মা শব্দটি ছোট্ট হলেও এর মর্মটা অনেক বড়। সব সন্তানের কাছেই তার মা তার কাছে অতি প্রিয়। আমার কাছেও তাই। নিজের অতি ছোট থেকে ছোট কথা আমি আমার মার সাথে সেয়ার করি। একটা অদ্ভুদ প্রশান্তি লাগে তখন। পৃথিবীতে এ-ই একটা মানুষই আমার সবচেয়ে শ্রেষ্ট সম্পদ। আমার ভালোবাসা! তার ওপরে কেউ নেই। উনি হলেন আমার জননী। আমার “মা”!
বাসায় ভাই-বোন বলতে আমি, রেয়ান ভাই, নুপুর আপু আর তূর্য ভাইয়া শুধু। আজকে যেহেতু মার জন্মদিন কাল সকাল থেকেই মাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি আমরা সব ভাইবোন৷ রেয়ান ভাই আর তূর্য ভাইকে বাইরে পাঠানো হলো কিছু জিনিস আনতে আর আমি নুপুর আপুর সাথে লেগে গেলাম কি কি রান্না করব, কেমন কেক বানাবো আর কিভাবে সারপ্রাইজ দেবো সেসব প্লেন করতে। দুপুরের দিকে রেয়ান ভাই আর তূর্য ভাইয়া বাইরে থেকে প্রয়জনীয় জিনিস নিয়ে আসেন। সেখানে ছিল ৫০টার মতো বেলুন, চকলেট, ডেরিমিল্ক, জরি, চকোচকো ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সবচেয়ে জরুরি জিনিস মার জন্য একটা সবুজ রঙা শাড়ি। এটা কিনেছিলাম আরও দু’দিন আগে। আমাদের চার জনের জমানো টাকা দিয়ে কেনা ওটা। এ লকডাউনে শাড়ি কিনতে বেশ হেনেস্তা হতে হয়েছে আমাদের। যেহেতু কোনো দোকান-পাট খোলা নেই, সেহেতু রেয়ান ভাই আর তূর্য ভাইকে অনেক দূর থেকে শাড়িটা কিন্তে হয়।
সেদিন দিন ছিল আরেক ধকল। মায়ের জন্মদিনের চারদিন আগে আমরা প্লেন করি মাকে সবুজ রঙের শাড়ি কিনে দেবো। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো লকডাউন নিয়ে। প্রথমে আমি, নুপুর আপু, রেয়ান ভাই আর তূর্য ভাই মিলে মার্কেটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলাম। বাট আমাদের ভাগ্য! কোনো দোকান খোলা ছিল না। যে কয়টা দোকান খোলা সে দোকানগুলোর শাড়ি মোটেও পছন্দ হয় নি আমাদের দু’বোনের। সবশেষে এক রকম নিরাশ হয়েই বাসায় ফিরে যেতে হয় সবার। পর’দিন রেয়ান ভাই আর তূর্য ভাইয়া অনেক দূরের একটা মার্কেটে যান শাড়ি কিনতে। প্রথমে আমরা রাজি হয় নি। কারন ছেলেদের মেয়েদের জিনিসের প্রতি চয়েজ খুব খারাপ হয়। যদি মার জন্য কোনো বাজে শাড়ি নিয়ে আসে তখন? এদিকে ভাইয়াগণ লেগে যান আরেক যুদ্ধে! তাদের উক্তি- “ছেলেদের চয়েজ মোটেও বাজে হয় না” আর আমাদের উক্তি- “হয়”। শেষে রেয়ান ভাই বললেন, তারা দোকানে গিয়ে আমাদের শাড়ির ছবি পাঠাবেন এবং আমাদের যেটা পছন্দ হবে সেটাই কিনে আনবেন। এবার আমরাও রাজি।
কিন্তু কে জানতো ভাইগুলো আমাদের এক একেকটা মির জাফর! সকাল থেকে বিকাল হয়ে গেছে ওদের ছবি পাঠানোর কোনো খবর নেই। বাসায় আসা তো দূরের কথা। এদিকে আমরা টেন্সেনে শেষ। “তাহলে কি ওরা এখনও মার্কেটে পৌঁছাতে পারে নি? নাকি কোনো ঝামেলার আটকিয়ে গেছে?” আমাদের ধারণায় এক বালতি পানি ঢেলে দুই মির জাফর সন্ধ্যার দিকে বাসায় আসে। তাদের হাতে একটা প্যাকেট। রেয়ান ভাই আমার রুমে প্যাকেট-টা রেখেই ফ্রেশ হতে চলে যান৷ দু’বোন প্যাকেট খুলে দেখি শাড়ি এনেছেন উনারা৷ শাড়িটা সুন্দর হলেও রেগে যাই আমরা। কত বড় মিথ্যুক হলে এমনটা করতে পারে ওরা। সেদিন চলে ছিল দুই পক্ষের তুমুল ঝগড়া। ঝগড়াটা ছিল মূলত তূর্য ভাইয়া আর নুপুর আপুর। আমি আর রেয়ান ভাই ছিলাম নির্বাক দশর্ক।
ওইদিন রেয়ান ভাই সেদিনের ঝগড়ার ভিডিও করে রেখেছিলেন। এটা নাকি জন্মদিনে মাকে দেখাবেন উনি। যাই হোক, জন্মদিনের আগের দিন সবাই প্লেন করি মার সাথে সবাই গম্ভীর ভাবে কথা বলব। মানে গম্ভীর ভাবে থাকবো, হাসি-ঠাট্টা করব না। তেমনই করি। এতে যেন মার কান্না করার অবস্থা। সন্ধ্যায় তো জিজ্ঞেসই করে ফেলেছিলেন….
— “কিরে তোরা আমার সাথে কথা বলিস না কেন? কি হয়েছে?”
তখন আমরা সবাই-ই নির্বাক। চুপচাপ আমার রুমে এসে পরি সবাই। যদিও খারাপ লেগে ছিল কিন্তু আমরা নিরুপায়। রাতের দিকে শুরু হয় আমাদের আসল কাজ! আমাদের বাসা থেকে আমার খালামনির বাসার দূরত্ব প্রায় ১৫মিনিটের মতো। খালামনি আর খালুকে বলি রাতের দিকে আসতে। তখন বাজে রাত প্রায় ১১টার মতো। মা বাদে আমরা সবাই জাগনা। বাবাও মা ঘুমানোর পরপরই আমাদের সাথে যোগ দেন। ততক্ষনে খালামনিও এসে গেছে। সবাই মিলে কেক, বেলুন এগুলো নিয়ে ঠিক ১২টা বাজার ১ মিনিট আগে উপস্থিত হলাম মার কাছে। ১২টা বাজতেই জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে উঠলাম “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ! হ্যাপি বার্থডে, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, ডিয়ার “মা”।
প্রথমে মা চমকে উঠলেও পরক্ষনে তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে। তারপর শুরু হয় আমাদের সেলিব্রেসন। সবশেষে সব ভাইবোন যখন মাকে শাড়িটা দিলাম মার মুখে এক অমূল্যবান হাসি ফুটে উঠল। আর কি লাগে আমার? তার এই হাসিতেই আমার সব, তার এই হাসিতেই আমার প্রশান্তি! ভালোবাসি মা! অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে,,,
গল্পের বিষয়:
গল্প