অভিমানের ফুল || পর্ব – ২

অভিমানের ফুল || পর্ব – ২

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ফুল। ভাবছে জীবন এমন কেন। যাক গে অতীত ভুলে বাঁচতে হবে। নিজের পরিবারের দিকে তাকিয়ে, নয়তো কবে যেতাম মরে।

” সে ছেড়ে গেছে, কিন্তু বেদনার পুকুরে ডুবিয়ে দিয়ে গেছে।”

ভাবনার ঘোর ভাঙল ভাবীর ডাকে। ফুল খেতে আয় রাতেও তো কম খেলি। খেতে আয়, তোর পছন্দের নাস্তা বানিয়েছি।

ভাবী আমি আসছি বলে বের হল ফুল। সবার সাথে নাস্তা করে ঘরের দিকে ছুটল ফুল।

নয়টার সময় ফুলদের বাড়ির সামনে একটি কালো মাইক্রো গাড়ি এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে আসে একজন হ্যান্ডসাম ছেলে। ফুল ছেলেটাকে দেখে টাস্কি খেয়ে গেছে। এত সুন্দর ছেলে হয়, না আমার অভিমান এর থেকে বেশী সুন্দর। আমার অভিমান বলছি কেন সে তো আমার নয় অন্যকারো।

ফুল ছেলেটাকে বলল কে আপনি। এখানে কি চাই। ছেলেটি বলল যতদূর মনে হয় আপনি “ফারিয়া জান্নাত ফুল”।

” জ্বী আমি ফুল, আপনাকে ঠিক চিনলাম না।”
— আমি তন্ময় ফেরদৌস।
” ওহ আপনিই সে, বসুন ভিতরে এসে।”
— না তার দরকার নেই, তো কাজ টা কি করবেন আপনি।
” জ্বী ইনশাআল্লাহ, আমি করতে চেষ্টা করব।”
— ঠিক আছে এই টাকা রাখুন, কাজে লাগতে পারে।
” এখন লাগত না এসব একেবারে শেষে দিতেন।”
— আমি একটা কথা বলি, আমি আপনার থেকে ছোট তুমি করে বললে ভালো লাগবে।
” ঠিক আছে, তবে তাই হোক। আমি ছোট দের আপনি বলতে পছন্দ করি না।”
— ঠিক আছে আমি আসছি। পরে দেখা হবে।

দুপুর বেলা বাজারে গিয়েছে জলপাই কিনতে। ফলের আরদে যে এত ঝামেলা তা জানত না ফুল। তাহলে তো ভাইকে পাঠিয়ে দিত।

অনেক দরদাম করে সব ফল কিনল। এবার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। ফল সব তো গাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ভাগ্যিস আসার সময় পাশের বিল্ডিং এর রিকশা চালক কে সঙ্গে নিয়েছিল, তাই মুক্তি।

বকবক করতে করতে রাস্তা পার হচ্ছে। সামনে ধাক্কা খায় একজনের সাথে। ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় ফুল সাথে সাথে গালি স্কার্ট। কোন খচ্চর রে শালা চান্দু বিলাই বিদ্দপ আমার কোমড় গেল রে। আমায় কে বিয়ে করবে গো আল্লাহ। রাস্তায় এমন গালি শুনে সবাই অবাক।

— ঐ চুপ ফাজিল মেয়ে।

ফুল কন্ঠ শুনে অবাক হয়ে গেছে। উপরের দিকে তাকিয়ে 420 ঝটকা খেয়েছে। ফুল নিজেকে সামলে উঠে সোজা দৌড়ে বাড়ির দিকে।

এক মহুর্ত সেখানে দাঁড়ানো হলে যে সবার সামনে কান্না করে দিত‌। কেন আসল সামনে কেন আসল।

বাড়ি গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। কলি ও ভাবী পুরো অবাক হয়ে গেল। ধরাম করে দরজা বন্ধের আওয়াজে। বিড়বিড় করে বলতে লাগল।

একা একা কথা বলা
স্বপ্নের খোঁজে পথ চলা;
মানে-অভিমানে গিয়েছি ভুলে
সেইসব রোদেলা দিন!!
পেরিয়ে এসেছি পিছে ফেলে।
ইচ্ছের রঙিন ঘুড়ি
উড়িয়েছিলাম সেই কবে?!
কোন কিশোরীবেলায়(?)
কবেই গিয়েছি সব ভুলে
সে সব নিয়েছে ঠাঁই
স্মৃতির কোন কোনায়?
ভোরের কুয়াশায়,উত্তুরে হাওয়ায়,
উড়িয়ে দিয়েছি তোমায়।
বিষন্নতায় পথ হেঁটেছি একা
তবুও চাইনি তোমার দেখা,
কত রাত গিয়েছে চলে
আজ বড় অবেলায় তুমি এলে।
বন্ধ দুয়ার,খিল দিয়েছি তুলে
বন্ধ মনেরই অলিগলি,
আমি নিজেকে নিয়েছি খুঁজে
আর তাই একলাই পথে চলি।
আজ শ্যাওলার ছাপ,অতি চেনা
সেই পুরাতন দেয়ালে,
ছেঁড়া সুতোয় কেটেছি যখন পিছুটান
তখন বড় অবেলায় তুমি এলে।

বলেই অতীতে ডুবে গেল ফুল।

মির্জা বাড়ির ছোট ছেলে আরাফাত মির্জার বড় মেয়ের নাম ফুল। যদিও দ্বিতীয় সন্তান , বড় ভাই ফুলের থেকে ছোট কলি।

আরাফাত মির্জা প্রেম করে বিয়ে করার কারণে বাড়ি ছাড়া হয়েছে।

ফুলদের অভাবের সংসারে অশান্তি ছিল না। সুখ ছিল খুব সুখেই ছিল।

দরজার ধরাম ধরাম শব্দের তাড়নায় অতীত থেকে বেরিয়ে আসল ফুল।

” ভাবী আমি আসছি, তুমি যাও।”

ফ্রেশ হয়ে বের হল ফুল। কিন্তু লাল টকটকে ও ফুলো ফুলো চোখ দেখে বুঝে যাবে। এতক্ষণ কান্না করছিল ফুল।

বাহিরে এসে ফুল সব গুছিয়ে নিল। তারপর বসে ভাবীকে বলছে ভাবী এক কাপ কফি দাও তো।

পরের পর্ব:

অভিমানের ফুল || পর্ব -১

অভিমানের ফুল || পর্ব -৩

অভিমানের ফুল || পর্ব -৪

অভিমানের ফুল || পর্ব -৫

অভিমানের ফুল || পর্ব -৬

অভিমানের ফুল || পর্ব -৭

অভিমানের ফুল || পর্ব ৮ ও শেষ

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত