পড়া পানি

পড়া পানি
পাশের গ্রামের এক সিনিয়র আপুকে মেসেজ দিলাম-“আপনি আম,আমি মাছি।” “তাইতো শত অবহেলার পরেও কাছে আসি।” “থাকতে চাই আপনার কাছাকাছি। “I Love You,আমি আপনাকে ভালোবাসি কিছুক্ষণ পর রিপ্লে এলো-“এই পিচ্চি ছেলে,কি বলিস এগুলা?মাথা ঠিক আছে তো?”
-“আগে ঠিক ছিলো কিন্তু আপনাকে সেদিন বিয়ে বাড়িতে দেখে এখন মাথার মধ্যে বিয়ের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে!”
-“ছিঃছিঃ নাক টিপলে এখনো দুধ পরবে আর এখনি কিনা মাথায় বিয়ের চিন্তা ঘুরপাক খায়?”
-“কি টিপলে কি পরবে সেটাও জানেন না?নাক টিপলে হিনুথ পরবে।”
-“চুপ বেদ্দব। বড় আপুর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানিস না নাকি?”
-“জানি তো।”
-“তাহলে সম্মানের সহিত কথা বল।” একটু চিন্তাভাবনা করে রিপ্লে দিলাম-“আসসালামু আলাইকুম। বিসমিল্লাহ’হির রাহমানির রাহিম… I respectfully tell you I love you”
-” মানে কি?”
-“এটার মানেও জানেন না?  আমি আপনাকে প্রচুর ভালোবাসি।”
-“থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো বেদ্দব। তুই চিনিস আমাকে?”
-“চিনি তো,আমার পাশের গ্রামে আপনার বাসা আর আপনি আমার থেকে তিন বছরের সিনিয়র। এলাকার রিপন ভাইয়ের সাথে আপনার রিলেশন আছে।”
-“তুই জানিস আমার রিপনের সাথে রিলেশন আছে তবুও আমাকে ভালোবাসিস?আজব।”
-“ফুটবল খেলায় গোলকিপার থাকবেই তাই বলে কি কেও গোল দিবে না?তেমনি আজকালকার দিনে এক বা একাধিক রিলেশন থাকবেই,তাই বলে কি কাওকে ভালোবাসা যাবে না?কাওকে প্রপোজ করা যাবে না?”
-“সেটা অবশ্য ঠিক বলেছিস,তবে আমার কাছে তুই পাত্তা পাবি না..বলেই আয়েশা আপু অফলাইনে চলে গেলো।”
এদিকে আমার অবস্থা ফুটন্ত ভাতের মতন। আয়েশা আপুর প্রতি ভালোবাসা উতলিয়ে উঠতেছে। এই মহামারীতেও সেদিন বিয়ে খেতে গিয়ে আপুকে দেখেই বুকের ভেতরে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে ক্রাশ নামক জিনিষটার বিক্রিয়ার ফলে আপুর প্রতি অদ্ভুত রকমের ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। যখনি মনে হয় আপু আমার সিনিয়র তখনি মনে হয় বাংলা সিনেমার বিখ্যাত সেই ডায়লগ ‘প্রেম ভালোবাসা কখনো ধনী গরিব,ছোট বড়,কালা ধলা দেখে হয় না’।এই ডায়লগের উপর ভরসা করেই আপুকে পটানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আপু পাত্তা দিলো না।
সারারাত এক প্রকার অসস্থি আর ড্রিপেশনে কাটিয়ে সকালে গেলাম বাজারের বিখ্যাত কবিরাজ ‘হাকিম’চাচার কাছে। মনের সব কথা চাচার কাছে বন্ধুর মতন খুলে বললাম। চাচা এক বোতল পানি পড়ে দিলো। চাচার ভাষ্যমতে এই পড়া পানির কয়েকফুটা যেই মেয়ে খাবে সেই মেয়েই আমার জন্য পাগল হয়ে যাবে।এমন পাগল হবে যে আমাকে বিয়ে না করে ছাড়বেই না। সেই অনুযায়ী আয়েশা আপুর বাড়ির কাজের মেয়ে বিলকিস কে কিছু টাকা দিয়ে বললাম-“এইটা তোর আয়েশা আপুকে দিয়ে বলবি আপনার বয়ফ্রেন্ড রিপন ভাই আপনার জন্য সেভেন আপ পাঠিয়েছে।”
বিলকিস হেঁসে বললো-“আসলে বাইজান,আফায় তো এসব সেভেন আপ টাপ খায়না।আফার ভাগের টুকু আমিই খাই।বলেই বিলকিস হুট করেই পড়া পানি খেয়ে রাস্তার মাঝে গড়াগড়ি করতে লাগলো। মুহূর্তের মধ্যেই বিলকিসের চোখ লাল হয়ে গেলো আর চুল ছিঁড়তে লাগলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই বিলকিস বললো-“আরে নিলয় ভাই,আফনারে তো সেই সুন্দর লাগতাছে।আফনারে মোর দিলে ধরছে।মুই আফনেরে ছাড়া বাঁচুম না মনে হয়।” “বিলকিসের মুখে এমন কথা শুনে কয়েকটা ডুক গিললাম।মনে হয় হাকিম চাচার পড়া পানিতে কাজ করছে।যদি পড়া পানি কাজ করে তাহলে তো বিলকিস আমার জন্য পাগল হইয়া যাইবো।এমনকি আমারে বিয়ে না করে ছাড়বেই না।”
এমন সময় বিলকিস এসে আমার হাত ধরে বলল-“আমারে ইট্টু ভালোবাসা দে নিলয়।প্লিজ ইট্টু ভালোবাসা দে!”
“হাত ছাড়িয়ে কিছু বলতে যাবো এমন সময় বিলকিস এসে আমার শক্ত করে জড়াই ধরলো।কি শক্তি মাইরি, পেটের নাড়ীভুঁড়ি সব মনে হয় একত্র করে ফেলবে।” আমি তাকে ছাড়ানো চেষ্টা করতেছি আর বিলকিস শুধু বলতেছে-“আমারে ইট্টু ভালোবাসা দে নিলয়।আমারে তুই বিয়া কর,আমারে ইট্টু ভালোবাসা দে।” মনে মনে বলি -“কলেজের কত সুন্দরী মেয়ে প্রপোজ করলো তাগো পাত্তা দিলাম না আর তুই তো পেত্নির মতন।যার জন্য এসব করলাম তার দেখাও তো পাইলাম না।”
“গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে বিলকিসের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দিলাম এক দৌড়।পিছনে তাকিয়ে দেখি বিলকিসও আমার পিছনে পিছনে দৌড়াইতাছে আর বলতাছে আমারে ইট্টু ভালোবাসা দে নিলয়।আমারে তুই বিয়া কর,আমারে ইট্টু ভালোবাসা দে উপায় না পেয়ে ধান খেতের উপর দিয়ে দৌড় দিতে গিয়ে ড্রেনে উষ্ঠা খেয়ে কাঁদার মধ্যে পড়ে গেলাম।সারা শরীর কাদায় মাখামাখি তবুও পিছনে পিছনে বিলকিস দৌড় পারতাছে। দৌড়াতে দৌড়াতে অন্য এলাকায় এসে এক বন্ধুকে কল দিয়ে সব কিছু বলার পর সে যা বললো তা শুনে আরও ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। শুনলাম বিলকিস নাকি আমার বাড়ির সামনে বসে বসে বলতাছে -“আমারে ইট্টু ভালোবাসা দে নিলয়,আমারে তুই বিয়া কর,আমারে ইট্টু ভালোবাসা দে।” এসব শুনার পর বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা মরে গেলো।গ্রামের মাতাব্বররা এসব শুনে যদি বলে বিলকিসের সাথে আমার প্রেম ছিলো, আমার জন্য বিলকিস প্রেমে দেওলিয়ানা হয়ে পাগল হয়ে গেছে।তখন তো বিলকিসের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে।আর কবিরাজ চাচাও বলেছে বিয়ে না করে ছাড়বেই না!”
সব ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে নদীর পাড়ে বসে আছি।আর ভাবতাছি কাঠুরিয়ার গল্পের মতন কোনো জলপরী এসে যদি আমার কথা শুনে বিলকিস কে পাগল থেকে ভালো করে দিতো। পরক্ষণেই মনে হলো গল্প গল্পই থাকে,তা কখনো বাস্তবে রুপ নেয় না। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম-” যার জন্য চুরি করে হইলাম আমি চোর।” “যার জন্য এখন আমার এই অবস্থা,সে এখন অন্যের প্রেমে বিভোর।” “ও কবিরাজ চাচা তুমি দিলে কি এক পড়া পানি।” “যা খেয়ে প্রেমে পাগল হতেও পারে আঁশি বছরের বুইড়া নানি।” এখন একের পর এক উল্টাপাল্টা কবিতা বলে ডিপ্রেশন দূর করতাছি।কখন বিলকিস পাগল থেকে ভালো হবে আর কখন আমি বাড়ি যাবো?”
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত