–আর দুটো মাস থেকে যেতে তোমরা, বাচ্চা দুটো নিয়ে এই ভাবে চলে যাবা? বাড়ি ভাড়া তো এখন আমি নিচ্ছি না ,না হয় আরো দুটো মাস ও দিলেনা সমস্যা তো নেই, থেকে দেখতে পরিস্থিতি কেমন হয় ? বাড়িওয়ালী আন্টির মুখে এই কথা শুনে , নাঈমার চোখে পানি চলে আসলো , আর বললো ,
–না ,আন্টি অনেক করেছেন আমাদের জন্য ,গত তিন মাসে আপনি ভাড়া তো নেনই নি, তারপর যদি টাকা পয়সা ধার দিয়ে সাহায্য ও না করতেন ,কি যে করতাম বাচ্চা গুলো নিয়ে?
–কি যে বলো না ? তোমরা তো শুধু আমার ভাড়াটিয়াই না আমার প্রতিবেশী ও , তোমাদের যদি আমি না দেখি আর কে দেখবে ? আল্লাহ আমাকে উছিলা করে পাঠাইছে মাত্র।
–আন্টি আপনার কাছে অনেক ঋণী হয়ে গেছি গত তিন মাসে। এই ঋণই শোধ করতে পারবো না , আর ঋণের বোঝা বাড়াতে চায়না। এভাবে আর থাকা যায় না । ত্রিশ তারিখেই গ্রামের বাড়ি চলে যাবো ।
–এখানে ঋনী হওয়ার কিছু নেয় মা , মানুষ তো মানুষের জন্যই করবে। একান্তই চলে যেতে চাইলে তো আর আমি জোর করতে পারবোনা। তবে একটা কথা সবসময় মনে রাখবে ,এখন থেকে একদম হিসাব করে চলবে তাহলে আর কখনো বিপদে পড়বে না।
–আন্টি “টু-লেট” টা টানিয়ে দিয়েন , যদিও বলতে দেরি হয়ে গেলো। আসলে বুঝতে পারিনি এইভাবে চলে যেতেই হবে।
–আরে কোন সমস্যা নেই,তোমরা গেলে তারপর টানিয়ে দেবো এতো চিন্তা করার কিছু হয়নি। বাড়ি যখন আছে ভাড়া একদিন হবেই। অনেক কষ্টে তোমার আঙ্কেল আর আমি এই মাথা গোঁজার ঠাঁইটা করেছিলাম । বাসায় এসে নাঈমার খুব অপরাধ বোধ হলো আর ভাবতে লাগলো, বছর দুই আগেও ওরা যখন গাড়ি কিনেছিলো ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে সেদিন ও বলেছিলেন এই আন্টি,
-আগে থাকার জায়গার একটা নিশ্চয়তা করে তারপর গাড়ি কিনলে পারতে শুধু শুধু খরচ বাড়ালে , তখন ওরা উত্তরে বলেছিলো,
–লাগে আন্টি ,একটা স্ট্যাটাস মেইনটেইন করতে হয় তো। কিন্তু আড়ালে স্বামী স্ত্রী দুজনে কতবার বলেছে, এরা একেবারেই কন্জুস বাড়িওয়ালা অনায়াসে গাড়ি কিনতে পারে অথচ কিপ্টামি করে । আবার যখন তাদের মেয়ের বিয়ের সময় গায়ে হলুদ এর অনুষ্ঠান ছোট করে ছাদে করেছিল, তখন ও নাক সিঁটকে বলেছিলো অন্য ভাড়াটিয়া প্রতিবেশীকে ,
— এতো কিপ্টা বাড়িওয়ালা দেখছেন জীবনে , মেয়ের বিয়েতে ও কিপ্টামি করতেছে । টাকা কি কবরে নিয়ে যাবে নাকি এরা? আসলেই তো, বাড়িওয়ালী আন্টি কিপ্টামি করেননি আবার টাকা কবরেও নিয়ে যাবেননা। উনারা হিসেব করে খরচ করেছিলেন বলে আজ এই বিপদের দিনেও নিজেদের তো কোন কষ্ট হচ্ছেই না উল্টো তাদের মতো অমিতব্যয়ীদের সাহায্য ও করতে পারছেন । আজ যখন নাঈমা অতিরিক্ত বিলাসীতা করে রাস্তায় নেমে যাচ্ছে ,তখন এই কন্জুস বাড়িওয়ালাই তাকে উদ্ধার করছে।
নিজের কাছে নিজেকে অনেক ছোট আর অসহায় লাগছে আজ নিজের ভুলের জন্যই । বাসা ছেড়ে আসার দিন ও , বাড়িওয়ালী আন্টিকে বিদায় জানাতে গেলে,আন্টি একটা খাম হাতে জোর করে দিয়ে দিলেন , নাঈমার আর বুঝতে বাকি রইলো না ,এতে কি আছে? কিছু বলতে পারলো না, শুধু হাউমাউ করে কেঁদে জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছিল যেন , মায়ের কাছ থেকে মেয়ে বিদায় নিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীটা এখনও সুন্দর কারন এমন ভালো মানুষ এখন ও বেঁচে আছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প