বল তুই আমার

বল তুই আমার

রাত্রির বয়স যখন তিন (৩) বছর তখন অনাত আশ্রম থেকে বাবা নিয়ে এসেছে। এখন রাত্রির বয়স ঊনিশ(১৯) ছুঁই ছুঁই আমি রাত্রিকে সবসময় এড়িয়ে চলি কিন্তু রাত্রি সবসময় আমার পাশে পাশে থাকে। আজ প্রথম দিন ভার্সিটিতে যাচ্ছি তখনি মা বলেন। চাঁদ তোর বিয়েটা রাত্রির সাথেই হবে! ভার্সিটিতে পড়তেছিস তাই বলে কারো সাথে কোনো রকম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়িস না। কথাটা শুনে আমার মাথায় আসমান ভেঙে পড়েছে। কারণ বাবা রাত্রিকে ছোট বেলা অনাত আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছেন আর তাছাড়া রাত্রির জন্মের পরিচয় নেই। এখন মা বলছে রাত্রিকে নাকী আমার সাথে বিয়ে দিবে! বাবার অনেক ইচ্ছে ছিলো একটা মেয়ে সন্তান হবে কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমার জন্মের পরে ডাক্তার বলেছে মা আর কোনো সময় সন্তান নিতে পারবে না। যদি সন্তান নিতে চাই তাহলে নিশ্চিৎ মায়ের মৃত্যু হবে। বাবা মাকে অনেক ভালোবাসে যার কারণে বাবা সিদ্যান্ত নেই ওনি অনাত আশ্রম থেকে একটা মেয়ে নিয়ে আসবে। আর সেই মেয়েটিকে সুন্দর করে লালন পালন করে বড় হলে আমার সাথে বিয়ে দিবে। আমার যখন বয়স চার(৪) তখন রাত্রিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। এখন আমি আর রাত্রি একিই ভার্সিটিতে একিই সাথে পড়ি। আমি কলেজ থেকে রাত্রির কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইছি কিন্তু কলেজে ও রাত্রি আমার সাথে পড়েছে আজ প্রথম ভার্সিটিতে যাচ্ছি এমন সময় মা কথাট বলেছে!
চাঁদ:- কিন্তু মা আমি তো সফিক চাচার ছোট মেয়ে রিপাকে ভালোবাসি! আর তাছাড়া রাত্রিকে আমি কখনো ঐ রকম নজরে দেখিনি! আমি রাত্রিকে বিয়েটা করতে পারবোনা।

মা:- তোর বউ হিসাবে রিপাকে তো আমি কোনো দিন মেনে নিবো না! আমি না তোর বাবাও মেনে নিবে না। তাই ঐসব কিছু মাথা থেকে ছেটে ফেলে রাত্রিকে নিজের বউ মনে করতে থাক। আমার ছেলের বউ হলে এক মাত্র রাত্রি হবে। এখন থেকে রাত্রির সাথে সম্পর্কটা ভালো কর এতে তোর আর আমাদের সবার জন্য ভালো হবে।

চাঁদ:- ঠিক আছে আমিও বলে দিচ্ছি যদি আমার কেউ বউ হয় তাহলে রিপা হবে! তানা হলে আমি জীবনে কোনো দিন বিয়ে করবো না। মা আমাকে কিছু বলতে চাইছে আমি বেড়িয়ে এসেছি আমার পিছু পিছু রাত্রি এসেছে। আমি বাইকটা বেড় করে বসেছি তখন রাত্রি এসেছে। আমি রাত্রিকে রেখে চলে এসেছি আজকে। যদিও রোজ রোজ রাত্রিকে আমি বাইকে করে আমার সাথে কলেজে নিয়ে যেতাম। আমি প্রথম দিন ভার্সিটিতে গিয়েই আগে রিপাকে খুঁজে বের করেছি।

রিপা:- চাঁদ তোমাকে আজকে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে! কোনো সমস্যা হলো নাকী?
আমি:- অনেক বড় সমস্যা হইছে! রিপা তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
রিপা:- হ্যা করবো! তোমাকে তো আমি জীবনের চাইতে বেশী ভালোবাসি!
চাঁদ:- তাহলে আজকেই আমরা বিয়ে করবো।
রিপা:- তোমার কি মাথা খারাপ আজকে বিয়ে করবো কি করে? আর তাছাড়া আমার বড় বোন আছে আগে আপুর বিয়ে হবে এরপর আমরা পড়া লেখা শেষ করবো তারপর বিয়ে করবো কেমন?

চাঁদ:- আমার কাছে এত সময় নেই। তুমি আমাকে ভালোবাসো যদি তাহলে আজকেই বিয়ে করতে হবে। চলো আমার সাথে বলে রিপার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছি তখনি রাত্রি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রাত্রি চেয়ে আছে আমি যে রিপার হাত ধরে রাখছি সেইটার দিকে। এই রাত্রি সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেনো সরো সামনে থেকে।
রাত্রি:- সরতেছি আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও। বলো আজকে আমাকে না নিয়ে চলে এসেছো কেনো? তুমি জানো আমার আসতে কত কষ্ট হইছে?
চাঁদ:- দেখো এখন সামনে থেকে সরো। আমি তোমার মুখ দেখতে চাইনা সব দোষ তোমার। তুমি কেনো এসেছো আমাদের বাড়ীতে?
রাত্রি:- আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তারপরে তোমারটা দিচ্ছি।
রিপা:- আচ্ছা চাঁদ রাত্রি কি করেছে কেনো ওকে বকা জকা করছো? আচ্ছা কি হইছে সেটা তো বলবে?
চাঁদ:- রাত্রি কি না করছে বলো? বাবা মা ঠিক করেছে রাত্রির সাথে আমার বিয়ে দিবে! আর ওনারা রাত্রিকে ছাড়া আর কাওকে পুত্র বধূ হিসাবে মেনে নিবে না। এখন তুমি চলো আমরা আজকেই বিয়ে করবো।
রাত্রি:- দেখো চাঁদ বাবা মা বলছে বিয়ে দিবে কিন্তু আমি তো রাজি হইনি তোমাকে বিয়ে করতে! তাহলে আমার সাথে রাগ করছো কেনো? তখনি রিপা বলে।
রিপা:- রাত্রি তুমি সত্যি চাঁদকে বিয়ে করতে চাওনা?
রাত্রি:- নাহ যে আমাকে ভালোবাসে না তাকে কেনো আমি বিয়ে করতে যাবো!
চাঁদ:- তাহলে তুমি বাবা মাকে বলে বিয়েটা ভেঙে দিতে পারবে? (তখন রাত্রি কিছুটা চুপচাপ থেকে বলে)
রাত্রি:- হ্যা পারবো তবে আমার কিছু শর্ত আছে।
চাঁদ:- কি শর্ত?
রাত্রি:- আমার কথামত চলতে হবে! আমাকে রোজ আগের মত বাইকে করে নিয়ে আসতে হবে! আর বাইকে করে বাড়ীতে নিয়ে যেতে হবে!
চাঁদ:- বাইকে করে তোমাকে না হয় আনা নেওয়া করবো কিন্তু তোমার কথা মত চলবো মানে?
রাত্রি:- হ্যা আমার কথা মত চলতে হবে। তখন রিপা আমার কানের কাছে এসে বলে।
রিপা:- চাঁদ তুমি রাজি হয়ে যাও! আমি তোমার বাবা মায়ের চোখে রাত্রিকে খারাপ বানিয়ে দিবো! আমাদের ফ্রেন্ড রাজ রাত্রিকে ভালোবাসে ওকে দিয়ে রাত্রিকে ফিক্স করে দিবো।
চাঁদ:- ঠিক আছে! আচ্ছা রাত্রি আমি রাজি আছি তখন রাত্রি একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেছে! রিপা গিয়ে রাজকে বলছে।
রিপা:- রাজ রাত্রিকে গোলাপ কবে দিবি?
রাজ:- রাত্রিকে দেখলে ভয় করে। রাত্রিকে রাফি প্রপোজ করেছে আর ঠাসস করে গাল লাল করে দিয়েছে!
রিপা:- তুই যদি আজকে রাত্রিকে ফুল দিয়ে প্রপোজ করতে পারিস তাহলে রাত্রি রাজি হবে! চাঁদকে জিজ্ঞেস করে দেখ। রাজ আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি ভরসা দিয়েছি রাজ গোলাপ ফুল নিয়ে রাত্রির দিকে যাচ্ছে। সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে ফুলটা সামনে দিয়েছে। রাত্রি তো রেগে মেগে আগুন হয়ে গেছে। ফুলটা হাতে নিয়েছে তখন রিপা কত গুলি ছবি তুলে নিয়েছে রাজকে কিছু না বলে চলে গেছে আমি তো মহা খুশি। রিপা ছবি গুলি আমাকে দিয়েছে নাও তোমার মাকে ছবি গুলি দেখিয়ে দিবে দেখবে আজকেই বিয়ে ভেঙে যাবে।

চাঁদ:- হ্যা কিছুটা কাজে আসবে! চলো এখন ক্লাসে যাবো। ক্লাসে এসেছি ক্লাস শুরু হইছে ক্লাস করছি। কয়েকটা ক্লাস শেষে কলেজ ছুটি হইছে রিপাকে বিদায় দিয়ে বাইকটা বের করেছি তখন রাত্রি এসে পেছনে বসেছে।
রাত্রি:- আমার কিছু কেনাকাটা আছে চলো মার্কেটে যাবো।
চাঁদ:- তুমি কেনা কাটা করবে টাকা পেলে কোথায়?
রাত্রি:- মা দিয়েছে।
চাঁদ:- তোমার বেলা টাকা দিতে কিপটামু করে না সব কিপটামি আমার বেলাতে! এখন মার্কেটে যেতে পারবোনা আগামী কাল বন্ধ তখন নিয়ে যাবো আমি এখন আগে বাড়ীতে যাবো। (মাকে ছবি গুলি দেখিয়ে তোমাকে বকা শুনাতে হবে না মনে মনে ভাবছি আর মিঠ মিঠ হাসছি)
রাত্রি:- ঠিক আছে তাহলে তো আমার জন্যই ভালো হবে। বন্ধের দিনে তোমার বাইকে বসার সুযোগ হবে।
চাঁদ:- হ্যা তোমার জন্য ভালো এখন মাঝে ব্যাগ দিয়ে বসো। (আগে বাড়ীতে যাই ভালো তো হবেই)
রাত্রি:- আমার ব্যাগ দিয়ে বসতে ভালো লাগে না! এখন থেকে তোমাকে জড়িয়ে ধরে যাবো।

চাঁদ:- ব্যাগ দিয়ে বসো তানা হলে বাইক এক্সিডেন্ট করবো রাত্রি অনেকটা রাগ দেখিয়ে বসেছে! আমি বাইক চালিয়ে বাড়ীতে এসেছি। রাত্রি নেমে আগেই বাড়ীর ভিতরে চলে গেছে। আমি মোবাইলটা চেক করে নিলাম ছবি গুলি আছে কিনা হ্যা আছে! বাড়ীর ভিতরে ঢুকেছি তারে নারে বন্ধুরে বলে তখনি চেয়ে দেখি রাত্রি বাবার কাছে কান্না করে বলছে!

রাত্রি:- বাবা চাঁদ আহমেদ আমাকে অন্য ছেলেদের দিয়ে গোলাপ ফুল দিয়ে প্রপোজ করিয়ে মোবাইলে ভিডিও করে ছবি তুলে আমাকে আপনাদের কাছে খারাপ বানাবার জন্য। আমি তো রাত্রির কান্না দেখে অবাক হচ্ছি মেয়েটার চোখে এত পানি রাখে কোথায়? আমি রাত্রির কান্না দেখে চুপি চুপি রুমের দিকে চলে যাচ্ছি ঠিক তখনি বাবার ডাক চাঁদ আহমেদ এদিকে আয়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত