সেদিন ছাত্রী আমাকে বলল,” স্যার! আমি তো আজ পরীক্ষায় সব দিয়া ফেলছি। নিশ্চিত অঙ্ক পরীক্ষায় ৮০ এর উপরে পাবো। দেইখেন।” ঠিক তখন কারেন্ট চলে গেলে, আমি তাকে রেগে বলে উঠি,
-“মিথ্যা বলার জায়গা পাও না? মিথ্যুক কোথাকার !” ছাত্রী মুখ কালো করে বলল,
-মিথ্যা বলব কেন? এতে মিথ্যা বলার কি আছে?”
– মিথ্যা না বললে কারেন্ট যায় কেমতে? কারেন্ট যাওয়ার মানেই হলো মিথ্যা বলা। মিথ্যাবাদী মেয়ে। ছাত্রী আমার দিকে অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে, মনে কষ্ট নিয়ে তাকিয়ে রইল। আবার, ওইদিন আন্টি আমাকে বললেন,
-” স্যার! মনে কষ্টে নিয়েন না। আপনার টাকাটা আটকে আছে। এই তিনমাস বেতন যে হয় না। কলেজ থেকে বেতন দিচ্চে না। বেতন দেয়ার মতো টাকা নাকি নেই। প্লিজ স্যার! সরি।” আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। কিন্তু তখন কারেন্ট চলে এলে, বিশ্বাসের ভঙিতে বললাম,” ও আচ্ছা! নো প্রবলেম! ” ছাত্রী আমার মুখে বিশ্বাস দেখে তার মাকে বলল, ” জানো মা! যদি কারেন্ট না আসত, স্যার ভাবত তুমি মিথ্যা বলেছ। কারেন্ট আসাতেই তোমার কথা বিশ্বাস করেছেন। নইলে করতই না।”
কথাটা শুনে আন্টি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে রইলেন। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। গতকাল আংকেল এসে
সোফায় বসে বললেন, ” জানেন স্যার! ছোটবেলায় আমি খুব মেধাবী ছিলাম। সব পরীক্ষায় ৯০ এর উপরে পেতাম। কলেজ-ভার্সিটিতেও তুখোড় মেধাবী ছিলাম। প্রেম-ভালবাসা এগুলা কি জানতামই না। শুধু জানতাম পড়া আর পড়া। কিন্তু বাস্তবতা আজ আমাকে ব্যবসায়ী বানিয়েছে। হায়রে কপাল!”
কিন্তু হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলে আমি মুচকি হাসতে থাকলাম। তিনি অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
ছাত্রী তার বাবাকে বলল, বাবা! তুমি মিথ্যা বলেছ তাই কারেন্ট চলে গেছে, তাই স্যার হাসছেন। আংকেল থতমত খেয়ে লজ্জায় চলে গেলেন কিন্তু আজ যখন টিউশনি থেকে আসতে ছাত্রী আর আন্টিকে বললাম,” আমার আংকেল খুব অসুস্থ। তাকে বাঁচানো যাবে না হয়ত। আইসিইউতে আছেন। তাকে শেষবার দেখে আসতে হবে। তাই আগামী তিনদিন প্রাইভেট পড়াতে আসতে পারব না।” কিন্তু হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলে ছাত্রী আর ছাত্রীর মা দুজনেই হেসেই খুন। আমি এমন হাসি দিকে একদৃষ্টিতে অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। মোঃ আজিজুল হক শাওন
গল্পের বিষয়:
গল্প