দশ বছর আগে সবচাইতে কাছের বান্ধবীটাকে বলেছিলাম। ভালোবাসি তোমাকে, বিয়ে করবে আমায়? আমি এসব প্রেম,ট্রেম এ বিশ্বাসী নই। তাই তোমাকে সরাসরি জীবনসঙ্গিনী হিসেবে চাই। খুব আত্মবিশ্বাস নিয়েই কথাগুলো বলেছিলাম। কারণ দেখতে শুনতে ভালোই ছিলাম। ছাত্রও খুব একটা খারাপ ছিলাম না। সবমসময় সেরা পাঁচ জনের ভিতরেই থাকতাম। তাই আত্মবিশ্বাস একটু বেশিই ছিলো।
জবাবে বান্ধবী বলেছিলো,দেখো তুমি অনেক ভালো একটা ছেলে।দেখতেও ভালো,পড়াশোনায়ও ভালো কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। কারণ আমি নিজেকে খুব বেশি ভালোবাসি। আমাকে বিয়ে করার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠিত ছেলেই লাইন লাগিয়ে দিবে যদি আমি চাই। সেই রুপ,যৌবন,যোগ্যতা সবকিছুই আমার মাঝে আছে। আমি তেমন একজনকেই বিয়ে করে সারাজীবন আরাম আয়েশে,বিলাসিতায় কাঁটাতে চাই। দুঃখ,কষ্ট যেনো আমাকে কখনো স্পর্শ করতে না পারে। তুমিই বল,এরকম একটা নিশ্চিত বিলাসবহুল, সুখকর জীবন ছেড়ে তোমার সাথে অভাব অনটনে দিন কাটাবো?
হয়তোবা অনেকেই পারবে কিন্তু আমি পারবো না। কারণ আমি নিজেকে অনেক ভালোবাসি। নিজেকে সবসময় দুঃখ থেকে দূরে রাখতে চাই। সুখে থাকতে চাই সবসময়। সেজন্যই একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলেকেই বিয়ে করবো। তুমি তোমার লেভেলের কাউকে খুঁজে নাও। এটাই তোমার জন্য ভালো। আমার কিছু বলার ছিলনা। কারণ বান্ধবী যুক্তি দিয়েই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি তার যোগ্য নই। তাই কোনো কথা না বলেই সেদিন চলে এসেছিলাম। তার কিছু দিন পর জানতে পারি। সে তাঁর থেকে বয়সে পনেরো বছরের বড় এমন একজন কে বিয়ে করে। তাঁর বয়স যখন একুশ তখন তাঁর হাসবেন্ড এর বয়স ছত্রিশ। তবে টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই ভদ্রলোকের। আজ দশ বছর পর একটা সেমিনারে এসে বান্ধবীর সাথে দেখা। কেমন আছো?
আশা করি ভালোই আছো। কারণ কোনো অভাব নেই তোমার। স্বামী প্রতিষ্ঠিত, টাকা পয়সারও কমতি নেই। বিলাসবহুল জীবন যাপন করছো। মানুষ বাহিরের সুখটা দেখে। ভিতরের দুঃখটা কেউ দেখেনা। এতো কিছুর মাঝেও আমি সুখে নেই। একজন নারী যদি কখনো কোনদিন সন্তানের মা না হতে পারে তাহলে তার জীবন কখনো সুখের হয়না। আমরা দুজনেই আজ দশ বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি একটা বাচ্চা নেওয়ার জন্য। কতো টাকা পয়সা খঁরচ করেছি হিসেব নেই। অনেক দেশে গিয়েও চিকিৎসা নিয়েছি কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমার স্বামীর নাকি সমস্যা আছে তাই কোনোদিন মা হতে পারবো না। কিন্তু আমার স্বামী মনে করে সমস্যা তাঁর না আমার। কথা বলছিলাম এমন সময় আমার বউ আর সন্তান চলে আসল।
পরিচয় করিয়ে দিলাম আমার বউ এবং ছেলেকে। সেও আমার ছেলেকে নিজের মায়ের মতোই আদর করল। যেমনটা সে নিজের ছেলেকে আদর করতে চায় সবসময়। আমরা চলে আসি। সে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের ওতো টাকা পয়সা নেই, খুব ভালো চাকরিও করিনা আমি। বিলাসবহুলতাও নেই আমার জীবনে। তবে সুখ জিনিসটা আছে। আমাদের ছেলেই আমাদের পৃথিবীকে সুখে শান্তিতে ভরিয়ে দিয়েছে। আসলে সুখ জিনিসটা চাইলেই পাওয়া যায়না। এটা সৃষ্টিকর্তার দান। অনেকেই সুবিশাল অট্টালিকাতে থেকেও দুঃখ,কষ্টে জীবন পাড় করছে। আবার অনেকেই ছোট্ট একটা কুড়ে ঘরে থেকেই সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প