-বৌমা, একটু শুনে যাও তো। চুলার আচ টা কমিয়ে চিত্রা তার শাশুড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।
-হ্যা মা। কিছু বলছিলেন?
-আদিব ফিরেছে বাসায়?
-না মা। একটু পরে ফিরবে। আপনার কি কিছু লাগবে?
-আসলে আমার খুব শিং মাছের ঝোল খেতে ইচ্ছে করছে। আদিব কে একটু বলে দিও তো আসার সময় শিং মাছ নিয়ে আসতে।
-ঠিক আছে মা, আমি ফোন দিয়ে জানিয়ে দিবো।
-আর বিচ্ছু টা কি করছে?
-ওর কথা আর বলবেন না। সারাক্ষণ আঁকিবুকি নিয়ে আছে। এখন আপনার ছবি আঁকছে। হাফিজা খাতুন খুশি গলায় বলল,
-আমার ছবি! তার মানে ও এখন আমার সামনেই বসে আছে?
-হ্যা। কোনো আওয়াজ করে নি। তাই হয়ত টের পান নি। রক্তিম বিরক্ত স্বরে বলে উঠলো
-মা…দাদিকে বলতে গেলে কেন? ঘুমিয়ে ছিলো তাই শান্তি মত আঁকতে পারছিলাম। নাহলে এত নড়াচড়া করে…. উফ চিত্রা বলল,
-আচ্ছা বাবা, ভুল হয়ে গেছে। দেখি কি এঁকেছিস?
রক্তিম ড্রয়িং খাতা টা ওর মায়ের দিকে এগিয়ে দিলো। রক্তিমের আঁকার হাত খুব ভালো। দাদির ছবিটাও ও অসাধারণ এঁকেছে। কিন্তু একটু ভুল করে ফেলেছে। ছবিতে তার দাদির চোখে কালো রঙের চশমা নেই। বরং সেখানে দাদির খোলা চোখে এক রাশ আনন্দ খেলা করছে।
-মা, ঔষধ খেয়েছো?
-কে? আদিব এলি?
-হ্যা মা। তোমার জন্য শিং মাছ এনেছি। তুমি নাকি খেতে চেয়েছিলে?
-হ্যা বাবা। তুই খেয়েছিস তো?
-হ্যা মা। তুমি ঘুমাও। শিং মাছ ফ্রিজে রেখে দিয়েছে। কালকে চিত্রা তোমাকে রান্না করে দিবে।
-তোর উপর খুব চাপ পড়ে যাচ্ছে। তাইনারে?
-না মা। আমি ঠিক আছি।
-আচ্ছা। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আমি একটু পরেই ঘুমাতে যাব।
-ঠিক আছে। কিছু প্রয়োজন হলে ডেকে নিও। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।
হাফিজা খাতুন এই কথা টা যতবার শুনেন ততবার ই মনে হয় তার আদিব সত্যি ই তার পাশে আছে। আদিব তাকে ছেড়ে কোথাও যায় নি। বাড়িটার সাথে তার মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে। এখনো লাঠি নিয়ে চলাচল করতে গেলে মাঝে মাঝে হোঁচট খান। আগের বাড়িটার সবকিছু তার মুখস্থ ছিলো। তবুও একা একা চলাফেরার অভ্যাস করছেন তিনি। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরলো চিত্রা। দরজা খোলার আওয়াজ শুনে হাফিজা বলে উঠলো
-বৌমা এলে?
-হ্যা মা। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। আমি কাপড় টা পাল্টে আসছি।
-তোমার তো আবার ঠান্ডার ধাচ। তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টে নাও।
-যত তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টাই না কেন আজকে আমার অবস্থা খারাপ করে ফেলবে।
ঘরের সব জানালা গুলো বন্ধ করা। হাতরে হাতরে সব জানালা বন্ধ করেছেন হাফিজা খাতুন। শাড়ি পাল্টে এসে শাশুড়ি মায়ের সামনে এক কাপ চা এগিয়ে দিলো চিত্রা।
-চা নিন মা।
-হ্যা দাও।
দুইজনে একসাথে বসে চায়ে চুমুক দিলো। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। হাফিজা খাতুন রোজকার মত আজকেও জিজ্ঞেস করলেন আদিব ঘরে ফিরেছে কিনা? সেই মুহূর্তে দরজা ঠেলে রক্তিমের প্রবেশ।
-হ্যা মা। এইতো ফিরলো। রক্তিম কে হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলল চিত্রা। একটু পরেই চিত্রা ভিরাট পুরুষালি কণ্ঠে বলে উঠলো
-তুমি খেয়েছো মা? আসতে দেরি হয়ে গেলো।
-হ্যা খেয়েছি। তুই বৃষ্টিতে ভিজিস নি তো বাবা?
-একদম না। বৃষ্টি শেষ হবার পরই বের হয়েছি।
-ভালো করেছিস। যা ফ্রেশ হয়ে খেতে বস। বৌমা, তুমি যাও। দেখো ওর কিছু লাগবে কিনা।
-যাচ্ছি মা। হাফিজা খাতুনের সামনে থেকে রক্তিম আর চিত্রা চলে আসলো। দূরে সরে আসার পর রক্তিম জিজ্ঞেস করলো,
-এভাবে আর কতদিন চলবে মা? দাদিকে সব সত্যিটা জানিয়ে দিচ্ছো না কেন? বাবা আর বেঁচে নেই।
-তোর দাদি যতদিন আছে ততদিন এটা চালিয়ে যেতে হবে। আদিবের মৃত্যুর শোক উনি সইতে পারবেন না। আরেকবার যদি উনি স্ট্রোক করেন তাহলে আর বাঁচানো সম্ভব না। রক্তিম মজার ছলে বলে উঠলো,
-আচ্ছা মা, তুমি কি আমার কণ্ঠও নকল করতে পারবে? একটু শুনাও তো দেখি।
হাফিজা খাতুন এখনো জানালার সামনে বসে আছেন। মেঘ ডাকছে। হয়ত আবার বৃষ্টি শুরু হবে। মনে মনে ভাবছেন তার বৌমা অবিকল আদিবের কণ্ঠ নকল করতে পারে। সত্যি সত্যি তার মনে হয় আদিব তাদের ছেড়ে কোথাও যায় নি। একটু পরে আবার আদিবের কণ্ঠ শোনা গেলো
-কি হলো মা? ঘরে যাও নি?? হাফিজা মুচকি হেসে বলল,
-হ্যা বাবা যাচ্ছি। তুই হাত টা ধরে আমার ঘরে নিয়ে যাবি? চিত্রা তখন নিজের স্বরে বলল,
-আমি নিয়ে যাচ্ছি মা।
-ঠিক আছে। তুমি ই নাহয় হাত টা ধরো।
গল্পের বিষয়:
গল্প