বউয়ের অবহেলা | পর্ব -৬

বউয়ের অবহেলা | পর্ব -৬

জানালা খুলা থাকার কারনে চাদের আলো সরাসরি মিমের চেহারার মধ্যে পড়েছে।যার ফলে মিমের চেহারা কয়েক লক্ষ গুন সুন্দর্য্যে বাড়িয়ে তুলেছে।

হঠাৎ মিমের কানের পাশে আমার চোখ যায়

আমি দেখি মিমের কানের পাশে একটা তেলাপোকা মিমের কানের ভেতরে টুকার চেষ্টা করছে।

আমি আস্তে আস্তে মিমের সামনে যাচ্ছি তেলাপোকা সরানোর জন্য।আমি হাটু গেড়ে মিমের সামনে বসলাম।

যখন তেলাপোকা সরাতে যাব ঠিক তখনই আমার নিশ্বাসের শব্দে মিমের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

সাথে সাথে মিমে চিৎকার দেওয়া চেষ্টা করে??কিন্তু আমি মিমের মুখ ধরলাম।

মিম:ঠাসসস…লুইচ্চা,হারামজাদা,
কুওা,বিলাই তুই আমার দূর্বলতা সুযোগ নিয়ে আমার সাথে….

আমি:আপনার কোথাও ভূল হচ্ছে।আমি তো আপনার কানে….
মিম:থাক আর বলতে হবে না।তোদের মতো লোকদের আমি ভালো করে চিনি।

তোরা সব মেয়েদের সাথে লুইচ্চামি করিস।এখন বল আমাকে ডিভোর্স কোনদিন দিবি।

আমি:উকিল সাহেব বল্ল ছয়মাস আগে ডিভোর্স পেপার হাতে আসবে না

কিন্তু উনি চেষ্টা করবে বল্ল(পাহাড় পরিমান কষ্ট নিয়ে কথাটি বল্লাম।আসলে আমি মিমের সাথে থাকতে থাকতে তাকে মনের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু আমার এই ভালোবাসার কোনো মূল্য নাই???)

মিম:আমাকে অতি তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিবি।আর কোনো দিন আমাকে টাচ করার চেষ্টা করবিনা।না হলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
এইগুলো বলে মিম বারান্দায় চলে যায়।

আর আমি কতক্ষন আগের ঘটে যাওয়া কথাগুলো ভেবে অঝোর ধারা কান্না করছি।আপনারই বলেন আমার কি দোষ।

আর মনে মনে বলছি আল্লাহ আমার সাথে কেন এমন হয়।আমি তো কোনো ভূল করিনি।একটা মানুষের মধ্যে আর কত কষ্ট দিবা।

এইগুলো ভাবতে ভাবতে ছাদে চলে গেলাম।কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়ার কথা ভাবছি আর অঝোর ধারা চোখের পানি ফেলছি।

মনের দু:খ দূর করার জন্য সিগারেট ধরালাম।আসলে আমি সিগারেট খাই না।আসার সময় সিগারেট নিয়ে আসছিলাম।

কে জানি বলছিল নিকোটিনের ধোয়ার সাথে মনের সব দু:খ কষ্ট দূর হয়ে যায়।তাই আসার সময় সিগারেট নিয়ে আসছি।

সিগারেটের টানে মনটা একটু হালকা হল।পাহাড়ের সমান কষ্ট থেকে হালকা কষ্ট কমলো।

হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ২টা বাজে।সিড়ি বেয়ে ছাদ থেকে নেমে ঘরের উদ্দশ্যে রওনা দিলাম।

ঘরের ভেতরে টুকার সাথে সাথে মিমের হাসির শব্দ পাই।।।।

ভালো করে বুঝার চেষ্টা করি যে মিম কার সাথে কথা বলে।।
দেয়ালের সাথে কান দিয়ে শুনলাম মিম তার বিএফ সাথে কথা বলছে??

কথাগুলো ছিল এই রকম যে…..
মিম:জান কি করছ???রাতে খাইস??
জানো আমার আম্মু যার সাথে বিয়ে দিয়েছে,,

এটা এক নাম্বার লুচু।।ও আমার সাথে অসভ্যতামী করার চেষ্টা করেছে।কিন্তু আমি তা হতে দেইনি।ওকে বলেছি ডিভোর্স দেওয়ার জন্য।ও বলল ছয়মাস পর ডিভোর্স দিবে।।এতদিন তুমি ওয়েট করো বাবু।।তারপরে আমরা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে ঘর করবো।

মিমের মোবাইলে বলা কথাগুলো আমার কানে বারবার বাজছে।
আমি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফ্লোরে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

মিম:ওই উঠ আম্মু ডাকছে নাস্তা করতে।নাস্তা করবি চল??
আমি:আপনি যান আমি আসছি??

উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে।হঠাৎ রাতের আমার ও মিমের মাঝে ঘটে যাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল।

ওয়াসরুমে বসে কিছুক্ষণ কেদেঁ হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে চলে গেলাম।

খাবার খেয়ে বাহিরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলাম।

তিন দিন পর,,,,,,,,

দেখতে দেখতে অফিসের ছুটি শেষ হয়ে গেছে।আগামীকাল থেকে আবার অফিসে যেতে হবে। আর এইদিক মিম আমার সাথে কথা বলা একদমই কমই দিয়েছে??

মিম এখন সারাক্ষন তার বিএফের সাথে ফোনে কথা বলে।এক কথায় বিএফের সাথে কথা বলার পরিমানটা বেড়ে গিয়েছে।

আর আমি কিছু বলতে পারিনা।কারন সে বলে দিয়েছে তার কোনো নাক গলানো যাবেনা।ওর মতো ও থাকবে আমার মতো আমি থাকব???

রাতে খাওয়া দাওয়া করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।কারন কাল থেকে অফিসে যেতে হবে???

সকালে পাখির কলকাকলি শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুমের থেকে উঠে দেখি মিম এখনো ঘুমাচ্ছে।বাহিরের সূর্যের আলোতে মিমকে একেবারে ডানা কাটা পরীর মতো লাগছে।

সূর্যের আলোতে মিমের চেহারায় মায়ার আভাটা আরো বেড়ে তুলেছে।মিমকে না ডেকে…

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াসরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্যে??

ফ্রেশ হয়ে এসে হালকা ব্রেকফাস্ট করে অফিসের উদ্দশ্যে রওনা দিলাম।

অফিসে সবাই আমাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানাল।।

জাফর(অফিসের কলিগ)::আমির সাহেব অভিনন্দন জানাই আপনাকে নতুন জীবনে প্রবেশ করার কারনে??
আর খুবই দু:খিত আপনার বিয়েতে আসতে পারলাম না।

আসলে ইমপোরটেন্ট কাজ থাকার কারনে আসতে পারলাম না।

আমি:ইট’স ওকে জাফর সাহেব আমি কিছু মনে করিনি।আর আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের ডেস্কে চলে গেলাম।কাজ করতে করতে লান্স টাইম সময় হয়ে যায়। আসার সময় মিমকে কিছু বলে আসিনি তাই মিমকে ফোন দিলাম।

আমি:হ্যালো মিম কেমন আছেন???
মিম:তুই আমাকে ফোন দিসছ কে???
আমি:না এমনেই ফোন দিলাম আরকি??আপনি দুপুরে খাওয়া দাওয়া করছেন??

মিম:তোর এটা না জানলেও চলবে।ন্যাকা থেকে বাচিনা।ফোন রাখ তুই আমার বিএফে ফোন দিছে

মিমের এই ধরনের খারাপ আচরনে আমি খুবই কষ্ট পেলাম।মনে হচ্ছে আমার কলিজাটা কেউ চিরে নিয়ে যাচ্ছে।

লান্স সেড়ে অফিসের গুরুত্বপূন কাজ শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।বাড়িতে পৌছে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে ঘুমতে চলে গেলাম।

ক্লান্ত থাকার কারনে মিমের সাথে বেশী কথা বলি নাই।শুয়ার সাথে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

দেখতে দেখতে চার মাস বেড়িয়ে গেছে।কিভাবে চারমাস চলে গেলো কিছুই তেই বুঝতে পারলাম না।এই চারমাস আমাকে কষ্ট কুড়ে কুড়ে খাইছে।

এই চার মাসে মধ্যেই আমি মিমকে সম্পন্নভাবে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু মিমকে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করিনি।প্রকাশ করলে কি হবে মিম তো অন্য কাউকে ভালোবাসে।

আমি না হয় গোপনে মিমকে ভালোবেসে যাব।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত