বিয়ে বিভ্রাট

বিয়ে বিভ্রাট
মাছের মাথা প্লেট থেকে নীচে ফেলে দিয়ে বললাম, “এটা কি কোন রান্না হলো। প্রতিদিন এক হাতের রান্না খেতে খেতে বোর হয়ে গেলাম। রান্নার হাত বদলানো দরকার।” বাবা-মা-ছোট বোন-ছোট ভাই, আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মা গোমরা মুখ করে বলল, রান্না কি খারাপ হইছে…?
আমি বিরক্তি ভাব নিয়ে বললাম, “উফ্ মা, রান্না খারাপ হবে কেন! রান্না ভালো হইছে। কিন্তু প্রতিদিন তো এক হাতের রান্না খাওয়া ঠিক না।” মা রেগে গিয়ে বলল, “রান্না ভালো হইলে খেতে সমস্যা কি?” আমি বললাম, ‘তোমার বিয়ের শাড়ী আছে? মা বলল, ‘থাকবেনা কেন! ওটা আমার সবচেয়ে পছন্দের শাড়ী, যত্ন করে রেখে দিছি। আমি বললাম, “ওই শাড়ী যদি এতই পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে সব সময় পড়োনা কেন?” মা রেগে গিয়ে বলল, “পছন্দ হইলেই কি এক শাড়ী সব সময় পড়ব নাকি!?”  আমি আরও রেগে গিয়ে বললাম, “এক শাড়ী যেমন সব সময় পড়া যায় না, তেমনি এক হাতের রান্নাও খাওয়া ঠিক না।” পাশ থেকে বাবা বলল,”তাইলে কি রান্নার জন্য আলাদা বাবুর্চি রাখব?” কি করে বুঝাই মনের কষ্টডা। আমি হতাশ হয়ে  বললাম, “বেতন দিয়ে টাকা অপচয় করে, বাবুর্চি রাখার দরকার কি।” পাশ থেকে মা বলল, “তাইলে কি তোর ছোট বোন রান্না করব।”
— উফ্ মা, কয়দিন পর ও অন্যের বাড়ি চলে যাবে। কত খাটা খাটনি করবে। এখন নাহয় বাবার বাড়িতে একটু সুখে থাক। রাগ করে খাবার টেবিল থেকে উঠে, রুমে চলে আসলাম। আর কত সহজ করে বুঝাবো, বিয়ে করতে চাই। বয়স কি আর কম হইল, উফ্।
রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ বাবাকে দেখলাম বারান্দায় আসতে। বাবাকে দেখেই, কোলবালিশে জোরে জোরে লাথি মারতে লাগলাম। লাথি মেরে কোলবালিশকে ফ্লোরে ফেলে দিলাম। লাথি মারার শব্দ শুনে বাবা আমার রুমে এসে বলল, “কি হইছে? এমন শব্দ কিসের, আর কোলবালিশ ফ্লোরে কেন?” আমি হতাশার এক নিশ্বাস ছেড়ে বললাম, “সকালে দেখছি কোলবালিশটা খাটের ওই পাশে। দুপুরেও দেখছি ওইখানে, রাতেও দেখি ওইখানেই, একটু নড়েচড়ে নাই। যে জিনিস একটু নড়াচড়া করে না, ওটা খাটে রেখে কি করব। তাই লাথি মেরে ফেলে দিলাম।” বাবা কোন কথা বলল না। কোলবালিশটা তুলে নিয়ে চলে গেল। এতদিন কোলবালিশটা সম্বল আছিল, আজ সেটাও চলে গেল। এই দূঃখ আমি কাকে বলি। মনের দুঃখ মনে নিয়ে, টিভি দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি, বাবা-মা-বোন-ভাই সবাই মিলে, স্টার জলসায় সিরিয়াল নাটক দেখতেছে।
আমি তেমন টিভি দেখি না, তাই নাটকের আগাগোরা বুঝলাম না। তবে যা বুঝলাম, তা হলো, “বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে দিবে। তাই মেয়ে খুঁজতেছে। ছেলের বাবা বলছে, মেয়ের মায়ের বয়স কম হতে হবে। ছেলের মা বলছে, মেয়ের বাবাকে স্মার্ট হতে হবে। ছেলের ছোট ভাই বলছে, মেয়ের ছোট বোন থাকতে হবে। ছেলের ছোট বোন বলছে, ওই মেয়ের অবশ্যই ভাই থাকতে হবে।” আমরা সবাই খুব মনযোগ দিয়ে টিভি দেখছি। পরিবেশটা খুবই শান্ত। কোন হৈ চৈ নেই। এমন সময় কারেন্ট চলে গেল। সবারই মন খারাপ হয়ে গেল। রুমে এসে ভাবতে লাগলাম, যে করেই হোক বিয়ের কথা বলতেই হবে। কিন্তু সরাসরি তো আর বলা যায় না। লজ্জা শরমের একটা ব্যাপার আছেনা।
শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, কি করা যায়। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। বুদ্ধিটা খারাপ না। কয়দিন আগে নতুন একটা সীম কিনছি। সেই সীমের নম্বর কেউ জানে না। সেই সীমটা মোবাইলে ভরলাম। তারপর বাবার মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠাইলাম “আপনার সন্তানকে সময় মতো বিয়ে দিয়ে, লটারীতে অংশগ্রহণ করুন, আর জিতে নিন, গাড়ী বাড়ি সহ মোট চল্লিশ লক্ষ্য টাকার পুরস্কার। অফারটি সিমিত সময়ের জন্য” সকালে দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিরক্ত হয়ে, দরজা খুললাম। দেখি বাবা দাড়ানো। আমি ঘুম ঘুম চোখে বললাম, এত সকালে ডাকতেছেন কেন? বাবা আস্তে করে বলল, “গতরাতে অনেক ভেবে দেখলাম, তোর বয়স হইছে, বিয়ে দেওয়া দরকার। আজ ঘটক আসবে মেয়ের ফটো দেখাতে। বাসায় থাকিস।”
আমি দরজা বন্ধ করে দুই তিনটা লাফ দিলাম। কাজে লাগছে বুদ্ধিটা। খাটের দিকে তাকাতেই কেমন যেন লাগছিল, এই খাটে আর একলা থাকতে হবে না, ভাবতেই অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছিল। দুপুরে ঘটক আসছে। আমরা সবাই বাড়িতে ছিলাম। ঘটক এক এক করে ফটো দেখাচ্ছিল, আর মেয়ের কি কি গুন আছে, তার বর্ননা দিচ্ছিল। হুট করেই মা বলে ফেলল, “আমার একটা আপত্তি আছেন? ঘটক বলল, কি আপত্তি? মা বলল, “মেয়ে যত সুন্দরী আর গুনবতী’ই হোক, মেয়ের বাবাকে অবশ্যই স্মার্ট হতে হবে।” মায়ের কথা শুনে লজ্জায় আমি শেষ। কি বলব, না বলব ভেবে পাচ্ছি না। এরই মধ্যে ছোট বোন পেছন থেকে বলল, ‘ওই মেয়ের অবশ্যই একটা ভাই থাকতে হইব।
লজ্জা শরম কি দেশ থেকে উঠে গেছে কিনা বুঝতে পারছিনা। এরইমধ্যে পাশ থেকে ছোট ভাই বলল, “আমারও একটা আপত্তি আছে, ওই মেয়ের অবশ্যই ছোট বোন থাকতে হবে। নাইলে আমার ভাইকে বিয়ে করামু না।”
পাশ থেকে বাবা কিছু বলতে যাবে, আর তখনই বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ” বাবা আমার কোলবালিশ কই রাখছেন বের করে দেন। মুই জীবনেও বিয়া করতাম না। আমার কোলবালিশ’ই ভালা।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত