গল্পটা নীল পাঞ্জাবির

গল্পটা নীল পাঞ্জাবির
আব্বু যেদিন নীলকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলেন আমি তখন টেবিলের উপর বসে চেয়ারে পা রেখে কাঁচা আম লবণ দিয়ে মেখে খাচ্ছিলাম। আব্বুকে দেখে তারাহুরো করে নামতে গিয়ে স্কার্ট এর কোনা আটকে ধপাস করে পরে গেলাম ফ্লোরে। ভেবেছিলাম খুব হাসবে নীল কিন্তু নাহ সেদিন নীল হাসে নি। খুব গম্ভীরই ছিলো তার ওই মায়াবী মুখটা।
ভাবছেন এই নীলটা কে?? নীল আমার ফুফাতো ভাই। নীলের আব্বু-আম্মু সবাই মারা গেছে তাই আব্বু নীলকে আমাদের বাসায় এনেছে কিছুদিন থেকে যাতে ওর মনটা ভালো হয়। উঠতে উঠতে ভালো করে আমি নীলকে দেখে নিলাম। সাদা পায়জামার সাথে নীল পাঞ্জাবীটা অনেক মানিয়েছে। বড় সিল্কি চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে নড়ছে। মুখে এখনো দাড়ির রেখা উঠে নি তাই অনেক কিউট লাগছে ছেলেটাকে। এর আগেও আমি নীলকে দেখেছি কিন্তু এমন করে কখনো দেখা হয়নি। আজকে দশদিন হলো নীল আমাদের বাসায় এসেছে। একটা ব্যাপার লহ্ম্য করলাম,, ছেলেটা এই দশদিনই শুধু পাঞ্জাবি পড়েছে। সারাদিন বাসাই থাকে কিন্তু তারপরে পাঞ্জাবি পড়ে থাকে। আর সব নীল আর লাল রংয়ের পাঞ্জাবী। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি আব্বু শুধু শুক্রবারে পাঞ্জাবী পরে জুম্মাহর নামাজে যেতেন। বা অন্য কোনো উৎসব থাকলে পাঞ্জাবী পরতেন।
কিন্তু এই ছেলেটা রোজই পাঞ্জাবী পড়ে। একটা মানুষ কি করে সবসময় পাঞ্জাবী পরে থাকতে পারে?? একেই বলে পাঞ্জাবীওয়ালা। ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি ফুপিকে নাকি আব্বু কথা দিয়েছে এই পাঞ্জাবিওয়ালার সাথে আমার বিয়ে দিবে। আর এইজন্য লজ্জায় কখনো কথা বলে হয়ে উঠে নি ওর সাথে। আজকে পর্যন্ত কখনো “ভালো আছে” নাকি এইটাই জিজ্ঞেস করতে পারি নি। শুধু সে আমাকে দেখত আর আমিও তাকে দেখতাম। হয়ত সেও আমার সাথে কথা বলতে লজ্জা পায়। কারণ সেও কোনোদিন আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করে নি। একদিন বিকালে আমি ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে মানব শূন্য এই শহরকে দেখছিলাম তখন হঠাৎ করে ও পিছন থেকে বলে উঠল,,,,
— ভালো আছেন.. আনহা?? (নীল)
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম নাহ শুধু তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম আমি ভালো আছি। কিন্তু আজকেও লজ্জায় তাকে জিজ্ঞেস করা হলো নাহ সে ভালো আছে কি নাহ.??
— আপনি সবসময় এমন চুপচাপ হয়ে থাকেন কেনো??
— আপনিও তোহ থাকেন
— কই আমিই তোহ আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম ভালো আছেন কি নাহ?? তারপরেও কিছু নাহ বললেন শুধু মাথা নাড়ালেন আপনি। আমি কেমন আছি তাও জিজ্ঞেস করলেন নাহ
— আচ্ছা.. এখন জিজ্ঞেস করছি!! আপনি কেমন আছেন??
— জী.. আমি ভালো আছি।
— একটা কথা বলবো আপনাকে??
— হুম বলেন!!
— আপনি সবসময় পাঞ্জাবী পরেন কেন??
— ভালো লাগে তাই।
— তাই বলে সবসময়?? মাঝে মাঝে তো শার্ট পরতে পারেন। কাউকে কখনো এভাবে সবসময় পাঞ্জাবী পরতে দেখিনি। ব্যাপারটা কেমন যেনো লাগছে। আপনার গরম লাগে নাহ??
— না। আমার ভালো লাগে। আর আমার নানু ভাইও সবসময় পাঞ্জাবী পরতেন। আর আমি ছোট থেকেই নানু বাসায় বড় হয়েছি জানেন তোহ। আমার নানু ভাইয়ের থেকে আমি পাঞ্জাবি পড়া শিখেছি। এখন আর পাঞ্জাবি ছাড়া অন্য কিছু পড়তে ভালো লাগে নাহ।
— ওহহ।। আচ্ছা এখন আমি যাই।
বলেই আমি সেখান চলে আসলাম। আমার অনেক লজ্জা করছিলো ওর সাথে কথা বলতে তাই চলে এলাম। এখন ওর সাথে মাঝে মধ্যেই বিকালে ছাঁদে দেখা হয়। আর টুকটাক কথা হয়। ছেলেটা খুব ভালো গান গাইতে পারে। যত দিন যাচ্ছে নীলের সাথে আমার মিশা বারছে। সারাদিন বাসায় বসে থাকতে হয় করোনার জন্য। কলেজেও যাওয়া হয় নাহ। তাই সারাদিন এখন ওর সাথেই আড্ডা দিয়ে সময় পার করি। অনেক ফ্রি হয়ে গেছি এখন আমরা। ও যা বলে আমার তাই ভালো লাগে। যা করে তাই ভালো লাগে। ওর হাসিটা অদ্ভুত সুন্দর। আমি কী ওর প্রেমে পরে যাচ্ছি??? একদিন মায়ের একটা নতুন শাড়িটা দেখেই ইচ্ছে হলো পরে ফেলি। শাড়িটা পরে সেজেগুজে ছাঁদে গেলাম। নীল আগেই থেকেই ছাঁদে ছিলো। আমাকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। আমার অনেক লজ্জা লাগছিলো ওর তাকিয়ে থাকা দেখে। তারপরেও ওর সামনে গেলাম,,,
— তুমিও পারো শাড়ি পরতে??
— ভালো লাগছে নাহ আমাকে??
— অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোমাকে।।
বলেই সেই অদ্ভুত সুন্দর হাসিটা দিলো। আমি নিশ্চুপ হয়ে শুধু ওর হাসিটা দেখছি। অনেক মায়া আছে এই হাসিটা। হাসিটা থামিয়ে ও আবার বলা শুরু করল,,,
— মাঝে মাঝে শাড়িও তো পরতে পারো। তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে শাড়িতে।।
— সত্যিই কি তাই??
— হুম।
— নীল??
— মাঝে মাঝে পাঞ্জাবী ছেড়ে শার্ট পরতে পারো নাহ। তোমাকে কখনো শার্ট পড়ে দেখা হয় নি।
— জানো আমি যখনই শার্ট কিনতে যাই তখনি আমার একের পর এক পাঞ্জাবী পছন্দ হয়ে যায়। তাই আর শার্ট কেনা হয়ে উঠে নি।
— আমি কিনে দিলে পরবে??
— পরবো নাহ কেনো??
— পহেলা বৈশাখকে এইবার তোমাকে আমি একটা নীল শার্ট কিনে দিবো।
— আচ্ছা দিও।।
আজকে পহেলা বৈশাখ। সারা বাংলাদেশ কেনো পুরো পৃথিবীতেই করোনা ভাইরাসে জন্য সবকিছু বন্ধ। সবাই নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যাস্ত। কিন্তু তারপরে অনলাইনে অনেক কষ্টে ওডার দিয়ে দিলাম। আর দুপুরের মধ্যে চলেও আসছে। বিকালে হাতে শপিং ব্যাগটা নিয়ে ছাঁদে গেলাম। আজকে লাল আর সাদা রংয়ের শাড়ি পড়ে ছাদে গেলাম। কারন আজকে পহেলা বৈশাখ তাই এই এইরকম সাজঁলাম। আমি ছাদে উঠার পরে যখন ও আমাকে দেখল অপলকহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে আমার ভীষন লজ্জা লাগছে ওর সামনে যেতে। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম ওর হাতেও একটা শপিং ব্যাগ। আমি যাওয়ার সাথে সাথেই ওর হাতের ব্যাগটা আমাকে দিয়ে বলল,,,
— এইটা তোমার জন্য।। শপিংব্যাগ টা হাতে নিয়ে দেখি একটা লাল টুকটুকে শাড়ি। শাড়িটা আমার অনেক ভালো লাগছে। প্রিয় মানুষটার দেওয়া এটাই আমার প্রথম উপহার। কি করে খারাপ লাগতে পারে।
— আনহা!!
— হুম বলো।।
— একটা অসম্ভব সুন্দির হাসি আছে। তাকে আমি বলি লাজুক হাসি। লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে অল্প ঠোঁঠ কামড়ে হাসি। প্রিয় তোমার ওই হাসিটাকেই আমি ভীষন ভালোবাসি।ভালোবাসি প্রিয় তোমার কাজল আঁখিকে। ভালোবাসি তোমার ওই লজ্জা মাখা চেহেরাকে।
আজকে এই নতুন বছরে নতুন করে তোমাকে নিয়ে বাঁচার সপ্ন দেখতে চাই প্রিয়। ভালোবাসি তোমাকে অনেক প্রিয়।
আমি কিছু বলি নি শুধু আমার হাতে থাকা শপিংব্যাগটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। বলি নি বললে ভুল হবে। কারন আমি লজ্জায় কিছু বলতে পারছি নাহ। নীল শপিংব্যাগটা খুলে দেখে এর ভিতরে একটা নীল রংয়ের পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবীটা দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
— কিনতে গেলে শার্ট আর এখন প্যাকেট খুলে দেখি পাঞ্জাবী।
— আমিও শার্ট কিনতে পারলাম না,, চোখটা পাঞ্জাবীতেই আটকে গিয়েছিলো।
— আমি না হয় পাঞ্জাবী পড়তে ভালোবাসি তাই কখনো শার্ট কিনতে পারি কখনো। কিন্ত তুমি তো পারতে একটা শার্ট কিনতে,, কেনো কিনলে নাহ??
-কারন গল্পটা পাঞ্জাবীর!!! এখানে শার্টের প্রবেশ নিষেধ!!!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত