জামাই

জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে আজ তিনদিন কথা বলি না।শুধু মেসেজ আদান-প্রদান করছি। তার কোন কিছুর দরকার হলে আমাকে মেসেজ করছে। আর আমিও তার দেখাদেখি আমার দরকারে মেসেজ করছি। আমি গরমে রান্না ঘরে রান্না করছি আর অপরদিকে জামাই জমিয়ে টিভিতে খেলা দেখছে। এত আরাম সহ্য করা যায় না। আর এখন সাহায্য করতে বললেও করবে না।

এদিকে আমার প্রিয় সিরিয়ালটা শুরু হওয়ার সময় হয়ে গেছে।এখন বাইরে থেকে একটু ঘুড়িয়ে নিয়ে আসলে বেশ হয়।গরম কেমন বুঝবে।পাশাপাশি আমার সিরিয়াল দেখাটাও হয়ে যাবে। রান্না ঘর থেকে জামাইকে মেসেজ করলাম। লবণ শেষ।রান্না করতে পারছি না।দ্রুত লবণ আনো। আমার মেসেজ পাওয়া মাত্রই জামাই মেসেজ করলো, এখন খেলা দেখছি একটু অপেক্ষা করো।বিরতি দিলে যাচ্ছি। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। আবার মেসেজ করলাম, এখনি যা বলতেছি না হলে কিন্তু পরে আর রান্না করবো না।

জামাই এবার একটা স্যাড ইমুজ দিয়ে উঠে চলে গেলো। খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে। বেশ হয়েছে।এবার দেখ টিভি।আমাকে সিরিয়াল দেখতে না দিয়ে খেলা দেখা তাই না এই তো আর কিছুসময় পরেই আমার প্রিয় সিরিয়ালটা শুরু হবে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছি।দূর থেকে জামাইকে দেখে আবার মেসেজ করলাম, শোন ভুলে গিছলাম লবণ আছে, একটু আদা নিয়ে আসো। দেখি জামাই মেসেজ পেয়ে আবার পেছনে ফিরে বাজারের দিকে যেতে লাগলো।সাথে আমাকে মেসেজ দিলো ঠিক আছে। সিরিয়াল এক পর্ব হয়েছে দেখি জামাই গেটের কাছে।আমি আবার মেসেজ করলাম, শোন না গো, আদা আছে মরিচের গুড়া শেষ ওটা আনো। জামাই আবার একটা স্যাড ইমুজ দিয়ে বললো,আর কিছু? আমি ও একটা লাভ ইমুজ দিয়ে রিপ্লে দিলাম, না গো।

সিরিয়াল প্রায় শেষের দিকে।দেখি জামাই গেটের মধ্যে ঢুকে গেছে।কলিং বেল দেওয়ার আগেই আবার মেসেজ

করলাম, শোন না গো, ভীষণ চকলেট খেতে ইচ্ছা করছে একটু আনবে। জামাই এবার মেসেজটা দেখে, বাসার জানালার দিকে তাকালো।বুঝলাম রাগে এখন সে জ্বলছে তার। তোমার কি আর কিছু খেতে ইচ্ছা করছে। করলে বলতে পারো।আমি বাজার ধরে আনবো তোমার জন্য।দয়া করে একবারে বলো।আর ভালো লাগে না। গরমে আর ঘুরাইও না। মেসেজটা দেখে খুব হাসি পাচ্ছে।মনে মনে বললাম না।তুমি চকলেট নিয়ে আসতে আসতে নাটক শেষ হয়ে যাবে। একটা লাভ ইমুজ দিয়ে মেসেজ করলাম,আপাতত আর কিছু না।মনে পড়লে আবার বলবো। জামাই একটা স্যাড ইমুজ দিয়ে চলে গেলো। বাসায় এসে আমাকে মেসেজ করলো,তোমার জিনিসগুলো নিয়ে যাও।আর আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। আমি মেসেজ দেখে না দেখার ভান করে সোজা রুমে গিয়ে জিনিসগুলো নিয়ে চলে এলাম।দেখি জামাই আবার মেসেজ করেছে,কি ব্যাপার পানি দিলে না।

আমি সিন করলাম না।এক গ্লাস পানি নিয়ে পাশে রেখে চলে এলাম। জামাই এবার চিল্লাই উঠলো,তোমার কাছে না পানি চাইলাম। আমি পাশে গিয়ে মেসেজ করলাম,পানি অনেক আগেই রেখে গেছি।কাজ করছিলাম তাই মেসেজ রিপ্লে দেওয়ার সময় পায়নি। জামাই চুপ করে আছে। আমি পাশে গিয়ে একটা মেসেজ করলাম,শোন একটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম আমার কথা শেষ না হতেই জামাই হাত জোড় করে বললো,প্লিজ এখন কিছু আর আনতে বলো না।বাইরে ভীষণ গরম। কালকে লিস্ট করে দিও। আমি আবার মেসেজ করলাম আরে, করিম ভাই আসছিলেন বিকালে তোমাকে ওনার বাসায় যেতে বললেন।তাই আর কি।

জামাই মেসেজ করলো ওহ।ঠিক আছে। বিকালের দিকে দেখি জামাই সেজেগুজে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে।মেসেজ করলাম,এত সেজেগুজে কোথাই যাওয়া হচ্ছে শুনি। জামাই সাথে সাথে রিপ্লে দিলো, করিম ভাইয়ের বাড়িতে আজ পার্টি আছে।অনেক সুন্দরিরা আসবে।যায় একটু সাক্ষাৎ করে আসি। জামাই ভেবেছে হয়তো আমি এখন রেগে বেগে কথা বলবো।কিন্তু আমি শান্ত ভাবে রিপ্লে দিলাম সাবধানে যেও। জামাই বাসা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুসময় পরেই মেসেজ দিলো, বাবু,কত সুন্দিরা।নিজেকে অবলা মনে হচ্ছে এত সুন্দরিদের ভীরে। আমি মেসেজ দেখা মাত্রই রিপ্লে দিলাম তারা সবাই কি তোমাকে দেখছে। জামাই রিপ্লে দিলো,হ্যাঁ সোনা।আজ অনেক সেজেছি না।

আমি আবার মেসেজ করলাম, “শোন তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম,তুমি লুঙ্গির সাথে টাই পড়েছো।ঠিকঠাক ভাবে পড়ে যাও”। কিছুসময় পরেই দেখি জামাই মেসেজ করেছে,আগে কেন বলোনি।এবার বুঝেছি সুন্দরিরা কেন সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো। আমি একটা হাহা ইমুজি দিয়ে বললাম,আমাকে ছাড়া যে তুমি অসম্পূর্ণ এটা স্বীকার যে কেনো করো না।বুঝি না।ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না। জামাই একটা স্যাড ইমুজ দিয়ে রিপ্লে দিলো,এই জন্যই কথা বলাটা দরকার ছিলো। আমি হাহা দিয়ে বললাম, হ্যাঁ খুব দরকার ছিলো।