বউয়ের অবহেলা | পর্ব-২

বউয়ের অবহেলা | পর্ব-২

আম্মু:আর শোন তর অফিসের সবাইকে দাওয়াত দিছ।আর অফিস থেকে বসের কাছ থেকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়ে আসিস।

আমি:আম্মু বিয়ের তো এখনোও পাচঁদিন আছে এখণই ছুটি নিয়ার কি দরকার।
আম্মু:আমি যা বলছি সেটাই করবি।এর বাইরে কোনো কথা বলবিনা।(রাগে)

আচ্ছা।আমি এখন উঠি।
মন খারাপ করে খাবার টেবিল থেকে উঠে ঘরে চলে গেলাম।ঘরের দরজা বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম আমির তোরে সবাই বলি দেওয়ার জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে।এই যেন আমেরিকা আর রাশিয়ার যুদ্ধ।

কি করবি তুই বল তুই তো এখানে অসহায়।কেউ তর কথা শুনবে না।আমার ফইন্নির পুত আব্বুও মায়ের দলে।দূর ছাই আব্বু ফইন্নির পুত হইতে যাইব কে রে।ফইন্নির পুত তো আমি হমু।ফইন্নি তো আমার আব্বু হইব।

ও আপনাদের তো আমার বউয়ের নামটাই বলা হলো না আমার ছোট বোনের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমার ভবিষ্যতে ফইন্নি বানানোর সম্মানিত বউয়ের নাম মাইশা আক্তার মিম।অনেক সুন্দর নাম ঠিক না।আপনারা কিন্তু আমার বউয়ের দিকে নজর দিবেন না হুমমম।

এইসব আজগুবি কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম মামার সাথে দেখা হয়ে গেছে।ফলে গভীর ঘুমে হারিয়ে গেছি।

প্রতিদিনের ন্যায় আমার হিটলার বোন নিশির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।তারপর ফ্রেশ হয়ে বোনকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দশ্যে রওনা দিলাম।

অফিসের সব কর্মচারীদেরকে আমার বিয়ের দাওয়াত দিলাম।সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানাল।
পরে বসকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বসের কেবিনের দিকে রওনা দিলাম।

আমি:স্যার আসতে পারি।
স্যার:হ্যা হ্যা আস।তা হঠাৎ আমির সাহেব আমার কেবিনে আসলেন যে।কোনো দরকার আছে নাকি।

আমি:না স্যার আসলে আমার চারদিন পর বিবাহ হবে।আপনাকে দাওয়াত দিতে আসলাম(লজ্জা পেয়ে)

স্যার:কি বলেন এটা তো খুশির সংবাদ।কংগ্রেজুলেশন মিষ্টার আমির সাহেব।আপনি বিয়ের দাওয়াত দিবেন এখানে আর লজ্জার কি হল।

আমি মনে মনে বলছি আলগার ঘরে আলগা কয় কি এখানে লজ্জার কি হল।ঢং থেকে বাচিঁ না।এইদিক দিয়ে আমার যায় যায় অবস্থা।আর উনি ঢং করেন।

আমি:স্যার আমাকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি দিতে হবে।বুঝিনিই তো স্যার বিয়ার ব্যাপার-স্যাপার।তাই কয়েকদিনের জন্য ছুটি দিলে ভালো হয়।

স্যার:থাক আর বলতে হবে না।আপনি না বল্লেও আমি আপনাকে ছুটি দিতাম।যদই হউক আপনি আমাদের অফিসের সিনিয়র কর্মচারী।বাই দ্যা ওয়ে আপনাকে যেটা বলছিলাম আপনাকে দশদিনের ছুটি দেওয়া হল।
আর আপনি নতুন জীবনে খুবই শিঘ্রই পদার্পন করবেন এই জন্যে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই।

আমি:ধন্যবাদ স্যার।আর আপনি আমার বিয়েতে আসলে খুবই খুশি হব।
স্যার:অবশ্যই আসব।

আমি:ধন্যবাদ স্যার তাহলে আমি এখন আসি।
বাই।
স্যার:হুমমম বাই।

স্যারের কেবিন থেকে ফিরে এসে হাতের কাজগুলো সেরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

কলিংবেল বাজার সাথে সাথে নিশি দরজা খুলে দিল।কাধ থেকে ব্যাগটা রেখে ওয়াস রুমে চলে গেলাম শাওয়ার নেওয়ার জন্য।হালকা ফ্রেশ হয়ে শরীর ক্লান্ত থাকার কারনে ঘুমিয়ে গেলাম।

রাতে বেলা বোনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।তারপরে অযু করে এশারের নামাজ পড়তে গেলাম।নামাজ পড়ে নিজের রুমে রেস্ট নিচ্ছিলাম তখন ছোট বোন খাওয়ার জন্য ডাক দেয়।রাতের ডিনার করার সময় আম্মু বল্ল

আম্মু:তর অফিসের সবাইকে দাওয়াত দিসছ।
আমি:জ্বি আম্মু।
আম্মু:তর বন্ধুদেরকে দাওয়াত দিয়ে দিছ।

আমি:ঠিক আছে আম্মু।
রাতের ডিনার শেষ করে নিজের ঘরে চলে গেলাম ঘুমানোর জন্য।

সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।তারপরে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে চলে গেলাম।ব্রেকফাস্ট করার সময় আম্মু বল্ল।

আম্মু:বিকাল বেলা রেডি থাকিস আমরা সবাই মার্কেটে যাব।
আমি:মার্কেটে যাব কেন?(আশ্চর্য হয়ে)

আম্মু:বিয়ের সব জিনিসপত্র কিনতে হবে না।
আমি:ওওও আচ্ছা ঠিক আছে।সকালে ব্রেকফাস্ট করে ছোট বোনকে কলেজে পৌছে দিয়ে চলে গেলাম আমাদের আড্ডা দেওয়ার স্থানে।

আসলে জব করার আগে সব বন্ধুরা করিম চাচার দোকানের মোড়ে আড্ডা দিতাম।জব হওয়ার পর থেকে আর আড্ডা দেওয়া হয় না।

সেখানে গিয়ে দেখি সব হারামিরা আড্ডা দিতাছে।

ইশান:আরে মাম্মা কেমন আছ?হঠাৎ এখানে কি মনে করে।
আমি:ভালো আছি।তোরা কেমন আছিস।

ইশান:আমরা সবাই ভালো আছি।কিন্তু মাম্মা তুই এখানে কে।অফিস নাই।
আমি:আসলে আমার এখানে আসার কারন হল,,,আমার আগামী চারদিন পর আমার বিয়া তোদেরকে দাওয়াত দিতে আসলাম।কিন্তু।

কস কি মাম্মা তোর বিয়া আমাদেরকে আগে বলবিনা(সব বন্ধুরা কথাটি বল্ল)
ইশান:কিন্তু কি দোস্ত।তুই জানি কী বলতে চেয়েছিলি।

আমি:আসলে আমি এখন এইসব বিয়া টিয়া করতে পারব না।তোদেরকে আমার বিয়াটা যে করে হউক ভাঙ্গতে হবে।

রাজু:কও কি মামা এটা ভূলেও সম্ভব না।আমরা এই বিয়ে ভূলেও ভাঙ্গতে পারব না।অনেকদিন ধরে বিয়ার দাওয়াত খাই না। তর বিয়াতে আমরা পেট ভরে দাওয়াত খাব।তোরা কি বলিস(বন্ধুদেরকে উদ্দেশ্যে করে)

তানভির:হুমম রাজু তুই ঠিক বলছিস অনেকদিন ধরে বিয়ের দাওয়াত খাই না।

আমি:সালা তোদের কাছে আসছিলাম সাহায্য নিওয়ার জন্য আর তোরা আমারে বাস দিস।তোদের মতো বন্ধু থাকতে শএুরের আর কি দরকার।

ইশান:মাম্মা যত কিছুই বলো তাও আমরা বিয়া ভাঙ্গমু না।দরকার হলে আন্টিকে সাহায্য করব।যাতে তুই বাড়ির থেকে পালাতে না পারিস।তবোও তোর বিয়া ভাঙ্গতাম না।

আমি:তোরা থাক সালা আমি বাসায় যাই।রাগ দেখাতে দেখাতে বাড়িতে চলে গেলাম।তারপরে ফ্রেশ হয়ে লান্স সেরে ঘুমোতে চলে গেলাম।

বিকালে ছোট বোনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল।ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম মার্কেটে।মার্কেট করতে করতে রাত দশটা বেজে গেছে।এদিক দিয়ে এদের কারনে আমার শরীরের বারোটা বেজে গেছে।

কি আর করার আমি তো আর কিছু বলতে পারব না।হালকা ফ্রেশ হয়ে হালকা ডিনার সেরে ঘুমিয়ে গেলাম।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে।আর আমার ওইদিকে মরার পাখনা গজাচ্ছে।আমার ব্যাচেলর লাইফটা মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আর আমি এক বালতি আফসুস নিয়ে বলছি হায়রে আমার সাধের ব্যাচেলর লাইফ।তোকে জবাই করার জন্য বাড়ির মানুষের এতো আয়োজন।
চলবে……………

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত