মধ্যরাতের গল্প

মধ্যরাতের গল্প

রুমে বসে ফোন টিপছি। এমন সময় আমার স্ত্রী শ্রাবণী তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে বললো,
– পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাবীকে দেখে আসলাম। অনেক কিউট জানো। আর অনেক সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের শাড়ি পড়ে…
আমি শ্রাবণীর কথা শুনে আনন্দিত হয়ে হাসতে হাসতে বললাম,
— একদম ঠিক বলেছো, ভাবী সত্যি অনেক সুন্দরী। দেখতে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগে। তাছাড়া গলার নিচে একটা কালো তিলও আছে। সেদিন বিকালে ভাবীকে দেখলাম খোলা চুলে নীল শাড়ি পড়ে ছাদে হাটাহাটি করছে। উফফ কি যে সুন্দর লাগছিলো…

শ্রাবণী চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি যে কত বড় ভুল করে ফেলেছি সেটা আমি ঠিক ভালো করেই বুঝতে পারছি। রাগে শ্রাবণীর সারা মুখ লাল হয়ে গেছে। আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে রইলাম। শ্রাবণী রুম থেকে বের হয়ে গেলো। একটু পর রান্নাঘর থেকে বটি দা’টা এনে বললো,
-দেখো তো এটার ধার ঠিক আছে কি না?
আমি হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে বললাম,
— একদম ঠিক আছে। আজকেই ধার করালে না কি?
শ্রাবণী দা টা হাতে নিয়ে বললো,
– হে আজকেই করিয়েছি। আচ্ছা এটা দিয়ে এক কোপ দিলে কি ঘাড় থেকে মাথাটা ভাগ হয়ে যাবে না?
আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললাম,
— এইসব কি ভয়ংকর কথা বলছো?

শ্রাবণী আমার শার্টের কলার ধরে বললো,
-পাশের বাসার ভাবীর গলার নিচে তিল আছে সেটা তোর চোখে পড়ে আর আমার যে ঠোঁটের নিচে তিল আছে সেটা তো তোর কখনো চোখে পড়ে নি? ভাবী নীল শাড়ি পড়েছিলো সেটা তোর মনে আছে আর আমি যে এই মুহূর্তে নীল শাড়ি পড়ে রয়েছি সেটা তোর চোখে পড়ে না? ভাবীর চেহারা বাচ্চা আর আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি?

আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,
— সরি, বাবু…
শ্রাবণী রাগে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
– তোর সরিকে তোর টুট টুট টুট( এটা নিজ দ্বায়িত্বে বুঝে নিতে হবে) তুই এই মুহূর্তে বাসা থেকে বের হয়ে যা তা না হলে আমি কিন্তু আজ বিধবা হয়ে যাবো…

ক্লাসমেটকে বিয়ে করলে এই এক ঝামেলা। কথায় কথায় তুই তুকারী করে গালিগালাজ করে আর যখন তখন মাঝ রাতে বাসা থেকে বের করে দেয়|

রাত কয়টা বাজে জানি না কারণ আমার হাতে ঘড়ি নেই সাথে মোবাইলও নেই। শ্রাবণী যখন বটি দা হাতে নিয়ে আমার কলার চেপে ধরেছিলো তখন ভয়ে হাত থেকে মোবাইলটা পরে গিয়েছিলো। পকেটে হাত দিয়ে দেখি সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার আছে। জ্বলত সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মূত্র বির্সজন দিচ্ছি। এখন সময় কেউ একজন পিছন থেকে বলে উঠলো,
– দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা ঠিক না।
আপি প্যান্টের চিইন লাগতে লাগতে বললাম,
— প্যান্টটা অনেক টাইট তো তাই বসে সঠিক ভাবে মূত্র বির্সজন দেওয়া যায় না..
লোকটা কিছু না বলে আমার ঠোঁট থেকে সিগারেটটা নিয়ে দুটো টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো,
– আমি রাকিব, তা ভাই কি বিবাহিত?
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
— আমি পিয়াস, তা আমি যে বিবাহিত সেটা আপনি বুঝলেন কিভাবে?
লোকটা মুচকি হেসে বললো,
– এত রাতে বউয়ের দৌড়ানি খেয়ে বিবাহিত পুরুষ বাদে অন্য কেউ বাসা বের হবে না। তা ভাই, বউ বাসা থেকে বের করে দিলো কেন?

আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম,
— ভাইরে, পরস্ত্রীর সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করেছিলাম।
আমার কথা শুনে লোকটা বললো,
-আপনারটা না হয় মেনে নেওয়া যায় কারণ কোন স্ত্রী স্বামীর মুখ থেকে অন্য নারীর সৌন্দর্য্যের কথা সহ্য করতে পারে না কিন্তু আমাকে তো ছোট একটা কারণে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
আমি বললাম,
— কারণটা কি?
লোকটা একটানে সিগারেটটা শেষ করে বললো,
-আমার বউ সুপ্তি শপিংমল থেকে একটা পারফিউম কিনে এনেছে। আমাকে পারফিউমটা দেখিয়ে বললো, দেখো তো ঘ্রাণটা কেমন? আমি ঘ্রাণ শুকে বললাম, ঘ্রাণটা ভালো আছে কিন্তু আমার কলিগ ফারিয়ার ওর পারফিউমের ঘ্রাণটা দারুণ। এই কথা শুনে আমার বউ প্রথমে পারফিউমের বোতলটা ভাঙলো তারপর আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো। কাল না কি আমায় ডিভোর্স দিবে কারণ আমার না কি চরিত্র ভালো না। আমি না কি কলিগের শরীরের ঘ্রাণ শুকে বেড়ায়…

এমন সময় খেয়াল করলাম হাফপ্যান্ট পড়া খালি গায়ের একটা লোক এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি মারছে। আমাদের দেখতে পেয়ে দৌড়ে আমাদের কাছে এসে বললো,
~ভাই আপনারা কেউ কি সেন্টু গেঞ্জি পড়েছেন?
আমি বললাম,
— হে আমি পড়েছি, কিন্তু কেন?
লোকটা বললো,
~তাহলে ভাই, আপনার শার্টটা আমায় দেন। কোন রকম ভাবে আমার লজ্জাটা নিবারণ করি। তারপর সব বলছি।

আমি শার্টটা খুলে দিতেই উনি কোমড়ে পেছিয়ে পড়লেন।তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~আমি মামুন, তা ভাই আপনারা কি বিবাহিত?
আমি আর রাকিব ভাই মুচকি হেসে বললাম,
— জ্বি ভাই। তা আপনাকে বাসা থেকে বের করে দিবার কারণ?

মামুন ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~ আমার বিয়ে হয়েছে ২ বছর হলো। কিন্তু এখনো সন্তানের বাবা হতে পারলাম না। সন্তান হবে কিভাবে, সপ্তাহে ৭ দিনের মধ্যে ৪ দিনেই বউ আমায় বাসা থেকে বের করে দেয়, ২ দিন বউয়ের মাথা ব্যথা থাকে আর একদিন শ্বাশুড়ি বাসায় আসে আর বউ শ্বাশুড়ির সাথে ঘুমায়। আজ মা আমার বউকে বললো ১ বছরের ভিতর যদি নাতি নাতনির মুখ দেখাতে পারে তাহলে মা তার সমস্ত গহনা আমার বউকে দিয়ে দিবে। বউ নিজের ইচ্ছেতেই আমাকে কাছে ডাকলো, অন্তিম মুহূর্তে আবেগে বউকে বলে ফেললাম, আই লাউ ইউ রিয়া, আই লাভ ইউ সো মাচ। কিন্তু আমার বউয়ের নাম ছিলো অবন্তী। বউ প্রথমে আমাকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিলো তারপর একের পর এক প্রশ্ন, রিয়া কে। তাই বাধ্য হয়ে সব বললাম, রিয়া আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিলো আর ওর সাথে একবার মনের ভুলে শারীরিক সম্পর্ক করে ফেলেছিলাম। আর এই কথা শুনে বউ সোজা বাসা থেকে বের করে দিলো। প্যান্ট পড়ার সময়টা পর্যন্ত দেয় নি…
|
|
রাতের অন্ধকার কেটে আস্তে আস্তে আলো ফুটতে লাগলো। এখন বিদায়ের পালা। হঠাৎ রাকিব ভাই আমাদের দুইজনকে বললো,
-ভাই, স্ত্রী লোক সৃষ্টি হয়েছে স্বামীর পাঁজরের বাঁকা হাড় দিয়ে। এমন আমরা যদি একদিনেই বাঁকা হাড় সোজা করতে চাই তাহলে সেই হাড় ভেঙে যাবে আর যদি সোজা করার চেষ্টা না করি তাহলে সেই হাড় দিনকে দিন আরো বেঁকে যাবে। তাই প্রতিদিন আদর ভালোবাসা যত্ন দিয়ে আস্তে আস্তে সেই বাঁকা হাড় সোজা করতে হবে। আমরা তিন জন আজকে রাস্তায় রাত কাটালাম। বিশ্বাস করেন আমাদের কারো স্ত্রী কিন্তু ১ মিনিটের জন্য হলেও বিছানায় শরীর লাগায় নি। কেউ হয়তো সারারাত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পথ চেয়ে রয়েছিলো, কেউ সারারাত কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে আর কেউ হয়তো ফজরের আযানের পড়েই স্বামীকে খুঁজতে বের হয়ে গেছে। স্ত্রী লোক ভাই খুব আজব জিনিস। দুনিয়া উল্টে গেলেও স্বামীর ভাগ কাউকে দিবে না…

যখন চলে যাবো তখন মামুন ভাই বললো,
~পিয়াস ভাই, আপনার শার্টটা কবে দিবো?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
— কোন একদিন মধ্যরাতে আপনার সাথে আবার দেখা হয়ে যাবে। যেহেতু আমরা বিবাহিত। সেদিন না হয় দিয়েন

গেইট দিয়ে যখন বাসায় ঢুকতে যাবো তখন দেখি শ্রাবণী বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে নীল শাড়ি আর খোলা চুল। পাশের বাসার ভাবীর থেকে কমপক্ষে হলেও ১০ গুণ বেশি সুন্দর অথচ এই সৌন্দর্য্যটা এতদিন আমার চোখেই পড়ে নি…

মামুন কলিংবেল বাজাতেই অবন্তী দৌড়ে এসে দরজা খুললো। সারা রাত কেঁদে অবন্তী চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। মামুনকে জড়িয়ে ধরে অবন্তী বললো,
– আর যদি কখনো রিয়ার নাম শুনেছি তাহলে কিন্তু খুন করে ফেলবো তোমায়..

রকিবকে দেখেই সুপ্তি অন্য দিকে হাটা শুরু করলো। রাকিব সুপ্তিকে বললো,
– তুমি কি আমায় খুঁজতেছিলে?
সুপ্তি অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
— তোমার মত একটা ফাজিলকে খুঁজতে আমার বয়েই গেছে। একটু মোটা হয়ে যাচ্ছি দেখে রাস্তায় হাটাহাটি করছি…

আসলেই স্ত্রী কঠিন জিনিস। সারাজীবন সাধনা করলেও আমরা তা বুঝতে পারবো না.

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত