অভিমানের ফুল || পর্ব -৪

অভিমানের ফুল || পর্ব -৪

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলাম সবাই। সবাই আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। আমি মুচকি হেসে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

বাড়িতে এসে আমার মাথায় বাজ পড়লো, আকাশ কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা ও একটা লাঠি নিয়ে বসে আছে। ভাইয়া সেদিন বাবার হাতে মারের হাত থেকে বাঁচাতে পারে নি। আমাকে মার খেতে দেখে অভিমান মুচকি মুচকি হাসছিল।

একসময় মার সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়। শুনেছি ভাইয়া সেদিন কোলে করে নিয়ে যায়।

সেদিনের পর বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেই। সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই।

আসতে আসতে অনন্য ভাইয়ার বিয়ে চলে আসল। সবাই খুব আনন্দ করছে। আমি শুধু ছাদে একবার গিয়ে হলুদ লাগানো দেখে চলে আসলাম।

সেদিন রাতের বেলা অভিমান আমাকে সরি বলে। আমি কোন কথা না বলে চলে আসব। ঠিক তখনই আমাকে সাড়াশির মত জড়িয়ে ধরল। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।

অভিমান : ফুল আগের মত কথা বল, তুই চুপ করে থাকলে মানায় না।

ফুল : অনেক সুন্দর সময় আসে জীবনে। কিন্তু কিছু স্মৃতি কোনদিন ভুলা যায় না।

অভিমান : ফুল,

আমি ঝটকা মেরে সরে আসি। পরের দিন বিয়েতে সবাই গেল শুধু আমি ছাড়া। সেদিনের মার টা মনে করছি কি দোষে মারল আমাকে। দোষ খুঁজে পাইনি, তাও অজানা।

রাতের বেলা অনেক হৈ হুল্লোড় করে বৌ নিয়ে আসল। অভিমান আমার দিকে চোখ পাকিয়ে উপরে চলে গেল। আমি কিছু না ভেবে অনন্য ভাইয়ার বৌ দেখে নিজের ঘরে চলে গেলাম।

পরের দিন বৌভাতের সময়

ধবধবে সাদা পেট, নাভী, ও পাশে যে একটা তিল আছে। তা দেখিয়ে কি সবার আকর্ষণ নিজের দিকে নিতে চাস ফুল।

“এসব কি বলছেন অভিমান , আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন।”

— কেন রে শাড়ি পড়িয়ে যদি সব দেখাতে চাস। এর থেকে ভালো ন্যাংটা হয়ে বেড়িয়ে পর রাস্তায়। অনেক বেশি কাষ্টমার পাবি।

” এসব কি আমি ভুল শুনছি, এটা কি অভিমান কথা। ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমি তো রান্নাঘরে থেকে বের হয় নি। ”

— চুপ কর ফুল, তোদের মত মেয়েদের খুব ভালো করে চেনা আছে আমার।

আমি কান্না করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেলাম। সেদিন সবাই খুশি ছিল তাই কাউকে কিছু বললাম না। বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। মা ডেকে নিয়ে গেল, অনন্য ভাইয়ার শশুর বাড়ি থেকে লোক এসেছে। তারা আমাকে দেখতে চায়।

নিচে নেমে সবার সাথে পরিচিত হলাম। অভিমান তাকিয়ে আছে, আমি অনন্য ভাইয়ার শালার সাথে হেসে হেসে কথা বলছি। আড় চোখে তাকায় দেখছি , অভিমান সবার সাথে হাসলে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে শাসন ভঙ্গি করে।

সবাই চলে গেল অনন্য ভাইয়ার সাথে বাড়ির সব ছেলে গেছে। অভিমান ছাড়া, জানিনা ইনি কেন গেল না।

রাতের খাবার পর যখন তার ঘর পেরিয়ে নিজের ঘরে আসব। তখন দেখি গুনগুন করে আবৃত্তি করছে। লেখক কে জানি না।

গ্রীষ্মের ভরদুপুরে যখন –
বসে বটগাছের শীতল ছায়ায়
ক্লান্ত পথিক তার শরীর জুড়ায় ;
পাকা আমের গন্ধে, বিভোরে
ভন ভন করে মাছিরা ওড়ে :
তখন যদি দেখ –
জলের অভাবে চরের জমিটা
হয়ে গেছে চৌচির ফুটিফাটা
জানবে ওটা আমি –
তোমার করুনার অভাবে
হয়ে যাচ্ছি মরুভূমি।

বর্ষার আকাশ যখন –
কালো মেঘে থাকে ছেয়ে,
মেটায় মাটির তৃষা অঝোর ধারা দিয়ে;
সকলে রাস্তায় নামে
রথের দড়ি দু হাতে টানে :
তখন যদি দেখ –
বন্যার জলে ভেসে যেতে যেতে,
কেউ যদি খড় কুটো ধরে চায় বাঁচতে :
জানবে ওটা আমি –
যে আজীবন বাঁচতে চায়
আঁকড়ে ধরে শুধু তোমায়।

শরতের নীল আকাশে
মেঘের পানসি নৌকো ভাসে;
হাওয়াতে চরের কাশফুল দোলে,
পুকুর ভরে যায় গোলাপি কমলে ;
শিশুরা মাতে পুজোর ছুটিতে ;
সকলেই উতসবে ওঠে মেতে –
তখন যদি দেখ –
দুড়দাড় ভাঙ্গছে নদীর পাড়
জানবে ওটা আমি –
ভেঙ্গে চলেছি সকালে বিকালে
তোমার হৃদয় তলে মিশব বলে।

হেমন্তে যখন –
জল ভরা পুকুরে মরাল মরালী ভাসে ;
ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু মুক্তার মত হাসে;
হাল্কা কুয়াশা দেয় শীতের পূর্বাভাস;
ঘরে ঘরে নবান্নের ছড়ায় সুবাস;
তখন যদি দেখ –
কিছু ঘাস সাদা হয়ে গেছে,
চাপা পড়ে কাঠের গুঁড়ির নিচে,
জানবে ওটা আমি –
ইচ্ছে তারও অনেক আছে :
ডগায় শিশির কণা জমিয়ে –
দেবে তোমার পা দুটি ভিজিয়ে ।

শীতের সকালে যখন –
গ্রামে মানুষ গুলো বসে
আগুনের চারিপাশে ;
দিন ছোট হয়, রাত বাড়ে
ভোরের আকাশ মুখ ঢাকে
কুয়াশার চাদরে ।
তখন যদি দেখ –
রাস্তায় কোনো ভবঘুরে হেটে যায় খালি গায়ে;
জানবে ওটা আমি-
পাগল হয়ে গেছি,
তোমার ভালোবাসার উষ্ণতা না পেয়ে।

বছর শেষে বসন্তে যখন –
জাগে লালের শিহরণ
কৃষ্ণচূড়া আর পলাশের বনে ;
ব্যাকুলতা জাগে সকলের মনে
কোকিলের কুহু ডাকে ;
ফাগুনের চাঁদ দেখে,
শিরা আর ধমনীতে আগুন জ্বলে ওঠে ;
তখন যদি দেখ –
পাতা ঝরা গাছের ডালে উঠেছে ফুটে
নতুন এক‌টি কুঁড়ি ;
জানবে ওটা আমি
তোমার অবহেলার ঝড় গুলো সব সয়ে
প্রেমকে আজও আমি রেখেছি বাঁচিয়ে।

সেদিন এই কবিতার মর্মার্থ বুঝতে পারি নি। আজ বুঝি সেটা ছিলাম আমি। উদ্দেশ্য ছিল প্রেম নিবেদন।

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বের হতে ধাক্কা খেয়ে গেলাম। না দেখে আমার স্পেশাল গালি শুরু করে দেই।

কে রে কানা বেগুন পচা আলু পচা কুমড়া পচা ডিম চোখে কি অন্ধ দেখেও দেখিস না। ও পিঁপড়ার বাপ তোমার অবলা বউকে মেরে ফেলেছে। তুমি কোথায় গো।

উপরের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক। এ যে আমি কাকে দেখছি অভিমান।

দিলাম বিকট চিৎকার তারপর,

পরের পর্ব:

অভিমানের ফুল || পর্ব -১

অভিমানের ফুল || পর্ব – ২

অভিমানের ফুল || পর্ব -৩

অভিমানের ফুল || পর্ব -৫

অভিমানের ফুল || পর্ব -৬

অভিমানের ফুল || পর্ব -৭

অভিমানের ফুল || পর্ব ৮ ও শেষ

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত