বধু সেঁজে বাসর ঘরে বসে আছে দিয়া। শাড়ী,গহনা এমনকি রুমের জিনিস পত্র থেকেও উজ্জ্বলতা ছড়ালেও দিয়ার মুখে নেই উজ্জ্বলতার আলো অথবা প্রসন্নতার খুঁশির চিহ্ন। হঠাৎ করেই দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠলো দিয়া। দরজার ওপাশ থেকে নীলের বন্ধুরা নীলকে জোর করেই রুমের ভিতরে পাঠে দিলো। দরজা বন্ধ করে দিয়ে নীল যত বিছানার দিকে যেতে থাকলো দিয়ার আতংকটা যেনো ততোই বেড়ে যেতে লাগলো। নীল বিছানার এক পাশে গিয়ে বসলো। তারপর আস্তে আস্তে বলা শুরু করলো আমি জানি তোমার জন্য এই মুহূর্তটা কতোটা কষ্টের। বাবা-মাকে ছেড়ে আস্তে সব মেয়েদেরই অনেক কষ্ট হয়।
কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করছো অবশেষে তার স্বামীর বাড়ীটিই বেশী প্রিয় হয় এবং সেখানেই জীবনের বেশী সময় ব্যয় করে। এ থেকেই বুঝা যায় মেয়েদের আসল ঠিকানাই হলো তাদের স্বামীর বাড়ী।
দিয়া নীলের কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল আবার বলা শুরু করে, তুমি আজকে প্রথম এই বাড়ীতে তার উপর আমি একজন অচেনা, অজানা মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই তোমার খারাপ লাগবে এমনকি তুমি ভয়ও পেতে পারো। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো যতদিন না তুমি প্রস্তুত হতে পাচ্ছ ততোদিন আমি তোমায় স্পর্শ করবো না।
নীলের কথা শুনে দিয়ার ভয়টা এখন শুধু অবাকেই পরিনত হয়েছে। কিছুক্ষন আগেও সে অনেক কিছুই ভেবেছিলো কিন্তু এখন তার পুরাই উল্টা হচ্ছে তার সাথে।
আমি চাই আমরা যেন আমাদের সুখে-দুঃখে এক সংগে থাকতে পারি এবং একে- অপরকে সাপোর্ট করতে পারি। তাই আমার তোমার বিষয়ে এবং তোমার আমার বিষয়ে সব কিছুই জানা দরকার কথাটা বলতেই নীল দেখে দিয়ার চোঁখে পানি।
আমি যদি ভুল কিছু বলে থাকি তাইলে থাক বলতে হবে না।(নীল)
না,আপনি কিছু ভুল বলেননি।(দিয়া)
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কিছু একটা নিয়ে খুব বিষন্ন। দেখো আমাকে বন্ধু হিসেবে সব কিছু বলতে পারো। আর যদি না বলতে চাও তাইলে থাক জোর করবো না। (নীল)
তা, না আসলে আমার একটা অতীত আছে। আমি জানি না আজকের দিনে আমার এই কথা গুলা বলা উচিৎ হবে কিনা, তবে কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার সব কিছু আজকেই বলা উচিৎ। (দিয়া)
হুম,অবশ্যই(নীল) . দিয়াঃ—-
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন এক আপুর বিয়েতে গেছিলাম। বিয়ের আগের দিন মানে গায়ে হলুদের দিন সবাই মজা করতিছে। আমিও করতিছি হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে ধরলাম কিন্তু তার আগেই কে যেনো আমাকে ধরলো।
স্বাভাবিক হওয়ার পর বুঝতে পারলাম যে আমাকে মাটিতে পড়ার আগেই ধরেছে আমি তার পায়ের সাথেই ধাক্কা খেয়েছি। কিছুটা লজ্জিত হয়ে সেখান থেকে চলে এসে আপুদের ঘটনাটি বললে আপুরা সবাই এক সংগে হেঁসে উঠে। তাদের হাঁসি দেখে আমি অনেকটাই অবাক হয়ে যাই। পরে শুনি আমি পড়ে যাইনি আমাকে ইচ্ছা করেই ফেলে দেয়া হয়েছিলো আর ছেলেটির নাম ছিলো হ্নদয়।
তারপর তার সাথে ছোট ছোট কয়েক দফা প্রতিশোধ নেয়ার মাধ্যমে আপুর বিয়ে শেষ হয়ে গেলো। সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম। রাতে হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। কথা বলার এক পর্যায়ে বুঝতে পারি হ্নদয় ছিলো ওটা।
এইভাবে কথা বলতে বলতে আমাদের মাঝে অনেকটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়। বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে হ্নদয় আমাকে প্রপোজ করে। যেহেতু আমারো ওকে ভালো লাগতো তাই আর না করিনি।
খুব ভালোই চলছিলো আমাদের সম্পর্কটা। আমরা দুজন দুজনকে এতো দিনে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসাটা একটু বেশীই ছিলো তাই ভয়টাও একটু কম ছিলো। আম্মুর সাথে অনেক ফ্রিরি ছিলাম তাই আমাদের সম্পর্কের কথাটা তাকে খুলে বলি। আম্মু প্রথমে বন্ধুর মতো আচারন করে সব কিছু শুনে নানু বাসায় নিয়ে গিয়ে সবার সামনে আমাকে পিটায়। তখন যেনো আমি নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারতিছিলাম না নিজের মা হয়ে এমন করতে পারলো, তার যদি আমাকে পিটার এতোই ইচ্ছা ছিলো তাইলে বাসায় পিটাতো নানু বাসায় নিয়ে সবার সামনে এমন সিংক্রিয়েট করার কি দরকার ছিলো।
এর কিছুদিন পর দুনিয়ার কঠিন বাস্তবতার মুখামুখি হলাম আমি। যেটা আমি কখনোই ভাবতে পারেনি সেটাই হলো আমার সাথে। আমার এক বন্ধুর আইডির মাধ্যমে হ্নদয়ের সাথে একটা মেয়ের ক্লোজ একটা পিক দেখতে পেলাম। বন্ধুকে এটা ওটা বলে বুঝাতে পারলেও নিজের অশান্ত মনকে যেনো কিছুতেই বুঝাতে পারিনি। তাইতো তখন মুখে ছিলো হাসি আর চোঁখে ছিলো পানি। ভালোবাসলে বুঝি প্রতিটি মানুষই এমন হয়ে যায়। নিচের কমেন্ট গুলা পড়ে যেন নিজের চোঁখকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। আশ্চার্যের বিষয় সেদিন আম্মু আমাকে পিটালো অথচো সেদিনের চেয়ে আজকের ব্যাথাটাই বেশী। সেদিনি বুঝতে পারলাম শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক কষ্ট কতোটা বেশী।
এর কিছুদিন পর ফেসবুকে একটা একাউন্ট খুলে বারবার তার প্রোফাইলটা চেক করতাম। চেক করতে করতে অশান্ত বেহায়া মনটা তাকে রিকোয়েস্ট দিয়েই দিলো। সে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার পর স্বাভাবিক ভাবেই কথা হতে থাকলো। সে আবার রিলেশনটা শুরু করতে চাইলো। কথাটা শুনার পর যেনো পৃথিবীর সকল খুশি আমার উপর পড়তে থাকলো। নিষ্ঠুর খেলার আরো একটা রাউন্ড যেনো আমার জন্য বাকীই ছিলো। একটা মেয়ে এসে দাবী করলো হ্নদয় তার বফ। রাউন্ডটার কঠিন নিয়মটাও যেনো আমার জন্যই তোলা ছিলো। হ্নদয়ও মেয়েটার কথার সাথে তালমিলিয়ে আমাকে ইচ্ছা মতো অপমান করলো আর সবথেকে অদ্ভুত ছিলো সে কিভাবে এতো নিঁখুত করে আমাকে না চেনার অভিনয়টা করলো। পুরা পৃথিবী যেন আমার কাছে অন্ধকার হয়ে আসলো। পুরা পৃথিবীই যখন অন্ধকারে ঢাকা আমার চোঁখে তখন রুমের অন্ধকার আর কি। সারাদিন অন্ধকারে বসে থাকায় আম্মু আবার আমাকে পিটায়। খুব অসহায় লাগতিছিলো নিজেকে তখন। তাই সবচেয়ে ভয়ংকর সিদ্ধান্তটা নিয়েই। আলমারিতে থাকা ইন্ডিলের ওষুধ (বিষ) খেয়ে নিলাম।
কিছুক্ষন পর সারা শরীর কালো এবং ঠান্ডা হতে লাগলো। আম্মু অনেক ভয় পেয়ে চিৎকার -চেঁচামিচি শুরু করে দিলো। তারপর আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। সারা রাত ধরে চললো বিষ বের করার প্রক্রিয়া। বুক এবং মুখ যেনো ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছিলো। বেহায়া মন তখনো হ্নদয়কে খুঁজতিছিলো। যদি একবার সে এসে আমার হাতটা ধরে বলতো ভয় পেয়ো না,আমি আছি তোমার পাশে তাইলেই আমি আমার সব কষ্ট ভুলে যেতাম।
সুস্থ হওয়ার পর যেনো একাকিত্বটা আরো বেড়ে গেলো। কাছের বন্ধুরাও দূরত্ব তৈরী করা শুরু করে দিলো। তাদেরো কোনো দোষ নেই। তারা আমার ভালোর জন্যই তাকে ভুলে যেতে বলে কিন্তু আমি যে একজন নারী, এই মনে একবার যাকে স্থান দিয়েছি কিভাবে তাকে বের করে দিবো। আল্লাহ তায়ালা আমাকে হয়তো একটু বেশীই আবেগ দিয়েছে তাই হয়তো এতো কিছুর পরো তাকে ভুলা তো দূরের কথা,ভুলে যাওয়ার কথাটাও ভাবতে পারি না।
একাকিত্বের কষ্টের চাপে তাকে আবার ফেন্ডরিকোয়েস্ট দিলাম। তবে এবার রিয়াল আইডি থেকে না,ফেইক আইডি থেকে। ফেইক আইডি থেকে খুব সুন্দর ভাবেই আমাদের সময় কেটে যাচ্ছিলো। একটা জিনিস খেয়াল করলাম হ্নদয় রিয়েল আইডিতে আমার যত না কেয়ার করতো ফেইক আইডিতে তার থেকে বেশীই কেয়ার করতে লাগলো। আমিও বোকার তাকে সব সত্য বলে দিলাম। বলার কিছুদিন পর থেকেই আবার আগের মতো আচারন দেখতে পেলাম।
অনেক অবহেলা এবং অনেক মানষিক কষ্টের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ করলাম। যোগাযোগ করার কিছুদিনের মধ্যে হ্নদয় তার মায়ের সাথে কথা বলারে চাইলো আমিও রাজী হয়ে গেলাম। বলার এক পর্যায়ে তার মা আমার কাছ থেকে জানতে চাইলো আমি কি সত্যিই হ্নদয়কে ভালোবাসি নাকি।আমার উত্তর দেয়ার আগেই আম্মু চলে আসে এবং তারা দুজনে কথা বলে। পরে আম্মুর থেকে জানতে পারি সে আমার দূর সম্পর্কের ভাই হয়। দুই পরিবার থেকে মেনে না নিলেও বাধা আর ছিলো না।
এরপর আমার কলেজ লাইফ এবং হ্নদয়ের সাথে সম্পর্ক দুটাই ভালো যাচ্ছিলো। এক সংগে ঘুরাফেরা,রেস্টুরেন্টে খাওয়া- দাওয়া সব কিছুই যেনো সপ্নের মতোই ছিলো। একদিন রেস্টুরেন্টে বসে ছিলাম হঠাৎ একটা মেয়ে এসে হ্নদয়ের পাশে বসলো কথার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম এটা তার নতুন প্রেমিকা। আর আমাকে কাজিন হিসেবে তার কাছে তুলে ধরলো। আমিও হ্নদয়কে নতুন করে হারানোর ভয়ে আর কিছু বলিনি। এরপর রাতে কোনো কারন ছাড়াই সে আবার আমার সাথে ব্রেক-আপ করলো।
শুনেছিলাম যারা আত্নহত্যা করার পর মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায় তারা নাকি ভুলেও আর সেটার চিন্তাও করে না। কিন্তু সবার অবহেলা, সবার ইগনোর এবং ভালোবাসার মানুষটার ধোকা সহ্য করার ক্ষমতা ছিলো না বিধায় আবার বিষ খেলাম। বিষ খাওয়ার পর বাবা-মা আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়লো। সব সময় কেউ না কেউ আমার সাথে থাকতোই। ফোন কেড়ে নেওয়ায় হ্নদয়ের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।সে আমাকে ধোকা দিলেও কেনো জানি মনের ভিতর একটা বিশ্বাস ছিলো যে হ্নদয় ফিরে আসবে। হয়তো আমি ওর অন্য প্রেমিকাদের চেয়ে দেখতে অসুন্দর কিন্তু ভালোবাসাটা বরাবরি ওদের সবার চেয়ে বেশী। আশায় ছিলাম সে প্রকৃত ভালোবাসার মূল্য দিবে।পুরা ৩ বছর তার অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু সে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়েই সুন্দরী প্রেমিকাকে বিয়ে করলো যদিও আমি সিদ্ধান্ত নিছিলাম এ জীবনে আর কাউকে বিয়ে করবো না,চিরকাল কুমারী থেকে শুধু তাকেই ভালোবাসব। কিন্তু বাবা-মার চাপে অবশেষে বাধ্য হয়ে বিয়ে করতেই হলো। আমি জানি বাসর রাতে কোনো স্বামীই তার বউয়ের কাছ থেকে এমন কথা আশা করে না কিন্তু আমি চাইনি এগুলা আপনি অন্য কারো কাছ থেকে শুনুন তাই নিজেই বললাম।
দিয়ার কথা শেষ হওয়ার পর নীল পুরাই হতবিম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। একটা মেয়ের জীবনে কিভাবে এতো কষ্ট থাকতে পারে তাও আবার এই বয়সে।
আমি বুঝতিছি না, আমার এখন কি বলা উচিৎ, তোমার মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারতিছি। কি বলে তোমায় শান্তনা দিবো তার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু একটাই কথা বলবো ভাগ্যকে মেনে নিতে শিখো, তুমি আমার বউ হয়ে আসবা এটা তখনই ঠিক করা হয়েছিলো যখন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে তৈরী করেছেন। কারন আমার বুকের বাম পাঁজরের হাড় থেকেই যে তোমার তৈরী। তাই আমাদের মিলিত যে হওয়ারি ছিল। জানি এটা মানতে তোমার অনেক কষ্ট হবে কিন্তু মনে রেখো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
জ্বি।(দিয়া)
দেখছো তোমার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে ফজরের আযান দিছে বুঝতেই পারিনি। যাও ফ্রেশ হয়ে অজু করে আসো এক সংগে নামাজ পরবো। আর সব সময় আল্লাহর উপর আস্থা রাখো কারন এই পৃথিবীর সব কিছুই তার ইচ্ছাতেই হয়।
এইভাবেই কাটতে থাকে নীল এবং দিয়ার বিবাহ পরবর্তী দিনগুলা। নীল সব সময়ই দিয়াকে হাসি-খুশি রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করতো। কখনো কখনো নীল এমন কার্যকলাপ করতো দিয়া না হেসে পারতো না। নীলের এতো কেয়ার এবং ভালোবাসা দেখে দিয়াও আস্তে আস্তে নীলের উপর দুর্বল হতে থাকে। নীলের সততা এবং সরলতা এই দুটাই দিয়াকে দুর্বল করতে বাধ্য করেছে।
নীল আজকে বাসায় এসে পুরাই অবাক। দিয়া তাঁতের শাড়ী, খোলা চুল,পায়ে আলতা নাকে নাক ফুল, চোঁখে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক সব মিলিয়ে পুরাই বাংগালী বধুর সাঁজ সেজেছে। ভিতরে ঢুকতেই দিয়া বলে যান ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। নীল ফ্রেশ হয়ে এসে আর একবার শকড্ খেলো কারন টেবিলে সব নীলের পছন্দের খাবার। খিঁচুড়ী, বেগুনী, কাবাব,তিল ভর্তা,গরুর মাংস ভুনা,আলু ভাজী দেখে নীল যতটা না বেশী খুশি হইছে তার থেকে বেশী অবাকই হইছে। আর আজকে দিয়াকে কেনো জানি অচেন অচেনা লাগতিছে। খাওয়া শেষে দিয়া নীলের কাছে আজকের রাতটা ছাদে কাটানোর জন্য আবদার করে। নীল এবার সিউর হয় কিছুতো একটা হতে যাচ্ছে তার সাথে। ছাদে যাওয়ার পর দিয়া নীলের কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে বললো আমি জানি,আপনার মনে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন আমি এইসব কিভাবে জানলাম।
হুম,সেটাই তো।(নীল)
আজ সকালে স্টোর রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে একটা ডায়েরি পেয়েছি। সেখানে আমি আপনার অতীত জানতে পেরেছি। রিয়া আপু কিভাবে আপনাকে ঠকিয়ে একটা বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করেছে সব কিছু লেখা ছিলো অইখানে। বিয়ের পর রিয়া আপুর সাথে কাটানো ইচ্ছাগুলাও অখানে লেখা ছিলো। আপনার অতীত আমাকে জানাননি কেনো।
সেদিন তোমার কথা শুনে অনেক ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। আর এমনি তেই তুমি অনেক ক্লান্ত ছিলা তাই আর বলিনি। এরপর তোমাকে বলবো বলবো করে আর বলাই হয়ে উঠেনি।
এতো কষ্ট নিয়েও আপনি আমাকে সব সময় হাসি-খুশি রাখাত চেষ্টা করেছেন। আমার সব ইচ্ছা পূরুন করেছেন, নিজে ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে আমাকে শান্তনা দিছেন দিনের পর দিন। কেনো???
কারন আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই। তোমাকে পাওয়ার পর থেকে রিয়ার সব স্মৃতিই আমার মাথা থেকে চলে গেছে। আমার বুকে এখন শুধুমাত্র তোমার স্থান।
সেইটা আগে বললে কি হতো, আমিও যে অই একি জিনিসে ফেঁসে গেছি।
নীল সারারাত দিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকলো আর দিয়া নীলের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে তাদের ভালবাসা ময় জীবন শুরু করলো যেখানে শুধু ভালোবাসাই থাকবে ঘৃণা,অবহেলা না। আর তাদের এই ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকলো জোস্না মাখা চাঁদের আলো।
নীলের চেষ্টায় দিয়া পড়াশুনা শেষ করে বি.সি.এস দিয়ে সরকারি কলেজের লেকচার হয়। তাদের সংসারে কোল আলো করে একটি পরীর মতো মেয়ে আসে। অন্যদিকে হ্নদয় এখনো নিঃসন্তানই রয়ে গেছে। ডাক্তার নাকি বলেছে তার সুন্দরী বউয়ের সন্তান ধারন করার ক্ষমতা নেই। একে সুন্দরী বউ তার উপর প্রভাব শালী বাপের মেয়ে ইচ্ছা থাকলেও ডির্ভোস দিতে পাচ্ছে না। সারাদিন তাদের সংসারে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকে। আর রিয়ার স্বামী কিছুদিন আগে আর একটা বিয়ে করেছে,এটা নিয়ে তাদের মধ্য নতুন করে ঝগড়া শুরু হয়েছে। সম্ভবত রিয়ার স্বামী রিয়াকে ডির্ভোস দিবে।
পরিশিষ্টঃ হীরা সকলের জন্য না কারন সবাই হীরার মূল্য দিতে পারে না,যে দিতে জানে সেই বুঝে সেইটা কত দামী জিনিস। আপনি শুধু ভালোবাসা দিয়ে আপনার প্রিয়জনের পাশে থাকুন,দেখবেন সে আপনার জন্য পুরা পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করতেও দ্বিধা করবে না। আর ভুল মানুষকেই যখন এতো ভালোবাসতে পারেন তবে সঠিক মানুষকে কেনো নয়। পরিশেষে একটাই কথা সত্যিকার ভালোবাসা খুঁজুন, চিনুন,জানুন এবং পেলে তার সঠিক মর্যাদা করুন।