিযোগ আনতে যাচ্ছে বিনা প্রমাণে!
দেখান প্রমাণ –
স্বয়ং ঈশানা চৌধুরী আপনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে – সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট। সাক্ষী মাঈনুল হক। দেখুন।
নূরে আমার দিকে ঈশানার জবানবন্দি বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে, পড়েন। পড়ে এ-বিষয়ে আপনার মতামত দিন।
যেখানে আমি ঈশার জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত, যে কোনো ত্যাগ সেখানে এটা কী করে সম্ভব! সেও তো আমায় বলছিল, তোমার জন্য আমার সব ভেসে যাক – মানসম্মান-স্বামী-পুত্র।
হেলেন ভেঙেছে ট্রয়নগরী এমন এক ক্লাসিক বিশ্বাস থেকে তারা নারীকে আমার কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। তবে আমার জীবন ও কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীই বহমান। কবি চণ্ডীদাস প্রেমই জীবন জ্ঞান করলেও বিদ্যাপতি প্রেমকে যেমন জীবনের সার জ্ঞান করেছিলেন আমিও তেমনটি মাথায় রাখার চেষ্টা করেছি; কিন্তু এখন দেখছি কার্যত আমি এই বিভাজনে ভারি গোলমাল করে ফেলছি।
কিন্তু মহাত্মারাও কী তার বাইরে যেতে পারেন! পুরাণে আছে, যৌনসংসর্গ বর্জন করে চল্লিশ বছর বনে বাস করে সিদ্ধিলাভকারী চিরকুমার ঋষি অতনুকে সহসাই এক রমণী কামুক ভ্রুকুটিতে ডাক দিলে তিনি সমস্ত অর্জন বর্জন করে তার সঙ্গে দেহমিলনে লিপ্ত হয়ে শেষে পরিতাপে পাথরে উপর্যুপরি মাথা আঘাত করে আত্মহত্যা ঘটান।
হ্যামলেট : ফ্রেইলটি দ্য নেইম ইজ ওম্যান।
বাঘ কিন্তু অন্য শিকারি প্রাণীর মতো নয় যে সহজতর শিকারটিই পাকড়াও করল, যাকে তার পছন্দ তার জন্য ঝুঁকি নিয়ে সবার ভেতর থেকে তাকে ধরে নিয়ে ও তার রক্ত-মাংস-হাড়গোড় বিনিঃশেষ করে খায় – এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি বাঘিনীকে প্রশ্ন করার নিরাপদ সুযোগ খুঁজি – তুমি কি আমায় পছন্দ করে খেয়েছ নাকি আমিই তোমাকে আমার খাদক হিসেবে পছন্দ করে তোমার থাবায়, মুখে নিজেকে তুলে দিলাম! যদিও আমি জানি এই খাওয়া-খাওয়ি আসলে একতরফা হয়নি তবু মানসিক জটিলতা থেকে কিংবা যোগাযোগের অজুহাত তৈরির জন্য আমি এই প্রশ্ন করার সুযোগ নিই।
আশ্চর্য বাঘিনী এর উত্তর দেওয়া দূরে থাক, আমার ওপর হামলে পড়তে উদ্যত হলে আমি আত্মরক্ষার্থে পালাই।
ও পালটা অভিযোগ করে, আমি অভয়ারণ্যে ঢুকে তাকে …
এরপর এই বাঘিনী শব্দটি আমার কাছে ভারি দুরূহ ঠেকে। আমি তার রহস্য ভেদ করতে গিয়ে সাইকিক।
আমাকে অন্বেষার নেশায় পায়। ব্যবহারিক অভিধান খুঁজে খুঁজে বের করি চোতমারানি – যত্রতত্র যৌনসঙ্গম করে এমন!
নেভারদিলেস, এখানে এখনো সৎ ও সাহসীরা সাধারণত জয়ী হয়, অসৎ-ভীরুরা ঘটনাক্রমে কদাচিৎ, যার ডাকনাম হয় ভাগ্য। অধ্যবসায়ী, অলস, বুদ্ধিমান, নির্বোধ সবাই ওই একই তত্ত্বের আওতাভুক্ত বটে।
আমাকে যখন পঞ্চাশ কোটি টাকার এই প্রজেক্টের ডিরেক্টর করা হয় আমার সমকক্ষ তথা তথাকথিত নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা ঈর্ষায় ফেটে পড়ে – এবার ব্যাটা বড়লোক হয়ে যাবে।
মোটা কথায় দুর্নীতি আমি করি না, টাকার পিছে আমি ছুটি না, টাকাই আমার পিছে ছোটে এবং ছুটে সে আমায় ধরতে পেরেছে তার কোনো প্রমাণ না থাকায় তা অপপ্রচার বলেই শেষতক বিবেচিত। আর আমার কর্মদক্ষতা কর্তৃপক্ষের কাছে মোটামুটি কিংবদন্তি। অনেক আমলা সবিনয়ে স্বীকার করে আমি যে স্ট্যান্ডার্ডের ইংরেজি বলতে, লিখতে পারি তা সমসাময়িক কোনো সিভিল সার্ভেন্টও পারে না। আমার বিশ্বাস, মধুসূদন ইংরেজি ভাষার কবি হতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু আজকের অনেক ভারতীয়র মতো আমি চাইলে এক্ষেত্রে সফল হতাম, হয়তো এ সময়েরও আশীর্বাদ।
তো আমার এও বিশ্বাস, এসব বিবেচনায় নিয়েই কর্তৃপক্ষ বন গবেষণা, পরিবেশ, অর্থ নানা মন্ত্রণালয়ের নানা বিভাগের কর্মকর্তাদের এই প্রজেক্ট কমিটির সদস্য করে এই আমাকে প্রজেক্টের পরিচালক মনোনীত করে।
কিন্তু ওদিকে শাসক যতই চান তাকে যেন বেদের মতো সাপ পুষতে না হয়, বেদিনীর ভোঁজবাজিকে প্রশ্রয় দিতে না হয়, বদ্বীপ হয় সৎ পেশাদার মানুষের স্বর্গরাজ্য; কিন্তু বেদে-বেদিনীরা তাঁর চোখেও ধুলো দিয়ে সাপ খেলা, ভোঁজবাজিতে মাতে। যেন এই বদ্বীপ কামরূপ-কামাখ্যা। সাপেরা এখানে উড়ে বেড়ায়, ভৌতিক আতঙ্ক ছড়াতে শুধু মুণ্ডু-ধরের বীভৎস অর্ধাঙ্গ নিয়েও উড়ে বেড়ায়, কখনো সম্পূর্ণ শরীর অদৃশ্য রেখে কামড়ে কামড়ে আত্মতৃপ্তিতে উড়ে বেড়ায়। তো টাকার পিছে আমি ছুটি না কিন্তু এই ভোঁজভাজির ধুলার ধূসরতায় টাকা যে আমার পিছে ছোটে!
তবে সেটা কি তেমন কোনো দোষের! ঠিকাদারের কাছ থেকে টেন পার্সেন্ট পাওয়া তো কনভেনশনে পরিণত হয়েছে আর কনভেশন যে প্রায় আইন! তো পঞ্চাশ কোটি থেকে যদি রাজধানীতে আমার জন্য একটা ফ্ল্যাট প্রসবিত হয় এতে কার কী! তাতে পশ্চিমা অর্থনীতির বিবেচনায় আমি যে প্রলেতারিয়েতই থাকি, পুঁজিপতি না – নাকি!
অথচ গুড়ে নয়, আমার ডাল-ভাতে বালি ছোড়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির দুই সদস্য।
গলায় ছুরি চললেও স্টিল আই অ্যাম নট বিহেডেড বিকজ বাকি সদস্য চিফ বায়োকেমিস্ট সাহাদাত হোসেনের নোট অব ডিসেন্টের মতো প্রায় সকল অভিযোগ প্রশ্নে ভিন্নমত।
এতে অবশ্য আমার শত্রুরা সাহাদাত হোসেনেরও পরিণতি দেখতে ভারি উৎসাহী হয়ে উঠেছে – যেখানে গোয়েন্দা রিপোর্টই দাবি করেছে আমার জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা, দুর্নীতি, পরম শ্রদ্ধাভাজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের বিষয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের সেখানে এর প্রমাণ দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে প্রকারান্তরে সে তা চ্যালেঞ্জের ধৃষ্টতা দেখিয়েছে!
ওদিকে সম্মিলিত আমার বিরোধীদল স্ক্যান্ডাল, দুর্নীতি, রাজনীতি ইত্যাদিতে জড়িয়ে আমাকে এমন এক স্পর্শকাতর ব্যক্তিতে দাঁড় করায় যে মন্ত্রী, সচিব, সিসিএফ আত্মরক্ষার্থে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে অপারগ হন।
আমাকে প্রজেক্টের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে আপাতত হেড অফিসে সংযুক্ত করা হয়। আমাকে বিরল প্রাণী ও উদ্ভিদ অভয়ারণ্য যাকে বুঝিয়ে দিতে হয় সে নূরে মায়মোনা। তবে আমার একটা বিষয় ভালো লাগে মায়মোনা আমার চেয়ে ওজনে যেমন বদমায়েশিতে তেমনি আমার চেয়ে বহুগুণ সরেস, ডিভোর্সি মায়মোনা এখন উপরির ভাগ দিয়ে হলেও প্রজেক্টের সেকেন্ড অফিসার শাহাদুজ্জামান শাহাদকে তার গ্যাঁটো হিসেবে তাকে দৈহিক সুখ দিতে যেমন বাধ্য করবে তেমনি ঈশাকে তার হস্তগত হতে দেবে না; তো ঈশা যেমন এবার আর আমার বিকল্প ডিরেক্টর পেল না, নিশ্চয়ই শাহাদকেও না।
আট ঘণ্টা আমার কোনো কাজ নেই, এখন বসন্তকাল – অফিস বাউন্ডারির বাইরে আমার মতো বয়সী এক শিমুলগাছে থেকে থেকে, কখনো অবিরাম কোকিল ডাকে আর আমি ঈশাকে নিয়ে আত্মপীড়ায় ভুগি, ঈশার প্রশ্নে আমাকে আরো অনেক বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল – আত্মসম্মানে প্রচণ্ড আঘাত তাকে পালটে দিয়েছে নিশ্চয়ই, হয়তো তথাকথিত সামাজিক মূল্যবোধ তাকে প্রতারণার আড়ালে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করতে বাধ্য করেছে, এটা সংস্কারমুক্ত সমাজ হলে নিশ্চয়ই আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকত। ঈশা নিশ্চয়ই আমাকে এখনো ভালোবাসে, হয়তো সে এই পরিস্থিতির শিকার – এমন কঠোর অবস্থান লোকদেখানোর।
কিন্তু সে যে আমার ফোনই রিসিভ করছে না!
ফোন রিসিভ করো, অন্তত কথা তো বলো। আমি মেসেজ পাঠাই।
হয়তো চাপে আছ।
কিন্তু সুযোগ করে কল তো দিতে পারো!
তবে কি সে আমায় …
অন্তত আমার ফোন রিসিভ – তা করলে কে আর জানত! হাসব্যান্ড বা গোয়েন্দা সংস্থার ফোন লিস্ট যাচাই!
তবে এরই মধ্যে ও নিশ্চয়ই জেনে গেছে, আমি গোয়েন্দা নজরদারিতে আছি, আমার ফোনও।
আপনি কি ঈশানাকে ফোন করেছেন! সিসিএফ আমার প্রতি ক্ষুব্ধ – জানতে চান, মেসেজ কেন পাঠান!
আশ্চর্য, ঈশা যে কর্তৃপক্ষকে তার ফোনের মিসড কল লিস্ট, মেসেজ দেখিয়ে আমাকে এমন বিব্রতকর দশায়, বেকায়দায় ফেলছে!
কেন এমন করছ তুমি – এর উত্তর পাওয়ার কোনো উপায় দূরে এমন প্রশ্ন করারই যে কোনো উপায় সে রাখছে না!
অথচ একদা ও প্রস্তাব করেছিল – চলো, আমরা এই বদ্বীপ ফেলে নতুন এক দ্বীপে গিয়ে জীবনযাপন করি। এমনকি তার জন্য পুঁজি তৈরি করার উপায়ের কথা বলছিল এবং তার প্রস্তাবিত পথগুলোও ছিল অবৈধ।
এরই মধ্যে কি নতুন দেহবান্ধব জুটিয়েছে ও! সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি,/ বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;/ ফিরে এসো সুরঞ্জনা:/ নক্ষত্রের রূপালি আগুনভরা রাতে;/
ভালোবাসা আসলে বসন্তরোগের মতো, যত বেশি বয়সে ধরবে তত খারাপভাবে আক্রমণ করবে – রেইনার মারিয়া রিলকে।
আমার এমন বিরহ, এমন যন্ত্রণা লালনও সময়ের সহ্য হলো না – মায়মোনাকে প্রকল্পের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হলে সে ঈশা ও শাহাদের সহযোগিতায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার সময়ে প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতি-অনিয়ম-দুর্নীতি যেখানে যা যা সম্ভব তা তা বের করে, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সেসব বানিয়ে আমার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ বরাবর পেশ করছে। আগের যেসব অভিযোগ নিয়ে পুনর্তদন্ত চলছিল আমার বন্ধুবান্ধবের শক্তিশালী লবিং থেকে আমার বিশ্বাস জন্মাচ্ছিল আমিই সত্য – সত্যের জয় হবে। কিন্তু এখন হেরে যাওয়ার যুক্তি- আতঙ্ক আমাকে প্রাণীখেকো বৃক্ষের কর্ষিকায় এমনভাবেই জড়িয়ে-পেঁচিয়ে ফেলছে যে আমি এই সত্যে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি আমরা এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি যেখানে আইনকে আইনিভাবে ব্যবহার যেমন কঠিন হয়ে উঠেছে তারচেয়ে কঠিন বেআইনকে – কিন্তু আইন কি বেআইন তাতে আমার মতো কেউ ফেঁসে গেলে ছোটখাটো পেনালটি বা রক্তপাতে বেরোনো অসম্ভব।
এমন একটা গোয়েন্দা রিপোর্ট হওয়ার পরও এখনো আমার কিছু হচ্ছে না, অন্তত আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেও তো তদন্ত চালানো যেত! সচিবকে তারা তার মন্ত্রী, মন্ত্রীকে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও দফতরের চাপে ফেলে। তারা যার যার অবস্থান থেকে দুঃসাহস দেখান কারণ হয়তো তারা জানেন ব্যক্তি ও সংস্থার দৌরাত্ম্য, সবকিছুই কীভাবে ভোঁজবাজির আওতায় নেওয়া হয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত উপর্যুপরি চাপ সামালে থাকে না – ইত্যাদি অপরাধে আমাকে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে না – এই মর্মে চার্জশিট।
এখন চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে চাকরিজীবীর সারাজীবনের আশা পেনশন থেকেও বঞ্চিত, আমি যে এদেশীয় প্রলেতারিয়েতই হয়ে যাচ্ছি! আমি, আমার ছেলে-মেয়ে-বউয়ের ভবিষ্যৎ! আমি ঈশার জন্য সবই বিসর্জন দিতে প্রস্তুত তা এখন কেমন ইডিয়টিক – অবিমৃশ্যকারীর মতো ঠেকে!
মেয়েটি যখন তার প্রেমিককে অন্যদের ভাগ থেকে বাঁচিয়ে নিজ হাতে মেরে মমির মতো একান্ত নিজের করে রাখল আর বহু বহু বছর পর পুলিশ ঘটনা উদ্ঘাটন করে তার প্রাপ্য সাজা দিতে নিয়ে যাচ্ছে তখন ফকনার তার এই গল্পের নাম ‘রোজ ফর এমিলি’ রেখে এমিলির এই প্রেমকে শ্রদ্ধা জানান; গেটস বি যখন তার প্রেমিকার স্বামী, প্রেমিকা, এমনকি নিজেকে শেষ করে ফিটজারেল্ড তখন তার প্রেমাখ্যানের শিরোনাম ‘গ্রেট গেটস বি’ রেখে বি-র প্রেমের মহিমাকে চিহ্নিত করেন। কিন্তু আমাকে কেউ এ-ত্যাগের জন্য গোলাপ দেবে না, বলবে না দ্য গ্রেট – শুধুই গ্লানি, কেবলি ধিক্কার – এমিলির জন্য আমারো গোলাপ, গেটস বি-র জন্য যে-শ্রদ্ধা! কিন্তু আমার জন্য আমার!
বার্নার্ড শ-র ‘দ্য রেইন’ গল্পে নায়িকা – পুরুষগুলো একেকটা কুকুর – তো বহু আগেই বলেছে। এই নারীবাদের যুগে নারী বা নারীবাদী সুযোগে পুরুষকে বিষধর সাপ, ধূর্ত শিয়াল, নিষ্ঠুর হায়েনা বা যে কোনো নিকৃষ্ট পশু যা খুশি বলুক কিন্তু নারী!
খুব দ্রুতই প্রসিডিওর সেরে আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।
কিন্তু সবাই যে বলছে আমার পতনের মূলে আমার নারীলিপ্সা তা কি ঠিক! ঈশার কি কোনো দোষই নেই! ট্রয় বিনাশের দায় থেকে কি হেলেনকে অব্যাহতি দেওয়া যায়! সর্বোপরি আমার শত্রুরা সংগঠিত হয়ে যে …
জাদুর ভোঁজবাজি সবকিছু গ্রাস করে নিলেও নিশ্চয়ই আদালত নয়। আদালতে রিট করে আমার মানসম্মান, দেহ-প্রেম, পারিবারিক সুসম্পর্ক ফিরে না পেলেও অন্তত আমার বউ-ঝির ডাল-ভাত, ছেলের পড়াশোনা নিশ্চয়ই।
যদি না পাই!
আমি নাগরিকের শেষ আশ্রয় হাইকোর্টে রিট করার জন্য এক জাঁদরেল ব্যারিস্টারের শরণাপন্ন হই।
আমি ব্যারিস্টার হাসানউদ্দিন হাসানের প্রজ্ঞা এবং আইনি যুক্তিতে আস্থা পাই – আমি জয়যুক্ত হবো।
কিন্তু আমার কি ভুল হলো – তিনি বিরোধীদলেরও আইনজীবী!
লাভ ইজ এ টেইল টোল্ড বাই অ্যান ইডিয়ট ফুল অব সাউন্ড অ্যান্ড ফিউরি, সিগনিফাইং নাথিং। এটা নিশ্চয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ঈশার মতো অ্যাপল অব ডিসকর্ড হাতে না পেলে সম্মিলিত অসুর শক্তি আমার মতো দোষের-গুণে শক্তিধর মানবের সত্যি কী কিছু করতে পারত! আমি তাই সেই সওদাগরবেশে তার কাছেই যাই।
তোমার দুই ঊরু ফাঁক করো –
হোয়াট! তুমি তো সেই আত্মঘাতী কাপালিকই!
প্লিজ, করো ফাঁক ঈশা, করো – আরো, আরো, আরো … শুধু দেখি, আমাদের সাতখানা জাহাজ যে গেল তার কোনোটার মাস্তুলও নি দেখা যায়!
এক রৌদ্রালোকিত দুপুরে আমি দেখি ওই মাস্তুলে পত্পত্ করে উড়ছে খারিজ হওয়া আমার রিট।