ফুল : তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন তোমাতে করিব বাস।
অভিমান : উত্তর দে ফুল, আমি তোর উত্তরের অপেক্ষায়।
ফুল : ভালোবাসা সে তো চারবছরে একবারো মনে হয় নি। তবে কেন আজ আমার দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছেন।
অভিমান : এটা আমার জবাব নয়। ভালো ভাবে জবাব দে।
ফুল : কেন যাকে গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে এনেছেন তার পিছনে ঘুরে বেড়ান। আমার পিছু নেওয়া ছেড়ে দেন। বাবা ও ভাইয়ার বিরুদ্ধে যেতে পারব না আমি।
অভিমান : এটাই তাহলে তোর শেষ কথা। তাহলে আমার শেষ কথা শুনে নে। আমি ছাড়া আর কারো বৌ হতে পারবি না তুই।
এসব বলেই মুচকি হেসে চলে গেল। আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।
আমি ঘায়েল হয়েছি বারবার,
তোমার মুচকি হাসিতে,
প্রেমে পড়া বারণ আমার,
চোখ নিয়েছি নামিয়ে।
কতবার হোঁচট খেতে হবে আমাকে। আমি ভাবতে পারছি না আর যে।
পরের দিন পাত্রপক্ষ দেখতে আসে। তাদের পছন্দ হয়ে যায়, বিয়ের তারিখ ঠিক করে যায়।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসে। বিয়ের দিন সন্ধ্যায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে। আমার নাক মুখ চেপে ধরে। আমি অজ্ঞান হয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফিরে আসে দেখি অভিমান ওর দুজন বন্ধু ও কাজী । বিয়ে করতে হয় কলির জন্য। ওকে আটকে রাখা হয়েছে পাশের ঘরে।
বিয়ে শেষ হওয়ার পর এক বড় শর্ত জুড়ে দেয়। অভিমান যখন চাইবে তখন এই বিয়ের কথা সবাইকে বলবে।
বাড়ি ফিরে দেখি বাবা মা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। ভাইয়া শুধু কান্না করছে। কলি ও আমাকে দেখে বলল । তোদের কোন ক্ষতি হয় নি তো বোন।
আমি শুধু বললাম না। বাবা ও মা উঠে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলো। আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি। কলি সেদিন আমার মার সহ্য করতে না পেরে। সব বলে দেয় উল্টো আমরা বেশি বিপদে পড়ে যাই।
মা এসব সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে আছে। বাবা ও মায়ের শোকে প্যারালাইসিস। সব মিলিয়ে বুঝতেই পারছ ভাবী।
ঐ খানে আমাদের থাকা যাবে না। সব কিছু বের করে দেয়। আমরা চলে আসি এখানে। তারপর থেকে দুর্বিষহ জীবন যুদ্ধ ঘোষণা করি। টিকে আছি আজ পর্যন্ত।
জানো ভাবী আজ ফলের আরদে স্পষ্ট তার মুখচ্ছবি দেখেছি আমি।
আমি যে সহ্য করতে পারছি না। কবে শেষ হবে আমার জীবনের যুদ্ধ।
ইরি : জীবন যুদ্ধ টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তুই পারবি সব দিক থেকেই পারবি। আর অভিমান কে যোগ্য জবাব দিতে হবে।
ঠিক আছে ভাবী তুমি ঘুমিয়ে পড়। কাল ভোরে উঠতে হবে।
তুমি আমাকে ভুলে যাবে, আমি ভাবতেই পারি না।
আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে
তুমি
আছো এই সংসারে, হাঁটছো বারান্দায়, মুখ দেখছো
আয়নায়, আঙুলে জড়াচ্ছো চুল, দেখছো
তোমার সিঁথি দিয়ে বেরিয়ে গেছে অন্তুহীন উদ্যানের পথ, দেখছো
তোমার হাতের তালুতে ঝলমল করছে রূপালি শহর,
আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে
তুমি অস্তিত্বের ভূভাগে ফোটাচ্ছো ফুল
আমি ভাবতেই পারি না।
যখনই ভাবি, হঠাৎ কোনো একদিন তুমি
আমাকে ভুলে যেতে পারো,
যেমন ভুলে গেছো অনেকদিন আগে পড়া
কোনো উপন্যাস, তখন ভয়
কালো কামিজ প’রে হাজির হয় আমার সামনে,
পায়চারি করে ঘন ঘন মগজের মেঝেতে,
তখন
একটা বুনো ঘোড়া খুরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে আমাকে,
আর আমার আর্তনাদ ঘুরপাক খেতে খেতে
অবসন্ন হয়ে নিশ্চুপ এক সময়, যেমন
ভ্রষ্ট পথিকের চিৎকার হারিয়ে যায় বিশাল মরুভূমিতে।
বিদায় বেলায় সাঝটাঝ আমি মানি না
আমি চাই ফিরে এসো তুমি
স্মৃতি বিস্মৃতির প্রান্তর পেরিয়ে
শাড়ীর ঢেউ তুলে,সব অশ্লীল চিৎকার
সব বর্বর বচসা স্তব্দ করে
ফিরে এসো তুমি, ফিরে এসো
স্বপ্নের মতো চিলেকোঠায়
মিশে যাও স্পন্দনে আমার।
ঘুমিয়ে পড়ল ফুল। ফজরের আযানের ধ্বনি শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়ল। ভাবীকে ডেকে তুলে দিয়ে বলল । ভাবী যাও এখন নামায পড়ে নাস্তা বানাও আমি আচার বানানোর কাজ শুরু করব।
পরের পর্ব: