তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে হয়

তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে হয়

মাঝরাতে এ’ডাল্ট ফোন-আলাপে মেতে উঠেছে দুটো তরুণ-তরুণী।একদিন দুইদিন যেতে যেতে কোনো এক সময় নিয়ম মাফিক অভ্যাসে পরিণত হয় তাদের। আজকাল অরিত্রির কাছে নিহান রাত-বিরাতে ভিডিওকলে আসতে খুব বায়না ধরে।মেয়েটা ও ভালোবাসার টানে ভিডিওকলে আসে, তবে সে খেয়াল করে নিহানের শরীর কেমন যেন কাঁপে হুটহাট, উল্টোপাল্টা কথা বলতে থাকে।

এভাবে সম্পর্কের প্রায় একবছর কাটে।এদিকে নিহানের চাহিদাগুলো বাড়তেই থাকে।এই যেমন ন্যু’ডসের আবদার বা কখনো দেখা করার সময় রেস্টুরেন্টের চিপায় গায়ে গা লেপ্টে আনাচে-কানাচে হাত রাখা।শুধু শারীরিক সম্পর্কটাই এখন বাদ পড়েছে।

কোনো একদিন হঠাৎ নিহান খুব জোর করে বসলো অরিত্রিকে ফিজিক্যাল রি’লেশন করতে। মেয়েটা বারবার না করছে, এমনিতেই ভদ্র পরিবারের মেয়ে হয়ে বাবা-মায়ের আড়ালে অনেক নিচু কাজ করে এসেছে শুধুমাত্র ভালোবাসার কাছে বিবেক হারিয়ে।

ছুদিন যেতে না যেতেই নিহানের আসল রূপ বের হলো।ফিজিক্যাল রি’লেশন না করলে সে সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলবে এমন হু’মকি দিতে লাগলো। একসময় তাদের দু’জনের সম্পর্কে ফাটল ধরে।অরিত্রি ই নিজ থেকে সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসে।

হঠাৎ একদিন অরিত্রির ঘুম ভাঙ্গে তার মায়ের চড় খেয়ে।কারণ জানতে চাইলে, জানতে পারে পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অরিত্রির ন’গ্ন শ’রীরের ছবি।পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন মোটামুটি সবাই ছিঃ ছিঃ করছে অরিত্রির বাবা-মাকে।

অরিত্রিকে ঘরে আটকিয়ে রেখেছে ওর বাবা-মা।মেয়েটার এতোদিনের ঘোর কেটেছে। ভালোবাসায় এতো অন্ধ ছিল যে, শেষে বিবেকটাই হারিয়ে বসতে হলো! ভালোবাসা মানে তো দুটো মনের সম্পর্ক তাই নয় কি?সত্যিকারের ভালোবাসায় ফোন সে’ক্স, ন্যু’ডস কিংবা ফিজিক্যাল কোনো চাহিদাই থাকেনা।ভালোবাসা অর্থই তো একে অন্যকে সম্মান করা।

অরিত্রি বুঝতে পারলো, সম্পর্কে আত্মসম্মান ও ব্যাক্তিত্ব বজায় রাখাটা ঠিক কতটা জরুরি। অথচ বোকা মেয়েটা তো এতোদিন প্রেমিকা হিসেবে নয় বরং কোনো দে’হ ব্য’বসায়ীর মত ট্রিট পেয়ে এসেছিলো নিহানের কাছে।শেষে তার প্রাপ্তির খাতাটা শুন্য।

ছয় বছর পর অরিত্রির বিয়ে হয়েছে।তবে নিহানের সাথে নয়, বাবা-মায়ের পছন্দে রাইয়ানের সাথে।এই ছয় বছরে সে আর কখনো পেছনে ঘুরে তাকায়নি।পড়াশোনাটা চালিয়ে গেছে।শত ঝড়ঝাপটা এসেছে, সয়ে গেছে। সইতে তো বাধ্য, যেহেতু সে ভুল করেছে।

রাইয়ান অরিত্রির পুরো অতীত জেনেই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে।অরিত্রির সাথে পরিচয়টা হাসপাতাল থেকেই। দুজনে একই হাসপাতালে দায়িত্বরত ছিল।সেই থেকে রাইয়ানের অরিত্রিকে পছন্দ।যদিও অরিত্রি তাকে পাত্তা ই দিতো না।

বিয়ের পর অরিত্রিকে রাইয়ান শুধু এইটুকুই বলেছিলো,

” কখনো ভেবে না, আমি তোমায় করুণা করছি।তুমি তো জেনে ভুল করো নি, তাই না?সবচেয়ে এপ্রিসিয়েট করার মত কি জানো? তুমি এতো ঝড়ঝাপটা সয়ে ও নিজেকে শেষ করে দাও নি। উঠে দাঁড়িয়েছো। আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুধু একজন স্বামী হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবে আমায় সবসময় পাশে পাবে তুমি।”
বিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে পা রেখেছে অরিত্রি-রাইয়ান। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে তাদের।ছেলে-মেয়ে দুজনই বাবা-মায়ের সাথে বন্ধুর মত একদম। অরিত্রি ও রাইয়ান ঠিক করেছিলো, ছেলে-মেয়ে দুটোর সাথে ছোটবেলা থেকেই বন্ধুর মত আচরণ করবে, যেন ফ্রী হতে পারে।

বেশিরভাগ সন্তানের খারাপ পথে যাবার একটাই কারণ হলো, বাবা-মায়ের সাথে দূরত্ব। এতে বাবা-মা সন্তানকে বুঝতে পারেনা আর না পারে ঠিকমত খেয়াল নিতে। টিনএজে ভুলগুলো ঠিক এ জন্যই খুব বেশি হয়।সে হিসেবে অরিত্রি ও রাইয়ান সন্তানদের সাথে বেশ খোলামেলাভাবেই এসব বিষয়ে বোঝায়।

অরিত্রি যে ভুলগুলো করেছিলো তার বিন্দুমাত্র ও যেন তার সন্তানদের সাথে না ঘটে এজন্য মা হিসেবে আজ সে অনেক সচেতন।কারণ সে জানে টিনএজের সময়টা ঠিক কতটা বেশি খারাপ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত