অভিমানের ফুল || পর্ব -৩

অভিমানের ফুল || পর্ব -৩

ফ্রেশ হয়ে বের হল ফুল। কিন্তু লাল টকটকে ও ফুলো ফুলো চোখ দেখে বুঝে যাবে। এতক্ষণ কান্না করছিল ফুল।

বাহিরে এসে ফুল সব গুছিয়ে নিল। তারপর বসে ভাবীকে বলছে ভাবী এক কাপ কফি দাও তো।

ফুলের ভাবী চোখ দেখে কিছু জিজ্ঞেস করল না। শুধু ভাবছে কি ছিল এমন অতীত যা থেকে মেয়েটা আজো বেরিয়ে আসতে পারছে না। আজ কলির থেকে সব শুনতে হবে।

ফুল কে কফি দিয়ে, কলি কে ডেকে নিয়ে গেল। উদ্দেশ্য পুরোটা শোনা, কি হয়েছিল সেদিন।

— আচ্ছা কলি একটা কথা বলবি?
…. কি কথা ভাবী, বল প্রশ্ন করতে হবে না।
— ফুলের সব টা বলবি আমাকে?
… আমি দুঃখিত ভাবী, আপুকে বললে বলবে।
— ঠিক আছে আমি ফুল কে বলব। ওর কাছে শুনব, আগে রান্না শেষ করি আগে।

রাতের বেলা খাবারের আয়োজন চলছে, সেই সময় ফুলের ভাবী ওর ভাই কে বলল

— আবিদ, আমি আজ ফুলের সাথে ঘুমাব।
ঠিক আছে , আমি আর কি বলব।

মাঝখানে ফুল বলে উঠল আমার আপত্তি আছে। আমার ভাই বউ থাকতে একা ঘুমাবে কেন। ফুলের ভাবী বলল তুমি যাই বল নন্দিনী আজ আমি তোমার সাথে ঘুমাব‌।

*****

ভাবী জীবন এমন কেন। কেন সে বারবার দেখা দেয়, এসে আমার পাশে ঘুম কেড়ে নেয়।

ফুল আজ আমি সব জানতে চাই বলবি আমাকে। এটলিষ্ট ভাবী না বান্ধবী হিসেবে বল।

ভাবী এমন কেন তুমি, আজ তোমাকে সব বলব।

অতীত,,,,,

একদিন দাদু অসুস্থ হওয়ার পর বাবা ও মাকে মেনে নেয়। এই বাড়ি ছেড়ে সেদিন যাই মির্জা বাড়ি। এখানে এক স্কুলে ভর্তি হই। একদিন স্কুলে থাকতে। চাচাতো ভাই আকাশ ডাকল-

আকাশ : ফুল এই ফুল তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে রওনা দে। শুনলাম অনন্য ভাইয়ার বিয়ে। ( অনন্য ভাইয়া আমার বড় চাচার ছেলে আকাশ এর বড় ভাই)

ফুল : সত্যিই অনন্য ভাইয়ার বিয়ে। ইয়ে আমি খুব মজা করব। আমি নতুন বউ সাজব।

আসলে ও বাড়ির মেয়ে কলি ও আমি ছিলাম তিন চাচার সব ছেলে। তোমার সবার থেকে আলাদা ছিল আবির হাসান। আমি তার গোমড়া মুখ থেকে নাম দিয়েছিলাম “”অভিমান””। উনার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য ছয় বছরের। আমি এইটে পড়ি উনি অনার্সে পড়ে। ভাইয়ার সাথে পড়ত উনি।

সেই দিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে এলাম। এক বড় ঘটনা ঘটে গেছে, পাশের বস্তিতে আগুন লেগেছে। আকাশ সহ বাড়ির সবাই ছুটে চলে গেল। আমি যাব না, কিছুক্ষণ পর আমি ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।

বাহিরে এসে দেখি অভিমান দাঁড়িয়ে আছে। কেন জানি না তাকে ভাইয়া বলতে ভালো লাগতো না। তবে তিনি খুব সুন্দর করে। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর একটা কবিতা আবৃত্তি করছে।

এতোদিন কিছু একা থেকে শুধু খেলেছি একাই,
পরাজিত প্রেম তনুর তিমিরে হেনেছে আঘাত
পারিজাতহীন কঠিন পাথরে।

প্রাপ্য পাইনি করাল দুপুরে,
নির্মম ক্লেদে মাথা রেখে রাত কেটেছে প্রহর বেলা__
এই খেলা আর কতোকাল আর কতোটা জীবন!
কিছুটাতো চাই__হোক ভুল, হোক মিথ্যে প্রবোধ,
আভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।

আরো কিছুদিন, আরো কিছুদিন__আর কতোদিন?
ভাষাহীন তরু বিশ্বাসী ছায়া কতোটা বিলাবে?
কতো আর এই রক্ত-তিলকে তপ্ত প্রনাম!
জীবনের কাছে জন্ম কি তবে প্রতারনাময়?

এতো ক্ষয়, এতো ভুল জ’মে ওঠে বুকের বুননে,
এই আঁখি জানে, পাখিরাও জানে কতোটা ক্ষরন
কতোটা দ্বিধায় সন্ত্রাসে ফুল ফোটে না শাখায়।

তুমি জানো না__আমি তো জানি,
কতোটা গ্লানিতে এতো কথা নিয়ে এতো গান, এতো হাসি নিয়ে বুকে
নিশ্চুপ হয়ে থাকি

বেদনার পায়ে চুমু খেয়ে বলি এইতো জীবন,
এইতো মাধুরী, এইতো অধর ছুঁয়েছে সুখের সুতনু সুনীল রাত!
তুমি জানো নাই__আমি তো জানি।
মাটি খুঁড়ে কারা শস্য তুলেছে,
মাংশের ঘরে আগুন পুষেছে,
যারা কোনোদিন আকাশ চায়নি নীলিমা চেয়েছে শুধু,
করতলে তারা ধ’রে আছে আজ বিশ্বাসী হাতিয়ার।

পরাজয় এসে কন্ঠ ছুঁয়েছে লেলিহান শিখা,
চিতার চাবুক মর্মে হেনেছো মোহন ঘাতক।
তবুতো পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মুখর হৃদয়,
পুষ্পের প্রতি প্রসারিত এই তীব্র শোভন বাহু।

বৈশাখি মেঘ ঢেকেছে আকাশ,
পালকের পাখি নীড়ে ফিরে যায়
ভাষাহীন এই নির্বাক চোখ আর কতোদিন?
নীল অভিমান পুড়ে একা আর কতোটা জীবন?
কতোটা জীবন!!

সেই দিন ছোট মনে এই কবিতার মর্মার্থ বুঝতে পারি নি। এখন বুঝতে পারছি তার অভিমান।

সেদিন ঐ ভাবে কেটে গেল, তারপরের দিন আমার এক বন্ধু সহ সবাই ঘুরতে যাবে। আমি যাবনা সেই নিয়ে টানাটানি শুরু করলো ‌ দুর থেকে অভিমান দেখছিল। কাছে এসে আমাকে ঠাস ঠাস করে চড় মেরে বলল। বেয়াদব মেয়ে তোর জন্য কি মির্জা বাড়ির বদনাম হবে। বলেই গটগট করে চলে গেল।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলাম সবাই। সবাই আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। আমি মুচকি হেসে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

বাড়িতে এসে আমার মাথায় বাজ পড়লো,

পরের পর্ব:

অভিমানের ফুল || পর্ব -১

অভিমানের ফুল || পর্ব – ২

অভিমানের ফুল || পর্ব -৪

অভিমানের ফুল || পর্ব -৫

অভিমানের ফুল || পর্ব -৬

অভিমানের ফুল || পর্ব -৭

অভিমানের ফুল || পর্ব ৮ ও শেষ

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত