মৃত্যু রহস্য

মৃত্যু রহস্য
নুসরাত বাসর রাতে স্বামীর সামনে বসে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে নিজের নগ্ন দেহ দেখিয়ে যাচ্ছে ভিডিও কলে। আর নুসরাতের হাসবেন্ড আমিনুল সেটা অবাক নয়নে তাকিয়ে দেখছে। যেখানে প্রতিটা মানুষের কাছে বাসর রাত হচ্ছে একটা স্বপ্নের রাত। এই রাতের জন্য কতোকাল অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে যখন রাতটা আসলো তখন নিজের বউ তাঁর শরীর দেখিয়ে যাচ্ছে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে। এটা ভাবতেই আমিনুলের মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মৃত্যু এতো সহজ না। যখন তখন চাইলেই এটার স্বাদ গ্রহণ করা যায়না। তবে সময় হলে ঠিকই সবাইকে মৃত্যুকে বরণ করতে হবে। এটা থেকে কেউ আজ পর্যন্ত বাঁচতে পারেনি,ভবিষ্যতেও পারবেনা।
“নিজের দেহটা কি এতো সস্তা যে সবাইকে দেখিয়ে যাচ্ছো।” আমিনুল বলল। সবাইকে মানে? আমার দেহ,মন,প্রাণ সব কিছুই শুধু একজন মানুষের। আমি যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তুমি আমার সবকিছুই দেখতে পারবে কিন্তু কখনো আমাকে ছুঁয়ে দেখতে পারবেনা। তুমি চাইলেও আমাকে ছেড়ে দিতে পারবেনা। কাবিনের টাকা কতো মনে আছে তো? পঞ্চাশ লাখ! তোমার বাড়ি,গাড়ি,ব্যাংক ব্যালেন্স সবকিছু বিক্রি করলেও কাবিনের টাকা হবেনা। আর আমাকে ছাড়তেও পারবেনা কখনো। এটাই হবে তোমার শাস্তি। তুমি সারাজীবন নিজের বউয়ের পরোকিয়া খুব কাছ থেকে দেখবে। কিন্তু কিছু করার থাকবেনা তোমার।
নুসরাত কথা গুলো বলেই কাপড় পড়ে শুয়ে পড়লো। আর আমিনুল একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে গেলো। কিছুদিন আগেও এই নুসরাত কতো ভালোবাসতো আমিনুলকে। দীর্ঘ একবছর রিলেশন করে বিয়ে করেছে তারা। এই একবছরে নুসরাত আমিনুলকে দেখিয়ে ছিলো কতো ভালোবাসা,কতো আশা,কতো স্বপ্ন। সেগুলোকে পুজি করেইতো আমিনুল নুসরাতের সাথে বিয়ে নামক এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আজ সেই পবিত্র বন্ধনটাকে অপবিত্র করে দিয়ে স্বামীকে ছেড়ে প্রেমিককে নিয়ে ভালোবাসার খেলায় মেতে উঠেছে নুসরাত। আমিনুল জানতো নুসরাত শুধু তাকেই ভালোবাসে। তাঁর আগেও একজন ভালোবাসার মানুষ ছিলো এটা আমিনুল কখনোই ভাবেনি। কিন্তু ভাবনা জিনিসটা সবসময় সত্যি হয়না। আমিনুলের টাও হয়নি।
তবে সে ভেবে পাচ্ছেনা। কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে নুসরাত। সে কী এমন করেছে যার জন্য এতো জঘন্য শাস্তি পেতে হচ্ছে তাঁকে। এসব ভাবছে আর সিগারেট খাচ্ছে বাহিরে বসে। আমিনুল ওই রাতে অনেক ভাবলো। কি জন্য নুসরাত এতো নোংরা একটা কাজ করলো। সেটাও তাঁর নিজের হাসবেন্ড এর সামনে। শুধুমাত্র কষ্ট দেওয়ার জন্য?
কিন্তু আমিনুল কোনো কিছু মনে করতে পারল না। শুধু চিন্তা করলো জীবনে তো অনেক খারাপ কাজই করেছি। অনেকের ক্ষতি করেছি। তবে নুসরাতের আপন কোনো মানুষের কখনো ক্ষতি করিনি বরং উপকার করেছি। আর ক্ষতি করে থাকলেও এতো বড় জঘন্য শাস্তি কখনোই কেউ কাউকে দিতে পারেনা। তাহলে কি অন্য কোনো কারণ আছে এর পেছনে? এসব ভাবতে ভাবতেই আমিনুল ঘুমিয়ে পড়ে। বাহিরে প্রচন্ড বাতাস ছিলো, আবহাওয়াটাও বেশ মনোরম ছিলো। তাই আমিনুলের ঘুম ভাঙতে সকাল দশটা বেজে যায়।
ঘুম ভাঙতেই দেখে তাঁর পাশে নুসরাত বসে আছে। খুব ভয়ংকর দেখাচ্ছে নুসরাতকে। চুল গুলো অগোছালো, চোখ দুটো বড় করে তাকিয়ে আছে আমিনুলের দিকে। তাঁর নাক,মুখে রক্তের দাগ লেগে আছে। আমিনুল ভয় পেয়ে একটু পেছন সরে গেল। নুসরাত এগিয়ে গিয়ে তাঁর কলার চেপে ধরে বলল। তোমার প্রাণ প্রিয় বন্ধু হাসানকে খুন করা হয়েছে। খুব নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতোটা ভয়ংকর খুন হয়তো পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি হয়নি। “আমিনুল কিছু বলবে তখনোই বাসার কাজের মেয়ে এসে বলল”। স্যার,আপা মণি সকালে সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় পড়ে গেছিলো। তারপর নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। ওনাক কতো করে বললাম ডাক্তারের কাছে যাই, নাক,মুখ ধুয়ে ফেলতেও বলেছি কিন্তু ওনি কথা শুনেনা আমার। বলে আমার কিছু হয়নাই। আমিনুল রুমে গিয়ে টিভি চালু করতেই একটা নিউজ দেখতে পায়। যেটা কিছুক্ষণ আগে নুসরাত তাকে বলল। হাসানে মৃত দেহ পাওয়া গিয়েছে কোনো পরিত্যক্ত রাস্তায়।
দুজনকে হানিমুনে যেতে হলো শুধু মাত্র পরিবারের ইচ্ছাতে। বিয়ের পর নাকি কিছু সময় স্বামী স্ত্রী একান্তে কাটাতে হয়। তাহলে সম্পর্কটা গভীর হয়। তাই তারা বিয়ের দুইদিন পরেই সিলেট চলে গেলো। তবে হাসানের কথাটা আমিনুল ভুলতে পারছিল না। ওখানে তিনদিনের দিন আরেকটা ভয়ংকর খবর শুনতে পেলো তারা। সোহেল নামে এক যুবকের লাশ পাওয়া গিয়েছে ঢাকা শহরের কোনো এক নোংরা ডাস্টবিনে। এই সোহেল আমিনুলের খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলো। স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি দুজন একসাথেই পাড়ি দিয়েছে। হাসানের মৃত্যুটা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও সোহেল এর টা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছেনা। সোহেলের ফোন চেক করে দেখা গেছে তাঁর লাস্ট নাম্বার ছিলো আমিনুলের। কিন্তু আমিনুল লাস্ট একমাসেও সোহেল এর সাথে কথা বলেনি। এসব ভাবতে ভাবতে আমিনুলের রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে নুসরাত আগের মতোই হাসি খুশি যদিও এখন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে তাঁর নগ্ন দেহ দেখায়না। তবে কথা ঠিকই বলে।
সকালে আমিনুল বসে টিভিতে নিউজ দেখছিল। এমন সময় নুসরাত তাঁর কাছে এসে বসে। আর বলে। হাসান এবং সোহেলের লাশ দুটো পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। দুইটা লাশেরই বুকে অদ্ভূত একটা চিন্হ আছে। যেটা দেখে সবাই তাকে হত্যাকারি ভাবছে। আমিনুল খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো কি সেই চিন্হ যেটা দেখে ধারণা করা হচ্ছে খুনি কে? নুসরাত আমিনুলের কানে ফিসফিস করে বলে। নাম শুনলেতো আবার ভয় পাবেনা? না, জাস্ট নামটা বলো। হাসান আর সোহেলের বুকে খুব স্পষ্ট করে একটা নাম লেখা ছিলো। যেই নামটা তোমার খুব পরিচিত। তুমি তাকে খুব ভালো করেই চিনো। কে সে? তানিয়া।
নামটা শুনে আমিনুলের পৃথিবীটা যেনো উল্টে গেলো। সে কিছু ভাবতে পারছেনা। শুধু কাপছে। সে তাঁর অতীতকে ভোলার জন্য কতো কিছুই না করেছে। কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো কখনো ভোলা যায়না। তার মধ্যে একটি হলো ধূসর অতীত। যেটা মানুষ চাইলেও ভুলতে পারেনা। অনার্স তৃতীয় বর্ষে থাকতে আমিনুল আর তার বন্ধুরা মিলে নিজেদের একটা বন্ধুর সাথে তানিয়া নামের একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিয়েছিল। জোর করে বললে ভুল হবে অপমানজনক ভাবে সবার সামনে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল আমিনুলের আরেকটা বন্ধুর সাথে। তাঁর নাম হচ্ছে তানভীর।
তানিয়া ছিলো খুব সহজ সরল,সুন্দর নম্র ভদ্র একটা মেয়ে। একদিন তাকে ডেকে এনে তানভীর এর সাথে একটা রুমে তালা দিয়ে রেখে দেয়। তারপর জানাজানি হয়ে যায়। তারা একটা রুমের ভিতর এক ঘন্টা ছিলো। যখন রুমের দরজা খোলা হলো তখন তানিয়ার মুখের দিকে তাকানো যায়নি। হয়তো এতোটা লজ্জা, অপমান নিয়ে কেউ বেঁচে থাকতে চাইবেনা। তানিয়াকে যখন তানভীরের সাথে বিয়ে দেওয়া হলো তখন সে খুশি মনে হ্যাঁ বলেছিল। যেদিন বিয়ে হলো তারপরের দিন তানভীরের শুধু দেহটা পাওয়া গিয়েছিলো। মাথাটা পাওয়া যায়নি। ওইদিনের পর থেকে তানিয়া নামের মেয়েটাকে আর দেখা যায়নি। অনেকের ধারণা সে মারা গিয়েছে। তবে কেউ সঠিকভাবে কিছু বলতে পারেনা।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত