বেলা শেষে তুমি আমি

বেলা শেষে তুমি আমি
আমার বিয়ের কার্ড টা রিয়ার আম্মুর হাতে ধরিয়ে দেয়ার সময় মহিলাটার চেহারা দেখার মতো ছিলো।দেখে তখন খুব হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু সম্মান দিতে গিয়ে হাসি চেপে মিথ্যে রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম,দাঁড়িয়ে ছিলাম কারণ বসতে ইচ্ছে করছিলো না। অনেক বার বলেছিলো বসতে কিন্তু আমি বসিনি অনেক রকম খাবারও দিয়েছিলো আমি এক গ্লাস জল ও খাই নি কারণ আমি মনে করি আমার সেই অধিকার টা নেই! যার জন্য অধিকার টা পেতাম সেই তো নেই আমার জীবনে। তবে কেনো ক্ষণিকের এই মিথ্যে নাটকে অংশগ্রহণ? রিয়া আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো এখন নেই। কারণ তাকে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই আমি হারিয়ে গেছি।
স্কুল জীবনের প্রেম ও আমার।আমার প্রথম ভালোবাসা।শুনেছি প্রথম ভালোবাসা কখনো ভুলা যায় না,আমার ক্ষেত্রেও তাই ই হয়েছে।তাই তাকে ভুলে যাওয়ার এক শেষ আপ্রাণ চেষ্টা, দেখি কতো টুকু স্বার্থক হই! রিয়া দেখতে আহামরি কোনো সুন্দরী রূপবতী ছিলো না, নাক টা বোচা গায়ের রঙ টেনে টুনে শ্যাম বর্ণ হবে,ওর চুল গুলো কখনো পরোখ করে দেখা হয় নি,কারণ সব সময় ওর চুল হয়তো খোঁপা করা থাকতো নয়তো বেণী , তবুও ও আমার কাছে হুরের মতো সুন্দরী! না আমি হুর দেখি নি কোনো দিন, তবে হুরের যে বর্ণনা শুনেছি তা দিয়েই রিয়াকে আমি সাজিয়ে নিয়েছি।
“দেখ জয় সময় থাকতে নিজের বুঝ টা বুঝতে শেখ ভাই, তোর চয়েস এতো খারাপ কেন?অনেক ভালো মেয়ে পাবি আয়নার সামনে দাঁড়া ভাই,নিজের চেহারার মতো কাউকে লাইফ পার্টনার করে নে “আমাকে বিয়ে তো দূরে থাক,প্রেম করলে তোর জীবনের অর্ধেক শেষ” এটা রিয়ার কমন ডায়লগ ছিলো। এমন একটা মেয়ে ছিলো রিয়া যে শীতকাল না আসলে মুখে ক্রিম লাগাতো না, এতো বছরের সম্পর্ক ছিলো বলতে পারবো না রিয়া সাজলে ওকে কেমন দেখায়,একদম সাদামাটা ছিলো মেয়েটা।যার জন্য ওকে এতো বেশি ভালো লাগতো।মনটাই যার এতো সুন্দর বাইরের রূপ দেখে কি করবো?আমার আম্মু রিয়াকে মেয়ে হিসেবে খুব পছন্দ করতো কারণ রিয়া কথায় কথায় প্রচুর লোক হাসাতে পারে।কিন্তু যেদিন থেকে জানলো রিয়ার সাথে আমি প্রেম করি সেদিন থেকে একটু একটু ওর ক্ষুত ধরতে লাগলো।তাতে আমার কিছু যায় আসতো না, আমি জানি রিয়া ভবিষ্যতে সবটা মানিয়ে নিতে পারবে। পাশাপাশি বাসা ছিলো আমাদের,ভাড়া বাসা। আমি যে স্কুলে পড়তাম ক্লাস নাইনে রিয়া সেই স্কুলে ভর্তি হয় তারপর ওদের বাসা চেঞ্জ করে আমাদের বাসার পাশের বাসায় শিফট হয়।অবশ্য এসব কিছুই জানতাম না ।
রিয়াকে ভালোবেসেছিলাম স্কুল যাওয়ার পথে দেখে, তখন জানতামও না ওদের বাসা ঠিক কোনটা। হঠাৎ একদিন দেখি ও আমাদের বাসার পাশের বাসাটাতেই থাকে।রাস্তায় ওর দিকে এতো তাকাতাম তবুও কখনো দেখতাম না ও আমার দিকে একটাবার তাকালো।মাথা নিচু করে স্কুলে যেতো আর আসতো। কোনো দিন স্কুল যাওয়া আসা ছাড়া
ওকে আর কোথাও যেতে দেখি নি।কি করে আমার অনুভুতি রিয়ার কাছে পৌঁছাবে, সেটা নিয়েই ভাবতাম সারাক্ষণ।
অবশ্য প্রেমের পরে জানতে পারি রিয়াও আমাকে দেখতো লুকিয়ে লুকিয়ে।রাস্তায় না, বাসার ছাদে থেকে আবার কখনো জানালা দিয়ে, ও বলতো আমি নাকি কখনো ওর দিকে তাকাই নি! কি অদ্ভুত আমি যখন রিয়াকে দেখতাম তখন রিয়া আমায় দেখতে পেতো না, আর রিয়া যখন আমায় দেখতো তখন আমি ওকে দেখতাম না। এই চোখে চোখে প্রেম টা বড্ড বেশি মিস করি! দুজনে সেম ইয়ার ছিলাম তবে সেম এজ নয়।কারণ রিয়া আমার থেকে বয়সে বড় ছিলো, খুব বেশি বড় না মাত্র তিন মাসের বড় ছিলো,আর সার্টিফিকেটে ছিলো এক বছরের বড় এগুলো অবশ্য প্রেমের কিছু দিন আগে জানতে পারি আম্মুর কাছে থেকে।
রিয়া আমার থেকে বড় হলেও বুদ্ধিতে অনেক ছোটো ছিলো,খুবই বোকা। তবে রাগী আর জেদি স্বভাব ছিলো কিন্তু মেয়েটা খুব সহজ সরলও ছিলো। এতো এতো রাগ জেদ থাকা স্বত্তেও ও এই কঠিন জয় টাকে মুখ বুঝে সহ্য করতো।রিয়ার ভালোবাসায় কখনো কমতি ছিলো না, যার কারণে ও কোনো ভুল করলে সহজেই ক্ষমা করে দিতাম। ওর খুব পাগলামো স্বভাব ছিলো, সিরিয়াস কথায় ফিক করে হেসে দিতো।যার জন্য খুব মেজাজ খারাপ হতো, সব সময় রিয়া হাসি খুশি থাকতো। মাঝে মাঝে অকারণেও হাসতো।আমার মন খারাপ থাকলে ও ব্যাকুল হয়ে পড়তো মন ভাল করার জন্য,যদিও পারতো না তবে ওকে শান্তনা দেয়ার জন্য মন ভাল হয়েছে এমন অভিনয় করতে হতো। আমাদের লাভ স্টোরি তে “আই লাভ ইউ “ওয়ার্ড টা খুব কম এসেছে।প্রকাশ কম ছিলো দুজনেরি, তবে ভালোবাসায় কমতি ছিলো না আমাদের।নিখাদ ভালোবাসা ছিলো আমাদের।আস্তে আস্তে সময় ক্রমাগত পার হতে থাকে।অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর রিয়াকে বাসা থেকে প্রচুর চাপ দেয়া হয় বিয়ের জন্য,রিয়া আমাকে বলার পর আমি টোটালি বলে দিই আমার পক্ষে এখন বিয়ে করা সম্ভব না।
আমি সেদিন ভুল ছিলাম না,আমি আমার জায়গায় সঠিক ছিলাম,এটাই মধ্যবিত্তদের জীবন, চাইলেই হুট করে বিয়ে করা যায় না বিয়ে করে সংসার চালাবো কি করে,এদিকে আব্বুও ছিলো অসুস্থ। সব দিক বিবেচনা করেই বলেছিলাম রিয়াকে “তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না “কারণ আর যাই হোক রিয়াকে বিয়ে করে সারাজীবন কষ্টে রাখার চেয়ে ক্ষণিকের এই কষ্ট সহ্য করাটাই শ্রেয়ো। রিয়া বার বার বলতো ও আমাকে ছাড়া অন্য কাওকে নিজের জীবনে জড়াতে পারবে না। বার বার বলতো অন্য কাউকে বিয়ে করার থেকে সুইসাইড করে নেয়া ভালো।একটা মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে এমন করা যায় জানা নেই, রিয়া ওর বাঘের মতো মায়ের সামনে ডিরেক্ট বলেছিলো আমি জয়কে বিয়ে করবো জয়কে ভালোবাসি।
রিয়ার আম্মু অত্যন্ত ধুরন্ধর চালাক,রিয়াকে সেদিন শাসন না করে ঠান্ডা মাথায় বলেছিলো ঠিক আছে জয়কে চাকরী করতে বল বিয়ে দিবো ওর সাথে,আর এখন ছেলেপক্ষ একটা একটু দেখতে আসে আসুক।কিছু হবে না তুই যখন জয়কে পছন্দ করিস ওর সাথেই বিয়ে হবে। এরকম হাজারটা আশ্বাস দিয়েছিলো রিয়াকে,আর রিয়া বোকা টা মাকে বিশ্বাস করে নিয়েছিলো। কিন্তু এই বজ্জাত মহিলাটার মাথায় চলছিলো অন্য প্ল্যান।পাত্রপক্ষ দেখতে আসে,রিয়া তাদের সামনে সেজেগুজেও যায় না এমন ভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করে যেনো ওকে পছন্দ না হয়। কিন্তু রিয়ার ভাগ্য এতোটাই খারাপ রিয়াকে পছন্দ করে ফেলে তাঁরা,এটাকে বলে ভাগ্যের ফের।কিন্তু ব্যাপার টা রিয়ার আম্মু রিয়ার থেকে চেপে যায়, হুট করেই একদিন বলবে” রিয়া তোর বিয়ে আজ” আর পাশাপাশি রিয়াকে বশ করার জন্য বিভিন্ন কবিরাজের কাছে ছুটাছুটি করে ।
কিন্তু সত্যি তো আর চাপা থাকে না কোনো না কোনো ভাবে রিয়া জেনে যায়  ওর আম্মুকে জিজ্ঞেস করতেই উনি বলে “জয় তোর থেকে ছোটো, ওকে বিয়ে করলে পাপ হবে।আর ও বেকার , বিয়ে করে খাওয়াবে কি?রিয়া উত্তরে বলেছিলো “জয়কে একটু সময় দেন,ও পারবে কিছু একটা করতে ও অনেক ম্যাচিউর, ওতো খারাপ ছেলে না আপনারা তো জানেন ই “কিন্তু তাদের মেয়ে তাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছে, কাঁধে থেকে নামাতে পারলে বাঁচে।তাই রিয়ার কথা গুলো মূল্যহীন ভাবে ফেলে দেয়। তারপর থেকে রিয়া কান্নাকাটি করতো খুব।অনেক বুঝাতাম কান্না না করতে ধৈর্য্য ধরতে,আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য,আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে, কিন্তু ও বার বার বলতো মরে যাবে আমায় ছাড়া।
রিয়ার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসতেই হঠাৎ করেই কোনো এক ভোরে জানতে পারি রিয়া নিখোঁজ। ওর বাসার সবাই এসে আমাকে ধরে আমি না আবার রিয়াকে নিয়ে গুম করেছি।কিন্তু আমি তো কিছুই জানি না। রিয়ার আম্মু আমার কলার চেপে ধরে বলে রিয়াকে কোথায় রেখেছি, কিন্তু আমি যদি নাই জানি তাহলে বলবো কিভাবে?অনেক ঘাটাঘাটির পর , এতো এতো কাঠ খড় পুড়ানোর পর প্রমাণ হলো আমি নির্দোষ। আমাকে জেল না দিলেও, যা করেছে আমার সাথে তাঁরা, রিম্যান্ডে রাখা আসামীর সাথেও এমনটা করে না। মানুষ নাকি আবার পালিয়ে বিয়েও করে হুহ!নাকি রিয়ার বাবা পুলিশ বলে এমন টা হয়েছিলো আমার সাথে?
একেতে রিয়া নেই তার উপর রিয়ার ফ্যামিলির এমন প্যারা।ভাই রে ভাই পুরাই মাথা নষ্ট! অনেক দিন কেটে গেলো রিয়াকে পাওয়া গেলো না। বছর কেটে গেলো কোনো হদিস মিললো না রিয়ার এক বছর দু বছর তিন বছর পর পর কয়েক বছর কেটে যেতে লাগলো রিয়ার খোঁজ মিলে নি,খোঁজ না মিললেও আমি জানি রিয়া আর নেই এই গোলকধাঁধায়!রিয়ার বাবা মাও আশা ছেড়ে দিলো রিয়া আর নেই। অনেক দেরিতে তাঁরা বুঝলো রিয়া আর নেই! যদি ও পালিয়ে যেতোই তাহলে দু মাস তিন মাস পর একাই খোঁজ আসতো অন্তত রিয়া আমার কাছে আসতো ফিরে।যে মানুষটা নেই ই তাকে খুঁজলে কি আর পাওয়া যাবে? তাদের জেদের জন্য হারাতে হলো তাদের মেয়েকে,আর আমি আমার রিয়াকে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই যাচ্ছিলাম রাস্তা দিয়ে,চোখের কোণা টা ভরে এলো,হাজার হলেও রিয়া আমার প্রথম প্রেম! এমন সময় ফোন টা বেজে উঠলো, হাতে নিয়ে দেখি আমার উডবি ওয়াইফ।রিসিভ করে কানে নিলাম।
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,অসময়ে কল দিয়েছো কেনো?
-আপনার কথা খুব মনে পড়ছিলো তাই।দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
-আর দুদিন পরই তো বিয়ে। ধৈর্য্য ধরো দেখা হবে, বিয়ের পর তো সারাজীবনের জন্যই তোমার আমি।
-আচ্ছা কি করছেন?
-রিয়াদের বাসায় গিয়েছিলাম, ওর আম্মুকে কার্ড দিতে।
-ওহ বিয়েতে আসবে অই মহিলা?
-বলেছে আসবে।
-আসলে ভালো না আসলে আর কি।
-হুম।আচ্ছা রাখি পরে কথা হবে বাসায় যাবো এখন।
-আচ্ছা ঠিক আছে খোদা হাফেজ।
-আল্লাহ হাফেজ।
ফোনটা রেখে গলি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠলাম,গাড়িতে উঠে বসলাম,চোখ বন্ধ করে হারিয়ে গেলাম আমার সেই হারিয়ে যাওয়া প্রিয় অতীতে,রিয়া বলেছিলো কোনো অমাবস্যাতিথিতে আমার হাত ধরে বৃষ্টি বিলাস করবে,বলে ছিলো হাড় কাঁপানো শীতে কোনো এক পূর্ণিমাতিথিতে এক চাদর মুড়া দিয়ে এক কাপ কফি দুজন মিলে খাবো,বলেছিলো শরতের ক্লান্ত বিকেলটা আমার কাঁধে মাথা রেখে আকাশে মেঘের খেলা দেখবে। পায়নি তার প্রাপ্তি, আচ্ছা রিয়া কি ভালো আছে?রিয়া কি জানে আমি বিয়ে করছি? রিয়াই তো বলেছিলো আমায় বিয়ে করে নিতে, শেষ যেদিন রিয়ার সাথে দেখা করলাম, রিয়া ওর ডায়েরী গুলো আমার হাতে দিয়ে বললো,
“আমি তো একটা নতুন সংসার পাবো তোমায় হারিয়ে,তুমি কি পাবে? এই নাও ডায়েরী দুটো রাখো, রক্তে মাংসের এই মানুষটাকে পাবে না তো আর, তবে এই ডায়েরীর প্রতিটা পাতায় তুমি তোমার রিয়াকে অনুভব করবে। আর শুনো তুমি যখন ইস্টাব্লিশ হবে তখন তো বিয়ে করতে হবে, প্লিজ জয় এরেঞ্জ ম্যারিজ করো না, এটা তোমার কাছে আমার রিকুয়েস্ট, যখন তোমার বিয়ের বয়স হবে তার দু এক মাস আগে একটা প্রেম করো আর তাকে বিয়ে করো। যদি এরেঞ্জ ম্যারিজ করো তাহলে হয়তো আমাদের মতোই কারো স্বপ্ন ভেঙে জোড়তে হবে। স্বপ্ন ভাঙার কষ্টটা বুঝো তো তুমি জয়।ভালো থেকো আর আমার কথাটা রাখার চেষ্টা করো জয়। ” ঢোক গিলে গিলে বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে কথা গুলো বলছিলো ওর খুব কষ্ট হচ্ছিলো তখন আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম, চোখের পানি মুছতে মুছতে যাচ্ছিলো, সেদিনই ছিলো রিয়ার সাথে আমার শেষ সাক্ষাৎ।
রিয়াকে আমি আটকাতে পারি নি কারণ আমার হাত পা বাঁধা ছিলো মধ্যবিত্ত কাঁটাতার দিয়ে। ঠিক তখন আমারো মনে হচ্ছিলো রিয়ার মতো সুইসাইড করে নেই। একে তে প্রেম হারাম তবুও প্রেম করেছি আমরা এখন যদি পালিয়ে বিয়ে করি, বিয়ের মতো হালাল শব্দটাকে এভাবে হারাম করে দুজনে কোনোদিন সুখি হতে পারবো না,তাই এই কষ্ট সহ্য করাই শ্রেয়ো! দীর্ঘশ্বাস ফেলে জয় গাড়ি থেকে নেমে মসজিদে নামাজের জন্য ঢুকলো,নামাজ শেষে মোনাজাতে অনেক কান্নাকাটি করলো,শুধু রিয়ার কথা ভেবে। বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো, বর কনের একসাথে গায়ে হলুদ হয়ে গেলো ধুমধাম করে,জয়ের বাবা মাও জয়ের বিয়েতে খুব খুশি,কনে তাদের নিজের পছন্দ করা। রিয়ার আম্মু আব্বু আসে নি আজ,দেখা যাক কাল আসে কিনা, এবার এলো বিয়ের দিন । আল্লাহর অশেষ রহমত রিয়ার আব্বু আম্মু আর ছোট ভাই সবাই এসেছে।জয় তাদের দেখে সামনে গেলো উনাদের,
-আসসালামু আলাইকুম। রিয়ার বাবা মা উত্তর নিলো।রিয়ার আম্মু জয়কে জিজ্ঞেস করলো,
-কই পাত্রি আসে নি?
-আছে তবে এখানে এখনো বসাই নি, আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো ও, চলুন কনের কাছে নিয়ে যাই, পরিচয় করিয়ে দেই। কথাগুলো বলেই জয় রিয়ার আব্বু আম্মুকে নিয়ে একটা রুমে গেলো, যেখানে কনে রুমে সেজেগুজে মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।রিয়ার আব্বু আম্মু রুমে ঢুকতেই কনে সালাম দিলো, তাঁরা উত্তর নিলো।
-আন্টি আপনারা পরিচয় হোন আমি আসছি কাজ আছে একটু। এই বলেই জয় পেছন থেকে চলে গেলো।রিয়ার আম্মু কনের দিকে যেয়ে বললো,
-ঘোমটা টা সরাও দেখি একটু ।
কথাটা শেষ হতে না হতেই কনে ঘোমটা খুললো আর রিয়ার আব্বু আম্মু তাক লেগে থমকে গেলো মেয়ে দেখে, এটা তো অন্য কেউ না, তাদের মেয়ে রিয়াই। কিন্তু চেনা যাচ্ছে না রিয়াকে এতো এতো গহনা আর সাজসজ্জা!তারমধ্যে মেয়েটা কেমন শুকনো ছিলো আগে আর এখন কি সুন্দর গাল দুটো ভরা! খুব মোটা না, আবার শুকনোও না নিজেদের মেয়েকে দেখে শক খেয়ে নির্বাক হয়ে গেছে।রিয়া হেসে দিয়ে বললো।
-জানি আপনারা আমায় মৃত ধরে নিয়েছেন তাই এতো অবাক।যে মানুষটা মরেই নি সে কি করে মৃত হয়?যেখানে জয় বেঁচে আছে এতো ভালোভাবে সেখানে আমার বেঁচে থাকাটা নিশ্চিত! হ্যাঁ আমি মরি নি আব্বু আম্মু, আমি মরি নি,তবে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে এসেছি, আপনারা আমায় মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছিলেন, একটা আশি হাজার টাকা বেতন পাওয়া ছেলের কাছে আমায় বিক্রি করে দিতে যাচ্ছিলেন, কারণ জয় বেকার ছিলো,আম্মু কি যেনো বলেছিলেন আপনি, আমার বিয়েতে আমায় দশ ভরি স্বর্ণ দেবেন, আজ আমার দিকে তাকিয়ে দেখেন আমার গায়ে পুরো একশো ভরি স্বর্ণ, আর আমার গায়ে যে লেহেঙ্গা টা এটার দাম দু লাখ। এগুলো সব দেশের বাইরে থেকে থেকে করা শপিং। আমি মরতে পারি নি সেদিন আম্মু। আমি জয়ের হাত ধরে পালিয়েছিলাম,আমরা বিয়ে করি নি এতো বছর,আবার লিভিং ও করি নি। আমাকে একটা লেডিস হোস্টেলে এতো গুলো বছর রেখে দিয়েছিলো জয়।আর আজ বিয়ে করছি, আপনাদের জানিয়ে,জানি এখন আর অমত করতে পারবেন না, নারাজ ও নেই আমাদের উপর।এম আই রাইট আব্বু?
জয় এখন পুরোপুরি এস্টাব্লিশ আমায় বিয়ে করতে যাচ্ছে আজ ।আপনারা বলতে পারবেন না আজ জয় বেকার,বলতে পারবেন না ওর সাথে আমার বিয়ে হলে পাপ হবে জয়ের ফ্যামিলি আমায় মানবে না!তাঁরাই আমাকে অনায়েশে মেনে নিয়েছে। কথা গুলো রিয়া একদমে বললো, খুব গর্ব করে।সত্যিই তো এটা গর্বের কথায়!চোখ বন্ধ করে নিজের সুখ বিসর্জন না দিয়ে, স্ট্রাগল করে নিজের প্রাপ্তিটাকে অর্জন করাটাই সত্যিকারের ভালোবাসা। কাউকে ভালোবেসে প্রাণ দিয়ে দেয়া টা বোকামি ।রিয়ার খারাপ সময়টাতে এই জয় ছাড়া কাউকে পায় নি পাশে এমনকি ঘনিষ্ঠ বান্ধুবীদেরও।তবে আজ সবাই ওদের বিয়েতে ইনভাইটেড। এতক্ষণে জয় এসে পড়েছে রিয়ার কাছে।এসেই অনুনয়স্বরে বললো,
-সরি আংকেল আন্টি, রিয়াকে পাওয়ার জন্য আমার এতো টুকু স্বার্থপর হতে হয়েছে।রিয়া আমার প্রাণ ভ্রমর, ওকে  ছাড়া আমি বাঁচবো কিভাবে?যেখানে আমার নামটাই জয় সেখানে কি করে জীবনের একটা বিশেষ অংশকে হারিয়ে পরাজয়টাকে গ্রহণ করবো?
রিয়ার বাবা মা সত্যিই আজ রেগে নেই ওদের ওপর।ওদের মেনে নিলো চোখের কয়েকটা খুশির জলে। “শেষ ভালো যার সব ভালো তার”ধৈর্য্য ধারণকারীকে আল্লাহ কখনো নিরাশ করে না “প্রকৃতি আমাদের তাই ই দেয় যা আমরা আমাদের কর্ম ও চেষ্টায় প্রাপ্য! ভালোবাসাগুলো এভাবেই টিকে থাক বেঁচে থাক।প্রেমময় অনুভুতি গুলোই হোক প্রাপ্তি পাওয়ার শক্তি!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত